১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন -এর প্রবর্তক, আইন পাস, আইনের শর্তাবলি, ডিরেক্টর সভা ও বোর্ড অফ কন্ট্রোলের ক্ষমতা লোপ, ভারত সচিব নিয়োগ, ভারত সচিবকে ক্ষমতা প্রদান, ইন্ডিয়া কাউন্সিল গঠন, ভারত সচিব সর্বেসর্বা, ইন্ডিয়া কাউন্সিলের পরামর্শ গ্ৰহণ বাধ্যতামূলক নয়, ভারত ও ইংল্যান্ডের দুরত্ব হ্রাস ও এই আইনের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানবো।
১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন
ঐতিহাসিক ঘটনা | ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন |
প্রবর্তক | ব্রিটিশ পার্লামেন্ট |
প্রবর্তন কাল | ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ |
পূর্ববর্তী আইন | ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন |
পরবর্তী আইন | ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় কাউন্সিল আইন |
ভূমিকা:- মহাবিদ্রোহ -এর ফলে ভারতে কেবলমাত্র কোম্পানির শাসনের অবসানই হয়নি ভারতীয় শাসন-ব্যবস্থায় বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের যে আইন দ্বারা ভারতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়, তার নাম ছিল ‘ভারতে উন্নত ধরনের শাসন প্রবর্তনের আইন’
ভারত শাসন আইন পাস
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবর ‘ভারত শাসন আইন’ পাস করে
১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের শর্তাবলি
এই আইনের দ্বারা
- (১) ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে।
- (২) ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ সরকার অর্থাৎ ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে প্রদান করা হয়।
- (৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া বা ভারত সচিব নামে ভারত বিষয়ক একজন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ইংল্যান্ড থেকে ভারতের শাসন পরিচালনা করেন।
- (৪) ভারত-সচিবকে সহায়তা করার জন্য ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট ইন্ডিয়া কাউন্সিল গঠিত হয়।
- (৫) রানির প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের গভর্নর-জেনারেল প্রত্যক্ষভাবে এদেশের শাসন অধিকার পান।
- (৬) এখন থেকে গভর্নর জেনারেল ‘ভাইসরয়’ উপাধিতে ভূষিত হন। ভারতের প্রথম ভাইসরয় হন লর্ড ক্যানিং।
ডিরেক্টর সভা ও বোর্ড অফ কন্ট্রোলের ক্ষমতা লোপ
বিদ্রোহের পূর্বে ভারত শাসন সম্পর্কিত সকল বিষয়ে কোম্পানির ‘ডিরেক্টর সভা’ ও ‘বোর্ড অফ কন্ট্রোল’-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই আইন অনুসারে এই দুই সংগঠনের সকল কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হয়।
ভারত-সচিবকে ক্ষমতা প্রদান
ডিরেক্টর সভা ও বোর্ড অফ কন্ট্রোল যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ভোগ করত তা ‘ভারত সচিব’ বা ‘সেক্রেটারি অফ স্টেটস্ ফর ইন্ডিয়া’ নামক জনৈক পদাধিকারীর ওপর অর্পিত হয়।
ভারত সচিব নিয়োগ
ইংল্যাণ্ডের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকেই ‘ভারত সচিব’ নিযুক্ত হতেন এবং তাঁর কাজের জন্য তিনি পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকতেন।
ইন্ডিয়া কাউন্সিল গঠন
ভারত সচিবকে সাহায্যের জন্য আরও পনেরো জন সদস্যকে নিয়ে একটি সভা গঠিত হয়, যার নাম ‘ইন্ডিয়া কাউন্সিল’ (India Council)।
ভারত সচিব সর্বেসর্বা
বস্তুতপক্ষে, এই আইন দ্বারা ভারত শাসন ব্যাপারে ‘ভারত সচিব’-ই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। আইনত তিনি পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকলেও, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত সম্পর্কে উদাসীন ছিল।
ইন্ডিয়া কাউন্সিলের পরামর্শ গ্ৰহণ বাধ্যতামূলক নয়
ভারত সচিবকে পরামর্শদানের জন্য গঠিত ‘ইন্ডিয়া কাউন্সিল’-এর পরামর্শ গ্রহণ করা বা না-করা সম্পূর্ণভাবে ভারত সচিবের ইচ্ছাধীন ছিল।
ভারত ও ইংল্যান্ডের দূরত্ব হ্রাস
পূর্বে ভারতে শাসন-নীতি নির্ধারণে গভর্নর জেনারেলদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, কিন্তু ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খাল খননের ফলে ইংল্যাণ্ড ও ভারতের মধ্যে দূরত্ব অনেক হ্রাস পায়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে ভারত ও ইংল্যাণ্ডের মধ্যে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে গভর্নর জেনারেল প্রতিটি সিদ্ধান্তের জন্য ভারত সচিবের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন।
আইনের মূল্যায়ন
১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা শাসন কার্যে ভারতীয়দের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ভারত-সচিবের ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় ব্রিটিশ বিত্তবানদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার:- এই আইনের পর থেকে ভারতীয় শাসননীতিতে ব্রিটিশ শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও ব্যাঙ্ক মালিকদের প্রভাব ক্রমবর্ধমান হয়ে ওঠে। এর স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে ভারতীয় শাসনব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় অধিকতর প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে এবং ব্রিটিশ উদারনীতির মুখোশটিও ধীরে ধীরে অপসৃত হয়।
(FAQ) ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর।
১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন।
১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন।
লর্ড ক্যানিং।