পাল যুগের স্থাপত্য শিল্প প্রসঙ্গে নিবেদক স্তূপ, ব্রোঞ্জ ও ইঁটের স্তূপ, পঞ্চরথ স্তূপ, সোমপুরী বিহার, মন্দির স্থাপত্য, শিখর রীতি, নাগর রীতি ও শিব মন্দির সম্পর্কে জানবো।
পাল যুগের স্থাপত্য শিল্প
ঐতিহাসিক ঘটনা | পাল যুগের স্থাপত্য শিল্প |
সাম্রাজ্য | পাল সাম্রাজ্য |
প্রতিষ্ঠাতা | গোপাল |
শ্রেষ্ঠ রাজা | দেবপাল |
ভাস্কর | ধীমান ও বীতপাল |
ভূমিকা :- পাল যুগের স্থাপত্য ও শিল্পকলার কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য। পাল যুগের স্থাপত্যের বিশেষ কোনো নিদর্শন এখন দেখা যায়নি। কালের করাল স্রোতে সেগুলি ধ্বংস হয়েছে।
পাল যুগে নিবেদক স্তূপ
বাংলার পাল যুগে যে স্তূপগুলি তৈরি হয় তার অধিকাংশ ছিল “নিবেদক স্তূপ।” যারা বৌদ্ধ তীর্থস্থানে পুজো দিতে আসত তারা এই সকল স্তূপ তৈরি করত। এই স্তূপগুলি নিম্নমানের এবং অধিকাংশ ইটের বা পাথরের তৈরি।
পাল যুগে ব্রোঞ্জ ও ইঁটের স্তূপ
ঢাকার আশরফপুরে সপ্তম শতকে তৈরি ব্রোঞ্জের স্তূপের নিদর্শন দেখা যায়। রাজশাহীর পাহাড়পুরে ও চট্টগ্রামের ঝেওয়ারীতে এরূপ দুটি স্তূপ আছে। বাংলাদেশ -এর স্তূপগুলিকে উঁচু করার প্রবণতা লক্ষণীয়। স্তূপগুলি শিখরের আকৃতি নিয়েছে দেখা যায়। কেমব্রিজ পাণ্ডুলিপিতে বরেন্দ্রীর মৃগ স্থাপন স্তূপের চিত্রসহ উল্লেখ আছে। পাহাড়পুরে ও বাঁকুড়ার বহুলাড়ায় ইটের তৈরি স্তূপ দেখা যায়।
পাল যুগে পঞ্চরথ স্তূপ
বর্ধমান-র ভরতপুরে এক বৌদ্ধ স্তূপের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। এটি ছিল পঞ্চরথ স্তূপ। ভিত্তি বা পাটাতনের প্রত্যেক দিকে পাঁচটি রথ। নবম শতকে এটি তৈরি হয়।
তিব্বতে প্রথম বিহার
উদ্দণ্ডপুর, সোমপুর বিহারের ভুবন বিখ্যাত স্থাপত্যের কথা জনশ্রুতির মধ্যে বেঁচে আছে। তিব্বতে প্রথমে বিহার উদ্দণ্ডপুর বিহারের স্থাপত্যের আদলে তৈরি হয় বলে জানা যায়।
পাল যুগে নির্মিত সোমপুরী বিহার
- (১) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বহু বিহার সোমপুরী বিহারের আদলে তৈরি হয় বলে জানা যায়। সোমপুরী বিহারের মাঝখানে ছিল প্রাঙ্গণ। তার চারদিকে সারি সারি ঘর। ঘরগুলির সামনে চওড়া বারান্দা। প্রাঙ্গণের মাঝখানে উঁচু মন্দির। বিহারটির ক্ষেত্র ছিল ১০০ বর্গফুট এবং প্রাচীর বেষ্টিত।
- (২) সম্ভবত বিহারটি বহুতল বিশিষ্ট ছিল। কেন্দ্রীয় মন্দিরের উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই তলাগুলি তৈরি করা হয়। বিহারের বিভিন্ন তলা ও কক্ষ থেকে জল নিকাশের সুব্যবস্থা ছিল। এতে ১৮০টি কক্ষ ছিল। মাঝের কক্ষগুলি ছিল বিশাল। অলিন্দের ছাদ থাম দ্বারা ধরে রাখা হয়েছিল। এইরূপ সারি সারি থাম ছিল।
- (৩) বিহারটি ছিল বহুতল। কক্ষ, অঙ্গন, মন্দিরকে বেষ্টিত করেছিল উঁচু প্রাচীর। রাজশাহীর পাহাড়পুরে এই বিহারের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। ধর্মপাল -এর আমলে এই বিহার তৈরি হয়। কর্ণসুবর্ণে রক্ত মৃত্তিকা নামে একটি বিহারের কথা জানা যায়।
পাল যুগে সর্বতোভদ্র শৈলী
ডঃ নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, “প্রাচীন বাংলায় স্থাপত্য শিল্পের বিস্ময়” ছিল পাহাড়পুরের বিহার। স্থাপত্য বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাচীন ভারতীয় সুখিগুলিতে “সর্বতোভদ্র” নামে এক প্রকার মন্দির গঠনশৈলীর কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন ভারতে এরূপ শৈলীর মন্দিরের সংখ্যা খুবই কম ছিল।
পাল যুগে মন্দির স্থাপত্য
- (১) সোমপুরী বা পাহাড়পুর বিহারের মধ্যস্থলে অবস্থিত মন্দিরটিকে পাল যুগের মন্দির স্থাপত্যের প্রতিনিধি বলা যেতে পারে। পাহাড়পুরে ধর্মপালের তৈরি সোমপুরী বিহারকেই একটি সর্বতোভদ্র মন্দির বলা যায়। ডঃ সরসীকুমার সরস্বতীর মতে, সম্ভবতঃ বিহারটি ছিল পাঁচতলা এবং বিহারের দেওয়ালে ১৬টি কোণ ছিল।
- (২) বিহারের চার দিকে ছিল চারটি দেব মন্দির বা গর্ভগৃহ ও চারটি সিংহ দরজা বা তোরণ। তোরণের ওপর গম্বুজ ও মন্দিরের ১৬টি কোণে গম্বুজ মন্দিরের শোভা বাড়াত। পোড়ামাটির ইটে কাদার গাথুনীতে এই মন্দির তৈরি করা হয় এবং ইটের গোড়ার কাজে কাদা মাটি ব্যবহার করা হয়। মন্দিরটি লম্বায় ৩৫৬ ফুট, চওড়ায় ৩১৪ ফুট।
পাল যুগে শিখর রীতি ও নাগর রীতি
- (১) পাহাড়পুরে একটি জৈন মন্দিরও ছিল বলে মনে করা হয়। রংপুরে পাহাড়পুরের মন্দিরের আদলে একটি মন্দির ছিল বলে অনুমান করা হয়। এই মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ পাওয়া গেছে।
- (২) ডঃ সরস্বতীর মতে, পাহাড়পুরের মন্দির উত্তর ভারত -এর শিখর রীতির সঙ্গে উড়িষ্যার নাগর নীতির সংমিশ্রণে তৈরি হয়। গর্ভগৃহের ছাদ বেঁকে শিখরের মত ওপরে ওঠা যায়। পুরুলিয়া, বরাকরে রেখশৈলীর দেউল বা মন্দিরের নিদর্শন দেখা যায়।
পাল যুগে শিব মন্দির
পুরুলিয়া জেলায় তেলকুপী বা তৈলকমপীতে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল এবং অন্যূন ২৫/২৬টি মন্দির ছিল। এখন দামোদর উপত্যকার বাঁধের জলে তা তলিয়ে গেছে। এই মন্দিরগুলি ছিল প্রধানত শিবমন্দির, বেলেপাথরে তৈরি, রেখ রীতিতে ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরের আদলে তৈরি। তবে এই মন্দিরে কোন ভোগ মণ্ডপ ছিল না।
উপসংহার :- চন্দ্রকেতুগড়ে একটি বড় মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এটি সম্ভবত গুপ্ত যুগের। কর্ণসুবর্ণের রক্তমৃত্তিকা মন্দিরও পাল যুগের আগে তৈরি হয়।
(FAQ) পাল যুগের স্থাপত্য শিল্প সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গোপাল।
ধর্মপাল।
ধর্মপাল।
দেবপাল।
ধীমান ও বীতপাল।