জাহাঙ্গীরের বঙ্গদেশ বিজয় প্রসঙ্গে মুঘল প্রাধান্যের প্রতিরোধ, সুবাদার ইসলাম খান, প্রতিশ্রুতি দান, প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, শল্কার যুদ্ধ, কাগরাঘাটার যুদ্ধ, প্রতাপাদিত্যের মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
জাহাঙ্গীরের বঙ্গদেশ বিজয়
বিষয় | জাহাঙ্গীরের বঙ্গদেশ বিজয় |
মুঘল বাদশা | জাহাঙ্গীর |
যশোরের রাজা | প্রতাপাদিত্য |
মুঘল সেনাপতি | ইসলাম খান |
মুঘল অধীনস্থ | ১৬১২ খ্রি |
ভূমিকা :- আকবর আফগান শক্তি বিনষ্ট করে বঙ্গদেশে মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন সত্য, কিন্তু কয়েকজন পরাক্রান্ত জমিদার এবং আফগান ওমরাহ বঙ্গদেশের বিভিন্ন অংশে প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব করছিলেন।
বঙ্গদেশে মুঘল প্রাধান্যের প্রতিরোধ
দায়ুদ খানের পতনের পর কুতলু খান, ইশা খান এবং সুলেমান প্রমুখ আফগানরা বাংলাদেশ-এ মুঘল প্রাধান্যের প্রতিরোধ করেছিলেন। সম্রাটের পক্ষ থেকে বিচক্ষণ সুবাদার পাঠানো সত্ত্বেও কিছুতেই সেখানে মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত সম্ভব হচ্ছিল না।
জাহাঙ্গীরের সময় বঙ্গদেশের সুবাদার ইসলাম খান
- (১) কুতুবউদ্দিন খান কোকা ও জাহাঙ্গির কুলি খানের পর ইসলাম খান ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে সুবাদার নিযুক্ত হন এবং ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল থাকেন। ইসলাম খান প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু সেলিম চিস্তির পৌত্র এবং কর্মদক্ষতায় জাহাঙ্গিরের সেনাপতিদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন।
- (২) তিনি রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় সরিয়ে নিয়ে যান। প্রধানত তাঁরই প্রচেষ্টায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় সমস্ত বঙ্গদেশ মুঘলদের আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
- (৩) ইসলাম খানের সুদক্ষ সমর পরিচালনায় সোনারগাঁও-এর ভৌমিক মুসা খান, ইশা খানের পুত্র উসমান ও যশোরের সামন্তরাজা প্রতাপাদিত্য পরাজিত হন।
বঙ্গদেশের সুবাদারকে প্রতিশ্রুতি দান
ইসলাম খানের বঙ্গদেশে আগমনের সংবাদে অবগত হয়ে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য উপযুক্ত উপহারসহ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কনিষ্ঠ পুত্র সংগ্রামাদিত্যকে তাঁর কাছে প্রেরণ করে স্বয়ং সুবাদারকে বঙ্গদেশ বিজয়ে সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে বঙ্গদেশের মুঘল সুবাদরের যুদ্ধ ঘোষণা
কিন্তু কার্যকালে এই প্রতিশ্রুতির কোনো প্রমাণ না পেয়ে, ইসলাম খান প্রতাপাদিত্যকে দমন করতে সংকল্প করেন। প্রতাপাদিত্য ভীত হয়ে আশিটি রণতরীসহ পুত্র সংগ্রামাদিত্যকে ইসলাম খানের সন্তুষ্টির জন্য পাঠান। কিন্তু ইসলাম খান তাঁর সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
মুঘল বাহিনী ও প্রতাপাদিত্যের মধ্যে শল্কার যুদ্ধ
প্রতাপাদিত্য স্বয়ং ধূমঘাটের সুরক্ষিত দুর্গে অবস্থান করে, জ্যেষ্ঠপুত্র উদয়াদিত্য এবং জামাল খান ও খাজা কামালকে বাদশাহি সৈন্যের প্রতিরোধের জন্য শল্কায় প্রেরণ করেন। বাদশাহি সেনাপতি মির্জা নাথান শল্কার যুদ্ধে যশোরের অধিকাংশ নৌবাহিনী বিনষ্ট করেন। খাজা কামাল এই যুদ্ধে নিহত হন। উদয়াদিত্য ও জামাল খান শল্কার দুর্গ মুঘলদের হাতে প্রত্যর্পণ করেন।
মুঘল বাহিনী ও প্রতাপাদিত্যের মধ্যে কাগরাঘাটার যুদ্ধ
অতঃপর বাদশাহি সৈন্যের সঙ্গে প্রতাপাদিত্যের সৈন্যদলের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ‘কাগরাঘাটার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধেও প্রতাপাদিত্য পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝে বাদশাহি সেনাপতি ইনায়েৎ খানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
বাংলার যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের মৃত্যু
- (১) প্রতাপাদিত্য ঢাকায় ইসলাম খানের কাছে প্রেরিত হন এবং তাঁর রাজ্য বাদশাহি সাম্রাজ্য-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে অবগত হওয়া যায় যে, বন্দি প্রতাপাদিত্যকে শৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় লোহার খাঁচায় ঢাকা থেকে দিল্লিতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে বারাণসীতে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
- (২) এই সংবাদ যথার্থ নয় বলেই আধুনিক ঐতিহাসিকরা মনে করেন। প্রতাপাদিত্যের স্বাধীনতাস্পৃহা ও স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে যে কাহিনি প্রচলিত আছে, তা আচার্য যদুনাথ সরকার অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন।
- (৩) যদুনাথ সরকার দেখিয়েছেন যে, প্রতাপাদিত্য উচ্চাভিলাষী ও সুবিধাবাদী সামন্ত ছিলেন। মুঘলদের আনুগত্য স্বীকারে তাঁর কোনো কুণ্ঠা ছিল না। প্রথমে তিনি আনুগত্যই স্বীকার করেছিলেন। পরে সুযোগ মতো বিদ্রোহ করেন এবং সুবিধালাভের প্রতিশ্রুতিতে মুঘল সেনাপতির কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
- (৪) কিন্তু ইসলাম খান বিদ্রোহী ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীর প্রতি কোনো সদয় ব্যবহার করতে প্রস্তুত ছিলেন না। সমসাময়িক ঐতিহাসিক তথ্য হিসেবে মির্জা নাথানের বাহারিস্তান-ই-ঘাইবী এই বিষয়ে খুবই প্রামাণ্য তথ্য।
উপসংহার :- ইশা খানের পুত্র উসমান ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ভদ্রকের যুদ্ধে মুঘলদের পরাস্ত করেন। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে শ্রীহট্টে দৌলম্বপুরের যুদ্ধে তিনি প্রথম আহত ও পরে নিহত হন। উসমানের মৃত্যুর পর আফগানের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয় এবং বঙ্গদেশ মুঘলদের অধীনস্থ হয়।
(FAQ) জাহাঙ্গীরের বঙ্গদেশ বিজয় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৬১২ খ্রিস্টাব্দে।
ইসলাম খান।
প্রতাপাদিত্য