প্রাচীন গ্রিসের দাস ব্যবস্থা প্রসঙ্গে প্রাচীন গ্রিসের পরিচয়, গ্রিসে ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব, প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাসদের উৎস, প্রাচীন গ্রিসের দাস বাজার, প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাসদের কর্মে নিয়োগ, প্রাচীন গ্ৰিসে দাস ও দাস-প্রভু সম্পৰ্ক বিষয়ে জানবো।
গ্রিসের দাস ব্যবস্থা প্রসঙ্গে প্রাচীন গ্রিসের সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত এবং আইনি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদের ক্রয়, প্রাচীন গ্রিসের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, ক্রীতদাস হল এক ধরণের মানব সম্পদ, প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাসদের উৎস, প্রাচীন গ্ৰিসে দাস ও দাস-প্রভু সম্পৰ্ক এবং প্রাচীন গ্রিসের দাস বাজার সম্পর্কে জানব।
প্রাচীন গ্রিসের দাস ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | প্রাচীন গ্রিসের দাস ব্যবস্থা |
সভ্যতার সূচনা | ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব |
দাস প্রথা সমর্থন | অ্যারিস্টটল |
স্পার্টার ক্রীতদাস | হেলট |
থেসালির ক্রীতদাস | পেনেসটাই |
সিসিলির ক্রীতদাস | কাইলিরি |
ক্রীটের ক্রীতদাস | ক্লারোটাই |
দাস বাজার | কিওস, এথেন্স, করিন্থ |
ভূমিকা :- প্রাচীন গ্রিস-এর সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক স্তরভেদ ও অসাম্যের অস্তিত্ব ছিল। প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাস ব্যবস্থার অস্তিত্ব সেখানকার সমাজে স্বাধীন নাগরিক ও ক্রীতদাসদের মধ্যে অসাম্য সৃষ্টি করেছিল
প্রাচীন গ্রিসের পরিচয়
এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) সুপ্রাচীন সভ্যতা
প্রাচীন গ্রিস ছিল উন্নত সভ্যতার লীলাভূমি। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ অব্দে প্রাচীন গ্রিসে সভ্যতার সূচনা হয়। প্রাচীন গ্রিক সভ্যতাকে ভিত্তি করেই আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কারণ, গ্রিক সভ্যতার পরে প্রাচীন রোমান সভ্যতা এবং পরবর্তীকালে রোমান সাম্রাজ্য-এর ভাঙনের পরে আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতার উৎপত্তি হয়েছে।
(খ) পোলিস
প্রাচীন গ্রিসের এই সভ্যতা একটিমাত্র ক্ষুদ্র দেশ বা ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ ছিল না। বিভিন্ন ছোটো ছোটো ‘পলিস’ (Polis) বা নগর-রাষ্ট্র (City-State) নিয়ে প্রাচীন গ্রিস গড়ে উঠেছিল।
(গ) উত্তর ও দক্ষিণ গ্রিস
করিন্থ উপসাগর গ্রিসের মূল ভূখণ্ডকে দুইভাগে ভাগ করেছে – উত্তর গ্রিস ও দক্ষিণ গ্রিস। উত্তর গ্রিসে অবস্থিত ছিল থেসালি, এপিরাস, অ্যাকারনানিয়া, ইটোলিয়া, লোক্রিস, ডোরিস, ফোকিস, বিওসিয়া, মেগারিস, এটিকা প্রভৃতি নগর-রাষ্ট্র। দক্ষিণ গ্রিসে অবস্থিত ছিল ল্যাকোনিয়া, মেসেনিয়া, আর্কাডিয়া, এলিস, একিয়া, আর্নেলিস, সিকিওনিয়া, করিন্থ প্রভৃতি নগর-রাষ্ট্র।
(ঘ) অন্যান্য অঞ্চল
এগুলি ছাড়া আরও বহু অঞ্চল – ইজিয়ান সাগরের বিভিন্ন দ্বীপ, ক্রীট, এশিয়া মাইনরের পশ্চিমাংশ, ইতালির দক্ষিণাংশ, সিসিলি, সাইপ্রাস, উত্তর আফ্রিকা, স্পেন, ফ্রান্স ও কৃষ্ণসাগরীয় বিভিন্ন অঞ্চল বৃহত্তর গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গ্রিসে ক্রীতদাসপ্রথার অস্তিত্ব
- (১) ইতিহাসবিদ অ্যান্ড্রুজ ক্রীতদাস ব্যবস্থাকে গ্রিক সভ্যতার মৌলিক উপাদান বলে। উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন গ্রিক কবি থিওগনিস বলেছেন যে, ‘পেঁয়াজ থেকে যেমন গোলাপের জন্ম হয় না, তেমনি দাসীর গর্ভেও স্বাধীন মানুষের জন্ম হয় না।’
- (২) প্রাচীন গ্রিসের অধিকাংশ নগর-রাষ্ট্রে ক্রীতদাসপ্রথার প্রচলন ছিল এবং তখনকার পরিস্থিতিতে তা সকলের সমর্থনও লাভ করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক নাগাদ গ্রিসে ক্রীতদাসদের সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন যে, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এথেন্সে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ক্রীতদাস ছিল।
ক্রীতদাস বলতে কী বোঝায়?
ক্রীতদাস বলতে ঠিক কী বোঝায় তা নিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন অভিমত দিয়েছেন। যেমন –
(১) সম্পত্তি
সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, সম্পত্তি বলতে যা বোঝায় তার সকল বা আংশিক বৈশিষ্ট্য যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তবে সেই ব্যক্তি ক্রীতদাস বা দাস বলে গণ্য হয়। প্রভু তাঁর অধীনস্থ ক্রীতদাসের শ্রম নিজের উৎপাদনমূলক কাজে বা নিজের পরিচর্যায় ব্যবহার করার অধিকারী।
(২) গবাদিপশু তুল্য
ডিও ক্রাইসসটম মনে করেন যে, গবাদিপশু যেমন প্রভুর সম্পত্তি তেমনি ক্রীতদাসও প্রভুর এক ধরনের সম্পত্তি। প্রভু নিজের ইচ্ছামতো তার অধীনস্থ দাসকে কাজে লাগাতে পারে।
(৩) ক্রীতদাসের মালিকানা
প্রাচীনকালে অ্যারিস্টটলও গ্রিসের ক্রীতদাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন যে, ক্রীতদাসের প্রভু হল তার মালিক। প্রভুর পৃথক সত্তা থাকলেও ক্রীতদাসের কোনো পৃথক সত্তা বা অস্তিত্ব নেই। তাঁর মতে, দাসপ্রথা হল প্রকৃতির বিধান এবং দাসদের পক্ষেও কল্যাণকর।
প্রাচীন গ্ৰিসে ক্রীতদাসদের উৎস
গ্রিসে ক্রীতদাস সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতি ছিল। যেমন –
(১) যুদ্ধবন্দি
সেদেশের ক্রীতদাসদের একটি বড়ো অংশই আসত যুদ্ধবন্দিদের মধ্য থেকে। শত্রুপক্ষের পরাজিত সৈন্য, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বন্দি করে গ্রিসের সেনাপতিরা সেদেশের দাস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিত।
(২) জলদস্যুদের আক্রমণ
গ্রিসের জলদস্যুরা বিদেশিদের জাহাজ আক্রমণ করে বা সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে লোকজন ধরে এনে দাসবাজারে বিক্রি করত।
(৩) অপহরণ
অনেক সময় শিশুদের অপহরণ করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হত।
(৪) ঋণী ব্যক্তি
প্রভুর ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়ার প্রথা ছিল।
(৫) জন্মসূত্র
ক্রীতদাসদের সন্তানসন্ততি জন্মসূত্রে ক্রীতদাসে পরিণত হত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিতামাতা দারিদ্র্যের কারণে তাদের সন্তানদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত।
(৬) ক্রীতদাস আমদানি
আবার যুদ্ধবন্দি ক্রীতদাসদের সংখ্যা গ্রিসের চাহিদার তুলনায় খুবই কম ছিল বলে থ্রেস, ইলিরিয়া, থেসালি, সিথিয়া, লিডিয়া, সিরিয়া, মিশর, আরব প্রভৃতি দেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক দাস গ্রিসে আমদানি করা হত।
(৭) অন্যান্য ক্রীতদাস
এ ছাড়া, স্পার্টায় হেলট, থেসালিতে পেনেসটাই, সিসিলিতে কাইলিরি, ক্রীটে ক্লারোটাই ইত্যাদিও ছিল এক ধরনের দাস। তবে এরা ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে দাসে পরিণত হয় নি, হয়েছিল ভাগ্যবিপর্যয়ের মাধ্যমে।
প্রাচীন গ্ৰিসে দাস বাজার
এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) দাস ব্যাবসা
প্রাচীন গ্রিসে দাস ব্যাবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। দাস ক্রয়বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন নগর-রাষ্ট্রে বহু দাস বাজার গড়ে উঠেছিল। সর্বপ্রথম কিওস-এ এবং পরবর্তীকালে এথেন্স, ডেলস, করিন্থ, ইজিনা ও অন্যান্য রাষ্ট্রে দাস বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়।
(২) বাজারে ক্রীতদাস উপস্থাপন
দাস বাজারে বিক্রির জন্য হাজির করা ক্রীতদাসের যাবতীয় বিবরণ একটি কাগজে লিখে তা তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হত। এই বিবরণে দাসটির বয়স, দেশ, তার নিরোগ শরীর প্রভৃতির উল্লেখ থাকত। ক্রেতা কেনার আগে দাসটির মাংসপেশি টিপে দেখত এবং দৈহিক শক্তি, সহ্যক্ষমতা প্রভৃতি পরীক্ষা করত।
(৩) ক্রীতদাসের মূল্য
গ্রিসে সাধারণ দাসদের দাম খুব বেশি ছিল না। ১৬৮ ড্রাকমাই দিয়ে একজন ক্রীতদাস এবং ১৪৭.৫ ড্রাকমাই দিয়ে একজন ক্রীতদাসী কেনা যেত। ক্রোয়া বলেছেন যে, একজন কারিগর তার বার্ষিক আয়ের অর্ধাংশ দিয়ে একজন দাস ক্রয় করতে পারত।
প্রাচীন গ্ৰিসে ক্রীতদাসদের কর্মে নিয়োগ
প্রাচীন গ্রিসের সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সেখানকার ক্রীতদাস ব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। গ্রিসের দাস প্রভুরা তাঁদের অধীনস্থ ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত করত। বিভিন্ন পরিশ্রমসাধ্য ও উৎপাদনমূলক কাজকর্মে ক্রীতদাসদের নিয়োগের ফলে দাস প্রভুর জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য আসত। গৃহকাজ, ব্যাবসাবাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন, কৃষিকাজ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের কাজে গ্রিসের ক্রীতদাসদের নিয়োগ করা হত। যেমন –
(ক) গৃহকাজে নিয়োগ
- (১) গ্রিসের বেশির ভাগ ক্রীতদাস গৃহকাজে নিযুক্ত হত। হোমার, হেসিয়ড, অ্যারিস্টটল প্রমুখের রচনা থেকে গৃহকাজে নিযুক্ত ক্রীতদাসদের উল্লেখ পাওয়া যায়। ধনী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের গৃহকাজের জন্যও ক্রীতদাস থাকত। কোনো কোনো ধনী পরিবারের গৃহকাজে পঞ্চাশজন পর্যন্ত ক্রীতদাস নিযুক্ত থাকত।
- (২) গৃহকাজে নিযুক্ত ক্রীতদাসরা প্রভুর বাড়িতে ঘরদোর পরিষ্কার, রান্নাবান্না, শস্য ঝাড়াই, কুঁয়ো থেকে জল তোলা, কাপড় বোনা, প্রভুর মালপত্র বহন করা, প্রভুর সেবা করা, প্রভুর ভ্রমণসঙ্গী হওয়া প্রভৃতি কাজ করত। কোনো কোনো ক্রীতদাসীকে প্রভুর শয্যাসঙ্গিনীও হতে হত।
(খ) খনি ও শিল্পে নিয়োগ
- (১) অনেক ক্রীতদাসকে শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন প্রকার শিল্প-উৎপাদনের কাজে নিয়োগ করা হত পরিশ্রমসাধ্য যাবতীয় কাজ প্রভুরা তাদের দাসদের দিয়ে করাত। প্রভুর পরিচালিত হস্তশিল্পের উৎপাদনে, পাথর সংগ্রহ বা আকরিক খনিজ উৎপাদনের কাজে প্রচুর ক্রীতদাস শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। লরিয়নের খনিতে কয়েক হাজার দাস-শ্রমিক নিযুক্ত ছিল।
- (২) কোনো কোনো প্রভুর হস্তশিল্পের কারখানাগুলিতে শতাধিক দাস শ্রমিক কাজ করত। ছোটো ছোটো কারখানাগুলিতেও সমবেতভাবে বহু দাস নিযুক্ত থাকত। গম নামের জনৈক পণ্ডিত জানিয়েছেন যে, এথেন্সের শিল্পের কাজে পঞ্চাশ হাজার এবং খনির কাজে দশ হাজার ক্রীতদাস নিযুক্ত ছিল। দাসরা বাণিজ্যিক জলযানের দাঁড় টানত।
(গ) ভাড়াটে ও বন্ধকি ক্রীতদাস হিসেবে
এক্ষেত্রে প্রধান দুটি দিক হল –
(১) ভাড়া খাটানো
প্রভু তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে ভাড়া খাটিয়ে যথেষ্ট আয় করত। এথেন্সের বিভিন্ন খনিতে এরূপ দশ হাজার ক্রীতদাস শ্রমিক ভাড়া খাটত। নিকিয়াস তার অধীনস্থ এক হাজার ক্রীতদাসকে ভাড়া খাটিয়ে প্রচুর আয় করতেন বলে জেনোফোন উল্লেখ করেছেন। কোনো কোনো প্রভু মাত্র একজন ক্রীতদাসকে ভাড়া খাটাচ্ছেন – এমন উদাহরণও পাওয়া যায়। ভাড়াটে ক্রীতদাসরা স্বাধীন নাগরিক ও বিদেশিদের সঙ্গে মিলিতভাবেই শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত থাকত।
(২) বন্ধক
বন্ধকি ব্যাবসার ক্ষেত্রেও ক্রীতদাসদের ব্যবহার করা হত। ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে না পারা পর্যন্ত তার ক্রীতদাস বন্ধকি হিসেবে ঋণদাতার অধীনে কাজ করত।
(ঘ) কৃষিকাজে নিয়োগ
- (১) ব্যাপকভাবে না হলেও গ্রিসে যথেষ্ট সংখ্যক ক্রীতদাস প্রভুর কৃষিজ ফসল উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত থাকত বলে জানা যায়। সাধারণ ও ধনী উভয় কৃষকরাই চাষের কাজে ক্রীতদাস নিয়োগ করত। কবি হেসিয়ডের কাব্য থেকে জানা যায় যে, ক্ষুদ্র কৃষকও ক্রীতদাসের সহায়তায় তার জমি চাষ করত।
- (২) ক্রীতদাসরা জমিতে চাষবাস করত, শস্য মাড়াই করত, আঙুরের রস ও জলপাইয়ের তেল নিষ্কাশনের কাজ করত এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে বহন করে বাজারে নিয়ে যেত। চাষের মরশুমে ভাড়াটে নাম এনেও কৃষিকাজে নিয়োগ করা হত।
(ঙ) অন্যান্য কাজে নিয়োগ
উল্লিখিত কাজগুলি ছাড়াও গ্রিসের ক্রীতদাসরা আরও বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত থাকত। যেমন –
(১) করণিক
ব্যাংক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে করণিকের কাজেও কোনো কোনো ক্রীতদাস নিযুক্ত হত।
(২) বাণিজ্য পরিচালনা
কেউ কেউ প্রভুর ব্যাবসাবাণিজ্য পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত।
(৩) দলিল রক্ষণাবেক্ষণ
এথেন্সের বহু ক্রীতদাস সরকারি দলিলপত্র রক্ষণাবেক্ষণ করত এবং পৌর প্রশাসনের দিকে নজর রাখত।
(৪) রাস্তাঘাট তৈরি
সরকারি রাস্তা তৈরির কাজেও ক্রীতদাসরা যুক্ত থাকত।
(৫) পুলিশ
এথেন্সের পুলিশ বিভাগেও ক্রীতদাস নিযুক্ত ছিল বলে জানা যায়।
প্রাচীন গ্ৰিসে দাস ও দাস-প্রভু সম্পৰ্ক
এক্ষেত্রে প্রধান দুটি দিক গুলি হল –
(ক) সুসম্পর্ক
গ্রিসে ক্রীতদাস ও তার প্রভুর মধ্যে আনুগত্য ও প্রভুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। প্রভু-ভৃত্যের এই সম্পর্ক কখনো-কখনো মধুর হয়ে উঠত। যেমন –
(১) একত্রে কাজ
কখনো-কখনো দেখা যেত যে, প্রভুর অধীনস্থ দাসরা অনেক সময় স্বাধীন শ্রমিক ও বিদেশিদের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে, বাইরে থেকে পৃথকভাবে দাসকে চেনা যেত না।
(২) একত্রে বসবাস
দাসরা প্রভুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করত। ওডিসিতে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, দাস তার প্রভুর সঙ্গে একই টেবিলে আহার করছে।
(৩) প্রভুর জীবন রক্ষা
প্রভুর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে দাস তার প্রভুর বিপদের সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে প্রভুর জীবন রক্ষা করছে – এমন উদাহরণও পাওয়া যায়।
(৪) পুরস্কার
প্রভুও তার অনুগত ও বিশ্বস্ত দাসকে পুরস্কৃত করত। ঐতিহাসিক ফিনলে এথেন্সে এই ধরনের দাসদের ‘অর্ধ স্বাধীন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
(খ) দাসদের নির্যাতন
তবে আপাতদৃষ্টিতে প্রভুর সঙ্গে দাসদের সুসম্পর্ক দেখা গেলেও বাস্তবে দাসদের উপর প্রভুর নির্যাতন ও অত্যাচার এই সম্পর্ককে সর্বদাই তিক্ত করে রাখত। যেমন –
(১) আন্তরিকতা হ্রাস
ক্রীতদাস তার পরিশ্রমের বিনিময়ে ভবিষ্যতে কোনো সুদিনের আশার আলো দেখতে পেত না। ফলে সে শ্রমের প্রতি আন্তরিকতা হারিয়েছিল।
(২) শারীরিক শাস্তি
এজন্য দাসদের দিয়ে কাজ করানোর জন্য প্রভুকে সর্বদা বিভিন্ন ধরনের শাস্তিদানের ব্যবস্থা রাখতে হত। কোনো দাস কাজে ফাঁকি দিলে বা একটু বিশ্রাম নিতে চাইলে তার পিঠে চাবুকের নির্মম আঘাত নেমে আসত। চাবুকের আঘাত, বেত্রাঘাত, লোহা পুড়িয়ে ছ্যাঁকা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের … শারীরিক নির্যাতনের ফলে ক্রীতদাসের শরীরে সারাবছরই কালচে ঘা হয়ে থাকত।
(৩) অধিকার থেকে বঞ্চনা
দাসদের প্রতি কোনো অন্যায় হলে তারা নিজেদের সপক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ারও অধিকার পেত না।
(৪) যৌন নির্যাতন
বহু ক্রীতদাসী তার প্রভুর যৌন লালসার শিকার হত। সেনেকা বলেছেন যে, ‘সতীত্ব হারানোর ঘটনা নাগরিকদের কাছে অপরাধ হলেও ক্রীতদাসীদের কাছে অপরিহার্য ছিল।’
(৫) দাস বিদ্রোহ
দাসদের উপর নেমে আসা এরূপ বহুবিধ নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা সর্বদা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত অথবা কখনো-কখনো বিদ্রোহের পথে পা বাড়াত।
উপসংহার :- প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগর-রাষ্ট্র -এ ক্রীতদাসপ্রথার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের কিছু পার্থক্য থাকলেও এর মূল কাঠামোটি সব জায়গায় একই রকম ছিল। এই সময়ের ক্রীতদাসরা এথেন্সে থিটিস, স্পার্টায় হেলট, থেসালিতে পেনেসটাই, সিসিলিতে কাইলিরি, ক্রীটে ক্ল্যারোটাই এবং পন্টিকায় ম্যারিয়ানডিনি নামে পরিচিত ছিল।
(FAQ) প্রাচীন গ্রিসের দাস ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আনুমানিক ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব।
হেলট।
কিওস।
ক্লারোটাই।