১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট পাস, আইনের প্রবর্তক, আইনের শর্তাবলি, আইন অনুসারে ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল, ভারতীয় আইন কমিশন, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে বিভক্তি, সরকারি চাকরিতে ভারতীয়রা, দাসত্ব বিষয়ে আইনের বক্তব্য, খ্রিস্টধর্মের ক্ষেত্রে আইনের বক্তব্য ও এই আইনের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানবো।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন
ঐতিহাসিক ঘটনা | ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন |
প্রবর্তক | ব্রিটিশ পার্লামেন্ট |
প্রবর্তন কাল | ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ |
পূর্ববর্তী আইন | ১৮১৩ সালের সনদ আইন |
পরবর্তী আইন | ১৮৫৩ সালের সনদ আইন |
ভূমিকা:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবীকরণের উদ্দেশ্যে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাস করা হয়।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের শর্তাবলি
কোম্পানী প্রবর্তিত ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনে বলা হয় যে,
- (১) ভারত -এ কোম্পানি আরও ২০ বছর শাসন পরিচালনা করবে।
- (২) কোম্পানির যাবতীয় আর্থিক দায় ও ঋণ ভারতের রাজস্ব থেকে পরিশোধ করতে হবে।
- (৩) বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি ভারত বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাবেন।
- (৪) বাংলার গভর্নর-জেনারেল এখন থেকে ভারতের গভর্নর-জেনারেল বলে বিবেচিত হবেন।
- (৫) গভর্নর-জেনারেল সমগ্র ভারতের জন্য আইন তৈরির অধিকার পাবেন।
- (৬) কোম্পানির কর্মচারীর ভারতে জমি ক্রয়বিক্রয়ের অধিকার পাবেন।
- (৭) জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে সকল ভারতীয় ও ব্রিটিশ কোম্পানির অধীনে চাকরি পাবেন।
ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল
১৮৩৩ সালের সনদ আইন অনুসারে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ভারতীয় আইন কমিশন
- (১) ১৮৩৩ সালের সনদ আইন অনুসারে একটি ভারতীয় আইন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন লর্ড মেকলে।
- (২) এই সনদ আইন বাধ্যতামূলক করেছিল যে ভারতে প্রণীত যে কোনও আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে উপস্থাপন করতে হবে এবং তাকে ‘অ্যাক্ট’ বলা হবে।
বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে বিভক্তি
১৮৩৩ সালের সনদ আইনটি বাংলার প্রেসিডেন্সিকে আগ্রা এবং ফোর্ট উইলিয়ামের প্রেসিডেন্সিতে বিভক্ত করার ব্যবস্থা করেছিল। যদিও তা কার্যকর হয় নি।
সরকারি চাকরিতে ভারতীয়রা
এটিই প্রথম আইন যা ভারতীয়দের দেশের প্রশাসনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়।এই আইনে বলা হয়েছে যে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ভিত্তি হতে হবে যোগ্যতা।জন্ম, বর্ণ, ধর্ম বা জাতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
দাসত্ব সম্পর্কে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের উল্লেখ
১৮১৩ সালের সনদ আইনে সেই সময়ে ভারতে বিদ্যমান দাসত্ব প্রশমনের কথা বলা হয়। কারণ, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮৩৩ সালে ব্রিটেনে দাসপ্রথা এবং তার সমস্ত সম্পত্তি বিলুপ্ত করে।
খ্রিস্টধর্মের ক্ষেত্রে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের উল্লেখ
এই আইনের মাধ্যমে ভারতে খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল সরকার।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের মূল্যায়ণ
মার্শম্যান মন্তব্য করেছেন যে, এই আইন ছিল ‘কোম্পানির প্রশাসনিক দক্ষতাবৃদ্ধির সুচিন্তিত পদক্ষেপ’। এই আইনের দ্বারা ভারতে ব্রিটিশ পুঁজির অবাধ প্রবেশের সুযোগ হয়। গভর্নর-জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভারতে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রস্তুত করা হয়। গভর্নর-জেনারেল সমগ্র ভারতবর্ষের জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার পাওয়ায় সারা দেশে একই ধরনের আইন প্রবর্তনের পথ প্রস্তুত হয়।
উপসংহার :- ১৮৩৩ সালের সনদ আইন ছিল ভারতের প্রশাসনের কেন্দ্রীকরণের চূড়ান্ত পদক্ষেপ। এই আইনের শর্ত সাপেক্ষে লর্ড মেকলের অধীনে আইনের সংহতিকরণ করা হয়।
(FAQ) ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন।
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন।