লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি প্রসঙ্গে তার জন্ম, পিতামাতা, শিক্ষা, বাঁশিবাদক, চিত্রকর, প্রকৃতি প্রেম, কল্পনার আদর্শ শহর, মোনালিসা ও অন্যান্য চিত্র অঙ্কন, তার পাণ্ডুলিপি ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

ঐতিহাসিক চরিত্রলিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি
জন্ম১৪৫২ খ্রি
পরিচিতিচিত্রশিল্পী, আবিষ্কারক
বিখ্যাত চিত্রমোনালিসা
মৃত্যু১৫১৯ খ্রি
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

ভূমিকা :- মানব সভ্যতার ইতিহাসে যদি পূর্ণ হিসাবে কারো নাম বিবেচনা করতে হয়, তবে একটি নাম উচ্চারণ করতে হয়, তিনি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। এমন বহু বিচিত্র প্রতিভার সম্মেলন সম্ভবত অন্য কোনো মানুষের মধ্যেই দেখা যায় নি। তিনি চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, অঙ্কশাস্ত্রবিদ, গায়ক, প্রকৃতি বিজ্ঞানী, শরীরতত্ত্ববিদ, সামরিক বিশেষজ্ঞ, আবিষ্কারক, স্টেজ ডিজাইনার, দার্শনিক।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জন্ম

ইতালিনবজাগরণ বা রেনেসাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ১৪৫২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্ৰহণ করেন।

চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির পিতামাতা

বিধাতার পরিহাসে এক কুমারী নারীর গর্ভে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ছিল পিয়েরো এ্যান্টানিও দ্য ভিঞ্চি। পিয়েরো ছিলেন উকিল।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শিক্ষা জীবন

  • (১) শৈশব থেকেই তাঁর প্রতিভা বিকশিত হয়ে উঠেছিল। তাঁর জীবনীকার লিখেছেন, অঙ্কে তাঁর এত মেধা ছিল যে শিক্ষকরা তাঁকে পড়াত, তারা মাঝে মাঝেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত।
  • (২) লিওনার্দোর অনুসন্ধিৎসা ছিল প্রবল। তাঁর জিজ্ঞাসায় বিরক্ত হয়ে উঠত শিক্ষকরা। অঙ্ক ছাড়াও সঙ্গীতের প্রতি ছিল তাঁর গভীর আকর্ষণ।

বাঁশিবাদক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতেন তিনি। পরবর্তীকালে যখন তিনি বাঁশি বাজাতেন, এক স্বর্গীয় সুষমায় ভরে উঠত সমস্ত পরিমণ্ডল। তাঁর কণ্ঠস্বরও ছিল সুমিষ্ট। তাঁর গান শুনে সকলেই মুগ্ধ হত।

চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

  • (১) সে যুগে চিত্রশিল্পকে কোনো সম্মানীয় কাজ হিসাবে গণ্য করা হত না। তাছাড়া এতে ছেলের কোনো প্রতিভা আছে কিনা সে বিষয়েও পিয়েরো নিশ্চিত ছিলেন না। তাই লিওনার্দো যখন ছবি আঁকা শেখার জন্য অনুরোধ জানাল, সরাসরি তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন।
  • (২) লিওনার্দো উপলব্ধি করতে পারলেন, বাবার অনুমতি ছাড়া ছবি আঁকা সম্ভব নয়। তাই একটি বুদ্ধি করলেন। একটা বড় কাঠের পাটাতনের উপর গুহার ছবি আঁকলেন।
  • (৩) গুহার মধ্যে আধো আলো আধো ছায়ার এক অপার্থিব পরিবেশ। তার সামনে এক ভয়ঙ্কর ড্রাগনের ছবি, তার মাথায় শিং। চোখ দুটো আগুনের মত জ্বলছে। ভয়ঙ্কর হিংস্র দাঁতগুলো যেন ছুরির ফলা, নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছে আগুনের লেলিহান শিখা।
  • (৪) ছবি আঁকা শেষ হতেই ঘরের মধ্যে ছবিটাকে রেখে সব জানলা বন্ধ করে দিলেন। পিয়েরো কিছুই জানেন না। ঘরে ঢোকামাত্রই সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে বেরিয়ে এলেন।
  • (৫) পিয়েরো শান্ত হতেই লিওনার্দো গম্ভীর গলায় বললেন, আমি মনে হয় আমার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পেরেছি। এইবার আর ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করলেন না পিয়েরো। তিনি ছবি আঁকবার অনুমতি দিলেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির গুরু ভেরক্কিয়ো

  • (১) সেই সময় ক্লোরেন্সের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী ছিলেন ভেরক্কিয়ো। চিত্রশিক্ষার জন্য তার স্কুলে গেলেন লিওনার্দো। তখন তাঁর বয়স আঠারো। লিওনার্দো ভেরক্কিয়োর কাছে শুধু ছবির আঙ্কিক শিক্ষা করেন নি।
  • (২) তিনি দু চোখ মেলে দেখতে শিখেছিলেন প্রকৃতির অপরূপ রূপলাবণ্য, তার নিসর্গ শোভা, দেখেছেন নদীস্রোতের মধ্যে জীবনের প্রবাহ। তার সুখ, দুঃখ, ব্যথা-বেদনা শ্রদ্ধার গভীরে দেখেছেন নারীকে।
  • (৩) ভেরক্কিয়োর কাছেই লিওনার্দো শিখেছিলেন কেমন করে মানব জীবনের গভীরে ডুব দিয়ে তার অপার রহস্যময়তাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় রঙের তুলিতে। এই কারণেই লিওনার্দো ভেরক্কিয়োকেই তাঁর গুরু হিসাবে স্বীকার করেছেন।

ফ্লোরেন্সে শিল্পীসংঘে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির নাম অন্তর্ভুক্ত

দু’বছর শিক্ষানবিশী শেষ করে লিওনার্দো স্থির করলেই নিজেই স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা করবেন। ফ্লোরেন্সে শিল্পীদের একটি সঙ্ঘ ছিল। তিনি তাতে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করলেন।

বিজ্ঞানী ও শিল্পীর আশ্চর্য সংমিশ্রণ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

ছবির পাশাপাশি চলছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অধ্যয়ন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর মধ্যে ঘটেছিল বিজ্ঞানী আর শিল্পীর এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ। তাঁর চিন্তা কল্পনা অভিজ্ঞতার বিস্তৃত বিবরণ লিখে রাখতেন খাতার পাতায়।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ফ্লোরেন্সে দশ বছর অতিবাহিত

  • (১) দেখতে দেখতে দশ বছর ফ্লোরেন্সে কাটিয়ে দিলেন লিওনার্দো। এই সময় তিনি এঁকেছেন বেশ কিছু ছবি-এ্যানোনসেশন, মেরি ও যীশুর দুখানি ছবি, এক রমণীয় প্রতিকৃতি।
  • (২) ফ্লোরেন্সে থাকাকালীন সময়ে লিওনার্দো যে সমস্ত ছবি এঁকেছেন, তার অধিকাংশই ছিল প্রচলিত শিল্পীরীতির থেকে স্বতন্ত্র। তার এক শিল্পীর স্টুডিওর চার দেওয়ালের মধ্যে বসেই সব ছবি আঁকতেন।

প্রকৃতি প্রেমী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

লিওনার্দোই প্রথম শিল্পী যিনি প্রকৃতির ছবি আঁকবার জন্য প্রকৃতির কাছে যেতেন। যা প্রত্যক্ষ করতেন তাকেই মনের রঙে রাঙিয়ে রূপ দিতেন। ছবির মধ্যে তিনিই প্রথম শেডের ব্যবহার আরম্ভ করেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মিলান গমন

লিওনার্দো স্থির করলেন, তিনি মিলানে যাবেন। মিলানের অধিপতি ছিলেন লুডোভিকো। ১৪৮২ সালে লিওনার্দো মিলানে এলেন। সেই সময় ফ্লোরেন্সের ডিউকের প্রাসাদে এক সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে লিওনার্দো তাঁর বাঁশি বাজালেন। তাঁর অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভায় মুগ্ধ হলেন ডিউক। তাকে নিজের প্রাসাদে আমন্ত্রণ করলেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির লেখা চিঠি

কয়েকদিনের পরিচয়েই ডিউক উপলব্ধি করতে পারলেন কি অসাধারণ প্রতিভাধর পুরুষ এই লিওনার্দো। তিনিই তাকে মিলানের অধিপতি লুডোভিকোর কাছে পত্র লিখতে অনুরোধ করলেন। লিওনার্দো লিখলেন তাঁর সেই বিখ্যাত পত্র। এতে তিনি লিখলেন সামরিক প্রয়োজনে ৯টি মৌলিক সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কারের কথা।

মিলানের অধিপতি সান্নিধ্যে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

  • (১) মিলানের অধিপতি আমন্ত্রণ করে নিয়ে এলেন লিওনার্দোকে। প্রথম সাক্ষাতেই মুগ্ধ হলেন লুডোভিকো। লিওনার্দোকে নিজের রাজদরবারের অন্যতম প্রধান সভাসদ করে নিলেন। রাজপ্রাসাদেই তাঁর থাকার আয়োজন করা হল।
  • (২) শুরু হল লিওনার্দোর জীবনের আরেক অধ্যায়। দীর্ঘ আঠেরো বছর লিওনার্দো ছিলেন মিলানে উদার হৃদয় লুডোভিকোর সাহচর্যে এখানেই তাঁর প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল।

ভাস্কর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কল্পনায় আদর্শ শহর

  • (১) বহুদিন ধরেই লিওনার্দো কল্পনা করতেন এক আদর্শ শহরের। যে শহর হবে সর্বাঙ্গ সুন্দর, যেখানে মানুষের প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তিনি দুদিকে বিভক্ত রাস্তার কথা বলেন একদিকে মানুষ ও যানবাহন যাবে, অন্যদিকে আসবে।
  • (২) শহর হবে ছোটো। তাতে ৫০০০-এর বেশি বাড়ি থাকবে না। ছোট ছোট শহর রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ। শহর বড় হলে লোকসংখ্যা বাড়বে। তখন দেখা দেবে নানান সমস্যা। তাছাড়া শহরের সামর্থ্যের তুলনায় মানুষের সংখ্যা বেশি হলে তা হবে খোঁয়াড়ের মত অস্বাস্থ্যকর অসুবিধাজনক।
  • (৩) শহরের কোনো নর্দমাই বাইরে হবে না। প্রতিটি নর্দমা হবে মাটির নিচে। সেখান দিয়ে শহরের সব আবর্জনা শহরের বাইরে নদীতে গিয়ে পড়বে।
  • (৪) লিওনার্দোর এই আদর্শ শহরের পরিকল্পনা সর্বযুগে সর্বকালেই প্রযোজ্য। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লুডোভিকো লিওনার্দোর এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন নি।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা চিত্র লাস্ট সাপার

  • (১) শুরু হল লিওনার্দোর ভাবনা। কি ছবি আঁকবেন? দীর্ঘ ভাবনার পর স্থির করলেন যীশুর শেষ ভোজের ছবি আঁকবেন – The last supper। চিত্রশিল্পের জগতে লাস্ট সাপার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি।
  • (২) “যীশু তার বারোজন শিষ্যকে নিয়ে শেষ ভোজে বসেছেন। তাঁর দু পাশে ছয়জন ছয়জন করে শিষ্য। সামনে প্রশস্ত টেবিল। পেছনে জানলা দিয়ে মৃদু আলো এসে পড়েছে। যীশু বলছেন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাকে ধরিয়ে দেবে। শিষ্যরা চঞ্চল হয়ে উঠেছে। তারা সকলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে তাদের মধ্যে কে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”
  • (৩) ছবিটি সান্তামারিয়া কনভেন্টের এক দেওয়ালে আঁকা হয়েছিল। দি লাস্ট সাপার লিওনার্দোর এক অবিশ্বরণীয় সৃষ্টি। সমালোচকদের মতে এখানে লিওনার্দোর মানসিকতা, তাঁর ভাবনা কল্পনার সাথে মিলিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
  • (৪) লাস্ট সাপার শুধু যে একখানি সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্র তাই নয়, মানুষের শিল্প প্রতিভা যে কোন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে পারে এ তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
  • (৫) প্রথমে তিনি এঁকেছিলেন যীশুর বারোজন শিষ্যর মুখ। এই শিষ্যদের মুখে ফুটে উঠেছিল বিচিত্র অনুভূতি। কারো মুখে বিস্ময়, কারো মুখ ভয়, কারো বেদনা, কারো সন্দেহ। এক আশ্চর্য সুরমায় প্রতিটি মুখ জীবস্ত হয়ে উঠেছিল।
  • (৬) পরিশেষে তিনি আঁকলেন যীশুর মুখ। শোনা যায় কেমন হবে যীশুর মুখ, দীর্ঘ এক বছর তা স্থির করতে পারেন নি। অবশেষে আঁকলেন যীশুর মুখ। এ মুখে ভয় নেই, ঘৃণা নেই, উদ্বেগ নেই।
  • (৭) তিনি তো জানতেন তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হবে। তাঁর কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ঈশ্বরের ইচ্ছার এইবার তাকে মর্ত্যজগৎ ত্যাগ করতে হবে। ঈশ্বরের ইচ্ছাকে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। অনুভূতিহীন এক স্বর্গীয় ভাব ফুটে উঠেছে তাঁর মুখে।

চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির তৈলচিত্র

লাস্ট সাপার ছাড়াও আরো দুটি তৈলচিত্র এঁকেছিলেন লিওনার্দো। ভার্জিন অব দি রকস ও মেসিলিয়া।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ভেনিসে আগমন

১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী সম্রাট মিলান আক্রমণ করলেন। তিনি মিলান ত্যাগ করে পালিয়ে এলেন ভেনিসে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে মিলান সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়ে ফারসী অধিকারে চলে গেল।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মিলানে ফেরার আশা অপূর্ণ

বিজ্ঞানী লিওনার্দো আশা করেছিলেন যুদ্ধ মিটে গেলে আবার মিলানে ফিরে যাবেন। কিন্তু যখন সেই আশা পূর্ণ হল না।

দার্শনিক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ম্যাপ অঙ্কন

তিনি ভেনিস ত্যাগ করে রওনা হলেন মাতৃভূমি ফ্লোরেন্সের দিকে। এই সময় সীজার বর্জিয়ার অনুরোধে তিনি মধ্য ইতালির বিস্তৃত অঞ্চল পরিদর্শন করে ছটি ম্যাপ তৈরি করেন। সেই ম্যাপগুলি আজও উইন্ডসর লাইব্রেরিতে রক্ষিত আছে। সেগুলো দেখলে অনুমান করা যায় কি নির্ভুল ছিল তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং মানচিত্র অঙ্কন করবার সহজাত দক্ষতা।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা চিত্র

ইতিপূর্বে তিনি একটি ছবি এঁকেছিলেন ভার্জিন অব দি রকস। ঝুলে পড়া এক পর্বত। তার মধ্যে ফুটে উঠেছে চিরন্তন মানব আত্মার এক রূপ। এই সময় লিওনার্দো আঁকলেন তাঁর জগৎ বিখ্যাত মোনালিসা। এই ছবিটি আঁকতে তাঁর তিন বছর সময় লেগেছিল।

প্রকৃতি বিজ্ঞানী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির পাণ্ডুলিপি

  • (১) চিত্রশিল্পী হিসাবে লিওনার্দোর খ্যাতি জগৎ বিখ্যাত হলেও তাঁর মৃত্যুর পর পাওয়া গিয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার পাতার হাতের লেখা পাণ্ডুলিপি। এই পাণ্ডুলিপিতে তিনি সমস্ত জীবন ধরে যে সব পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, পরীক্ষা করেছিলেন, তারই বিবরণ লিপিবন্ধ করেছেন।
  • (২) এই পাণ্ডুলিপি লেখা হয়েছিল ইতালিয়ান ভাষায় এবং সমস্ত পাণ্ডুলিপিটাই লেখা হয়েছিল উলটো করে। ফলে সোজাসুজি পড়া যেত না। পড়তে হত আয়নার মাধ্যমে। প্রতিটি লেখার সঙ্গে থাকত অসংখ্য ছবি।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির পাণ্ডুলিপির বিষয়বস্তু

তাঁর এই পাণ্ডুলিপিতে অসংখ্য বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। চীন উপকথা, মধ্যযুগীয় দর্শন, সমুদ্রস্রোতের কারণ, বাতাসের গতি, তার চাপ, পৃথিবীর ওজন, নিশাচর পাখির গতিপ্রকৃতি, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, উড়ন্ত যান, সাঁতার কাটবার যন্ত্র, আলোর প্রকৃতি, যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের নক্সা, সুগন্ধ সেণ্ট তৈরির ফর্মূলা, বিভিন্ন পাখি জন্তু-জানোয়ারদের আচার-আচরণ, বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র।

দার্শনিক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শরীরতত্ত্বের ছবি অঙ্কন

তাঁর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা এত গভীর ছিল যে গোপনে বেশকিছু মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করে দেখেছিলেন দেহের গঠন। তাঁর এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেশ কিছু শরীরতত্ত্বের ছবি এঁকেছিলেন। সেই ছবি এত নির্ভুল ছিল, পরবর্তীকালে চিকিৎসকরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। আধুনিক উড়োজাহাজের তিনিই প্রথম নক্সা আঁকেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির প্যারিসে আগমন

১৫১৬ সালে লিওনার্দো ফারসী সম্রাটের আমন্ত্রণে প্যারিসে গেলেন। সম্রাট লিওনার্দোকে খুবই সম্মান করতেন।

ঈশ্বরের প্রতি অনুরক্ত লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

ক্রমশই স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছিল। ডান হাত অকর্মণ্য হয়ে গিয়েছিল। বাঁ হাতেই তিনি ছবি আঁকতেন। এই সময় তিনি ঈশ্বরের প্রতি অনুরক্ত পড়েন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মৃত্যু

অবশেষে ২রা মে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে ৬৭ বছর বয়সে চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি – ইতালিয় রেঁনেসাসের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ।

উপসংহার :- প্রতিটি বিষয়েই তিনি চেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে এবং অনেকাংশে তিনি সফলও হয়েছিলেন। এ যেমন একদিকে তাঁর জীবনের গৌরব, অন্যদিকে ব্যর্থতা। তিনি মানবীয় সীমায়িত শক্তি নিয়ে চেয়েছিলেন ঈশ্বরের মত সীমাহীন হতে। তাই সাফল্যের চূড়ায় উঠেও কখনো তৃপ্তি অনুভব করেন নি। মনে হয়েছে তাঁর জীবন এক অসমাপ্ত যাত্রাপথ। যে পথের শেষ তাঁর কাছে অগম্যই রয়ে গেল।

(FAQ) লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কে ছিলেন?

ইতালির একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, অঙ্কশাস্ত্রবিদ, গায়ক, প্রকৃতি বিজ্ঞানী, শরীরতত্ত্ববিদ, সামরিক বিশেষজ্ঞ, আবিষ্কারক, স্টেজ ডিজাইনার, দার্শনিক।

২. মোনালিসা চিত্র কে অঙ্কন করেন?

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি।

৩. শেষ ভোজ ছবির অঙ্কন করেন কে?

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি।

৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জন্ম কখন হয়?

১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে।

৫. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মৃত্যু কখন হয়?

২রা মে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment