শম্ভুজী

শম্ভুজী প্রসঙ্গে তার সিংহাসনে আরোহণ, বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা, আমোদ প্রিয়তা, তার বিপদ, সাফল্য, ঔরঙ্গজেবের আক্রোশ, শম্ভুজীর বিচ্ছিন্নতা, শক্তি হ্রাস, তার হত্যা ও মুঘলদের হাতে তার পরিবারের বন্দীত্ব সম্পর্কে জানবো।

শম্ভুজী

ঐতিহাসিক চরিত্রশম্ভুজী
রাজত্বকাল১৬৮০-৮৯ খ্রি:
পূর্বসূরিশিবাজি
উত্তরসূরিরাজারাম
শম্ভুজী

ভূমিকা :- শিবাজীর উত্তরাধিকারী হন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শম্ভুজী। সাহসিকতা ছাড়া তাঁর অন্য সকল গুণের অভাব ছিল, এবং তাঁর দুর্ব্যবহারের জন্য পিতা তাকে পানহালা দুর্গে বন্দী করে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শম্ভুজীর সিংহাসনে আরোহণ

তাঁর উত্তরাধিকার বিনা বাধায় স্থির হয় নি। তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজারামকে সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তার সিংহাসনে আরোহণের পরেও ষড়যন্ত্র চলে। এই ষড়যন্ত্রগুলি দমন করা হয় এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।

শম্ভুজীর বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা

রাষ্ট্রের পুরাতন কর্মচারীগণের অবিশ্বাস ভাজন হওয়ায় তিনি এক কনৌজ-এর ব্রাহ্মণকে বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা হিসাবে গ্রহণ করেন। তাঁকে তিনি ‘কবিকলশ’ (কবিচূড়ামণি) উপাধি দেন। তাঁর হাতে শাসনের চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

আমোদ প্রিয় রাজা শম্ভুজী

আমোদপ্রিয় রাজা বিলাসে দিন কাটাতেন, মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্ত সামরিক অভিযান পরিচালনা করতেন।

শম্ভুজীর কাছে আকবরের আশ্রয়

ঔরঙ্গজেব-এর বিদ্রোহী পুত্র আকবর দুর্গাদাসের সঙ্গে ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে শম্ভুজীর কাছে আশ্রয় পান।

শম্ভুজীর নিকট বিপদ

ঔরঙ্গজেব স্বয়ং দাক্ষিণাত্যে উপস্থিত হন। তাঁর তিন পুত্র এবং সকল যোগ্য সেনাপতিও তাকে অনুসরণ করেন। সাম্রাজ্য-এর সকল সামরিক সম্পদ সম্রাটের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে দাক্ষিণাত্যে কেন্দ্রীভূত করা হয়। এই বিপদের গুরুত্ব মারাঠা রাজসভার গণ্য করা হল না।

শম্ভুজীর সাফল্য

শম্ভুজী জঞ্জিরার সিদ্দিগণের এবং গোয়ার পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, কিছু সাফল্যও অর্জন করলেন। কিন্তু এর কোনো স্থায়ী মূল্য ছিল না।

ঔরঙ্গজেবের পুত্র আকবরের মৃত্যু

বাদশাহী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাফল্য লাভ করতে না পেরে আকবর ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের অভিমুখে যাত্রা করলেন। সেখানে ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়।

শম্ভুজীর প্রতি ঔরঙ্গজেবের আক্রোশ

ঔরঙ্গজেব শম্ভুজীর ক্ষমতা ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ইংরেজ কুঠির কর্মচারীরা ১৬৮২ খ্রিস্টাব্দে লিখেছেন মারাঠা রাজার বিরুদ্ধে তাঁর এইরূপ আক্রোশ যে তিনি তাঁর পাগড়ি ছুড়ে ফেলেছেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছেন যে যতদিন না তাকে হত্যা অথবা বন্দী করবেন অথবা তার রাজ্য থেকে তাকে উচ্ছেদ করবেন ততদিন তিনি আর পাগড়ি গ্রহণ করবেন না।’

মারাঠাদের বিরুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের অসফল আক্রমণ

কিন্তু মারাঠাদের বিরুদ্ধে মুঘল বাহিনীর প্রাথমিক আক্রমণগুলি বিশেষ সফল হয় নি। ঔরঙ্গজেব তখন তার সম্পূর্ণ শক্তি বিজাপুর এবং গোলকুণ্ডার বিরুদ্ধে পরিচালিত করেন। এই দুটি সুলতানী রাজ্যের পতন ঘটে ১৬৮৬-৮৭ খ্রিস্টাব্দে।

মারাঠাদের সম্মুখীন হবার জন্য ঔরঙ্গজেবের সুযোগ

আকবর ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। মারাঠাদের সম্মুখীন হবার জন্য সম্রাট তখন সম্পূর্ণ সুযোগ পান।

রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে শম্ভুজীর বিচ্ছিন্নতা

শম্ভুজী সুলতানী রাজ্যগুলিকে তাদের বিপদের সময় সাহায্য করবার জন্য বিশেষ কোনো চেষ্টা করেন নি। এখন তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন।

শম্ভুজীর শক্তি হ্রাস

ষড়যন্ত্র, দুর্বল ও দুর্নীতিপূর্ণ শাসন-ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে মুঘল আক্রমণের কার্যকরী প্রতিরোধ করার শক্তি তার রাজ্যের ছিল না।

শম্ভুজীর হত্যা

১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে শম্ভুজী এবং কবিকলশকে একজন মুঘল সেনাপতি বন্দী করেন। নিষ্ঠুর অত্যাচার করে তাঁদের হত্যা করা হয়।

শম্ভুজীর পর রাজরামের সিংহাসন লাভ

রায়গড়ে মারাঠা মন্ত্রীগণ রাজারামকে রাজপদে অভিষিক্ত করেন, কারণ শম্ভুজীর পুত্র শাহু ছিলেন সাত বৎসরের বালক এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবার পক্ষে খুবই অল্পবয়স্ক।

শম্ভুজীর পরিবার মুঘলদের হাতে বন্দী

এর পর মুঘলরা রায়গড় অধিকার করে। সেইখানে শাহু সহ শম্ভুজীর পরিবারের সকলকে মুঘলরা বন্দী করে।

মারাঠা রাজা রাজরামের পলায়ণ

রাজারাম অবশ্য ইতিমধ্যেই পূর্ব উপকূলে জিঞ্জিতে পলায়ন করেছিলেন। মারাঠা রাজপরিবারের মহিলাদেরকে মুঘল শিবিরে বন্দী রাখা হল, কিন্তু তাদেরকে যথোচিত শ্রদ্ধা দেখানো হল।

শম্ভুজীর পুত্র শাহুর রাজা উপাধি লাভ

মুঘল দরবারে শাহুকে ‘রাজা’ উপাধি এবং সাত হাজারী মনসবদারের মর্যাদা দেওয়া হয়; কিন্তু ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু পর্যন্ত তিনি মুঘল শিবিরে বন্দী ছিলেন।

উপসংহার :- এইভাবে শম্ভুজীর হত্যার মাধ্যমে ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করে। দুইটি সুলতানী রাজ্যের পতন ঘটে এবং মারাঠারা প্রকৃতপক্ষে নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে।

(FAQ) শম্ভুজী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শিবাজির পর কে মারাঠা সিংহাসনে আরোহণ করেন?

তার পুত্র শম্ভুজী।

২. শম্ভুজীর রাজত্বকাল কত?

১৬৮০-৮৯ খ্রিস্টাব্দ।

৩. শম্ভুজীর মৃত্যু কখন হয়?

১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment