তালিকোটার যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, তালিকোটার যুদ্ধ, তালিকোটার যুদ্ধ প্রসঙ্গে ফিরিস্তার মন্তব্য, তালিকোটার যুদ্ধ প্রসঙ্গে সিউয়েল এর মন্তব্য, তালিকোটার যুদ্ধের ফলাফল ও বিজয়নগরের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার সম্পর্কে জানবো।
তালিকোটার যুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | তালিকোটার যুদ্ধ |
সময়কাল | ১৫৬৫ খ্রি: |
স্থান | কর্ণাটকের তালিকোটি শহর |
বিবাদমান পক্ষ | বিজয়নগর ও দক্ষিণের মুসলিম রাজ্য সমূহ |
ফলাফল | বিজয়নগরের পরাজয় |
ভূমিকা :- দিল্লী সুলতানির সময়কালে দক্ষিণের উল্লেখযোগ্য হিন্দু রাজ্য ছিল বিজয়নগর সাম্রাজ্য এবং মুসলিম রাজ্য ছিল বাহমনি রাজ্য। এই দুই রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফল ছিল তালিকোটার যুদ্ধ।
তালিকোটার যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ –
(১) বিজয়নগরের কেন্দ্রীয় শক্তি হ্রাস
কৃষ্ণদেব রায়-এর উত্তরাধিকারী হন তার ভ্রাতা অচ্যুত রায়। তার দুর্বলতার ফলে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়। ফলে কেন্দ্রীয় শক্তি হ্রাস পায়।
(২) সুলতানদের পারস্পরিক কলহে রামরায়ের হস্তক্ষেপ
তাঁর মৃত্যুর অল্পকাল পরে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র সদাশিব সিংহাসন লাভ করেন, কিন্তু প্রকৃত শাসক ছিলেন তাঁর মন্ত্রী রাম রায়। এই দক্ষ কিন্তু রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শী মন্ত্রী বিজয়নগরের মর্যাদা ও শক্তি পুনরুদ্ধারের আশায় মুসলমান সুলতানদের পারস্পরিক কলহে হস্তক্ষেপ করেন।
(৩) রামরায়ের মিত্রতার নীতি
রামরায় বিজাপুরের বিরুদ্ধে আহম্মদনগর ও গোলকুণ্ডার সাথে মিত্রতা স্থাপন করে বারংবার আদিল শাহকে ভীষণভাবে পরাজিত করেন। এরপর তিনি আহম্মদনগর ও গোলকুণ্ডার বিরুদ্ধে বিজাপুরের সাথে যোগ দিলেন। আহম্মদনগর রাজ্য বিধ্বস্ত হয়।
(৪) বিজয়নগরের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম রাজা
ফিরিস্তা বলেন, বিজয়নগরের সৈনবাহিনী মসজিদগুলি ধ্বংস করে, এমনকি পবিত্র কোরাণেরও মর্যাদা রক্ষা করে না। ইসলামের এই অবমাননা এবং রাম রায়ের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহারের ফলে বেরারের সুলতান ব্যতীত দাক্ষিণাত্যের মুসলমান রাজারা সকলেই বিজয়নগরের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন।
তালিকোটার যুদ্ধ
১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারী তালিকোটার যুদ্ধে বিজাপুর, আহম্মদনগর, গোলকুণ্ডা ও বিদরের সৈনবাহিনী বিজয়নগরের সৈনদলকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করে। রাম রায় বন্দী হন এবং আহম্মদনগরের সুলতান স্বহস্তে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করেন।
ঐতিহাসিক তালিকোটার যুদ্ধ প্রসঙ্গে ফিরিস্তার মন্তব্য
সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক ফিরিস্তা বলেন, ‘লুণ্ঠন কার্য এত ব্যাপক হয়েছিল যে মিত্রপক্ষের প্রতিটি সৈন স্বর্ণ, মণিমুক্তা, অস্ত্রশস্ত্র, অশ্ব ও ক্রীতদাসে প্রভূত ধনী হয়ে উঠেছিল।’
তালিকোটার যুদ্ধ প্রসঙ্গে সিউয়েল এর মন্তব্য
বিজয়নগর শহরটিকে নির্দয়ভাবে ধ্বংস করা হল। ঐতিহাসিক সিউয়েল (Sewell) বলেন, ‘অতি আকস্মিকভাবে একটি ঐশ্বর্যময়ী নগরীকে এইরূপে বিধ্বস্ত করার ঘটনা আর কখনো ঘটে নি।’
ইতিহাস খ্যাত তালিকোটার যুদ্ধের ফলাফল
তালিকোটার যুদ্ধে বিজয়নগর দুর্বল হয়ে পড়লেও এর ফলে দাক্ষিণাত্যে হিন্দুদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বিনষ্ট হয় নি। বিজয়নগরের সামরিক শক্তি হ্রাস পেল, তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিনষ্ট হল এবং রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত হল। কিন্তু এর পরেও প্রায় এক শতাব্দী কাল এই রাজ্যের অস্তিত্ব বজায় ছিল।
তালিকোটার যুদ্ধের পর বিজয়নগরের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার
মুসলমান সুলতানদের সামরিক সহযোগিতা স্থায়ী হয় নি। তাদের পারস্পরিক ঈর্ষা ও বিদ্বেষের ফলে বিজয়নগরের হৃত গৌরব কিছু পরিমাণে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।
উপসংহার :- বলা হয় যে, তালিকোটার যুদ্ধ বিজয়নগরের সাম্রাজ্য-এর বিপদ এনেছিল, কিন্তু তাতে বিজয়নগরের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয় নি।
(FAQ) তালিকোটার যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে।
কর্ণাটকের তালিকোটি শহরে।
বিজয়নগরের সাথে আহম্মদনগর, বিজাপুর, গোলকুন্ডা ও বিদর রাজ্যের মিলিত বাহিনীর মধ্যে।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের।