বিজ্ঞানে নবজাগরণের প্রভাব

বিজ্ঞানে নবজাগরণের প্রভাব হিসেবে রোজার বেকনের অবদান, ফ্রান্সিস বেকনের অবদান, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অবদান, কোপারনিকাসের অবদান, গ্যালিলিওর অবদান, গুটেনবার্গের অবদান সম্পর্কে জানবো।

বিজ্ঞানে নবজাগরণের প্রভাব

আবিষ্কারক
বিস্ময়কর ডাক্তাররোজার বেকন
ওপাস মাজুসরোজার বেকনওপাস মাজুসরোজার বেকন
নোভাম অর্গানামফ্রান্সিস বেকন
দূরবীনগ্যালিলিও
ছাপাখানাজোহান গুটেনবার্গ
বিজ্ঞানে নবজাগরণের প্রভাব

ভূমিকা:- নবজাগরণের প্রভাবে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উন্নতি দেখা যায়। যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাস নয়—গির্জার প্রভাব খর্ব করে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও যুক্তির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এক বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়।

(ক) রোজার বেকন

  • (১) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সন্ন্যাসী ও বিজ্ঞানের নানা শাখায় সুপণ্ডিত রোজার বেকন (Roger Bacon) ইংল্যান্ডে নবজাগরণের পথ প্রস্তুত করেন। তাঁকে ‘আধুনিক বিজ্ঞানের জনক’ বা ‘পথপ্রদর্শক’ বলা হয়।
  • (২) তিনি পদার্থবিদ্যা, বলবিদ্যা, আলোকবিজ্ঞান, রসায়ন প্রভৃতি নানা শাস্ত্রে বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। এই কারণে তাঁকে ‘বিস্ময়কর ডাক্তার’ (‘Wonderful Doctor’) বলা হয়।
  • (৩) অনেকের মতে তিনি চশমার কাচ, অণুবীক্ষণ ও দূরবীক্ষণ যন্ত্র এবং বারুদের আবিষ্কারক। আরব বিজ্ঞানীদের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তিনি পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া অন্ধভাবে কিছু মানতে রাজি ছিলেন না।
  • (৪)  গির্জার দুর্নীতির বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে যন্ত্রচালিত জাহাজ, গাড়ি, বিমান প্রভৃতি তৈরি করা অসম্ভব নয়। ভূবিদ্যাতেও তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিল।
  • (৫) এইসব আধুনিক পদক্ষেপের জন্য তিনি গির্জার কুনজরে পড়েন এবং তাঁকে চোদ্দো বছর কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘ওপাস মাজুস’ (‘Opus Majus’)।

(খ) ফ্রান্সিস বেকন

  • (১) ইংল্যান্ডের কৃতী রাজনীতিবিদ, ঔপন্যাসিক, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ফ্রান্সিস বেকন (Francis Bacon) অন্ধভাবে কোনও কিছুই বিশ্বাস করতেন না।
  • (২) তিনি মনে করতেন যে, কেবলমাত্র দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বারংবার একই জিনিস দেখেই সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যায়।
  • (৩) তিনি মনে করতেন যে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে কোনও মৃতদেহ রেখে দিলে তা পচে না। প্রকৃতিবিজ্ঞান চর্চায় তাঁর প্রবল উৎসাহ ছিল। তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘নোভাম অর্গানাম’ (‘Novum Organum’)।

(গ) লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

  • (১) বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (Leonardo da Vinci) তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী।
  • (২) তিনি মনে করতেন যে, একমাত্র যুক্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। শারীরতত্ত্ব, যন্ত্রবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যায় তিনি বিশেষ দক্ষ ছিলেন।
  • (৩) তিনি মনে করতেন যে, গণিতশাস্ত্রই হল বিজ্ঞানচর্চার মূল ভিত্তি। মানুষ, পশু, পক্ষী ও গাছপালার শারীরতত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। আধুনিক পদ্ধতিতে খাল খনন ও দুর্গ নির্মাণের পরিকল্পনাও তিনি দিয়েছিলেন।
  • (৪) এছাড়া, তিনি হলেন স্ক্রুর প্যাঁচ কাটার যন্ত্র ও মেশিনগানের আবিষ্কারক। তিনি যুদ্ধের সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাঙ্কার, প্যারাসুট, ডুবোজাহাজ ও উড়োজাহাজের নক্সাও তৈরি করেন।

(ঘ) কোপারনিকাস

  • (১) পোল্যান্ডের অধিবাসী কোপারনিকাস (Nicolaus Copernicus)-এর ছাত্রজীবন ইতালিতে অতিবাহিত হয়। জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে তিনি নানা নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন।
  • (২) আগে সবার ধারণা ছিল যে, সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু তিনি প্রমাণ করেন যে, পৃথিবীই সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। অতি প্রাচীনকালে গ্রিক বিজ্ঞানী পিথাগোরাস প্রথম এই সত্য আবিষ্কার করেন, কিন্তু সেই সময় কেউ তাঁর কথা বিশ্বাস করে নি।
  • (৩) বলা বাহুল্য, সে দিন কোপারনিকাসের কথাও কেউ মানে নি। ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে কোপারনিকাসের ‘On the Revolution of Celestial Order পুস্তকটি প্রকাশিত হয়।

(ঙ) গ্যালিলিও

  • (১) ফ্লোরেন্সের এক অভিজাত পরিবারের সন্তান প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও। গ্যালিলিও (Galileo Galiley) কোপারনিকাসের মত সমর্থন করেন।
  • (২) তিনি প্রচার করেন যে, পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। গির্জার কাছে এই মত ধর্মবিরুদ্ধ হওয়ায় ধর্মীয় আদালতে (Inquisition) তাঁর বিচার হয় (১৬৩৩ খ্রিঃ) এবং তিনি কারারুদ্ধ হন। শেষ জীবনে তিনি অন্ধ হয়ে যান।
  • (৩) তাঁর অন্যান্য আবিষ্কারের মধ্যে পেন্ডুলাম ঘড়ি ও দূরবীক্ষণ যন্ত্র উল্লেখযোগ্য। এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আকারে গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি দেখা সম্ভব হয়।

(চ) গুটেনবার্গ

  • (১) ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির মেইনজ শহরের যোহান গুটেনবার্গ (Johan Gutenberg) সর্বপ্রথম মুদ্রণযন্ত্র ও সিসার অক্ষরের সাহায্যে বই ছাপাবার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
  • (২) ১৪৫৬ খ্রিস্টাব্দে এই ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম ল্যাটিন ভাষায় প্রকাশিত বাইবেল। সম্ভবত ল্যাটিন বাইবেলই হল ইউরোপের প্রথম মুদ্রিত পুস্তক।
  • (৩) মধ্যযুগে মূল পাণ্ডুলিপি হাতে নকল করা হত। এতে বেশি সময় লাগত, ভুল থাকত এবং ব্যয়ও হত প্রচুর। ছাপাখানা আবিষ্কারের ফলে এইসব অসুবিধা দূর হল।
  • (৩) অল্প সময়ে বেশি পুস্তক ছাপিয়ে জনগণের মধ্যে প্রচার করা সম্ভব হল এবং ধনী-দরিদ্র সকলেরই জ্ঞানলাভের সুযোগ হল।
  • (৪) নবজাগরণের বিস্তারে ছাপাখানার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই প্রসঙ্গে বলা দরকার যে, বহু পূর্বেই চিনদেশে ছাপাখানা আবিষ্কৃত হয়েছিল।
  • (৫) স্যার আইজাক নিউটন তার বিখ্যাত ‘মহাকর্ষ নীতি’ আবিষ্কার করার মাধ্যমে জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তর আনয়ন করেন।

উপসংহার :- বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণ এবং প্রবর্তক যুক্তির উপর নির্ভরতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বহু বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক বৈজ্ঞানিক সাধনার ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল।

(FAQ) বিজ্ঞানে নবজাগরণের প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিস্ময়কর ডাক্তার কাকে বলা হয়?

রোজার বেকন।

২. বারুদের আবিষ্কার করেন কে?

রোজার বেকন।

৩. ছাপাখানা কে আবিষ্কার করেন?

জার্মানির জোহান গুটেনবার্গ।

৪. নোভাম অর্গানাম গ্ৰন্থটির রচয়িতা কে?

ফ্রান্সিস বেকন।

৫. মেশিনগানের আবিষ্কারক কে?

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি।

Leave a Reply

Translate »