প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর বৃদ্ধি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের ফলে ভারতের অনিবার্য পরিণতি, ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে কর বৃদ্ধির ঘটনা, গান্ধীজির নেতৃত্বে খেদা সত্যাগ্রহ, ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে করবৃদ্ধির ঘটনা ও বল্লভ ভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে বারদৌলি সত্যাগ্রহ সম্পর্কে জানবো।

ভারতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের ফলে ভারতের অনিবার্য পরিণতি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের গুজরাটে কর বৃদ্ধির ঘটনা, বল্লভ ভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে বারদৌলি সত্যাগ্রহ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গান্ধীজির নেতৃত্বে খেদা সত্যাগ্রহ সম্পর্কে জানব।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর বৃদ্ধি

ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর করবৃদ্ধি
মধ্যবিত্ত কৃষকপত্তিদার
দরিদ্র কৃষককুনবি
খেদা সত্যাগ্ৰহমহাত্মা গান্ধী
বারদৌলি সত্যাগ্ৰহবল্লভভাই প্যাটেল
কালিপরাজকালো মানুষ
উজালিপারাজসাদা মানুষ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর বৃদ্ধি

ভূমিকা :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর পরবর্তীকালে ভারত-এ ব্রিটিশ সরকার অর্থনৈতিক দুর্দশার অবসান ঘটাতে যেসব উপায় বের করেছিল, সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের ফলে ভারতের অনিবার্য পরিণতি

ব্রিটিশ সরকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতবর্ষকে জড়িয়ে এদেশে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। সরকার যুদ্ধের সময় সামরিক খাতে ভারতের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। এর অনিবার্য পরিণতি ছিল –

(১) আর্থিক দুর্দশা

যুদ্ধের অবসানের পর ভারতের আর্থিক দুর্দশার ছবি প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এই সঙ্গে যুদ্ধকালে কৃষি ও শিল্প উৎপাদন হ্রাস, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রভৃতি ঘটনা সাধারণ ভারতীয়দের দারিদ্র্যতা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করে। ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের মূল্যসূচক ১০০ ধরা হলে তা ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ১৪৭-এ পৌঁছায়, ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে হয় ২২৫ এবং ১৯২০-তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮১।

(২) ঋণসংগ্রহ

যুদ্ধের সময় ভারতের বিপুল অর্থসম্পদ ব্যবহারের ফলে ভারতবাসীর যে আর্থিক দুর্দশার সৃষ্টি হয় তার তাৎক্ষণিক সুরাহা করতে সরকার বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে। ফলে ভারতের জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনক্ষমতা যখন ব্রিটিশ রাজের কাছে যায় তখন ভারত সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড। এই ঋণ বেড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৭৪ মিলিয়ন পাউন্ডে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর প্রাক্কালে ৮৮৪.২ মিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছোয়।

(৩) মূল্যবৃদ্ধি

যুদ্ধের প্রভাবে শিল্পপণ্যের মূল্য যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। বস্ত্র, চিনি লবণ, কেরোসিন প্রভৃতির মূল্য সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়।

(৪) দরিদ্র শ্রেণির দুর্দশা

বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য প্রচুর বৃদ্ধি পেলেও কৃষিপণ্যের মূল্য সে তুলনায় বিশেষ কিছু বাড়ে নি। বাড়েনি কৃষি মজুর এবং শিল্প শ্রমিকের মজুরিও। ফলে কৃষক তার কৃষিপণ্য বিক্রি করে এবং শ্রমিক তার উপার্জন দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খেয়ে যায়। এই আর্থিক দুর্দশার পরিস্থিতিতে সরকার দরিদ্র কৃষকদের ওপর করের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তা জোর করে আদায় করতে শুরু করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর করবৃদ্ধি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর করবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া ছিল মারাত্মক। যেমন  –

(১) কৃষকের শোচনীয় অবস্থা

দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার কৃষকের কর মকুব না করে বরং করের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি কর আদায় করতে কৃষকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ভূস্বামীরা বিভিন্ন অজুহাতে জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করে নিজেদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে। করবৃদ্ধির ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকরা সীমাহীন দুর্দশার শিকার হয়।

(২) গুজরাটের পরিস্থিতি

সরকার কর্তৃক কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোর ঘটনায় সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গুজরাটে। ফলে সেখানে করবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং সারা প্রদেশে তীব্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে করবৃদ্ধির ঘটনা

গুজরাটের খেড়া বা খেদা জেলা ছিল একটি কৃষিপ্রধান জেলা। এখানে বড়ো কোনো জমিদার ছিল না। এখানকার মধ্যবিত্ত কৃষকরা ‘পত্তিদার’ নামে পরিচিত ছিল। এদের একাংশ তামাকের চাষ ও গো-পালন করত এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী শহরের বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিছু কিছু পত্তিদার মোটামুটি সচ্ছল হলেও অনেকেই ছিল খুব দরিদ্র। খেদার দরিদ্র কৃষকরা কুনবি নামে পরিচিত ছিল। খেদার উভয় শ্রেণির কৃষকরাই কৃষিকাজ করে অতি সাধারণ জীবন যাপন করত।

(ক) করবৃদ্ধি ও কৃষকদের দুরবস্থা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বিভিন্ন কারণে গুজরাটে কৃষকদের অর্থনৈতিক দুর্দশা ভীষণভাবে বৃদ্ধি পায়। যেমন-

(১) মূল্যবৃদ্ধি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে গুজরাটে দ্রব্যমূল্য খুবই বৃদ্ধি পায়। বস্ত্র, চিনি, লবণ, কেরোসিন, প্রভৃতির মূল্য সর্বাধিক বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সেখানকার কৃষকরা যথেষ্ট অসুবিধায় পড়ে।

(২) দুর্ভিক্ষ ও মহামারি

খেদায় বারংবার শস্যহানি, দুর্ভিক্ষ, মহামারি প্রভৃতির ফলে এখানকার কৃষকদের দুঃখদুর্দশার অন্ত ছিল না। বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে গুজরাটের খেড়া বা খেদা জেলায় অনাবৃষ্টি ও খরায় মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার গরিব কৃষকদের পক্ষে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। নানা সংকটের সম্মুখীন হয়ে সরকারের কাছে তারা রাজস্ব হ্রাসের ব্যর্থ আবেদন জানায়।

(৩) কৃষকদের দুর্দশা

কৃষকাদের আর্থিক দুর্দশা ও দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে ১৯১৭-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সরকার তাদের ওপর রাজস্বের হার আরও বৃদ্ধি করে। ফলে পত্তিদার ও কুনবি সম্প্রদায়ের কৃষক-সহ দরিদ্র মানুষ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের অনুগত ভূস্বামীরা খেদার দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে সেই বিপুল পরিমাণ কর আদায় করতে গিয়ে নির্মম অত্যাচার শুরু করে এবং জমি থেকে তাদের উৎখাত করতে থাকে। এর ফলে সেখানকার কৃষকদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

(খ) খেদায় কৃষক আন্দোলন

সরকারের অনুগত ভূস্বামীদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে খেদার কৃষকরা আন্দোলনের সূচনা করে।

(১) আন্দোলনের সূত্রপাত

দরিদ্র কৃষকদের ওপর রাজস্বের হার বৃদ্ধি এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে সেখানকার সাধারণ কৃষকরা আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়। মোহনলাল পান্ডা ও অন্যান্য কয়েকজন স্থানীয় নেতা কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করেন। আন্দোলন শীঘ্রই বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

(২) গান্ধিজির উদ্যোগ

গান্ধিজি খেদার কৃষকদের দুর্দশার খবর শুনে তাদের নিয়ে আন্দোলনে নামেন। তিনি খেদার ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। গান্ধিজি ও তাঁর অনুগামীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে সরকারকে খাজনা দিতে নিষেধ করেন। তাঁর উদ্যোগের ফলে সামর্থ্যহীন দরিদ্র কৃষকরা সরকারকে খাজনা দিতে অস্বীকার করে।

(গ) পরিণতি

গান্ধিজির প্রভাবে খেদায় কৃষকরা দলে দলে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতি বিপুল জনসমর্থন জানাতে থাকে। স্থানীয় যুবক সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তোলেন।

(১) খাজনা প্রদান বন্ধ

গান্ধিজির আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বহু এলাকায় কৃষকরা সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

(২) দমননীতি

সরকার আন্দোলন প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারীদের ওপর তীব্র দমননীতি গ্রহণ করে। এতে দরিদ্র কৃষকদের দুর্দশা চরমে ওঠে।

(৩) আন্দোলনের সাফল্য

শেষপর্যন্ত গান্ধিজি ও সরকারের মধ্যে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, যাদের খাজনা দেওয়ার সামর্থ্য আছে, তারা সরকারকে খাজনা দেবে। যাদের সামর্থ্য নেই, সরকার তাদের খাজনা মকুব করবে। এভাবে আন্দোলনকারীদের জয়ের মধ্য দিয়ে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে খেদার কৃষকদের খাজনা-বিরোধী আন্দোলনের অবসান ঘটে।

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে করবৃদ্ধির ঘটনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ভারতের যেসব অঞ্চলে কৃষকদের ওপর রাজস্বের হার অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি করে সরকার জনগণের রোষের মুখে পড়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল গুজরাটের বারদৌলি। গুজরাটের সুরাট জেলার তালুকে অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষ ছিল অনুন্নত কালিপরাজ (কালো মানুষ) সম্প্রদায়ের হরিজন। অত্যন্ত অনগ্রসর এই হরিজনদের বেশিরভাগ ছিল ভূমিহীন খেতমজুর বা ভাগচাষি। আর্থিক দিক থেকে খুবই দুর্বল এই শ্রেণির দুর্দশার কোনো সীমা ছিল না। তারা উজালিপারাজ (সাদা মানুষ) নামে স্থানীয় উচ্চবর্ণের মানুষের জমি বংশপরম্পরায় চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত।

(ক) করবৃদ্ধি ও কৃষকদের অবস্থা

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন-এর (১৯২০-২২ খ্রি.) পরবর্তীকালে গুজরাটের বারদৌলি তালুকে দরিদ্র অনগ্রসর কৃষকরা অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার হয়। যেমন  –

(১) অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বারদৌলি তালুকে এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কল্যাণজি মেহতা, কুনবেরজি মেহতা, দয়ালজি দেশাই প্রমুখ নেতা বারদৌলি জনসাধারণকে গুজরাটের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

(২) সত্যাগ্রহের প্রচার ও প্রভাব

বারদৌলি তালুকে কংগ্রেস নেতারা সত্যাগ্রহের আদর্শ প্রচার করে জনগণকে সচেতন করে তুলতে থাকেন। গান্ধিজির উদ্যোগে এখানকার বিভিন্ন স্থানে সত্যাগ্রহ শিবির স্থাপন করে হরিজনদের মধ্যে সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সুরাপান, পণপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে হরিজন সমাজে প্রচার চালানো হয়।

(৩) তুলোর দাম হ্রাস

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের পর তুলোর দাম যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায়। ফলে বারদৌলির তুলো চাষিরা যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন।

(৪) করবৃদ্ধি

কৃষকদের এই আর্থিক দুর্দশা সত্ত্বেও সরকার ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করে যে, বরদৌলি অঞ্চলে রাজস্ব ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে। এর ফলে সরকার ৩০ শতাংশের পরিবর্তে রাজস্ব ২১.৯৭ শতাংশ বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা করে।

(৫) কর প্রদান বন্ধের সিদ্ধান্ত

কংগ্রেসের কোনো কোনো নেতা পুরনো হারে সরকারকে রাজস্ব প্রদানের কথা বললেও গান্ধিজির অনুগামীরা পুরোনো রাজস্ব প্রদানও বন্ধ করার কথা বলেন। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল, কেবল সম্পূর্ণ রাজস্ব প্রদান বন্ধ করলেই সরকার তার রাজস্ব বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে বারদৌলির কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে শামিল হয়।

(খ) বারদৌলি সত্যাগ্রহের সূচনা ও প্রসার

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে গান্ধিবাদী যুবক বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলিতে আসেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) আন্দোলনের পরিচালনা

বলভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে বারদৌলির কৃষকরা খাজনা প্রদান বন্ধ করার শপথ গ্রহণ করে। প্যাটেল বারদৌলি অঞ্চলকে ১৩টি অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন অংশের আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পৃথক পৃথক নেতাদের হাতে তুলে দেন। ছাত্র-যুব- সহ ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

(২) আন্দোলনের ব্যাপকতা

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শীঘ্রই তীব্র আকার ধারণ করে। আন্দোলন থেকে যারা দূরে সরেছিল সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করা হয়। আন্দোলনের খবর সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অন্যান্য বহু স্থানে ব্রিটিশ সরকারের জনবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়।

(৩) আইনসভার সমর্থন

বোম্বাই আইনসভার সদস্যরা আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থন করে। আন্দোলনের সমর্থনে বোম্বাইয়ের মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কে. এন. মুন্সী ও লালজী নারাণজী তাঁদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। ফলে সরকার আরও বিপাকে পড়ে।

(৪) মহিলাদের অংশগ্রহণ

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে মহিলারাও যথেষ্ট সংখ্যায় যোগদান করেন। মিঠুবেন প্যাটেল, ভক্তি বাঈ, মনিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা প্রমুখ নারী বারদৌলি সত্যাগ্রহে যোগ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন।

(৫) গান্ধিজির নেতৃত্ব

গান্ধিজি ২ আগস্ট ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বারদৌলিতে আসেন। বল্লভভাই প্যাটেলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে গান্ধিজি এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

(গ) পরিণতি

বারদৌলির সত্যাগ্রহ আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করলে সরকার যথেষ্ট বিব্রত হয়ে পড়ে। ফলে। সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। যেগুলি হল –

(১) তদন্ত কমিশন গঠন

রাজস্ব বৃদ্ধিজনিত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশন রিপোর্ট দেয় যে, বারদৌলির রাজস্ব বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ছিল অবিবেচনাপ্রসূত ও অন্যায় কাজ।

(২) নতুন রাজস্ব নির্ধারণ

তদন্ত কমিশন বারদৌলিতে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৬.০৩ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি অনুমোদন করে। গান্ধিজির সমর্থনে কৃষকরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।

(৩) কৃষকদের সাফল্যের প্রভাব

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে কৃষকদের সাফল্য সমগ্র দেশের কৃষকদের উজ্জীবিত করে।

উপসংহার :- অধ্যাপক সুমিত সরকার যথার্থভাবেই লিখেছেন যে, “গান্ধিবাদী জাতীয়তাবাদ নিশ্চিতভাবে গুজরাটের কৃষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু সুবিধা নিয়ে এসেছিল।”

(FAQ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কর বৃদ্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গুজরাটের খেদা জেলার মধ্যবিত্ত কৃষকরা কি নামে পরিচিত ছিল?

পত্তিদার।

২. গুজরাটের খেদা জেলার দরিদ্র কৃষকরা কি নামে পরিচিত ছিল?

কুনবি।

৩. ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সত্যাগ্ৰহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন কে?

মহাত্মা গান্ধী।

৪. বারদৌলি সত্যাগ্ৰহ কখন অনুষ্ঠিত হয়?

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে।

৫. বারদৌলি সত্যাগ্ৰহে নেতৃত্ব দেন কে?

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।

Leave a Comment