শিল্পে নবজাগরণের প্রভাব

শিল্পে নবজাগরণের প্রভাব হিসেবে মধ্যযুগের শিল্প, নবজাগরণের যুগে শিল্প, উল্লেখযোগ্য শিল্পী হিসেবে জিয়োটো, বাতিচেল্লি, টিশিয়ান, ব্রামন্টি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, রাফায়েল, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো সম্পর্কে জানবো।

শিল্পে নবজাগরণের প্রভাব

ঐতিহাসিক ঘটনাশিল্পে নবজাগরণের প্রভাব
মোনালিসালিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি
দি বার্থ অব ভেনাসবাতিচেল্লি
ম্যাডোনারাফায়েল
শেষ বিচারমাইকেল অ্যাঞ্জেলো
শেষ ভোজলিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি
ডেভিড মূর্তিমাইকেল অ্যাঞ্জেলো
শিল্পে নবজাগরণের প্রভাব

সূচনা :- নবজাগরণ -এর প্রভাবে চিত্রশিল্প, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। ধনী ব্যবসায়ী, ব্যাঙ্ক মালিক এবং পোপদের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পচর্চা নবরূপ ধারণ করে।

মধ্যযুগের শিল্প

মধ্যযুগে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র ধর্মীয় বিষয়বস্তুই অঙ্কিত হত—চিত্রগুলিতে ফুটে উঠত নিষ্প্রাণ, কৃশ ও ক্ষীণ সাধু-সন্তদের দেহ এবং মাতা মেরি বা যিশুর বেদনাদীর্ণ মুখাবয়ব। ছবির রঙ ও ধরন সবই গির্জা নিয়ন্ত্রণ করত।

নবজাগরণের যুগে শিল্প

রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ফলে মানুষের জীবন ও প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী নিয়ে মানবধর্মী ও জীবনমুখী শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। শিল্পীরা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, জীবজন্তু, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, মানবদেহ, রাজা, মন্ত্রী, সাধারণ মানুষ – এমনকী ধনীগৃহের সুন্দরীদের নিখুঁত চিত্রাবলী অঙ্কন করতে থাকেন।

নবজাগরণের যুগে উল্লেখযোগ্য শিল্পী ও তাদের শিল্পকলা

নবজাগরণের যুগে খ্যাতিমান শিল্পীরা তাদের শিল্পকলার পরিচয় দিয়ে ইতিহাস ও পাঠক সমাজে অমর হয়ে আছেন।এই সময়কালের উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন –

(১) নবজাগরণে মাইকেল জিয়োটোর শিল্পকলা

ফ্লোরেন্স ছিল নতুন শিল্পচর্চার কেন্দ্র।ফ্লোরেন্সের অধিবাসী জিয়োটো (Giotto) ছিলেন চতুর্দশ শতকের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী। তাঁকে চিত্রাঙ্কনে ‘নবজাগরণের আদি রূপকার’ বলা চলে। ধর্মের পরিবর্তে বাস্তব জীবনের ঘটনাবলী ছিল তাঁর শিল্পের বিষয়বস্তু। তিনি দেওয়াল-চিত্র অঙ্কনে দক্ষ ছিলেন।

(২) নবজাগরণে মাইকেল বাতিচেল্লির শিল্পকলা

চিত্রশিল্পী বাতিচেল্লি (Boticelli)-র শিল্পকর্মে মানুষের প্রেম, দুঃখ, প্রবঞ্চনা প্রভৃতি বাস্তব রূপ পেয়েছে। তাঁর ‘দি বার্থ অব ভেনাস’ বা ‘ভেনাসের জন্ম’ চিত্রটি চিত্রাঙ্কনের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করে।

(৩) নবজাগরণে মাইকেল টিশিয়ানের শিল্পকলা

ভেনিসের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী টিশিয়ান (Titian, 1477-1533 A.D.) প্রায় সাতশো চিত্র অঙ্কন করেন।

(৪) নবজাগরণে মাইকেল ব্রামন্টির শিল্পকলা

  • (ক) শিল্পী ব্রামান্টি (Bramante) ছিলেন এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থপতি। তিনি বহু সুন্দর সুন্দর গির্জা ও প্রাসাদ নির্মাণ করেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল রোম -এর সেন্ট পিটার গির্জার পরিকল্পনা। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ভজনালয়।
  • (খ) ৩২৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত পুরোনো গির্জার সংস্কারের প্রয়োজন হলে তিনি এই নতুন পরিকল্পনা দেন। এর নির্মাণকার্য পঞ্চদশ শতকে (১৪৫০ খ্রিঃ) শুরু হয়ে শেষ হয় ১৭৫ বছর পর সপ্তদশ শতকে (১৬২৬ খ্রিঃ)।
  • (গ) তাঁর মৃত্যুর পর রাফায়েল, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো প্রমুখ শিল্পীরা এর নির্মাণ কার্যে বিশেষ সাহায্য করেন।

(৫) নবজাগরণে মাইকেল লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শিল্পকলা

  • (ক) ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, গণিতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, স্থপতি ও ভাস্কর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (Leonardo da Vinci) আজও বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা বলে স্বীকৃত।
  • (খ) তাঁর অঙ্কিত ‘মোনালিসা’ (Mona Lisa) ও ‘শেষ ভোজ’ (Last Supper) চিত্র দুটি আজও মানুষের বিস্ময় উৎপাদন করে। ‘মোনালিসা’ হল স্মিত হাস্যময়ী এক সুন্দরী নারীর মুখ। এই চিত্রটি এখনও প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে।
  • (গ) ‘শেষ ভোজ’ হল শিষ্যদের সঙ্গে যিশু খ্রিস্টের শেষ ভোজনের দৃশ্য, যা মিলানের গির্জার দেওয়ালে অঙ্কিত আছে। তিনিই সর্বপ্রথম ছবিতে আলো-ছায়ার খেলা দেখান।
  • (ঘ) শারীরতত্ত্ব আলোচনা করে মানবদেহ চিত্রণের কলা আবিষ্কার তাঁর গবেষণার ফল। মিলানের গির্জায় তাঁর অঙ্কিত প্রাচীর-চিত্র বা ‘ফ্রেসকো’ আজও শোভা পাচ্ছে।

(৬) নবজাগরণে মাইকেল রাফায়েলের শিল্পকলা

  • (ক) ইতালির বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও স্থপতি রাফায়েল (Raphael) ছিলেন এই যুগের আরেক বিস্ময়। তিনি ছিলেন ষোড়শ শতকের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী। ‘ফ্রেসকো’ বা দেওয়াল-চিত্র অঙ্কনে তিনি খুবই দক্ষ ছিলেন।
  • (খ) তাঁর অঙ্কিত ‘ম্যাডোনা” বা মাতৃমূর্তি অর্থাৎ মাতা মেরির চিত্রগুলি চিত্রশিল্পের ইতিহাসে বিস্ময়কর সৃষ্টি। এই চিত্রগুলিতে পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের এক অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়।
  • (গ) রোমে পোপের প্রাসাদে তাঁর অঙ্কিত চিত্রগুলি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। সমকালীন পোপ ও রাজারা তাঁকে ‘শ্রেষ্ঠ চিত্রকর’ বলে সম্মান জানাতেন।

(৭) নবজাগরণে মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর শিল্পকলা

  • (ক) এই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রকর, ভাস্কর, কবি ও স্থপতি মাইকেল অ্যাঞ্জেলো (Michaelangelo)-র মধ্যে নতুন ও পুরাতন ভাবধারার এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।
  • (খ) তিনি ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে শিল্পায়িত করলেও তাতে পার্থিব ভাব ও আবেগ সঞ্চারিত করতেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল ‘শেষ বিচার’ (Last Judgement) নামক বিখ্যাত ছবিটি। এটি অঙ্কন করতে তাঁর আট বছর সময় লেগেছিল।
  • (গ) রোমের ‘সেন্ট পিটার গির্জা’ তৈরির ব্যাপারে তাঁর শিল্পদক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। রোমের বিখ্যাত সিসটাইন গির্জা’-র দেওয়ালে তাঁর অঙ্কিত চিত্রাবলী খুবই বিখ্যাত। ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত ‘ডেভিড’-এর মার্বেল মূর্তি ভাস্কর হিসেবে তাঁকে অমর করে রেখেছে।

উপসংহার :- নবজাগরণের মুক্ত হাওয়া জীবনের যে দিকগুলিকে সর্বাধিক আন্দোলিত করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম হল শিল্প। গীর্জার নিয়ন্ত্রণমুক্ত, ধর্মীয় বিশ্বাসের না-দেখা না-জানা বিষয়বস্তুকে পরিত্যাগ করে এই সময় শিল্প হয়ে ওঠে প্রকৃত অর্থেই জীবনমুখী।

(FAQ) শিল্পে নবজাগরণের প্রভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মোনালিসা ও শেষ ভোজ চিত্রগুলি কে আঁকেন?

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি।

২. ম্যাডোনা বা মাতৃমূর্তি কার আঁকা?

রাফায়েল।

৩. শেষ বিচার বা লাস্ট জাজমেন্ট চিত্রটি কে অঙ্কন করেন?

মাইকেল অ্যাঞ্জেলো।

৪. দি বার্থ অব ভেনাস বা ভেনাসের জন্ম চিত্রের সৃষ্টিকর্তা কে?

বাতিচেল্লি।

৫. বাতিচেল্লি মার্বেলের মূর্তি ডেভিড কার তৈরি?

মাইকেল অ্যাঞ্জেলো

Leave a Comment