গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমস্যা

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমস্যা প্রসঙ্গে আলাউদ্দিনের শাসনব্যবস্থায় ভাঙন, রাজকোষ শূণ্য, ভঙ্গুর রাজস্ব ব্যবস্থা, সেনাদলে ভাঙ্গন, বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ, সুলতানি সাম্রাজ্যের রক্ষা, শাসনতান্ত্রিক দক্ষতার সমন্বয়, দৃঢ় অথচ নমনীয় নীতি, রাজস্ব সংস্কার, অভিজাত ও উলেমাদের সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কে জানবো।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমস্যা

ঐতিহাসিক ঘটনাগিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমস্যা
সুলতানগিয়াসউদ্দিন তুঘলক
রাজত্ব১৩২০-১৩২৫ খ্রি
বংশতুঘলক বংশ
পূর্ববর্তী বংশখলজি বংশ
উত্তরসূরিমহম্মদ বিন তুঘলক
গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমস্যা

ভূমিকা :- গিয়াসউদ্দিন তুঘলক যে সিংহাসন পান তা বিভিন্ন সমস্যার চাপে সঙ্কটজনক অবস্থায় ছিল। গিয়াসউদ্দিন প্রায় কাটার মুকুট মাথায় নিয়ে সিংহাসনে বসেন।

আলাউদ্দিনের শাসনব্যবস্থায় ভাঙন

আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে আলাউদ্দিন খলজির প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা অযোগ্য উত্তরাধিকারীদের আমলে ভেঙে পড়ে।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সময় রাজকোষ শূণ্য

কুতুবউদ্দিন ও খসরু শাহ বিভিন্ন অভিজাত, উলেমা ও ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীগুলিকে নিজ পক্ষে আনার জন্য বহু অর্থ ভরতুকী দিয়ে রাজকোষ শূন্য করে ফেলেন।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পূর্বে ভঙ্গুর রাজস্ব ব্যবস্থা

আলাউদ্দিনের আমলের রাজস্ব ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। বহু কর অনাদায়ী হয় ও জরিপের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সময় সেনাদলে ভাঙন

সেনাদলেও ভাঙন দেখা দেয়। সুযোগ বুঝে প্রাদেশিক শাসনকর্তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আলাউদ্দিনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ

সাম্রাজ্য-এর বিভিন্ন প্রদেশে বিদ্রোহের ফলে সুলতানি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। যেমন –

  • (১) অমর নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সিন্ধুদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
  • (২) গুজরাটে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে।
  • (৩) রাজপুতানায় চিতোর নগর ও জালোর বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
  • (৪) বাংলায় গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
  • (৫) দাক্ষিণাত্যে তেলেঙ্গানার রাজা প্রতাপরুদ্রদেব রাজস্ব প্রদান বন্ধ করেন। এবং সীমান্তে ভদ্রকোট দুর্গ অধিকার করেন।

সুলতানি সাম্রাজ্যের রক্ষায় গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের ভূমিকা

এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে গিয়াসউদ্দিনের ন্যায় সুলতান শক্ত হাতে শাসনযন্ত্রের হাল ধরায় সুলতানি সাম্রাজ্য রক্ষা পায়।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের শাসনতান্ত্রিক দক্ষতার সমন্বয়

যদিও গিয়াসউদ্দিন ছিলেন মুখ্যত সামরিক নেতা এবং যদিও তাঁর জীবনের বেশীর ভাগ সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে কাটে, কিন্তু তিনি রণপাণ্ডিত্যের সঙ্গে শাসনতান্ত্রিক দক্ষতার সমন্বয় করেন।

সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মধ্যপন্থী নীতি অবলম্বন

তিনি আলাউদ্দিনের মত কঠোর রক্ত লৌহ নীতি (Blood and Iron Policy) নেন নি, অথবা ফিরোজ শাহ তুঘলক-এর মত একান্ত নরমপন্থী নীতি বা তোষণ নীতি নেন নি। তার নীতি ছিল মধ্যপন্থী।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের দৃঢ় অথচ নমনীয় নীতি

দৃঢ় অথচ নমনীয় নীতি নিয়ে তিনি শত্রুকে আপন করে নেন, অথচ অন্যায়কারীকে শাস্তি দিয়ে অন্যায়ের পথ বন্ধ করেন।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজস্ব সংস্কার

তিনি আলাউদ্দিনের চড়া হারে রাজস্ব আদায়ের নীতি পরিবর্তন করলেও, যাতে রাষ্ট্রের আয় না কমে সে ব্যবস্থা করেন।

অভিজাত ও উলেমাদের প্রতি গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সম্মান প্রদর্শন

তিনি অভিজাতদের প্রতি সম্মানজনক ও ন্যায্য ব্যবহার করেন, অপর দিকে তিনি সিংহাসনের মর্যাদা নষ্ট হতে দেননি। উলেমাদের প্রতি সমর্থন জানালেও তিনি হিন্দুদের নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকেন।

উপসংহার :- এইভাবে সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক তার সমস্যাগুলিকে সমাধান করেন। দিল্লীর সুলতানি ইতিহাসে শুরু হয় তুঘলক জমানা।

(FAQ) গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের রাজত্বকাল কত?

১৩২০-১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ।

২. গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পর কে সিংহাসনে আরোহণ করেন?

মহম্মদ বিন তুঘলক।

৩. গাজি মালিক কার উপাধি ছিল?

গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।

৪. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।

Leave a Comment