দ্বিতীয় ফেডারিক

পবিত্র রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফেডারিক প্রসঙ্গে তার পরিচয়, সাহায্য লাভ, রোমে সম্রাট পদে অধিষ্ঠিত, মেলফির সংবিধান, পোপতন্ত্র বনাম রাজতন্ত্র, ইতালীয় নীতি, জার্মান নীতি, সিসিলি রাজ্যের বিকাশে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের অবদান ও দ্বিতীয় ফেডারিকের মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফেডারিক প্রসঙ্গে দ্বিতীয় ফেডারিকের পরিচয়, দ্বিতীয় ফেডারিকের সম্রাট পদে অভিষেক, দ্বিতীয় ফেডারিকের সময় পোপতন্ত্র বনাম রাজতন্ত্র, দ্বিতীয় ফেডারিকের জার্মান নীতি, দ্বিতীয় ফেডারিকের ইতালীয় নীতি, দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের অবদান ও দ্বিতীয় ফেডারিকের মৃত্যু সম্পর্কে জানব।

সম্রাট দ্বিতীয় ফেডারিক

ঐতিহাসিক চরিত্রদ্বিতীয় ফ্রেডারিক
পরিচিতিপবিত্র রোমান সম্রাট
জন্ম১১৯৪ খ্রি
রাজত্বকাল১২২০-১২৫০ খ্রি
অভিষেক অনুষ্ঠানরোম
মৃত্যু১২৫০ খ্রি
সম্রাট দ্বিতীয় ফেডারিক

ভূমিকা :- মধ্যযুগের ইউরোপীয় সম্রাটদের মধ্যে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক ছিলেন শিক্ষিত মার্জিত এবং অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ইউরোপ-এর ইতিহাসে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের সময়কাল ছিল ১২১৫-৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের পরিচয়

তিনি ১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ষষ্ঠ হেনরি এবং কনস্টান্সের সন্তান ছিলেন দ্বিতীয় ফ্রেডারিক।

সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের সাহায্য লাভ

তিনি পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট এবং ফ্রান্সের ফিলিপ অগাস্টাসের সহায়তায় জার্মান সম্রাট হতে পেরেছিলেন। তৃতীয় ইনোসেন্ট ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ লাটেরান কাউন্সিলে দ্বিতীয় ফ্রেডারিককে শাসক হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন।

রোমের সম্রাট পদে অধিষ্ঠিত দ্বিতীয় ফ্রেডারিক

১২২০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ফ্রেডরিক রোমে সম্রাট পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর স্থাপন করতে চেয়েছিলেন।

দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের ইতালীয় নীতি

সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের ইতালিয় নীতির ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন এবং পোপ ও রাজতন্ত্রের মধ্যে, চার্চ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি সহযোগিতা ও শান্তির নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু পোপ তাকে শান্তির নীতি নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছিলেন।

জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের মেলফির সংবিধান

  • (১) দ্বিতীয় ফ্রেডারিক জার্মানির সম্রাট নির্বাচিত হলেও জার্মানিতেই তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছিলেন এমনটা নয়। ক্রুসেড-এর নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রেও তাঁর প্রচেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। পোপ নবম জর্জের বিরোধিতার ফলে পোপতন্ত্র এবং রাজতন্ত্রের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই ছিল।
  • (২) ১২৩১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তিতে আমলাতান্ত্রিক চরমতন্ত্রের অধীনে একটি কেন্দ্রীভূত শাসনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই আইনাবলীকে “The Constitution of Melfi” বা মেলফির সংবিধান’ বলা হয়। সিসিলি এবং বেশিরভাগ ইউরোপের অঞ্চলগুলিতে নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।
  • (৩) সিসিলিতে তিনি আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। শিক্ষার দিকটিকেই তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ১২২৪ খ্রিস্টাব্দে নেপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন।

দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের সময় পোপতন্ত্র বনাম রাজতন্ত্র

  • (১) দ্বিতীয় ফ্রেডারিক “Stupor Mundi” বা “বিশ্বের বিস্ময়” ছিলেন। লম্বার্ড শহরগুলির বিরুদ্ধে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। লম্বার্ড লিগ ১১৮৩ খ্রিস্টাব্দের ‘কনস্টান্সের পোপতন্ত্র বনাম রাজতন্ত্র চুক্তি’ ভঙ্গ করেছিল। তাই তিনি লোম্বার্ড লিগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
  • (২) ১২৩৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক ও লোম্বার্ড লিগের মধ্যে কন্টেনৌভার যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক লোম্বার্ড লিগকে পরাজিত করেছিলেন। লোম্বার্ডদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের এই জয়লাভ নবম জর্জের আশঙ্কার কারণ হয়েছিল।
  • (৩) কারণ দ্বিতীয় ফ্রেডারিক পোপতন্ত্রের কর্তৃত্ব মানতে রাজি ছিলেন না। তাস্কানি প্রভৃতি অঞ্চলে পোপতন্ত্রের আধিপত্য বজায় থাকলেও এই অঞ্চলগুলি রাজতন্ত্রের অধীনে এসেছিল, যা ছিল দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের বিশেষ সাফল্য। নবম জর্জের মৃত্যু আকস্মিকভাবে হওয়ায় চতুর্থ ইনোসেন্ট তার উত্তরাধিকার নির্বাচিত হন।
  • (৪) Lyons এর এক সভাতে ১২৪৫ খ্রিস্টাব্দে পোপ চতুর্থ ইনোসেন্ট দ্বিতীয় ফ্রেডারিককে পদচ্যুত করেছিলেন। পরবর্তী ৫ বছর ধরে রাজতন্ত্র ও পোপতন্ত্রের সংঘাত লক্ষ্য করা গিয়েছিল। পোপ চতুর্থ ইনোসেন্ট প্রথমে থুরিঞ্জিয়ার হেনরি ও পরে নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ডের কাউন্ট উইলিয়ামকে জার্মান সম্রাট হিসাবে নির্বাচিত করেন।

সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের ইতালীয় নীতির ব্যাখ্যা

  • (১) ডেভিড আবুলাফিয়া “Frederick II: A Medieval Emperor” গ্ৰন্থে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের সুদৃঢ় মনোভাবের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন, যা তাকে মধ্যযুগের সম্রাটদের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী চরিত্রে পরিণত করেছিল। ১২২০ খ্রিস্টাব্দে রোমে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের অভিষেক হয়েছিল।
  • (২) হোহেস্টাউফেন বংশ-এর শক্তিকে তিনি পুনরায় ইতালি ও সিসিলিতে বিস্তার লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন। লম্বার্ড শহর এবং পোপতন্ত্রের শক্তিকে সর্বদাই তিনি অবজ্ঞা করেছিলেন। সেক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের বিপক্ষেই ছিল। এই অবস্থায় ইতালিতে তার সাফল্য লাভ করা ছিল সত্যিই কষ্টকর। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক কিন্তু এক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।
  • (৩) তার সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল পোপতন্ত্র। তিনি সম্রাটকে পোপতন্ত্রের উপরে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম পদক্ষেপ নেন নি। তিনি তার অবস্থান বজায় রাখার জন্য শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ নীতির পক্ষপাতি ছিলেন। ইতালিতে রাজনৈতিক অবস্থানকে সুরক্ষিত করার জন্য পোপ কখনোই শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি মেনে চলার চেষ্টা করেন নি।
  • (৪) দ্বিতীয় ফ্রেডারিক পোপের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পোপ নবম জর্জ সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। নবম জর্জকে শান্তির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের কোনোরকম চেষ্টাই সফল হয় নি। পোপতন্ত্র ও সম্রাটের মধ্য দ্বন্দ্ব সবসময়কার জন্য বজায় ছিল।
  • (৫) সিসিলিতে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের নীতি ছিল উল্লেখযোগ্য। কারণ সিসিলিকে আধুনিক দেশ হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। ১২৩৯ খ্রিস্টাব্দে নবম জর্জ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। উত্তর এবং মধ্য ইতালিতে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক সুগঠিত শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার পক্ষপাতি ছিলেন।
  • (৬) Milan, Brescia, Bologna এবং Piacenza তে তিনি তার অভিযান চালিয়েছিলেন। Bnescia তে ১২৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক উত্তর ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে তার অভিযান বজায় রেখেছিলেন। উত্তর ইতালীতে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের অভিযান সম্পূর্ণভাবে সফল না হলেও দক্ষিণ ইতালিতে তিনি তার অভিযান সফল করেছিলেন।
  • (৭) পোপতন্ত্রের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক সংঘাতে নেমেছিলেন। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক রোম অধিকার করার সময়কালে পোপের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১২৪১ খ্রিস্টাব্দের ২২শে আগস্ট পোপ নবম জর্জের মৃত্যু হয়েছিল। ১২৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জুন নতুন পোপ হিসাবে চতুর্থ ইনোসেন্টকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
  • (৮) দ্বিতীয় ফ্রেডারিক নতুন পোপের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। সেক্ষেত্রে অল্পসময়ের মধ্যেই চুক্তির কোনোরকম শর্তই মেনে নেওয়া হয় নি। পার্মার যুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। সিসিলি অভিযান ক্ষেত্রেও তিনি সংঘাতে নেমেছিলেন।
  • (৯) প্রকৃতপক্ষে ইতালিয় নীতির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পোপতন্ত্রের সঙ্গে তাকে সংঘাতে যেতে হয়েছিল। পোপতন্ত্রের সঙ্গে তার এই সংঘাত চলেছিল এবং ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলেও তাকে তাঁর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হয়েছিল। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক তাঁর পিতা চতুর্থ অটো-এর ইতালীয় নীতিকে অনুসরণ করেছিলেন।
  • (১০) ইতালিকে তিনি তার ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সিসিলি ছাড়া ইতালীয় অভিযান সম্পূর্ণ হত না। দক্ষিণ ইতালিতে রাজনীতি ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলির প্রতিও তিনি নজর দিয়েছিলেন।
  • (১১)  F. Kampers তাঁর ‘Frederick II’ গ্রন্থে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক-এর ইতালীয় নীতি প্রসঙ্গে তার দক্ষতার কথা বলেছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি পোপতন্ত্রের সঙ্গে সম্রাটের সমঝোতার মধ্য দিয়ে ইতালিতে সফলতা পেতে চেয়েছিলেন।

দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের জার্মান নীতি

  • (১) সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়, তিনি ১২২০-১২৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পবিত্র রোমান সম্রাট ছিলেন। ১২১২-১২২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জার্মান সম্রাট ছিলেন। ১১৯৭-১২৫০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত সিসিলির সম্রাট ছিলেন এবং ১২২৯-১২৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জেরুজালেমের সম্রাট ছিলেন।
  • (২) ১২১২ খ্রিস্টাব্দে মেইনজ শহরে জার্মান সম্রাট হিসাবে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের অভিষেক হয়েছিল। ১২২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জার্মানির শহরগুলিতে তিনি প্রশাসনকে সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক জার্মানিতে গিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন যে, জার্মানিতে সামন্ত প্রভুদের ধ্বংস করা প্রয়োজন।
  • (৩) পরবর্তী জার্মান সম্রাট হিসাবে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক তাঁর সন্তান হেনরিকে নির্বাচিত করেছিলেন। জার্মান চার্চ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের ক্ষমতা স্থাপনের বিষয়টি দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। দ্বিতীয় ফ্রেডারিককে জার্মান সামন্ত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সংগ্রামে নামতে হয়েছিল।
  • (৪) দ্বিতীয় ফ্রেডারিক রোমান সম্রাট হিসাবে নিজেকে জাহির করেছিলেন। তাঁর সন্তান হেনরি কিন্তু তার পিতার বিপরীত মনোভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি নিজেকে রোমান সম্রাটের পরিবর্তে জার্মান সম্রাট হিসেবে পরিচয় দিতে বেশী মনোযোগী ছিলেন। দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের জার্মান নীতিতে একেবারেই সহমত পোষণ করেন নি তার সন্তান হেনরি।
  • (৫) ১২৩৪ খ্রিস্টাব্দে লম্বার্ড লিগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি পিতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছিলেন। এর ফলস্বরূপ ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দেই দ্বিতীয় ফ্রেডারিক জার্মানিতে শেষ সফরে গিয়েছিলেন। ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে হেনরির মৃত্যু হলে তার ভ্রাতা কনরাড পরবর্তী জার্মান সম্রাট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক ১২৩৫-৩৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে সাময়িকভাবে তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

সিসিলি রাজ্যের বিকাশে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের অবদান

এরপর সিসিলিতে তার শাসনকাল ছিল ১১৯৮-১২৫০ খ্রিস্টাব্দ। ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর সিসিলির সম্রাট হিসাবে তার অভিষেক হয়েছিল। মাত্র ৩ বছর বয়সে তিনি সিসিলির সম্রাট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সিসিলি রাজ্যের বিকাশে দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। যেমন –

  • (১) সিসিলিতে কাব্যের বিকাশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ফ্রেডারিক “Sicilian School of poetry” গড়ে তুলেছিলেন। সিসিলিতে সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। কাব্য চর্চার বিদ্যালয় স্থাপন করে সাংস্কৃতিক দিক থেকে সিসিলিকে শক্তিশালী করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সিসিলিতে তার সাহিত্য চর্চার প্রতি মনোযোগের ফলে আধুনিক ইতালীয় ভাষার বিকাশ ঘটেছিল।
  • (২) দ্বিতীয় ফ্রেডারিক সিসিলিতে রাজকীয় বিচারালয় স্থাপন করেছিলেন। এই রাজকীয় বিচারালয়ে আইন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যার পাশাপাশি বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক প্রতিষ্ঠিত এই রাজকীয় বিচারালয় অবস্থিত ছিল পালের্মোতে।
  • (৩) দ্বিতীয় ফ্রেডারিক সিসিলিতে থাকাকালীন আইনের সংস্কারের কাজে অবদান রেখেছিলেন। তার সময়কালে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল “Liber Augustalis” বা “Constitutions of Melfi”, যা ১২৩১ খ্রিস্টাব্দে সংকলিত হয়েছিল। মেলফির সংবিধান সেই সময়কার গুরুত্বপূর্ণ আইন বিষয়ক সংকলন এবং মেলফির সংবিধান পরবর্তীকালেও আইনের রচনার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দান করেছিল।
  • (৪) মেলফির সংবিধানের প্রভাবে সিসিলি সাম্রাজ্যে সম্রাটের কৃতিত্ব বেড়ে গিয়েছিল। সিসিলিতে এই সংবিধানের প্রভাবে “নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র” গড়ে উঠেছিল। অল্প কিছু আইনগত পরিবর্তন করা হয়েছিল এই মেলফির সংবিধানে। Liber Augustalis বা মেলফির সংবিধান ১৮১৯ সাল পর্যন্ত সিসিলিয় আইনের প্রধান ভিত্তি ছিল।

দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের মৃত্যু

এক ষড়যন্ত্রের দ্বারা তার নিজস্ব চিকিৎসক তাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ইতালিতে তার মৃত্যু হয়েছিল।

উপসংহার :- দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের পর জার্মানির সিংহাসন লাভ করেছিলেন তাঁর সন্তান চতুর্থ কনরাড। তার মৃত্যুর পর হোহেস্টাউফেন রাজতন্ত্রের পতন-এর সূচনা হয়েছিল।

(FAQ) দ্বিতীয় ফেডারিক সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দ্বিতীয় ফেডারিক কে ছিলেন?

পবিত্র রোমান সম্রাট।

২. দ্বিতীয় ফেডারিকের অভিষেক কোথায় হয়েছিল?

১২২০ খ্রিস্টাব্দে রোমে।

৩. পবিত্র রোমান সম্রাট হিসেবে দ্বিতীয় ফেডারিকের রাজত্বকাল কত ছিল?

১২২০ থেকে ১২৫০ খ্রিস্টাব্দ।

৪. সিসিলির সম্রাট হিসেবে দ্বিতীয় ফেডারিকের অভিষেক হয়েছিল কখন?

১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment