ভারতে আগত পর্যটক ইবন বতুতা প্রসঙ্গে তার জন্ম, পূর্ণ নাম, বংশ পরিচয়, গৃহ ছাড়া ইবন বতুতা, মক্কার উদ্দেশ্যে ইবন বতুতার যাত্রা, ইবন বতুতার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ, ইবন বতুতার ভারতে আগমন, কাজী হিসেবে ইবন বতুতা, ইবন বতুতার চীন দেশ ভ্রমণ, ইবন বতুতার চীন যাত্রা বিফল, ইবন বতুতার মৃত্যু ও তার রচিত গ্ৰন্থ সম্পর্কে জানবো।
পর্যটক ইবন বতুতা
ঐতিহাসিক চরিত্র | ইবন বতুতা |
জন্ম | ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৩০৪ খ্রি: |
দেশ | আফ্রিকা |
ভারত আগমন | ১৩৩৩ খ্রি: |
সুলতান | মহম্মদ বিন তুঘলক |
মৃত্যু | ১৩৭৭-৭৮ খ্রি: |
ভূমিকা :- একজন সুন্নি মুসলিম পর্যটক, চিন্তাবিদ, বিচারক ইবন বতুতার জীবনকাহিনী মুসলমান জগতের ইতিহাসে এক বিশেষ কৌতূহলজনক অধ্যায়।
ইবন বতুতার জন্ম
১৩০৪ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর জাঞ্জিবারে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ইবন বতুতা জন্মগ্ৰহণ করেন।
পর্যটক ইবন বতুতার পূর্ণ নাম
তার পূর্ণ নাম হলো আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে বতুতা। চীন সহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় তিনি ‘শামস-উদ্-দ্বীন’ নামেও পরিচিত।
ইবন বতুতার বংশ পরিচয়
তার পিতা ছিলেন একজন কাজি। তার ধারণা অনুসারে তার পরিবার পশ্চিম আফ্রিকার লাওয়াতা যাযাবর জনগোষ্ঠীর উত্তরসূরি। তার পরিবার সুন্নি মতবাদের অনুসারী হওয়ায় কিশোর বয়স থেকেই ইসলাম ধর্মের উপর শিক্ষা লাভ করেন।
গৃহ ছাড়া ইবন বতুতা
তিনি সারা জীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পৃথিবী ভ্রমণের জন্যই তিনি মূলত বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন নি।
মক্কার উদ্দেশ্যে ইবন বতুতার যাত্রা
১৩২৫ সালে ২১ বছর বয়সে তিনি হজ পালনের লক্ষ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এই মহান পরিব্রাজক অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে, তিনবার হজ্জ করে তার জন্মভূমিতে ফিরেছিলেন চব্বিশ বছর পর।
ইবন বতুতার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ
বর্তমান পশ্চিম আফ্রিকা থেকে শুরু করে মিশর, সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরান, ইরাক, কাজাকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীন ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। তার কিছুকাল পূর্বে এমন দীর্ঘ ভ্রমণ করে বিখ্যাত হয়েছিলেন ভেনিসের ব্যবসায়ী ও পরিব্রাজক মার্কোপোলো।
পরিব্রাজক ইবন বতুতার ভারতে আগমন
তিনি তৎকালীন প্রসিদ্ধ শহর সমরখন্দ ও খোরাসানে (বর্তমান আফগানিস্তান) সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবস্থান করে ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুদেশে আসেন।
কাজী হিসেবে ইবন বতুতা
দিল্লীতে এসে তিনি সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের কাছ থেকে একটি জায়গীর লাভ করেন এবং পরে রাজধানীর ‘কাজী’ নিযুক্ত হন। তিনি আট বৎসর সুলতানের অধীনে কাজে নিযুক্ত ছিলেন। দরবারেও তাঁর বিশেষ প্রভাব-প্রতিপত্তি হয়।
ইবন বতুতার চীন দেশ ভ্রমণ
একবার সুলতানের কৃপাদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে তিনি কর্মচ্যুত হন। ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুনরায় সুলতানের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং কয়েক মাস পরে তাকে চীন দেশে প্রেরণ করা হয়।
পর্যটক ইবন বতুতার চীন যাত্রা বিফল
দক্ষিণ ভারত ও বাংলায় দীর্ঘকাল ভ্রমণ করে তিনি যবদ্বীপ, সুমাত্রা ও পূর্ব ভারতীয় উপদ্বীপের পথে চীনদেশে যাত্রা করেন। তিনি চীনে উপনীত হয়েছিলেন, কিন্তু যে উদ্দেশ্যে তিনি প্রেরিত হন তা সফল হয় নি।
ইবন বতুতার মৃত্যু
তিনি কালিকটে প্রত্যাবর্তন করে সেখান থেকে জাহাজযোগে স্বদেশে যাত্রা করেন। ১৩৭৭-১৩৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিব্রাজক ইবন বতুতা রচিত গ্ৰন্থ
বৃদ্ধ বয়সে ইবন বতুতা ‘কিতাব উল রেহলা’ বা ‘রেহলা’ বা ‘সফরনামা’ নামে একটি গ্রন্থে তাঁর ভ্রমণকাহিনী লিপিবদ্ধ করেন। বর্তমানে প্রচলিত পুস্তকটি ঐ গ্রন্থের ইবন জুদি কৃত সংক্ষিপ্ত সংস্করণ।
ইবন বতুতার গ্ৰন্থের বিষয়বস্তু
পর্যটক ইবন বতুতা বহুক্ষেত্রে ইতিহাসের সাথে গালগল্প মিশিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তবুও তিনি ছিলেন একজন নিরপেক্ষ দর্শক। মহম্মদ বিন তুঘলকের আমলের কোনো কোনো ঐতিহাসিক সমস্যা সমাধানে তাঁর সাক্ষ্য সাহায্য করে। তবে তাঁর কালপঞ্জী বা ভৌগোলিক বর্ণনা সযত্নে পরীক্ষা না করে গ্রহণ করা উচিত নয়।
উপসংহার :- দেশের অবস্থা সম্বন্ধে ইবন বতুতার সাধারণ মন্তব্যগুলি ভারতীয় ঐতিহাসিকদের নিছক বিদ্রোহ এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিবরণের মূল্যবান পরিপুরক।
(FAQ) ইবন বতুতা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মরক্কো।
মহম্মদ বিন তুঘলক।
১৩৩৩ সালে।