ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন -এর প্রেক্ষাপট, প্রতিষ্ঠা, সভাপতি ও সম্পাদক, সদস্য, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, সোসাইটির মুখপত্র, সোসাইটির প্রসার, সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান, আন্দোলন গঠন, দাবি প্রেরণ, দাবি পত্রের বিষয়, সোসাইটির ব্যর্থতার কারণ ও অবলুপ্তি সম্পর্কে জানবো।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকাল, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচি, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ব্যর্থতার কারণ ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের বিলুপ্তি।
১৮৫১ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন
বিষয় | ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দ |
প্রধান উদ্যোক্তা | দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর |
প্রথম সভাপতি | রাজা রাধাকান্ত দেব |
প্রথম সম্পাদক | দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর |
ভূমিকা :- একক প্রচেষ্টায় ভারতে জাতীয় আন্দোলন পরিচালনা করা সম্ভব নয় উপলব্ধি করে ভারতবাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। তেমনই একটি উল্লেখযোগ্য সংগঠন হল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠনের প্রেক্ষাপট
- (১) এতদিন পর্যন্ত কোনও ইংরেজ মফস্বলে অপরাধ করলে মফস্বল আদালতে তার বিচার হত না, তার বিচার হত একমাত্র কলকাতার সুপ্রিম কোর্ট -এ।
- (২) এই ব্যবস্থার প্রতিরোধকল্পে তদানীন্তন আইন-সচিব বেথুন ১৮৪৯ সালে একটি বিলের খসড়া তৈরি করলে ইংরেজরা এই বিলকে কালা কানুন নামে অভিহিত করে ভারতে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে এবং বিলটি প্রত্যাহৃত হয়।
- (৩) ফলে ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় এক বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন উপলব্ধি করেন।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা
এই মনোভাব থেকেই ‘জমিদার সভা‘ ও ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া সোসাইটি‘একত্রিত হয়ে ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ‘ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদক
রাধাকান্ত দেব এই সমিতির প্রথম সভাপতি এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম সম্পাদক ছিলেন।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য
রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য সদস্য।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচি
ভারতবাসীর মুখপত্র হিসেবে ভারতীয় সদস্যদের নিয়ে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, বিচার ও শাসক বিভিন্ন কর্মসূচির ওপর বেশ কয়েকটি আন্দোলন চালায়।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য
ড. বি. বি. মিশ্রের মতে, জমিদারদের স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের উদ্দেশ্য
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠনের উদ্দেশ্য জানা যায় ব্রিটিশের কাছে পাঠানো এক আবেদনপত্র থেকে।এই পত্রে বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব রাখা হয়। যেমন –
(১) সম্পদ রক্ষার্থে উপযুক্ত ব্যবস্থা
ভারতীয়দের সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে ।
(২) অধিক ভারতীয় নিয়োগ
সরকারি উচ্চপদগুলিতে আরও বেশি সংখ্যায় ভারতীয়দের নিয়োগ করতে হবে।
(৩) শাসন ও আইন বিভাগের পৃথকীকরণ
শাসন পরিষদ ও আইন সভার অস্তিত্ব আলাদা করতে হবে।
(৪) স্বতন্ত্র পরিষদ গঠন
ব্রিটিশ উপনিবেশ গুলির আদর্শে ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে এক স্বতন্ত্র পরিষদ গঠন করতে হবে।
(৫) শিক্ষার প্রসার
শিক্ষার সুষ্ঠু প্রসারের লক্ষ্যে সরকারি তরফে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র
হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ছিল।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রসার
বাংলা ছাড়াও ভারতের বড়ো বড়ো শহরগুলিতে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের শাখা গড়ে ওঠে। জগন্নাথ সংকর শেঠের সভাপতিত্বে বোম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বোম্বে নেটিভ অ্যাসোসিয়েশন। লক্ষীনারায়ণ চেট্টির উদ্যোগে মাদ্রাজে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদ্ৰাজ নেটিভ অ্যাসোসিয়েশন।
সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন
প্রথম থেকেই এটি ছিল একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান। তবে এই সভায় কোনও ইউরোপীয় সদস্য ছিল না।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের শাখা স্থাপন
মাদ্রাজ ও অযোধ্যায় এই সমিতির শাখা স্থাপিত হয় এবং বোম্বাই -এ অনুরূপ আদর্শে একটি স্বতন্ত্র সভা স্থাপিত হয়।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে আন্দোলন গঠন
ভারতবাসীর মুখপত্ররূপে এই প্রতিষ্ঠান বহু বৎসর ধরে শিক্ষা, শাসনসংস্কার, বিচারব্যবস্থা, নীলচাষ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে দেশে আন্দোলন গড়ে তোলে।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক দাবিপত্র প্রেরণ
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পুনরায় সনদ দানের পূর্বে এই সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে এক দাবিপত্র পাঠানো হয়।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের দাবি পত্রের বিষয়
এই দাবিপত্রে,
- (১) সরকারি উচ্চপদে অধিক সংখ্যক ভারতীয়দের নিয়োগকরা।
- (২) শাসন পরিষদ ও আইন সভার পৃথকীকরণকরা।
- (৩) ব্রিটিশ শাসিত উপনিবেশগুলির আদর্শে ভারতে একটি স্বতন্ত্র ব্যবস্থা পরিষদ গঠন ও তাতে ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণ।
- (৪) লবণের একচেটিয়া কারবারের অবসানও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত -এর প্রসার প্রভৃতি দাবি জানানো হয়।
পারস্পরিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব
ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনই সর্বপ্রথম ভারত -এর বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
মধ্যবিত্ত ও কৃষক স্বার্থ উপেক্ষিত
এই সমিতি ছিল মূলত জমিদার ও ধনবানদের প্রতিষ্ঠান। এখানে মধ্যবিত্ত ও কৃষক-স্বার্থ কার্যত উপেক্ষিত হয়।
উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বাধা
১৮৭০ সালে সরকার কর্তৃক উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রবর্তনে এই প্রতিষ্ঠান বাধা দেয়।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ব্যর্থতা
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নবীন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অগ্রগতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মিলাতে এই প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতা
কলকাতায় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কনফারেন্স বা সর্ব ভারতীয় জাতীয় সম্মেলন (১৮৮৩ ও ১৮৮৫ সালে) এবং জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনকালে (১৮৮৬) এই অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সহযোগিতা করেন।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের বিলুপ্তি
১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ -এ জমিদারি বিলুপ্তির পর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম হ্রাস পায়।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ব্যর্থতার কারণ
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন তার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল।কারণ,
- (১) এই সমিতিটি মূলত জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষার কথাই বেশি ভাবত।
- (২) মফস্সলে এই সংগঠনের কোনো প্রভাব না থাকায় গ্রামীণ শিক্ষিত ভারতবাসী এর সম্পর্কে উদাসীন ছিল।
- (৩) মধ্যবিত্ত কৃষক শ্রেণির স্বার্থ এই সংগঠনটির কাছে উপেক্ষিত ছিল।
উপসংহার :- অভিজাত ভূস্বামীদের সংগঠন হিসেবে সমালোচিত হলেও নীলচাষি ও আসামের কুলিদের পক্ষে লড়াই করে ভারতীয় রাজনীতির প্রগতিতে সাহায্য করেছিল এই অ্যাসোসিয়েশন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে।
রাজা রাধাকান্ত দেব।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
হিন্দু পেট্রিয়ট।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনা বা গল্পগুলি
- কেন্দ্রীয় চোল শাসন
- সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
- অর্থনীতিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব
- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়
- রোমান সাম্রাজ্য ও উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের প্রভাব
- জাস্টিনিয়ান পরবর্তী রাজবংশ
- রোমান সমাজে নারীর অবস্থান
- বাইজানটাইন সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা দিক
- রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশ