মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্য জয় প্রসঙ্গে বাংলার বারভূঁইয়া ও আফগান শক্তি দমন, মেবারে তিনটি অভিযান, সন্ধিস্থাপন, মেবার-মুঘল শান্তিস্থাপন, কাংড়া জয়, উড়িষ্যা জয় ও বিহার জয় সম্পর্কে জানবো।
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্য জয়
ঐতিহাসিক ঘটনা | জাহাঙ্গীরের রাজ্য জয় |
মেবার | রাণা অমর সিংহ |
কাংড়া জয় | যুবরাজ খুররম |
কামরূপ জয় | ১৬২৩ খ্রি |
ভূমিকা :- জাহাঙ্গীর সিংহাসনে বসার পর তার পিতার মতই রাজ্যবিস্তার নীতি ও সাম্রাজ্য-এ সংহতি রক্ষা নীতি নিয়ে চলেন।
জাহাঙ্গীরের অমলে বাংলার বারভূঁইয়া ও আফগান শক্তি দমন
- (১) বাংলায় আফগান শক্তির শিকড় তখনও মজবুত ছিল। অনুকূল মাটিতে আফগানরা মুঘলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বীজ বপন করে। মান সিংহকে বাংলা থেকে প্রত্যাহার করার পর আফগানরা উসমান খাঁর নেতৃত্বে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে।
- (২) মানসিংহের পর অল্পদিন কুতবউদ্দিন বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তিনি শের আফগানের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন। তার পর জাহাঙ্গীর কুলি অল্পদিন সুবাদারের পদে থাকেন। জাহাঙ্গীর কুলির পর ইসলাম খাঁ বাংলার সুবাদারের পদে বসেন।
- (৩) বাংলার সুবাদার পদ ঘন ঘন পরিবর্তনের সুযোগে আফগানরা ও বারভূঁইয়ারাও বিদ্রোহী হন। আফগানদের নেতা উসমান খাঁর সঙ্গে মুঘলের যুদ্ধে উসমান খাঁ নিহত হন। এর ফলে বাংলায় আফগানদের বিদ্রোহ করার শক্তি বিনষ্ট হয়।
- (৪) এর পর ইসলাম খাঁ বারভূঁইয়াদের মধ্যে সোনারগাঁওয়ের মুসা খাঁ, যশোরের প্রতাপাদিত্যকে দমনের কাজে হাত দেন। তিনি ঢাকাকে রাজধানীতে পরিণত করে তার অভিযান চালান। প্রতাপাদিত্যকে তিনি পরাস্ত করে তার নৌবহর ধ্বংস করেন।
- (৫) ইসলাম খাঁর মৃত্যুর পর কাসিম খাঁ ও ইব্রাহিম খাঁ সুবাদার হিসেবে জমিদার ও ভূঁইয়্যা রাজাদের দমন করে বাংলায় মুঘল শাসন স্থাপন করেন।
জাহাঙ্গীরের আমলে মেবরের রান অমর সিংহ
মহারানা প্রতাপ সিংহ-এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অমর সিংহ মেবারের রাণার পদে বসলেও, তিনি পিতার মতই মেবারের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মুঘলের বশ্যতা স্বীকারে বিরত থাকেন।
জাহাঙ্গীরের আমলে মেবারে প্রথম অভিযান
সিংহাসনে বসার পরেই জাহাঙ্গীর রাজপুতানার মেবার রাজ্যের দিকে দৃষ্টি দেন। আকবরের আমল থেকে তিনি মেবার অভিযানে যোগ দেন। জাহাঙ্গীর সিংহাসনে বসার পর যুবরাজ পারভেজকে মেবার জয়ের দায়িত্ব দেন।
জাহাঙ্গীরের আমলে মেবারে দ্বিতীয় অভিযান
পারভেজ সফল হতে না পারায় ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে মহাবত খাঁর অধীনে মেবারে দ্বিতীয় অভিযান পাঠান হয়। মহাবত খাঁ একটি সম্মুখ যুদ্ধে অমর সিংহকে পরাস্ত করেন। কিন্তু অমর সিংহ এই পরাজয়ের পরেও বশ্যতা স্বীকার করেন নি। ফলে মহাবত খাঁকে মেবার থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
জাহাঙ্গীরের আমলে মেবারে তৃতীয় অভিযান
১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে যুবরাজ খুররমের নেতৃত্বে পুনরায় এক বাহিনী অমর সিংহের বিরুদ্ধে পাঠান হয়। মুঘল বাহিনী মেবারের গ্রামগুলি লুঠ করে ছারখার করে দেয়। এবং চারদিকে ঘাঁটি বসিয়ে অমর সিংহের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে দেয়। শেষ পর্যন্ত অমর সিংহ সম্মানজনক শর্তে সন্ধি স্বাক্ষরে রাজী হন। জাহাঙ্গীর মেবারের বশ্যতা চান।
মেবরের সাথে জাহাঙ্গীরের সন্ধি স্থাপন
অমর সিংহকে অপদস্থ করা তাঁর অভিপ্রায় ছিল না। এর ফলে ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীর মেবারের সঙ্গে এক সন্ধি স্থাপন করেন। এই সন্ধির দ্বারা
- (১) রাণাকে চিতোর দুর্গ ফেরত দেওয়া হয়।
- (২) রাণার পরিবারের কোনো কুমারী কন্যাকে মুঘল হারেমে পাঠাবার দাবী ত্যাগ করা হয়।
- (৩) রাণা মুঘলের বশ্যতা স্বীকার করেন।
- (৪) জাহাঙ্গীর রাণার রাজ্য ফেরত দেন।
- (৫) রাণা ১ হাজার অশ্বারোহী এবং তাঁর পুত্র করণ সিংহকে মুঘল দরবারে পাঠাতে রাজী হন। জাহাঙ্গীর করণ সিংহকে ৫ হাজার মনসবদারের পদ দেন।
মেবার-মুঘল শান্তি স্থাপন
এইভাবে অর্ধ শতাব্দী ধরে মুঘল-মেবার সঙ্ঘাতের পর মেবারের সঙ্গে শান্তি স্থাপিত হয়। জাহাঙ্গীর এজন্য কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন।
জাহাঙ্গীরের কাংড়া জয়
- (১) জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে পাঞ্জাবের উত্তর পূর্ব সীমায় অবস্থিত কাংড়া বিজয় ছিল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কাংড়ার দুর্গ ছিল দুর্ভেদ্য এবং পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এর নিকটেই ছিল দেবীতীর্থ জ্বালামুখীর মন্দির ও নগরকোট নগর। হাজার হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রী এই মন্দিরে পুজো দিত।
- (২) আকবর-এর আমলে কাংড়া দুর্গ জয়ের একবার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। জাহাঙ্গীর এই দুর্গ অধিকারের জন্য যুবরাজ খুররম ও রাজা বিক্রমজিৎ কে নিয়োগ করেন। ৪ মাস দুর্গ অবরোধ করার পর দুর্গটি মুঘলের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
জাহাঙ্গীরের উড়িষ্যা জয়
রাজা টোডরমল-এর পুত্র কল্যানমল খর্দ্দার রাজা পুরুষোত্তমকে পরাস্ত করে উড়িষ্যা জয় করেন। পুরুষোত্তমের কন্যাকে জাহাঙ্গীর বিবাহ করেন।
জাহাঙ্গীরের বিহার দখল
১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে বিহারের খোকহারের রাজা দুর্জন শালকে পরাস্ত করে এই স্থান মুঘলের রাজ্যভুক্ত করা হয়।
উপসংহার :- ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরের কিস্তওয়ার জয় করে রাজ্যভুক্ত করা হয়। ১৬২৩ খ্রিস্টাব্দে কামরূপ জয় করে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আনা হয়।
(FAQ) মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজ্য জয় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
অমরসিংহ।
যুবরাজ পারভেজ।
১৬০৮ সালে।
১৬১৫ সালে।