ঘুর বংশের উত্থান

ঘুর বংশের উত্থান প্রসঙ্গে ঘুর রাজ্যের পরিচয়, সাহান্সবানী বংশ, গজনীর আধিপত্য, গজনীর সামন্ত রাজ্য, ইসলাম ধর্ম প্রচার, সুন্নী প্রভাব, সাত তারকা, আলাউদ্দিন হুসেনের গজনী জয়, সৈফুদ্দিন ও গিয়াসউদ্দিন মহম্মদ ঘুরি সম্পর্কে জানবো।

আফগানিস্তানে ঘুর বংশের উত্থান

ঐতিহাসিক ঘটনাঘুর বংশের উত্থান
প্রথম সুলতানআলাউদ্দিন হুসেন
ঘুর রাজ্য জয়মামুদ
গজনী জয়আলাউদ্দিন হুসেন
ভারত অভিযানমহম্মদ ঘুরী
ঘুর বংশের উত্থান

ভূমিকা :- পশ্চিম আফগানিস্থান -এ গজনী ও হিরাটের মাঝামাঝি স্থানে ১০ হাজার ফুট উঁচুতে ঘুর অঞ্চল অবস্থিত। ঘুর রাজ্যের আদি বাসিন্দারা ছিল মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বী কষ্টসহিষ্ণু পার্বত্য জাতি।

ঘুর রাজ্যের পরিচয়

হুদুদ-উল-আলমের মতে, ঘুর দেশে এক কৃষিজীবি, উগ্র স্বভাবের, অরাজকতা প্রবণ, অজ্ঞ জনসমাজ বাস করত। ঘুর দেশে গম, বিভিন্ন ফলের চাষ হত। তবে ঘুরদেশ প্রসিদ্ধ ছিল ভাল ইস্পাত ও ইস্পাতের অস্ত্র, ভাল জাতের যুদ্ধের ঘোড়া ও ক্রীতদাসের জন্য।

ঘুর রাজ্যের সাহান্সবানী বংশ

পারস্য থেকে সাহান্সবানী বংশ বিতাড়িত হয়ে মধ্য এশিয়ায় পালিয়ে যায় এবং তুর্কীদের দেশে থাকার দরুন সাহান্সবানী বংশের ধারায় তুর্কী প্রভাব ঢুকে পড়ে। কালক্রমে সাহান্সবানী বংশ আফগানিস্থানের ঘুর অঞ্চলে বসবাস করে। সাহান্সবানী বংশের প্রথম বিখ্যাত লোক ছিলেন জুহক (Zuhak)। তার বংশধর ছিলেন শানসাব।

ঘুর রাজ্যের উপর গজনীর আধিপত্য

শানসাব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খলিফা আলির বিশেষ অনুগত। সাহান্সবানী বংশ ঘুর প্রদেশে তাদের আধিপত্য স্থাপন করে। কিন্তু গজনীর সুলতান সবুক্তগীন ঘুর জয় করে সাহান্সবানী বংশকে গজনীর আধিপত্য মানতে বাধ্য করেন।

গজনীর সামন্ত রাজ্য ঘুর

সাহান্সবানী বংশের মহম্মদ বিন সুরী গজনীর আধিপত্য অস্বীকার করে রাজস্ব প্রদান বন্ধ করলে গজনীর সুলতান মামুদ ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে ঘুর আক্রমণ করে ঘুররাজ্য ও সাহান্সবানী বংশকে গজনীর সামন্ত রাজ্যে পরিণত করেন।

সুলতান মামুদের ইসলাম ধর্ম প্রচার

মামুদ ঘুর রাজ্যে ইসলাম ধর্মকে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামীয় সংস্কৃতি প্রচার করেন। ঘুরের অধিবাসীদের মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আনুগত্য ছিল। সুলতান মামুদের প্রভাবে ইসলামীয় ধর্মপ্রচারকরা রাজ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন।

সুলতান মামুদের আমলে সুন্নী প্রভাব

মামুদের ধর্ম প্রচারের ফলে সাহান্সবানী বংশও ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুরক্তি দেখায়। যদিও এই বংশে ছিল কারামীয় সম্প্রদায়ের মুসলিম, সুলতান মামুদের প্রভাবে হানাফি বা সুন্নী মতামতের প্রতি সাহান্সবানী বংশ তাদের আনুগত্য জানান।

ঘুর রাজ্যের সাত তারকা

দ্বাদশ শতকের গোড়ায় ঘুর রাজ্যে সাহান্সবানী বংশে সাত ভাই যৌথ ক্ষমতা ভোগ করতেন। এদের নাম ছিল “সাত তারকা” (Seven stars)। ১১১০ খ্রিস্টাব্দে গজনী রাজ্য-এর ক্ষমতা কমে গেলে ঘুরের ‘সাত তারকা’ গজনীর প্রতি তাদের আনুগত্য কমিয়ে দেন।

ঘুর বংশের সুলতান আলাউদ্দিন হুসেনের গজনী জয়

  • (১) এই সাত ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মালিক কুতবউদ্দিন হাসান মহম্মদকে গজনীর সুলতান বাহারাম শাহ হত্যা করলে, নিহত কুতবউদ্দিনের অন্যতম ভাই আলাউদ্দিন হুসেন গজনী আক্রমণ করে বাহারামকে বিতাড়িত করেন। বাহারাম তাঁর রাজ্যের ভারতীয় অঞ্চল পাঞ্জাবে আশ্রয় নেন।
  • (২) আলাউদ্দিন গজনী নগর দগ্ধ করে “জাহানসুজ” বা “জগৎদাহকারী” (World Burner) উপাধি নেন। তিনি নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। এর আগে সাহান্সবানী বংশের উপাধি ছিল “মালিক”। এখন থেকে আলাউদ্দিন হুসেন নিজেকে সুলতানরূপে ঘোষণা করেন।

ঘুর বংশের সুলতান সৈফুদ্দিন

আলাউদ্দিন হুসেনকে ঘুর বংশের প্রথম সুলতান মনে করা হয়। তার পর ঘুর বংশের সিংহাসনে বসেন সৈফুদ্দিন মহম্মদ।

ঘুর বংশের সুলতান গিয়াসুদ্দিন মহম্মদ ঘুরী

এর পর ঘুরের সিংহাসনে বসেন গিয়াসুদ্দিন মহম্মদ ঘুরী। (১১৬৯-১২০০খ্রি)। গিয়াসুদ্দিন ছিলেন খুবই যোগ্য সুলতান। তার ডান হাত ছিলেন তার তাই সিহাবুদ্দিন বা মুইজুদ্দিন মহম্মদ ঘুরী। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার নির্দেশে তিনি গজনী অধিকার করেন।

উপসংহার :- গিয়াসুদ্দিনের মৃত্যুর পর (১২০০ খ্রীঃ) মুইজুদ্দিন মহম্মদ ঘুরী ঘুর রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। শুরু হয় ঘুর রাজ্যের সাফল্যের ইতিহাস।

(FAQ) ঘুর বংশের উত্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ঘুর রাজ্য কোথায় অবস্থিত?

গজনী ও হিরাটের মাঝামাঝি স্থানে।

২. ঘুর রাজ্য কিসের জন্য বিখ্যাত ছিল?

ভাল জাতের যুদ্ধের ঘোড়া ও ক্রীতদাস।

৩. ঘুর বংশের প্রথম সুলতান কে?

আলাউদ্দিন হুসেন।

৪. ঘুর বংশের কোন সুলতান ভারত আক্রমণ করেন?

মুইজুদ্দিন মহম্মদ ঘুরী।

Leave a Comment