লুই পাস্তুর

ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর প্রসঙ্গে তার জন্ম, পিতৃপরিচয়, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, বিবাহ, বিবাহ সম্পর্কে কাহিনী, জীবাণুতত্ত্ব গবেষণা, এনথ্রাক্স রোগের কারণ ও প্রতিষেধক আবিষ্কার, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার, সম্মাননা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর

ঐতিহাসিক চরিত্রলুই পাস্তুর
জন্ম২৭ ডিসেম্বর, ১৮২২ খ্রি:
জন্ম স্থানফ্রান্স
পিতাযোসেফ পাস্তুর
পরিচিতিঅণুজীববিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ
আবিষ্কারজলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক
মৃত্যু২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৫ খ্রি:
ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর

ভূমিকা :- বিজ্ঞানের গবেষণায় উৎসর্গীকৃত এক মানুষের নাম লুই পাস্তুর। তিনি একজন ফরাসি অণুজীব বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন যে অণুজীব অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়ের পচনের জন্য দায়ী।

লুই পাস্তুরের জন্ম

১৮২২ সালের ক্রীসমাস পর্বের দুদিন পর ফ্রান্স-এর এক ক্ষুদ্র গ্রাম জেলেতে পাস্তুর জন্মগ্রহণ করেন।

বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের পিতৃপরিচয়

  • (১) তার বাবা যোসেফ পাস্তুর প্রথম জীবনে নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনীতে সৈন্যাধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করতেন। ওয়াটার্লুর যুদ্ধে নেপোলিয়ন-এর পরাজয়ের পর যোসেফ পাস্তুর নিজের গ্রামে ফিরে এসে ট্যানারির কাজে যুক্ত হন।
  • (২) অল্প কিছুদিন পরেই স্বগ্রাম পরিত্যাগ করে আরবয় নামে এক গ্রামে এসে পাকাপাকিভাবে বসবাস আরম্ভ করলেন। এখানেই ট্যানারির (চমড়া তৈরির কাজ) কারখানা খুললেন।

লুই পাস্তুরের শিক্ষাজীবন

  • (১) যোসেফ কোনোদিনই তাঁর পুত্র লুইকে ট্যানারির ব্যবসায়ে যুক্ত করতে চান নি। তার ইচ্ছা ছিল পুত্র উপযুক্ত শিক্ষালাভ করুক। কয়েক বছর স্থানীয় স্কুলে পড়াশুনা করবার পর যোসেফ পুত্রকে পাঠালেন প্যারিসের এক স্কুলে।
  • (২) গ্রামের মুক্ত প্রকৃতির বুকে বেড়ে ওঠা লুই প্যারিসের পরিবেশ কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। শহরের দমবন্ধ পরিবেশ অসহ্য হয়ে উঠত তাঁর কাছে। মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন।
  • (৩) এই সময় একটা চিঠিতে লিখেছেন, “যদি আবার বুক ভরে চামড়ার গন্ধ নিতে পারতাম, কয়েকদিনেই আমি সুস্থ হয়ে উঠতাম।”
  • (৪) অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই ধীরে ধীরে শহরের নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন লুই। তাঁর গভীর মেধা, অধ্যাবসায়, পরিশ্রম শিক্ষকদের দৃষ্টি এড়াল না।
  • (৫) তার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, লুই পাস্তুর একজন কৃতি শিক্ষক হবে। তার সে ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যে হয়নি। এরপর তিনি ভর্তি হলেন রয়েল কলেজে। সেখান থেকে ১৮ বছর বয়েসে স্নাতক হলেন।

বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের কর্মজীবন

  • (১) এরপর নিজের কলেজেই তিনি একদিকে শিক্ষকতার কাজ শুরু করলেন, অন্যদিকে বিজ্ঞানে ডিগ্রী নেবার জন্য পড়াশুনা করতে থাকেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়েসে তিনি বিজ্ঞানে স্নাতক হলেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে পাস্তুরের প্রিয় বিষয় ছিল রসায়ন।
  • (২) রসায়নের উচ্চতর শিক্ষা লাভ করতে আরম্ভ করলেন। দু’বছর পর লুই পাস্তুর টাপবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রসায়নের অধ্যাপক পদ গ্রহণের জন্য ডাক পেলেন। আনন্দের সঙ্গে এই পদ গ্রহণ করলেন পাস্তুর।

লুই পাস্তুরের বিবাহ

টাপবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ছিলেন মর্সিয়ে লরেন্ট। তাঁর গৃহে নিয়মিত যাতায়াত করতে করতে রেক্টরের ছোট মেয়ে মেরির প্রেমে পড়ে যান। কয়েক সপ্তাহ পরেই রেক্টরের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন পাস্তুর। মসিয়ে লরেন্টও অনুভব করেছিলেন পাস্তুরের প্রতিভা। তাই এই বিয়েতে তিনি সানন্দে সম্মতি দিলেন।

বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের বিবাহ সম্পর্কে কাহিনী

  • (১) প্যারিসের এক চার্চে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন চলেছে। কন্যাপক্ষের সকলে কনেকে নিয়ে আগেই উপস্থিত হয়েছে। পাত্রপক্ষের অনেকেই উপস্থিত। শুধু বর এখনো এসে পৌঁছান নি।
  • (২) সকলেই অধীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছে কখন বর আসবে। কিন্তু বরের দেখা নেই। চার্চের পাদ্রীও অধৈর্য হয়ে ওঠে। কনের বাবা পাত্রের এক বন্ধুকে ডেকে বললেন, কি ব্যাপার, এখনো তো তোমার বন্ধু এল না? পথে কোনো বিপদ হল না তো?
  • (৩) বন্ধু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ল। দু-চার জায়গায় খোঁজ করল কিন্তু কোথাও বরের দেখা নেই। হঠাৎ মনে হল একবার ল্যাবরেটরিতে গিয়ে খোঁজ করলে হত। যা কাজপাগল মানুষ, বিয়ের কথা হয়ত একেবারেই ভুলে গিয়েছে।
  • (৪) ল্যাবরিটরিতে গিয়ে হাজির হল বন্ধু। যা অনুমান করেছিল তাই সত্যি। টেবিলের সামনে মাথা নিচু করে আপন মনে কাজ করে চলেছে বর। চারপাশের কোনো কিছুর প্রতিই তাঁর দৃষ্টি নেই। এমনকি বন্ধুর পায়ের শব্দেও তাঁর তন্ময়তা ভাঙে না।
  • (৫) আর সহ্য করতে পারে না বন্ধু, রাগেতে চেঁচিয়ে ওঠে, আজ তোর বিয়ে, সবাই চার্চে অপেক্ষা করছে আর তুই এখানে কাজ করছিস! মানুষটা বন্ধুর দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, বিয়ের কথা আমার মনে আছে কিন্তু কাজটা শেষ না করে কি করে বিয়ের আসরে যাই। এই মানুষটিই ছিলেন লুই পাস্তুর।

লুই পাস্তুরের জীবাণু তত্ত্ব গবেষণা

১৮৬৭ সালে তাঁকে সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের প্রধান অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত করা হল। এখানে এসে শুরু করলেন জীবাণু তত্ত্ব ( Bacteriology) সম্বন্ধে গবেষণা। দু বছর ধরে চলল তাঁর গবেষণা।

লুই পাস্তুর কর্তৃক এনথ্রাক্স রোগের কারণ ও প্রতিষেধক আবিষ্কার

  • (১) এই সময় ফ্রান্সের মুরগীদের মধ্যে ব্যাপক কলেরার প্রভাব দেখা দিল। পোলট্রি ব্যবসায়ের উপর বিরাট আঘাত নেমে এল। পাস্তুরের উপর রোগের কারণ অনুসন্ধানের ভার পড়ল।
  • (২) নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাস্তুর আবিষ্কার করলেন এক জীবাণুর। এই জীবাণুই ভয়াবহ এনথ্রাক্স (Anthrox) রোগের কারণ। এই এনথ্রাক্স রোগ মাঝে মাঝে মহামারীর আকার ধারণ করত। গবাদি পশু-পাখি, শুয়র, ভেড়ার মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেত।
  • (৩) পাস্তুর এনথ্রাক্স রোগের সঠিক কারণ শুধু নির্ণয় করলেন না, তার প্রতিষেধক ঔষধ ও আবিষ্কার করলেন। রক্ষা পেল ফ্রান্সের পোলট্রি শিল্পী। বলা হত জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে ফ্রান্সের যা ক্ষতি হয়েছিল, পাস্তুরের এই আবিষ্কার তার চেয়েও বেশি অর্থ এনে দিয়েছিল।

পাস্তুরের প্রতি কুৎসা রটনা

লুই পাস্তুরের এই আবিষ্কার, তাঁর খ্যাতি, সম্মান কিছু মানুষের কাছে ঈর্ষাণীয় হয়ে ওঠে। তারা নানাভাবে তাঁর কুৎসা রটনা করত। কিন্তু নিন্দা প্রশংসা উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সমান উদাসীন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর পাস্তুরের বক্তৃতা

একবার কোনো সভায় পাস্তুর চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। গুরিয়েন নামে এক ডাক্তার কিছুতেই মানতে পারছিলেন না একজন রসায়নবিদ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা বিদ্যার উপদেশ দেবেন। নানাভাবে তাঁকে বিব্রত করতে লাগলেন। কিন্তু সামান্যতম ক্রুদ্ধ হলেন না পাস্তুর। রাগে ফেটে পড়লেনস গুরিয়েন। সভা থেকে তাকে বার করে দেওয়া হল।

ডুয়েল লড়াইয়ে পাস্তুরের অস্বীকার

পরদিন গুরিয়েন ডুয়েল লড়বার জন্য পাস্তুরকে আহ্বান করলেন। কিন্তু ওরিয়েনের সেই আহ্বান ফিরিয়ে দিলেন পাস্তুর। তিনি বললেন, আমার কাজ জীবন দান করা, হত্যা করা নয়।

পাস্তুরের সময় জলাতঙ্ক রোগ

  • (১) এতদিন শুধু কীটপতঙ্গ আর জীবজন্তুর জীবনদানের ওষুধ বার করেছেন। তখনো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজটুকু বাকি ছিল। হাইড্রোফোবিয়া বা জলাতঙ্ক ছিল সে যুগের এক মারাত্মক ব্যাধি। এনথ্রাক্স-এর চেয়েও তা মারাত্মক।
  • (২) যখন কোনো মানুষকে পাগলা কুকুরে কামড়াত, সেই ক্ষতস্থান সঙ্গে সঙ্গে বিষাক্ত হয়ে উঠত না। অধিকাংশ সময়েই সেই ক্ষত কয়েকদিনেই শুকিয়ে যেত। কয়েক সপ্তাহ পরেই প্রকাশ পেত সেই রোগের লক্ষণ।
  • (৩) এরপর রুগী অবসন্ন হয়ে পড়ত। তেষ্টা পেত কিন্তু জলস্পর্শ করতে পারত না। এমনকি প্রবাহিত জলের শব্দ শুনেও অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ত। দু-তিন দিন পরই মৃত্যু হত রুগীর।

জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারে মগ্ন পাস্তুর

  • (১) কয়েক বছর যাবৎ হাইড্রোফোবিয়া নিয়ে কাজ করছিলেন পাস্তুর। নিজের গবেষণাগারের সংলগ্ন এলাকায় পাগলা কুকুরদের পুষেছিলেন। যদিও কাজটা ছিল অত্যন্ত বিপদজনক তবুও সাহসের সাথে সেই কুকুরদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন।
  • (২) একদিন এক বিশালদেহি বুলডগ কুকুর পাগলা হয়ে উন্মত্তের মত চিৎকার করছিল। তার মুখ দিয়ে ঝরে পড়ছিল বিষাক্ত লালা। তাকে বন্দী করে খাঁচায় পোরা হল। সেই খাঁচার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হল একটা খরগোশকে। পাগলা কুকুরটির লালা খরগোশের দেহে প্রবেশ করানো একান্ত প্রয়োজন ছিল।
  • (৩) গবেষণার প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিলেন পাস্তুর। বহু কষ্টে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললেন সেই হিংস কুকুর। তারপর একটা টেবিলের উপর শুইয়ে মুখটা নিচু করলেন। তারপর মুখে একটা কাচের পাত্র ধরলেন, টপ টপ করে তার মধ্যে গড়িয়ে পড়তে লাগল বিষাক্ত লালা।
  • (৪) আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন পাস্তুর। ঐ বিষাক্ত লালা দিয়েই তৈরি হয় জলাতঙ্কের সিরাম। এবার পরীক্ষা শুরু হল। প্রথমে তা প্রয়োগ করা হর খরগোশের উপর, তারপর অন্যান্য জীব-জন্তুর উপর। প্রতিবারই আশ্চর্য ফল পেলেন পাস্তুর।

মানুষের ওপর পাস্তুরের জলাতঙ্কের সিরামের পরীক্ষা

  • (১) জীব-জন্তুর দেহে তা কার্যকর হলেও মানুষের দেহ কিভাবে তা প্রয়োগ করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না পাস্তুর। কতটা পরিমাণ ঔষুধ দিলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে তার কোনো সঠিক ধারণা নেই।
  • (২) সামান্য পরিমাণের তারতম্যের জন্য রোগীর প্রাণ বিপন্ন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য জেনেও সমস্ত দায় এসে বর্তাবে তাঁর উপর। কিভাবে এই জটিল সমস্যার সমাধান করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না পাস্তুর।
  • (৩) অবশেষে অপ্রত্যাশিতভাবেই একটা সুযোগ এসে গেল। জোসেফ মিস্টার বলে একটি ছোট ছেলেকে কুকুরে কামড়েছিল। ছেলেটির মা তাকে এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার তাকে পাস্তুরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
  • (৪) পাস্তুর জোসেফকে পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন তার মধ্যে রোগের বীজ সংক্রামিত হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই মৃত্যু অনিবার্য। পাস্তুর স্থির করলেন জোসেফের উপরেই তার আবিষ্কৃত সিরাম প্রয়োগ করবেন।
  • (৫) নয় দিন ধরে বিভিন্ন মাত্রায় ঔষুধ প্রয়োগ করতে লাগলেন পাস্তুর। একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে জোসেফ। তবুও মনের উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ দূর হয় না। অবশেষে তিন সপ্তাহ পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল জোসেফ। চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল পাস্তুরের আবিষ্কারের কথা।

পাস্তুর কর্তৃক ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা

এক ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করলেন পাস্তুর। বৃষ্টিধারার মত চতুর্দিক থেকে তাঁর উপরে সম্মান বর্ষিত হতে থাকে। ফরাসী একাডেমির সভাপতি নির্বাচিত হলেন তিনি।

পাস্তুরকে অভিনন্দন ও সম্মাননা প্রদান

  • (১) ১৮৯২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর পাস্তুরকে অভিনন্দন জানানোর জন্য দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা প্যারিসে জমায়েত হলেন। Antiseptic Surgery-র আবিষ্কর্তা জোসেফ লিস্টার বললেন, পাস্তুরের গবেষণা অস্ত্র চিকিৎসার অন্ধকার জগতে প্রথম আলো দিয়েছে।
  • (২) শুধুমাত্র অস্ত্র চিকিৎসা নয়, ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মানব সমাজ চিরদিন তাঁর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে। দেশ-বিদেশের কত সম্মান, উপাধি, পুরুস্কার, মানপত্র পেলেন।
  • (৩) কিন্তু কোনো কিছুতেই বিজ্ঞান সাধক পাস্তুরের জীবন সাধনার সামান্যতম পরিবর্তন ঘটেনি। আগের মতই নিরহঙ্কার সরল সাদাসিদা রয়ে গেলেন।
  • (৪) পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সম্মেলনের সভাপতি। তিনি এগিয়ে এসে পাস্তুরকে বললেন, সংবর্ধনা যুবরাজের জন্য নয়, এ আপনারই জন্য।

পাস্তুর ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা

প্যারিসে ফিরে এলেন পাস্তুর, তাঁর সম্মানে গড়ে উঠেছিল পাস্তুর ইন্সটিটিউট-এখানে সংক্রামক রোগের গবেষণার কাজ চলছিল।

লুই পাস্তুরের শেষ জীবন

  • (১) পাস্তুর অনুভব করতে পারছিলেন তাঁর দেহ আর আগের মত কর্মক্ষম নেই। মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। সকলের অনুরোধে কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেন। এই সময় বাইবেল পাঠ আর উপাসনার মধ্যেই দিনের বেশির ভাগ সময় কাটতেন।
  • (২) তবুও অতীত জীবন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেন নি। মাঝে মাঝেই তাঁর ছাত্ররা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসত। তিনি বলতেন তোমরা কাজ কর, কখনো কাজ বন্ধ করো না।

পাস্তুরের জন্মদিনে ফ্রান্সে জাতীয় ছুটি ঘোষণা

তাঁর সত্তরতম জন্মদিনে ফ্রান্সে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হল। সোরবোনে তাঁর সম্মানে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। দেশ-বিদেশের বহু বিজ্ঞানী সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।

লুই পাস্তুরের মৃত্যু

এরপর আরো তিন বছর বেঁচে ছিলেন পাস্তুর। অবশেষে ১৮৯৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর চিরনিদ্রায় ঢলে পড়লেন বিজ্ঞান-তপস্বী লুই পাস্তুর।

উপসংহার :- জীবাণুতত্ত্ব ও বিভিন্ন রোগ নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন লুই পাস্তুর। তার সম্বন্ধে তৃতীয় নেপোলিয়ন বলেছিলেন, তিনি ফ্রান্সের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান।

(FAQ) ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. লুই পাস্তুর কে ছিলেন?

একজন ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ।

২. লুই পাস্তুরের জন্ম কখন হয়?

২৭ ডিসেম্বর ১৮২২ খ্রি:।

৩. লুই পাস্তুরের বিখ্যাত আবিষ্কার কোনটি?

জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক।

৪. লুই পাস্তুরের মৃত্যু কখন হয়?

১৮৯৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর।

৫. কার সম্মানে পাস্তুর ইন্সটিটিউট গড়ে ওঠে?

বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর।

Leave a Comment