নাইকদা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রথম আন্দোলন, ধর্মমত প্রচার, রূপা সিং-এর যোগদান, রাজদরবার প্রতিষ্ঠা, রাজগড় আক্রমণ, থানা লুন্ঠন ও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে নাইকদাগণের বিদ্রোহ সম্পর্কে জানবো।
নাইকদা আন্দোলন
ঐতিহাসিক ঘটনা | নাইকদা আন্দোলন |
স্থান | বোম্বাই প্রেসিডেন্সি |
সূচনা | অক্টোবর ১৮৫৮ খ্রি: |
নেতা | জোরিয়া নাইকদা, রূপা সিং |
ভূমিকা :- ভারত-এর বোম্বাই প্রেসিডেন্সীর পাঁচমহল অঞ্চলের দুর্ধর্ষ উপজাতি ছিল নাইকদাগণ। ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করে।
নাইকদাগণের প্রথম আন্দোলন
নাইকদাগণ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে প্রথম বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহী এই উপজাতিকে দমন করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করলে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চের মধ্যে এই বিদ্রোহ সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। বিদ্রোহের নেতা রূপা সিং বা রূপা ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্য স্বীকার করেন।
জোরিয়া নাইকদার ধর্মমত প্রচার
কিন্তু কয়েক বছর পরে এই অঞ্চলে পুনরায় অশান্তির সৃষ্টি হয়। ১৮৬৭ খ্রীস্টাব্দে ভাদেক গ্রামের জোরিয়া নাইকদা নিজেকে ‘পরমেশ্বর’ বলে ঘোষণা করেন এবং নৈতিক আচার-আচরণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একটি নতুন ধর্মমত প্রচার করতে শুরু করেন।
জোরিয়া নাইকদার দলে রূপা সিং-এর যোগদান
অল্পদিনের মধ্যেই জোরিয়া নাইকদার অনুচরদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরপর রূপা সিং তাঁর দলে যোগ দিলে এই আন্দোলন একটি নতুন রূপ গ্রহণ করে।
ভাদেকে নাইকদাদের রাজদরবার প্রতিষ্ঠা
জোরিয়াকে ধর্মীয় গুরুর আসনে স্থাপন করে রূপা সিং নিজের জন্য একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ভাদেকে রাজদরবার প্রতিষ্ঠিত করে তিনি ধর্মকর, ভূমি-রাজস্ব, পরিবহণ শুল্ক এবং নানাপ্রকার জরিমানা আদায় করতে শুরু করেন।
রূপা সিং-এর রাজগড় আক্রমণ
কিছুদিন পরে তিনি বারিয়া রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত রাজগড় থানা এলাকার রাজস্বের একাংশ দাবি করেন। তাঁর এই দাবি প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি প্রায় পাঁচশ সৈন্যসহ রাজগড় আক্রমণ করেন।
রূপা সিং-এর থানা লুণ্ঠন
রূপা সিং-এর অতর্কিত আক্রমণে তিনজন পুলিশ নিহত ও তিন জন আহত হয় এবং থানা লুণ্ঠন করে রূপা সিং নগদ আটশ টাকা ও থানার অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য দ্রব্য লাভ করেন। রাজগড়ের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে রূপা সিং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঞ্চলে লুঠ-পাট শুরু করেন।
উদেপুর রাজ্যের উপর নাইকদাগণের আক্রমণ
জোরিয়া পরমেশ্বরও রূপা সিং-এর সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। তাঁর নেতৃত্বে ছোট উদেপুর রাজ্যের উপর আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। এই আক্রমণ ব্যর্থ হলেও স্থানীয় শাসনকর্তা এত শঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, তিনি আত্মরক্ষার জন্য রাজধানী সুরক্ষিত করে তুলতে শুরু করেন।
ব্রিটিশ সরকারের সাথে নাইকদাদের বিদ্রোহ
নাইকদাদের বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকারকেও চিন্তিত করে তোলে এবং এই বিদ্রোহের আগুন বেশি দূর বিস্তৃত হয়ে পড়ার পূর্বেই ব্রিটিশ সৈন্যগণ বিদ্রোহীদের প্রধান কর্মকেন্দ্র ভাদেক আক্রমণ করে। রূপা সিং ও তাঁর পুত্র গালালিয়া বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেও পরাজিত হন। তাঁদের বন্দী করে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
উপসংহার :- নেতৃবর্গের মৃত্যুর ফলে এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং পাঁচমহল ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পুনরায় শান্তি স্থাপিত হয়।
(FAQ) নাইকদা আন্দোলন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
বোম্বাই প্রেসিডেন্সীর পাঁচমহল অঞ্চলের দুর্ধর্ষ উপজাতি।
রূপা সিং ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
জোরিয়া নাইকদা।