নাৎসি দলের আদর্শ ও নীতি প্রসঙ্গে হেরেনভক তত্ত্ব, ইহুদিদের বিতাড়ন, নাৎসিকরণ নীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে জানবো।
নাৎসি দলের আদর্শ ও নীতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | নাৎসি দলের আদর্শ ও নীতি |
প্রধান ভিত্তি | উগ্ৰ জাতীয়তাবাদ |
প্রধান নেতা | হিটলার |
হেরেনভক তত্ত্ব | হিটলার |
ইহুদি বৈজ্ঞানিক | অ্যালবার্ট আইনস্টাইন |
ভূমিকা:- ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট দলকে সংক্ষেপে নাৎসি দল বলা হত। নাৎসিবাদের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হল উগ্র জাতীয়তাবাদ।
হিটলারের ‘হেরেনভক’ তত্ত্ব
এডলফ হিটলার প্রচার করতেন যে, জার্মানরাই হল একমাত্র আর্য জাতি এবং একমাত্র তাদের শরীরেই নর্ডিক রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য সব জাতিই হল বর্ণসংকর। সুতরাং শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে জার্মানরা অন্যান্য বর্ণসংকর জাতিগোষ্ঠীর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে এবং এটিই হল প্রকৃতির নিয়ম। এই তত্ত্ব ‘হেরেনভক তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।
হিটলারের ইহুদি বিতাড়ন
- (১) হিটলার প্রচার করতেন যে, জার্মানির সব মানুষই বিশুদ্ধ জার্মান নয় – তাই জার্মান রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য সমস্ত অ-জার্মান, বিশেষত ইহুদিদের জার্মানি থেকে বিতাড়ন করতে হবে।
- (২) এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এই সময় ইহুদিরা জার্মানি অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রণ করত এবং সব সরকারি উঁচু পদ ছিল তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। ইহুদি বিদ্বেষী হিটলার নানাভাবে ইহুদিদের উপর নির্যাতন শুরু করেন।
- (৩) হত্যা, দেশ থেকে বিতাড়ন, সরকারি চাকরি এবং অন্যান্য পেশা ও প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণ প্রভৃতি নানা ধরনের অত্যাচার তাদের উপর চালানো হয়। এই কারণে বিশ্ববরেণ্য ইহুদি বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইন-ও আমেরিকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। হিটলারের ইহুদি নির্যাতন বিভাগের প্রধান ছিলেন আইখম্যান।
- (৪) কেবল এই নয় – হিটলার মনে করতেন যে, জার্মানির পরেও বহু বিশুদ্ধ জার্মান বসবাস করছে এবং ওইসব স্থানও জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাই জার্মানদের রণহুঙ্কার ছিল ‘জার্মানদের থাকার জায়গা চাই’ এবং প্রয়োজনে বল প্রয়োগের মাধ্যমেও তা আদায় করতে হবে। তাই অ-জার্মান, বিশেষত প্রবল ইহুদি-বিদ্বেষ এবং সাম্রাজ্যবাদ নাৎসিবাদের অন্যতম আদর্শে পরিণত হয়।
হিটলারের নাৎসিকরণ নীতি
এডলফ হিটলার জার্মানিতে নাৎসিকরণের নীতি গ্রহণ করেন। নাৎসিরা একদলীয় শাসনে বিশ্বাসী ছিল। সংসদীয় ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় তাদের বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল না। নাৎসি রাষ্ট্রে ব্যক্তির কোনও স্থান ছিল না। নেতা ও রাষ্ট্রই ছিল শেষ কথা।
- (১) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই এক আইন দ্বারা নাৎসি দল ব্যতীত জার্মানির সব রাজনৈতিক দল অবৈধ বলে ঘোষিত হয়।
- (২) সব সরকারি কর্মচারী ও সৈনিককে নাৎসিবাদের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে হত।
- (৩) প্রাদেশিক সরকারগুলির সমস্ত স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা বাতিল করে শাসনযন্ত্রের নাৎসিকরণ করা হয়।
- (৪) ইহুদিদের সঙ্গে জার্মানদের বিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং সব চাকরি থেকে তাদের অপসারণ করা হয়।
- (৫) স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমস্ত অ-জার্মান ও ইহুদিদের বিতাড়ন করা হয় এবং পাঠ্যপুস্তকগুলি নাৎসি আদর্শে রচিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল নাৎসি দল ও জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার।
- (৬) সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করে দিবারাত্র হিটলার ও নাৎসি দলের অনুকূলে প্রচার চালানো হয়। এই প্রচারকাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন হিটলারের প্রচারসচিব দর্শনের অধ্যাপক ডঃ গোয়েবলস্। হিটলার মনে করতেন যে, “একটি মিথ্যাকে দশবার প্রচার করলে জনগণ তা সত্য বলে গ্রহণ করবে।”
- (৭) জার্মানিতে সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।
- (৮) তারা সাম্যবাদ, মার্কসবাদ ও কমিউনিস্টদের বিরোধী ছিল। মার্কসবাদের বিরোধী হয়েও তারা ধনতন্ত্রেরও বিরোধী ছিল। নাৎসি দলের নাম ছিল ‘জাতীয় সমাজতন্ত্রী দল’। শ্রেণি-সংঘর্ষের পরিবর্তে তারা ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে শ্রমিকদের সামাজিক মুক্তি সাধন করতে চাইতেন।
- (৯) পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য ছিল আপোস-মীমাংসার পরিবর্তে যুদ্ধ ও জঙ্গিবাদী নীতির মাধ্যমে পররাষ্ট্র গ্রাস এবং সমগ্র বিশ্বে জার্মান জাতির প্রভুত্ব স্থাপন। তাদের কাছে স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিকতাবাদ ছিল মূল্যহীন।
হিটলারের সময় জার্মানির অর্থনীতি
জার্মানির অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে হিটলার-
- (১) সব শ্রমিক সংগঠন ভেঙে দিয়ে নাৎসি নিয়ন্ত্রণাধীনে ‘জাতীয় শ্রমিক ফ্রন্ট’ গঠন করেন।
- (২) স্কুল, কলেজ, কারখানা – সর্বত্র ‘শিফট প্রথা’ চালু করা হয়। এর ফলে বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। স্ত্রীলোকদের জন্য গৃহকর্ম ও সন্তান পালন ছাড়া সকল কাজ নিষিদ্ধ হয়।
- (৩) জার্মানিতে ধর্মঘট, লক আউট প্রভৃতি নিষিদ্ধ হয়।
- (৪) তিনি কৃষির উন্নতির জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বহু জলাভূমিকে চাষের অধীনে আনা হয়।
উপসংহার:- নাৎসি মতানুসারে দলনেতা বা ফ্যুয়েরার হলেন অভ্রান্ত। তার প্রতি আনুগত্য ও বিনা প্রশ্নে তার নির্দেশ পালন করাই হল দলের নীতি। তাদের মতে একমাত্র নাৎসি মতবাদই সঠিক, আর সব মতবাদ ভ্রান্ত।
(FAQ) নাৎসি দলের আদর্শ ও নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
হিটলার।
ফ্যুয়েরার।
উগ্ৰ জাতীয়তাবাদ।
হিটলার প্রচার করতেন যে, জার্মানরাই হল একমাত্র আর্য জাতি এবং একমাত্র তাদের শরীরেই নর্ডিক রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য সব জাতিই হল বর্ণসংকর। সুতরাং শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে জার্মানরা অন্যান্য বর্ণসংকর জাতিগোষ্ঠীর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে এবং এটিই হল প্রকৃতির নিয়ম। এই তত্ত্ব ‘হেরেনভক তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।