১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ হিসেবে সামরিক শক্তির দুর্বলতা, স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধ উপকরণ, উপনিবেশের অপ্রতুলতা, দুই রণাঙ্গনে যুদ্ধ, যুদ্ধে আমেরিকার যোগদান, নৌ শক্তির দুর্বলতা, মিত্রপক্ষের অবরোধ, আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে দুর্বলতা, ইতালির মিত্রপক্ষে যোগদান, মিত্রপক্ষের কূটনীতি ও বলশেভিক বিপ্লব সম্পর্কে জানবো।
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ |
সময়কাল | ১৮১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ |
মিত্রপক্ষ | রাশিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আমেরিকা |
অক্ষশক্তি | জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া |
পরাজিত | জার্মানি |
রুশ বিপ্লব | ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা:- আধুনিক সমরাস্ত্র, সৈন্যসংখ্যা, সেনানায়কদের দক্ষতা প্রভৃতি দিক থেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ -এ জার্মানি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। জার্মানির পরাজয়ের মূলে নানা কারণ ছিল। যেমন –
(১) সামরিক শক্তির দুর্বলতা
সামরিক শক্তির দিক থেকে জার্মানি ও তার মিত্রবর্গের সম্মিলিত শক্তি অপেক্ষা ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষের সম্মিলিত শক্তি ছিল অনেক বেশি।
(২) স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধের উপকরণ
জার্মানির যুদ্ধোপকরণ স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধের উপযুক্ত ছিল। তার পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধ চালানো সম্ভব ছিল না। আধুনিক যুদ্ধ ছিল ব্যয়সাপেক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে জার্মানির পক্ষে এই ব্যয়বহুল যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না।
(৩) উপনিবেশের অপ্রতুলতা
ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষ তাদের উপনিবেশগুলি থেকে সেনা, রসদ ও অর্থ সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালাতে পারত, কিন্তু জার্মানির কোনও ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য না থাকায় তার পক্ষে সেই সুবিধা ছিল না।
(৪) এক সঙ্গে দুই রণাঙ্গনে যুদ্ধ
জার্মানিকে একই সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ চালাতে হয়, যা কার্যত প্রায় অসম্ভব ছিল। অপরপক্ষে, মিত্রপক্ষীয়রা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সেনাদের কাজে লাগায়।
(৫) যুদ্ধে আমেরিকার যোগদান
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র মিত্রপক্ষে যোগদান করলে, জার্মানির পরাজয় অবশ্যম্ভাবীহয়ে পড়ে। আমেরিকার অস্ত্র, অর্থ ও লোকবল মিত্রপক্ষকে প্রভূত সাহায্য করে।
(৬) নৌ শক্তির দুর্বলতা
জার্মানির নৌ-শক্তির দুর্বলতা তার পরাজয়ের অন্যতম কারণ। প্রথম দিকে জার্মান সাবমেরিন ও ইউবোট মিত্রপক্ষের জাহাজগুলি ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও, মিত্রপক্ষ অচিরেই ইউবোট প্রতিরোধকারী অস্ত্র আবিষ্কার করে জার্মান ইউবোটের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দেয়।
(৭) মিত্রপক্ষের অবরোধ
মিত্রপক্ষ বিশাল সমুদ্রপথে জার্মান জাহাজকে অবরোধ করলে জার্মানির খাদ্য ও অন্যান্য রসদ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে, জার্মানি আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।
(৮) আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে দুর্বলতা
আক্রমণাত্মক যুদ্ধে জার্মানি দক্ষ হলেও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে তার অনেক অসুবিধা ছিল। আত্মরক্ষার জন্য জার্মানির যথেষ্ট ভূ-ভাগ ছিল না। রাশিয়ার মতো বিশাল ভূ-ভাগ না থাকায় জার্মানির পক্ষে পিছিয়ে এসে আবার যুদ্ধ শুরু করার কোনও উপায় ছিল না।
(৯) ইতালির মিত্রপক্ষে যোগদান
ত্রিশক্তি জোটের অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও ইতালি জার্মানিকে বিশেষ সাহায্য করে নি। পরে ইতালি আবার মিত্রপক্ষে যোগ দেয়। বুলগেরিয়া ও অস্ট্রিয়ার পরাজয়ের পর যুদ্ধের সব দায়িত্বই জার্মানির উপর এসে পড়ে, যা একা বহন করা জার্মানির সাধ্যাতীত ছিল।
(১০) মিত্রপক্ষের কূটনীতি
জার্মানি কূটনীতির দ্বারা মিত্রপক্ষে কোনও ভাঙন ধরাতে পারে নি। মিত্রপক্ষ কিন্তু কূটনীতি দ্বারা ইতালিকে নিজপক্ষে টেনে নেয়। ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্তি মিত্রপক্ষকে শক্তিশালী করে তোলে।
(১১) বলশেভিক বিপ্লব
রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবও জার্মানির পতনকে ত্বরান্বিত করে। জার্মান যুদ্ধবন্দিরা রাশিয়ার হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে যায় এবং বলশেভিক আদর্শ প্রচার করতে থাকে। জার্মান সেনাদলও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
উপসংহার:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল ‘জনযুদ্ধ’। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও আমেরিকার জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজ নিজ দেশের সরকারের সাহায্যে অগ্রসর হয়। জার্মান জনগণ কিন্তু সরকারের সাহায্যে অগ্রসর হয় নি। এইসব কারণে জার্মানির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
(FAQ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ।
জার্মানি।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায়।