১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় সংঘটিত বলশেভিক বা রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ প্রসঙ্গে জারতন্ত্রের দুর্বলতা, জারের প্রতি জনসমর্থনের অভাব, লুভভ ও কেরেনেস্কি সরকারের দুর্বলতা, লেনিনের সুযোগ্য নেতৃত্ব, জনগণের সাহায্য, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, প্রতি বিপ্লবীদের দুর্বলতা ও বৈদেশিক শক্তির অনৈক্য সম্পর্কে জানবো।
বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব |
সময়কাল | ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ |
প্রধান নেতা | লেনিন |
ফলাফল | জারতন্ত্রের পতন |
আন্তর্জাতিক যুদ্ধ | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ |
ভূমিকা:- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব বিশ্ব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের সাফল্যের মূলে নানা কারণ বিদ্যমান ছিল। যেমন –
(১) জারতন্ত্রের দুর্বলতা
স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হল ব্যক্তিত্বশালী ও যোগ্যতাসম্পন্ন শাসক সম্প্রদায়, কিন্তু রুশ বিপ্লবের প্রাক্কালে জারতন্ত্র এক কঠিন সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়। জারেরা ছিলেন দুর্বল, অপদার্থ ও অক্ষম।
(২) জারের প্রতি জনসমর্থনের অভাব
স্বৈরাচারী জারতন্ত্রের প্রতি কোনও জনসমর্থন ছিল না এবং সেনাবাহিনীই ছিল তার প্রধানতম স্তম্ভ। বিপ্লবের প্রাক্কালে সেনাবাহিনীর এক বিরাট অংশ বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগদান করে। এই প্রসঙ্গে পেট্রোগ্রাড়ের পাড়লোভস্কি রেজিমেন্ট এবং মস্কোর ভলিনস্কি রেজিমেন্টের কথা বলা যায়।
(৩) লুভভ ও কেরেনেস্কি সরকারের দুর্বলতা
প্রিন্স লুভভ এবং কেরেনেস্কি সরকার প্রকৃত অর্থেই ছিল অতি দুর্বল। এই সরকার জনসাধারণের কোনও আশা-আকাঙ্ক্ষাই মেটাতে পারে নি। খাদ্যাভাব, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দুষ্প্রাপ্যতা এবং যুদ্ধজনিত ব্যয়ভার এই সরকারের অবস্থা সঙ্গিন করে তোলে।
(৪) সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ
কৃষক-শ্রমিক-সৈনিক সকলেই ছিল এই সরকারের বিরুদ্ধে। কৃষকরা চাইছিল জমি, শ্রমিকরা চাইছিল শিল্পের জাতীয়করণ, ন্যায্য মজুরি ও কাজের নির্দিষ্ট সময় এবং সৈনিকরা চাইছিল শান্তি। রাশিয়ার বিশাল সংখ্যক মানুষ এই সরকারের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
(৫) লেনিনের নেতৃত্ব
বলশেভিকদের নেতা ছিলেন লেনিন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে এই দল রুশ জনতার হৃদয় জয় করে। কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক, বুদ্ধিজীবী – সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বলশেভিক দলের সংগঠন গড়ে ওঠে। তিনি মানুষের মনের কথা বুঝতেন।
(৬) জনগণের সাহায্য
লেনিনের দল ‘শান্তি, রুটি ও জমি’-র শ্লোগান দিয়ে সৈনিক, শ্রমিক ও কৃষকদের মর্মমূলে পৌঁছে যায় এবং তাদের নিজ পক্ষে টানতে সক্ষম হয়। এই কারণে জনগণ জীবন-পণ করে বিপ্লবে সামিল হয়। লেনিনের সুযোগ্য নেতৃত্ব ব্যতীত তা সম্ভব হত না।
(৭) আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রুশ বিপ্লব শুরু হয় এবং এই সময় ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি যুদ্ধ নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে, তাদের পক্ষে জার সরকারের পক্ষাবলম্বন করা সম্ভব হয় নি। যুদ্ধ-পরবর্তীকালেও এই শক্তিগুলি নিজ নিজ সমস্যা নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিল।
(৮) বিপ্লব দমনের সাহায্য
এই সময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা ও জাপান জারতন্ত্রের পক্ষে বিপ্লব দমনে উদ্যোগী হয়। কিন্তু তাদের এই উদ্যোগ তেমন সক্রিয় ছিল না। তাছাড়া ততদিনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব রাশিয়ার মাটিতে এতই সুদৃঢ় হয়েছিল যে, বিদেশি আক্রমণকারীদের পক্ষে তা ধ্বংস করা সম্ভব ছিল না।
(৯) প্রতি-বিপ্লবীদের দুর্বলতা
বিপ্লব-বিরোধী শক্তিগুলির মধ্যে কোনও ঐক্য ছিল না, তারা নানা দল ও উপদলে বিভক্ত ছিল। তাদের মতাদর্শ ও কর্মপন্থা ছিল বিভিন্ন ধরনের। তাদের পক্ষে কখনোই ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব ছিল না। তাদের মধ্যে এই মতভেদ বলশেভিকদের নানাভাবে সাহায্য করে। সর্বোপরি, স্থানীয় মানুষ-জনও প্রতি-বিপ্লবীদের সুনজরে দেখত না।
(১০) বিদেশী শক্তির অনৈক্য
যে সব বিদেশি শক্তি বিপ্লবের বিরোধিতা করছিল, তাদের মধ্যেও কোনও মিল ছিল না। তারা পূর্বতন জার আমলের রাশিয়ার ঐক্য ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল। তারা ইউক্রেন, পোল্যান্ড, ককেসাস প্রভৃতি অঞ্চলের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অস্বীকার করে স্থানীয় মানুষের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়।
উপসংহার:- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব -এর পর বলশেভিক বিপ্লবের মত এত বৃহৎ, ব্যাপক ও সর্বাত্মক বিপ্লব আর সংঘটিত হয়নি। জারতন্ত্রের স্বৈরাচারীতা ও তাদের দুর্বলতাই বিপ্লবীদের সাফল্য এনে দিয়েছিল।
(FAQ) বলশেভিকদের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায়।
লেনিন।
রাশিয়ার জারতন্ত্রের পতন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।