স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা

স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে রাজ্য আইনসভা, বিধান পরিষদ, বিধানসভা, নিয়মতান্ত্রিক শাসক, প্রকৃত শাসক ও রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্পর্কে জানবো।

ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের আইনসভা, স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের বিধান পরিষদ, স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের বিধানসভা, স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক, স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের প্রকৃত শাসক ও স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের মন্ত্রিসভা সম্পর্কে জানব।

স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা

ঐতিহাসিক ঘটনাস্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা
আইনসভাএক বা দুই কক্ষ বিশিষ্ট
স্থায়ী কক্ষবিধান পরিষদ
জনপ্রতিনিধি কক্ষবিধান সভা
নিয়মতান্ত্রিক শাসকরাজ্যপাল
প্রকৃত শাসকমুখ্যমন্ত্রী
স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা

ভূমিকা :- ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ঔপনিবেশিক ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের সুদীর্ঘ লড়াই এবং ইংরেজ শাসননীতি – উভয়েরই প্রভাব পড়েছিল।

আম্বেদকরের মন্তব্য

সংবিধান রচনা পরিষদের সভাপতি বি. আর. আম্বেদকর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ নভেম্বর বলেন “১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আমরা একটি পরস্পর বিরোধী জীবনে প্রবেশ করতে চলেছি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা সাম্যের অধিকার পাব এবং অর্থনৈতিক জীবনে আমরা পাব অসাম্য।”

গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ভারত

৪৪৪টি ধারা, ১২টি তপশিল এবং ৯৭টি সংশোধন নিয়ে ভারতের সংবিধান বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংবিধান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতবর্ষকে একটি ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ বলে ঘোষণা করা হয়।

ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান তিনটি দিক

স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান তিনটি দিক আছে। যথা –

  • (A) কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা,
  • (B) অঙ্গরাজ্যের বা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা,
  • (C) কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক।

ভারতের অঙ্গরাজ্যের বা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা

স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের বা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান দিকগুলি হল নিম্নরূপ –

(ক) রাজ্য-আইনসভা

  • (১) ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে আইনসভা রয়েছে। রাজ্য-আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট বা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট উভয় ধরনের হতে পারে। যে সব রাজ্যের আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট সেখানে শুধু নিম্নকক্ষ বিধানসভার অস্তিত্ব রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-এর আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট।
  • (২) আবার যে সব রাজ্যের আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেখানে উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের অস্তিত্ব রয়েছে। যে সব রাজ্যে আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেখানে সর্বাধিক ক্ষমতা বিধানসভাই ভোগ করে। আইন প্রণয়ন করা রাজ্য-আইনসভার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

(খ) বিধান পরিষদ

বিধান পরিষদ হল রাজ্য আইনসভার স্থায়ী কক্ষ। রাজ্যপাল এটিকে কখনোই ভেঙে দিতে পারেন না। (১) বিধান পরিষদের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর। এর ১/৩ অংশ সদস্য প্রতি ২ বছর পরপর অবসর গ্রহণ করেন। (২) সংবিধান অনুসারে, কোনো রাজ্যের বিধান পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৪০-এর কম হবে না। বিধান পরিষদের ৫/৬ ভাগ সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত এবং ১ ভাগ সদস্য রাজ্যপালের দ্বারা মনোনীত হন।

(গ) বিধানসভা

রাজ্য-আইনসভার জনপ্রতিনিধি কক্ষ হল বিধানসভা। এর সদস্যরা সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

  • (১) বিধানসভার সাধারণ কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর। অবশ্য এই কার্যকাল শেষ হওয়ার পূর্বেই রাজ্যপাল বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন।
  • (২) সংবিধান অনুসারে, বিধানসভার সদস্যসংখ্যা সর্বাধিক ৫০০ এবং সর্বনিম্ন ৬০ হতে পারে। রাজ্যপাল প্রয়োজন মনে করলে ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের একজনকে বিধানসভায় মনোনীত করতে পারেন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা বিধানসভার সদস্যসংখ্যা যথাক্রমে ২৯৪ ও ৬০।

(ঘ) নিয়মতান্ত্রিক শাসক

  • (১) রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক হলেন রাজ্যপাল। তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ৫ বছরের জন্য মনোনীত হন। সংবিধান অনুসারে তিনি হলেন অঙ্গরাজ্যের শাসনবিভাগের প্রধান। তাঁর নামে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। তিনি বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা বা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবং তাঁর পরামর্শক্রমে রাজ্য-মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ করেন।
  • (২) তিনি মুখ্যমন্ত্রী সহ যে-কোনো মন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারেন। তবে ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যপালের হাতে যে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে তা ব্যবহার করে রাজ্যপাল যে-কোনো সময় রাজ্যের প্রকৃত শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন।

(ঙ) প্রকৃত শাসক

বাস্তবে রাজ্যের প্রকৃত শাসক হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা বা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। রাজ্য আইনসভার সদস্য নন এমন ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হলে তাঁকে ৬ মাসের মধ্যে রাজ্য-আইনসভার সদস্য হতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর। তিনি বিধানসভার নেতা, মন্ত্রীসভার নেতা, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে এবং রাজ্যপালের পরামর্শদাতা হিসেবে প্রভূত ক্ষমতা ভোগ করেন।

(চ) রাজ্য-মন্ত্রীসভা

সংবিধান অনুসারে রাজ্যপালকে সহায়তা ও পরামর্শদানের উদ্দেশ্যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি মন্ত্রীসভা থাকে। মন্ত্রীসভার সদস্যদের রাজ্য-আইনসভার যে-কোনো কক্ষের সদস্য হতে হয়। আইনসভার সদস্য নয় এমন ব্যক্তি মন্ত্রীসভায় নিযুক্ত হলে তাকে ৬ মাসের মধ্যেই আইনসভার সদস্য হতে হয়। রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন।

উপসংহার :- বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতার এক্তিয়ার নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মন্ত্রীসভার পিছনে রাজ্য-আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন থাকলে রাজ্যপাল সাধারণত মন্ত্রীসভার পরামর্শ অগ্রাহ্য করতে পারেন না। তবে বাস্তবে দেখা যায় যে, রাজ্যপালের হাতে ‘স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা’ থাকায় রাজ্য-মন্ত্রীসভার মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেকাংশে বিনষ্ট হয়েছে। অবশ্য মন্ত্রীসভার পিছনে তীব্র জনসমর্থন থাকলে সেই হস্তক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

(FAQ) স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের আইনসভা কয় কক্ষ বিশিষ্ট?

এক কক্ষ বা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট।

২. ভারতের রাজ্য আইনসভার স্থায়ী কক্ষ কোনটি?

বিধান পরিষদ।

৩. রাজ্য আইনসভার স্থায়ী কক্ষ বিধান পরিষদের কার্যকালের মেয়াদ কত বছর?

৬ বছর।

৪. রাজ্য আইনসভার জনপ্রতিনিধি কক্ষ কোনটি?

বিধানসভা।

৫. রাজ্য আইনসভার জনপ্রতিনিধি কক্ষ বিধানসভার কার্যকালের মেয়াদ কত বছর?

পাঁচ বছর।

৬. অঙ্গরাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক কে?

রাজ্যপাল।

৭. অঙ্গরাজ্যের প্রকৃত শাসক কে?

মুখ্যমন্ত্রী।

Leave a Comment