১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট পাস, আইনের প্রবর্তক, আইনের শর্তাবলি, আইনের ত্রুটি, আইনের গুরুত্ব, ১৮৫৩ সালের সনদ আইন পাসের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিদায় ঘণ্টা আসন্ন সম্পর্কে জানবো।

ভারতে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন

ঐতিহাসিক ঘটনা১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন
প্রবর্তকব্রিটিশ পার্লামেন্ট
প্রবর্তন কাল১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ
পূর্ববর্তী আইনসনদ আইন ১৮৩৩
পরবর্তী আইন১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন

ভূমিকা :- ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন -এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবীকরণের উদ্দেশ্যে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাস করা হয়।

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের শর্তাবলি

ভারতে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টবা সনদ আইনে বলা হয় যে,

  • (১) ভারত -এ কোম্পানির শাসন পরিচালনার অধিকার বজায় রাখা হয়। তবে এবার কোনো মেয়াদ উল্লেখ করা হয়নি।
  • (২) অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কোম্পানির আমলাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
  • (৩) আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বড়োলাটের অধীনে ১২ জন সদস্যবিশিষ্ট আইন পরিষদ গঠিত হয়।
  • (৪) যে-কোনো আইন প্রবর্তনে গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়।
  • (৫) ভারতে আইন বিষয়ক পরামর্শদানের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড -এ আইন কমিশন’ গঠিত হয়।
  • (৬) একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বাংলার শাসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
  • (৭) বিলাতে কোম্পানির ডিরেক্টরদের সংখ্যা ২৪ থেকে কমিয়ে ১৮ জন করা হয়।

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের ত্রুটি

ভারতে ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের প্রধান ত্রুটি ছিল এই যে, আইন পরিষদে কোনো ভারতীয়কে সদস্য করা হয়নি। ফলে সরকার ও আইন প্রণেতাদের সাথে সাধারণ ভারতবাসীর একটা ব্যবধান থেকে গিয়েছিল। ভারতবাসীর ক্ষোভ বা চাহিদা সম্পর্কে সরকার অন্ধকারেই থেকে গিয়েছিল।

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের গুরুত্ব

সর্বশেষ এই চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। যেমন –

  • (১) এই আইনে ভারতে কোম্পানির শাসন পরিচালনার কোনো সময়সীমা ধার্য না হওয়ায় বোঝা যায় যে, কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতের শাসনক্ষমতা অধিগ্রহণের বিষয়টি শুধু সময়ের অপেক্ষা।
  • (২) বড়োলাটের আইন পরিষদে শাসন বিভাগ থেকে আইন বিভাগকে পৃথক করে এদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটানো হয়।
  • (৩) অবশ্য বড়োলাটের আইন পরিষদে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকার ভারতীয়দের ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিদায় ঘণ্টা

যেহেতু ১৮৫৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে আরও ২০ বছরের জন্য ভারত শাসন করার অধিকার দেয়নি, তাই মনে করা হয়ব্রিটিশ সরকার ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জায়গা নেওয়ার সুযোগ দেয়। এই প্রক্রিয়াটি ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ দ্বারা ত্বরান্বিত হয়েছিল।

উপসংহার :- ১৮৫৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য পাস করা শেষ চার্টার অ্যাক্ট। আইনটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা দেয়নি যেমনটি পূর্ববর্তী সনদ আইনে দেওয়া হয়েছিল। এই চার্টার অ্যাক্ট ভারতে সংসদীয় ব্যবস্থার সূচনা করে। গভর্নর জেনারেল বাংলার প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন এবং পরিবর্তে ভারত সরকারের হয়ে কাজ করেছিলেন।

(FAQ) ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রণীত ভারতের শেষ চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন কোনটি?

১৮৫৩ সালের সনদ আইন।

২. কোন চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের মাধ্যমে ভারতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়?

১৮৫৩ সালের সনদ আইন।

৩. কোন চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন অনুসারে ভারতে আইন পরিষদ গঠিত হয়?

১৮৫৩ সালের সনদ আইন।

Leave a Comment