অলিন্দ যুদ্ধ প্রসঙ্গে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল, লোম্যান হত্যা, বিনয়, বাদল, দীনেশ, বন্দী নেতাদের নির্যাতন, সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা, রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান, সিম্পসনের দফতরে প্রবেশ, সিম্পসনকে হত্যা, অলিন্দ যুদ্ধ, ব্যর্থতা, পরিণতি, দীনেশ গুপ্তের বিচার, দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির প্রতিশোধ ও বি-বা-দী বাগ সম্পর্কে জানবো।
এই অলিন্দ যুদ্ধ প্রসঙ্গে অলিন্দ যুদ্ধের সময়কাল, অলিন্দ যুদ্ধের স্থান, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল, বিনয়-বাদল-দীনেশের রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান, কারা বিভাগের অধিকর্তা সিম্পসনকে হত্যা, অলিন্দ যুদ্ধ সংঘটন, বিপ্লবীদের ব্যর্থতা, বিনয়-বাদল-দীনেশের পরিণতি ও বি-বা-দী বাগ।
অলিন্দ যুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | অলিন্দ যুদ্ধ |
সময়কাল | ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ |
বিপ্লবী | বিনয়, বাদল, দীনেশ |
উদ্দেশ্য | সিম্পসনকে হত্যা |
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স | হেমচন্দ্র ঘোষ |
ভূমিকা:- বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে ঢাকার ছাত্র ও যুবসমাজ কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। এই সময় সংঘটিত অলিন্দ যুদ্ধের ঘটনা ভারত -এর ব্রিটিশ শাসকদের মনে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল
বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বাধীন বি.ভি. বা ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ দল ঢাকার বিপ্লবী সমিতিগুলির মধ্যে খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল। বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই সমিতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে এই গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
লোম্যান হত্যা
এই দলের সদস্য ও মেডিকেল ছাত্র বিপ্লবী বিনয়কৃষ্ণ বসু বাংলা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যান ও ঢাকার পুলিশ সুপারিন্টেণ্ডেন্ট হডসন-কে লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুলিতে লোম্যান নিহত হন (৩১শে আগস্ট, ১৯৩০ খ্রিঃ)।
বিনয়-বাদল-দীনেশ
এরপর বিনয় বসু ছদ্মবেশে কলকাতায় পালিয়ে আসেন এবং বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত-র সঙ্গে মিলিত হন।
বন্দী নেতাদের ওপর নির্যাতন
এই সময় কারা বিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেল কর্ণেল সিম্পসনের উদ্যোগে আলিপুর জেলে বন্দী সুভাষচন্দ্র সহ বিভিন্ন নেতার ওপর চরম শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।
সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা
জেনারেল সিম্পসন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তার দফতরে বসতেন। তাই বিনয় বসু রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান
৮ই ডিসেম্বর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বিনয়-বাদল-দীনেশ বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের মূল কেন্দ্র ‘মহাকরণ বা রাইটার্স বিল্ডিং-এ আক্রমণ হানেন। এই ঘটনা অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।
সিম্পসনের দফতরে প্রবেশ
অসংখ্য পুলিশের প্রহরা অতিক্রম করে তারা নিমেষে সিম্পসনের দফতরের সামনে হাজির হয়। সহকারী জ্ঞান গুহকে ঠেলে দিয়ে তারা কর্মরত সিম্পসনের দফতরে পৌঁছে যায়।
সিম্পসনকে হত্যা
সিম্পসনের সামনে বিনয় বলেন, “Pray to God Karnel, Your last our has come”. সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবীদের পিস্তলের গুলি সিম্পসনের দেহ বিদীর্ণ করে দেয়। তার দেহ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।
অলিন্দ যুদ্ধ
বিপ্লবীরা পালাতে গেলে পুলিশ কমিশনার টেগার্টের নেতৃত্বে লালবাজার থেকে আগত বিরাট সংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ হয়। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের বারান্দায় সংঘটিত এই লড়াই অলিন্দ যুদ্ধ নামে খ্যাত।
অলিন্দ যুদ্ধে বিপ্লবীদের ব্যর্থতা
দীনেশ গুলি বিদ্ধ হয়েও লড়াই চালিয়ে যান। কিন্তু বিপ্লবীদের গুলি ফুরিয়ে গেলে তারা বিশাল পুলিশ বাহিনীর সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়।
অলিন্দ যুদ্ধের পর বিপ্লবীদের পরিণতি
অভিযান শেষে বাদল গুপ্ত ‘পটাশিয়াম সায়ানাইড’ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বিনয় বসু ও দীনেশ গুপ্ত নিজেদের পিস্তল দিয়ে নিজেদের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। হাসপাতালে বিনয়ের মৃত্যু হয়।
দীনেশ গুপ্তের বিচার
ডাক্তারদের চেষ্টায় দীনেশ গুপ্ত বেঁচে ওঠেন এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয় (৭ই জুলাই, ১৯৩১ খ্রিঃ)। তাকে ফাঁসির দণ্ড দেন বিচাপতি গার্লিক।
দীনেশের ফাঁসির প্রতিশোধ
দীনেশের ফাঁসির ঠিক এক বছর কুড়ি দিন পরে আলিপুর জজ কোর্টের অভ্যন্তরে তরুণ বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যের গুলিতে গার্লিক নিহত হন (২৭শে জুলাই, ১৯৩১ খ্রিঃ)।
বি-বা-দী বাগ
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম রাখা হয়েছে ‘বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ’বা সংক্ষেপে বি-বা-দী বাগ।
উপসংহার:- এই বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গীতিকার মোহিনী চৌধুরীর ভাষায় বলা যায়, “মুক্তির মন্দির সোপানতলে, কত প্রাণ হল বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে।”
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “অলিন্দ যুদ্ধ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) অলিন্দ যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে।
৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বিনয়, বাদল ও দীনেশ।
বিনয়, বাদল ও দীনেশ।