মুঘল সম্রাট আকবরের কাবুল অভিযান প্রসঙ্গে আকবরের সাহায্য প্রার্থনা, আকবরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, মির্জা হাকিমের পাঞ্জাব আক্রমণ, মির্জা হাকিমের কাবুল প্রত্যাবর্তন, দেওয়ান মনসুরের প্রাণদণ্ড, মির্জা হাকিমকে ক্ষমাপ্রদর্শন, মুঘল সাম্রাজ্যভূক্ত কাবুল ও কাবুল জয়ের ফলাফল সম্পর্কে জানবো।
মুঘল সম্রাট আকবরের কাবুল অভিযান
বিষয় | আকবরের কাবুল অভিযান |
সময়কাল | ১৫৮১ খ্রি |
মুঘল বাদশা | আকবর |
কাবুলের শাসক | মির্জা হাকিম |
ভূমিকা :- কাবুলের শাসক ছিলেন আকবরের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা মির্জা হাকিম। মির্জা হাকিম উত্তরাধিকার সূত্রে কাবুলের অধিকার পেয়েছিলেন। খান কলানের নেতৃত্বে আকবরের বাহিনী তাকে ১৫৬৬ খ্রিস্টাব্দে কাবুলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল।
আকবরের সাহায্য প্রার্থনা
মির্জা হাকিম তাঁর শ্বশুর মির্জা সুলেমানের হাতের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু সুলেমান নিজেই রাজ্যক্ষমতা দখলের জন্য কাবুল অভিযান করেন এবং বাধ্য হয়েই মির্জা হাকিম আকবরের সাহায্য চান।
আকবরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
১৫৭৮ খ্রিস্টাব্দে আকবর মির্জা হাকিমের আনুগত্য চেয়ে কাবুলে দূত পাঠান। কিন্তু আকবরের ধর্মনীতিতে বিরক্ত হয়ে বঙ্গদেশ ও বিহারের গোঁড়া মুসলমান আফগান প্রধানরা আকবরকে সিংহাসনচ্যুত করে হাকিমকে সিংহাসনে স্থাপন করার এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং তার ফলে হাকিম এই ষড়যন্ত্রে উৎসাহিত হয়ে আকবরকে কোনো সাড়া দেন নি।
মির্জা হাকিমের পাঞ্জাব আক্রমণ
বঙ্গদেশ ও বিহারের ষড়যন্ত্রকারীদের অনুরোধ পেয়ে এবং আগ্রা-দিল্লিতে আকবর-বিরোধী বেশকিছু সমর্থক আছে জেনে, তিনি ১৫৮০-৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনবার পাঞ্জাব আক্রমণ করেন। কিন্তু মানসিংহের কাছে পরাজিত হয়ে কাবুলে প্রত্যাবর্তন করেন।
মির্জা হাকিমের কাবুল প্রত্যাবর্তন
১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে হাকিম পুনরায় সসৈন্যে পাঞ্জাব আক্রমণ করলে আকবর তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য মির্জা হাকিমের সমর্থক বলে সন্দেহভাজন দেওয়ান মনসুরকে সঙ্গে নিয়ে সসৈন্যে অগ্রসর হলে হাকিম কাবুলে প্রত্যাবর্তন করেন।
দেওয়ান মনসুরের প্রাণদণ্ড
দেওয়ান মনসুরের সঙ্গে এই বিদ্রোহের সংযোগ আছে তার প্রমাণ পেয়ে আকবর তাঁর প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, দেওয়ান মনসুর নির্দোষ ছিলেন। তাঁর শত্রুপক্ষের চক্রান্তে আকবরের মনে দেওয়ানের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সন্দেহ হয়েছিল। তবে পরে সঠিক সংবাদ অবগত হয়ে আকবর অনুতপ্ত হন।
হাকিমকে ক্ষমা প্রদর্শন
১৫৮১ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট আকবর কাবুলে প্রবেশ করেন এবং হাকিমকে ক্ষমা করে পুনরায় কাবুলের শাসক নিযুক্ত করেন। কাবুল পরবর্তীকালে আকবরের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল।
মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত কাবুল
১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে হাকিমের মৃত্যু হলে কাবুল সম্পূর্ণভাবে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয় এবং আকবর মানসিংহকে কাবুলের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
কাবুল জয়ের ফলাফল
- (১) কাবুল দখল আকবরের সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কাবুল জয়ের ফলে আকবরের উদার ধর্মমতের গোঁড়া বিরোধী মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরোধিতার অবসান ঘটে এবং আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সংগ্রহের সব বাধা অপসারিত হয়।
- (২) এই অঞ্চল থেকে সৈন্য সংগ্রহ করার পথ উন্মুক্ত হওয়ায় মুঘল বাহিনী শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উপরন্তু উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বৈদেশিক আক্রমণের। সম্ভাবনার অবসান হয়।
শ্রীবাস্তবের অভিমত
ড. শ্রীবাস্তব মনে করেন ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দ আকবরের জীবনে সবচেয়ে সংকটকাল। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দের সংকটপূর্ণ অবস্থার চেয়েও ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দ আকবরের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংকটকাল।
উপসংহার :- আকবর অত্যন্ত দক্ষতা ও কূটনীতির সঙ্গে তাঁর শত্রুদের মোকাবিলা করে সফল হয়েছিলেন এবং তাঁর পূর্বের যে কোনো সময়ের থেকে নিজেকে সবচেয়ে শক্তিশালী করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
(FAQ) মুঘল সম্রাট আকবরের কাবুল অভিযান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মির্জা হাকিম।
১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে।
১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে।