দাক্ষিণাত্যে মালিক কাফুরের প্রথম অভিযান প্রসঙ্গে দাক্ষিণাত্যের পথ প্রশস্ত, আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি উলুঘ খাঁর মৃত্যু, মালিক চজ্জুর অভিযান ব্যর্থ, আলপ খাঁর দাক্ষিণাত্য অভিযান, আমীর খসরুর কাব্য , মালিক কাফুরকে দাক্ষিণাত্যে প্রেরণ, দেবগিরির রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে মালিক কাফুরকে প্রেরণ, যাদবরাজ রামচন্দ্রের বশ্যতা স্বীকার, যাদবরাজ রামচন্দ্রের ‘রায়-ই-রায়ান’ উপাধি লাভ ও সিংহাসনে পুনঃস্থাপিত রামচন্দ্র সম্পর্কে জানবো।
দাক্ষিণাত্যে মালিক কাফুরের প্রথম অভিযান
ঐতিহাসিক ঘটনা | মালিক কাফুরের দাক্ষিণাত্যে প্রথম অভিযান |
সময়কাল | ১৩০৭ খ্রি: |
যাদবরাজ | রামচন্দ্র |
দেবল দেবী | খিজির খাঁ |
ভূমিকা :- ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কাশ্মীর, নেপাল ও আসাম ব্যতীত সমগ্র উত্তর ভারত-এ আলাউদ্দিন খলজির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হল। ইতিপুর্বেই দাক্ষিণাত্যের সমৃদ্ধ শহর গুলিতে সঞ্চিত ঐশ্বর্য তাঁর কল্পনাকে প্রদীপ্ত করে তুলেছিল।
দাক্ষিণাত্যের পথ প্রশস্ত
মালব জয়ের ফলে দাক্ষিণাত্যের পথ খুলে গেল এবং প্রচুর কর দিতে সক্ষম ধনী হিন্দুরাজাদের উপর শিল্পীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য অভিযান প্রেরণ করা শুরু হল।
আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি উলুঘ খাঁর মৃত্যু
রণথম্ভোরের পতনের অব্যবহিত পরেই উলুঘ খাঁ দাক্ষিণাত্যে অভিযানের জন্য কিছু আয়োজন করেছিলেন, কিন্তু অভিযান শুরু করার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মালিক চজ্জুর অভিযান ব্যর্থ
আলাউদ্দিন যখন মেবার অভিমুখে যাত্রা করছিলেন, তখন তিনি তেলেঙ্গানা জয়ের উদ্দেশ্যে মালিক চজ্জুর নেতৃত্বে এক স্যৈবাহিনী প্রেরণ করেন। চজ্জু বাংলা ও উড়িষ্যার মধ্য দিয়ে কাকতীয় রাজ্যের রাজধানী বরঙ্গলে উপস্থিত হন। সেখানে তার সৈন্যদল পরাজিত হওয়ায় অভিযানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় (১৩০৩ খ্রি)।
আলপ খাঁর দাক্ষিণাত্য অভিযান
- (১) ১৩০৬-১৩০৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আলাউদ্দিন দাক্ষিণাত্যে দুটি অভিযানের পরিকল্পনা করেন। গুজরাটের ভূতপূর্ব রাজা কর্ণ বাগলানায় একটি ক্ষুদ্র রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। তাকে বিতাড়িত করা এবং দেবলা দেবীকে (যিনি ফারসি গ্রন্থে ‘দেবল রাণী’ নামে উল্লিখিত) দিল্লীতে নিয়ে আসার জন্য গুজরাটের শাসনকর্তা আলপ খাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
- (২) কর্ণ পরাজিত হন এবং দিল্লীর সৈন্যদল তার অনুসরণ করে। তিনি দেবগিরির দিকে পলায়ন করেন এবং পরে বরঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। দেবল রানীকে বন্দী করে দিল্লীতে প্রেরণ করা হয়। সেখানে আলাউদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র খিজির খাঁর সাথে তার বিবাহ হয়।
আমীর খসরুর কাব্য
আমীর খসরু রচিত একটি কাব্যে দেবল রাণীর সৌন্দর্য ও খিজির খাঁর প্রতি তার প্রেমের কাহিনী লিপিবদ্ধ হয়েছে। আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পরে তার অপর পুত্র কুতুউদ্দিন মোবারক খলজি খিজির খাঁকে হত্যা করে বলপূর্বক দেবল রাণীকে বিবাহ করেন। পরে কুতবউদ্দিন মুবারককে হত্যা করে খসরু শাহ সিংহাসন অপহরণ করে এবং দেবল রাণীকে নিজ অন্তঃপুরে নিয়ে যায়।
মালিক কাফুরকে দাক্ষিণাত্যে প্রেরণ
দ্বিতীয় এবং বৃহত্তর অভিযানের লক্ষ্য ছিল দেবগিরি। মালিক কাফুরকে সুলতান ইতিমধ্যে সকল রাজকর্মচারীর ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছিলেন। ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান তাঁকে এক বিশাল সৈন্যদল সহ দাক্ষিণাত্যে প্রেরণ করলেন।
দেবগিরির রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে মালিক কাফুরকে প্রেরণ
রামচন্দ্র পর পর তিন বছর দিল্লীতে রাজস্ব প্রেরণ করেন নি। তাই তাঁকে বশীভূত করার নির্দেশ দিয়ে মালিক কাফুরকে পাঠানো হয়।
যাদবরাজ রামচন্দ্রের বশ্যতা স্বীকার
তিনি ইলিচপুরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হন। মুসলমান রাজকর্মচারীদের উপর এই অঞ্চলের শাসনভার অর্পণ করা হয়। তিনি দেবগিরিতে উপস্থিত হলে যাদবরাজ সবিনয়ে বশ্যতা স্বীকার করেন।
যাদবরাজ রামচন্দ্রের ‘রায়-ই-রায়ান’ উপাধি লাভ
রামচন্দ্র দিল্লীতে যান এবং সুলতানকে বহুমূল্য উপঢৌকন দিয়ে সন্তুষ্ট করে তার কাছ থেকে ‘রায়-ই-রায়ান’ (নায়ক শ্রেষ্ঠ) উপাধি লাভ করেন।
সিংহাসনে পুনঃস্থাপিত রামচন্দ্র
রামচন্দ্রকে সামন্তরাজ রূপে সিংহাসনে পুনঃস্থাপিত করা হয় এবং নাভাসরি জেলা তাঁকে ব্যক্তিগত জায়গীর রূপে দান করা হয়। তার এক কন্যার সাথে আলাউদ্দন খলজির বিবাহ হয়।
উপসংহার :- দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে অভিযানের সময় যাদব রাজ্যটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিকেন্দ্র রূপে ব্যবহৃত হয়।
(FAQ) দাক্ষিণাত্যে মালিক কাফুরের প্রথম অভিযান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
উলুঘ খাঁ।
মালিক চজ্জু।
মালিক কাফুর।
আলাউদ্দিন খলজি, যাদবরাজ রামচন্দ্রকে।