ভারতে ইউরোপীয় শিল্প উদ্যোগ প্রসঙ্গে ইউরোপীয় শিল্পোদ্যোগের বিশেষত্ব, কারণ, রেলপথ, সুতিবস্ত্র, চা ও কফি শিল্প, নীল শিল্প, চিনি শিল্প, পাট শিল্প, লৌহ ইস্পাত শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য শিল্প সম্পর্কে জানবো।
ভারতে ইউরোপীয় শিল্প উদ্যোগ
ঐতিহাসিক ঘটনা | ভারতে ইউরোপীয় শিল্পোদ্যোগ |
সূচনাকাল | ১৮৫৮ খ্রি |
গ্যারান্টি ব্যবস্থা | রেলপথ |
চা গাছের আবিষ্কার | রবার্ট ব্রুস |
প্রথম পাটকল | রিষড়া |
প্রথম লৌহ ইস্পাত কারখানা | পোর্টোনোভো |
ভূমিকা:- ভারত-এ ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার এদেশে শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ভারতকে একটি নিছক কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার নীতি গ্রহণ করে। তাই প্রথমদিকে ব্রিটিশ নীতির ফলে ভারতের কুটিরশিল্প ধ্বংস হয় এবং শিল্পী ও কারিগররা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে এবং ইউরোপীয়দের উদ্যোগে ভারতে নির্দিষ্ট কিছু শিল্পের বিকাশ ঘটে।
ইউরোপীয় শিল্পোদ্যোগের বিশেষত্ব
ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে ইউরোপীয়দের উদ্যোগে সর্বপ্রথম শিল্পের বিকাশ শুরু হয়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে এদেশে ব্রিটিশ পুঁজির ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। ইউরোপীয় উদ্যোগে ভারতে শিল্পের বিকাশের কয়েকটি বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়। এগুলি হল –
(ক) ভারতীয় উদ্যোগের বিরোধিতা
ভারতীয়দের উদ্যোগে ভারতে শিল্পের বিকাশ ঘটুক, তা কখনোই ইংল্যান্ড বা ভারতের ইংরেজ শিল্পপতিরা চাইতেন না। তাঁরা মনে করতেন যে, ভারতীয়দের উদ্যোগে এদেশে আধুনিক শিল্প গড়ে উঠলে ভারতের বাজার ও কাঁচামাল তাদের হাতছাড়া হবে।
(খ) ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতি
ভারতে কোনো ভারী বা মূলধন সৃষ্টিকারী শিল্প (যন্ত্রপাতি, লৌহ-ইস্পাত প্রভৃতি) গড়ে উঠুক, তা ইংরেজ শিল্পপতিরা কখনোই চাইতেন না। তাঁরা ভারতে মূলত ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে যুক্ত শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করতেন।
ইউরোপীয়দের শিল্পোদ্যোগ গ্রহণের কারণ
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ-এর পরবর্তীকালে ভারতে শিল্পের বিকাশে বিপুল পরিমাণ ব্রিটিশ পুঁজি নিয়োজিত হয়। ভারতে ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের শিল্পোদ্যোগ গ্রহণের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন –
- (ক) ভারতে খুব সামান্য মজুরিতে শিল্পের কাজে প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যেত। ফলে এদেশে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় কম হত।
- (খ) ভারতে খুব সস্তায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন শিল্পের উপযোগী কাঁচামাল পাওয়া যেত।
- (গ) ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলিতে ব্রিটিশ পণ্যের বিপুল চাহিদা ছিল। ও
- (ঘ) ইংরেজ শিল্পপতিরা উপলব্ধি করে যে, ইংল্যান্ডের মাটিতে শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করে ভারতের মতো এত সহজে এত বেশি লাভ করা সম্ভব নয়।
- (ঙ) ইংরেজ পুঁজিপতিরা ভারতে শিল্পপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্রিটেন থেকে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানি করা, বিদেশি বিমা কোম্পানি, ম্যানেজিং এজেন্সি, সরকারি কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রভৃতির সুবিধা লাভ করে।
- (চ) ব্রিটিশ শিল্পপতিরা ভারতে শিল্পপ্রতিষ্ঠার জন্য সহজ সুদে ঋণ পেতেন, যে সুবিধা ভারতীয় শিল্পপতিরা পেতেন না।
ইউরোপীয় উদ্যোগে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ
ব্রিটিশ পুজিপতিদের উদ্যোগে ভারতে যেসব শিল্পের বিকাশ ঘটে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল রেলপথ, সেচের যন্ত্রপাতি, সুতিবস্ত্র, চা, কফি, নীল, আখ, পাট, লোহা ও ইস্পাত, জাহাজ, কয়লা, ইঞ্জিনিয়ারিং, কাগজ, চামড়া, মদ, সিমেন্ট প্রভৃতি। এসব শিল্পের প্রসার সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল –
(ক) রেলপথ
- (১) বিলাতি পণ্যসামগ্রী ভারতের অভ্যন্তরের বাজার গুলিতে পৌঁছে দেওয়া এবং ভারতের কাঁচামাল বন্দরে পাঠানোর ক্ষেত্রে রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাই ভারতের রেলপথের গুরুত্ব বাড়ে এবং ব্রিটিশ পুঁজিপতিরা ভারতে তাদের পুঁজি বিনিয়োগের সবচেয়ে লাভজনক ক্ষেত্র হিসেবে রেলপথ স্থাপনকেই বেছে নেন।
- (২) বিপুল লাভের আশায় তারা রেলপথ স্থাপনে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে। ‘গ্যারান্টি ব্যবস্থা’র মাধ্যমে রেলপথ নির্মাণ করে ব্রিটিশ পুঁজিপতিরা প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। তাদের উদ্যোগে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে প্রায় ২৫ হাজার মাইল রেলপথ নির্মিত হয়।
(খ) সুতিবস্ত্র
- (১) ব্রিটিশ পুঁজিপতিরা ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই ভারতে সুতিবস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে তাদের মূলধন বিনিয়োগ করতে শুরু করে। ইংরেজ মালিকানা এবং ইংরেজ-ভারতীয় যৌথ মালিকানায় ভারতে বেশ কয়েকটি কাপড় কল এসময় স্থাপিত হয়।
- (২) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় উদ্যোগে হাওড়ায় ‘বাউড়িয়া কটন মিল’ নামে একটি কার্পাস বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ষ দুজন ফরাসি ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরিতে সুতোকাটা কল প্রতিষ্ঠা করেন। জেমস ল্যান্ডন নামে জনৈক ইংরেজ ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রোচে একটি সুতোকাটা কল প্রতিষ্ঠা করেন।
- (৩) বলা বাহুল্য, বস্ত্রশিল্পের প্রতিযোগিতায় ইউরোপীয় শিল্পপতিরা পশ্চিম ভারতীয় শিল্পপতিদের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হন। এখানে ভারতীয় মূলধনের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মোট ৩৩৫টি কাপড় মিলের মধ্যে মাত্র ৯টি ইউরোপীয় মালিকানাধীন ছিল।
(গ) চা ও কফি শিল্প
ভারতে চা, কফি প্রভৃতি বাগিচা শিল্পে ইউরোপীয় পুঁজিপতিদের প্রাধান্য ছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) চা শিল্পে সরকারি উদ্যোগ
- (i) রবার্ট ব্রুস নামে জনৈক ইংরেজ ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে আসামের জঙ্গলে সর্বপ্রথম চা গাছের আবিষ্কার করেন। তবে চা শিল্প বলতে যা বোঝায়, ভারতে তার সূচনা হয় ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের পর। ইংরেজ শাসকদের মধ্যে লর্ড বেন্টিঙ্কই সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন।
- (ii) তিনি এ সম্পর্কে কিছু তথ্যাদি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে একটি ‘চা কমিটি’ গঠন করেন। এই কমিটির সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতেই ভারতে চা শিল্প গড়ে ওঠে। সরকার চা বাগিচাগুলিকে বিদেশি মালিকদের করমুক্ত জমি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়। কালক্রমে চা একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি দ্রব্যে পরিণত হয়।
(২) চা চাষের বিকাশ
- (i) কিছু ইংরেজ বণিক ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে আসাম টি কোম্পানি গঠন করে চা শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ করে। ক্রমে আসাম, বাংলা, কাছাড়, তরাই অঞ্চল, ডুয়ার্স, হিমাচলপ্রদেশ, পাঞ্জাবের কাতো, দক্ষিণ ভারত ও নীলগিরি অঞ্চলে চা শিল্প প্রসার লাভ করে।
- (ii) ১৮৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতে উৎপন্ন মোট চায়ের পরিমাণ ছিল ৬ লক্ষ পাউন্ডেরও বেশি। উনিশ শতকের শেষদিকে আসাম-বেঙ্গলে রেলপথের প্রতিষ্ঠা ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি হলে চা শিল্পের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে।
- (iii) ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন ভারত থেকে ১৩ কোটি ৭০ লক্ষ পাউণ্ড মুল্যের চা ক্রয় করে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র ভারতে চা বাগিচার মোট এলাকা ছিল ৫ লক্ষ ২০ হাজার একর। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭,০৭,৭৩৩ একর। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে চা বাগিচার সংখ্যা ছিল ৫১। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০২।
(৩) কফি চাষ
জনৈক ইউরোপীয় ব্যক্তির মালিকানায় বাংলা দেশে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম কফি চাষ শুরু হয়। তবে বাংলায় কফি চাষে বিশেষ সুবিধা না হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের মহীশূর ও নীলগিরিতে এই চাষ শুরু হয় এবং তা লাভজনকও হয়।
(ঘ) নীল শিল্প
- (১) ইউরোপীয় মালিকানাধীনে ভারতে নীল, আখ প্রভৃতি আবাদভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটে। একসময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রপ্তানি বাণিজ্যে নীল ছিল প্রথম স্থানাধিকারী। ভারতে উৎপন্ন নীলের মধ্যে গুণগত মান ও চাহিদার বিচারে বাংলা-বিহারের নীল ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ।
- (২) ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুসারে ইংরেজ নীলকররা জমির ওপর মালিকানাস্বত্ব লাভ করে এবং নীল চাষে বাধ্য করতে চাষিদের ওপর তীব্র অত্যাচার চালাতে শুরু করে। ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে নীল চাষের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইউরোপ-এ কৃত্রিম নীল আবিষ্কৃত হলে ভারতে নীল চাষের গতি কমতে থাকে।
(ঙ) চিনি শিল্প
আখ বা চিনি শিল্পেও ইউরোপীয় পুঁজিপতিরা মূলধন বিনিয়োগ করে।
(চ) পাট শিল্প
- (১) পাটকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় মালিকানায় গঙ্গার দুই তীরে বেশ কিছু পাটকল গড়ে ওঠে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জনৈক প্রাক্তন নৌ-কর্মচারী জর্জ অকল্যান্ড ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার নিকটবর্তী রিষড়ায় ভারতের প্রথম পাটকল স্থাপন করেন। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে বরাহনগরে আর একটি পাটকল স্থাপিত হয়।
- (২) ১৮৬০-এর দশকে গৌরীপুর, সিরাজগজ্ঞ প্রভৃতি স্থানে পাটকল স্থাপিত হতে থাকে। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলায় ৮ লক্ষ ৫০ হাজার একর জমি পাটচাষের আওতায় আসে। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে চটকল মালিকদের সমিতি ‘ইন্ডিয়ান জুট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় ‘ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন’।
- (৩) ১৯১২-১৩ খ্রিস্টাব্দে পাটের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার ৪০০ একর। ১৯১২-১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে পাটকলের সংখ্যা ছিল ৬৪টি এবং এগুলিতে কাজ করত প্রায় ২ লক্ষ ১৬ হাজার কর্মী। এই সময় ভারত থেকে মোট ৪ কোটি ৫ লক্ষ পাউন্ড মূল্যের পাট বিদেশে রপ্তানি হয়।
(ছ) লোহ- ইস্পাত শিল্প
পুঁজিপতিদের উদ্যোগে এই শিল্পের খুব বেশি প্রসার ঘটেনি। যাইহোক, মাদ্রাজের কাছে পোর্টোনোভো-তে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম লোহা ও ইস্পাত কারখানা স্থাপিত হয়। কারখানাটি লাভজনক না হওয়ায় ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে এটি তুলে দেওয়া হয়। এরপর ব্রিটিশ উদ্যোগে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল আয়রন ওয়াকার্স কোম্পানি, ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি এবং ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি গঠিত হয়। তা সত্ত্বেও ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের খুব বেশি প্রসার ঘটে নি।
(জ) জাহাজনির্মাণ শিল্প
উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি জাহাজনির্মাণ ও সমুদ্র পরিবহণের ক্ষেত্রে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ভোগ করত।
(ঝ) কয়লা উত্তোলন শিল্প
- (১) কারখানা ও রেলের জন্য কয়লা শিল্পের উন্নতির বিশেষ প্রয়োজন ছিল। এই প্রয়োজন থেকেই ইউরোপীয়রা ভারতে কয়লা শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে রানিগঞ্জে সর্বপ্রথম কয়লাখনি আবিষ্কৃত হয়। তবে রেলপথ স্থাপনের পর থেকে কয়লা শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে।
- (২) এই সময় প্রধানত বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা থেকে কয়লা সরবরাহ করা হত। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কেবল বাংলারই ৫৬টি খনি থেকে ৩ লক্ষ টন কয়লা তোলা হয়। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০ লক্ষ টনের কিছু বেশি। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শুধু বাংলাতেই ১১৯ টি কয়লা উত্তোলক কোম্পানি ছিল এবং সেখানে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করত।
(ঞ) সেচের যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প
ভারতে ব্রিটিশ পুঁজি বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষেত্র ছিল সেচের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নির্মাণ। বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে সিন্ধু, পাঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলে গম, তুলো প্রভৃতির চাষ হত। এসব স্থানে সেচের যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ মূলধন বিনিয়োগ করা হয়। এসবের বিনিময়ে ইংরেজরা চাষিদের কাছ থেকে উচ্চ হারে জলকর আদায় করত।
(ট) ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য শিল্প
- (১) ব্রিটিশ উদ্যোগে ভারতে খুব সামান্য পরিমাণে হলেও ইঞ্জিনিয়ারিং, কাগজ, চামড়া, পশম, মদ, সিমেন্ট, দেশলাই, কাচ প্রভৃতি শিল্পের বিকাশ ঘটে। বালি (১৮৭০ খ্রি.), লক্ষ্ণৌ (১৮৭৯ খ্রি.), টিটাগড় (১৮৮২ খ্রি.) ও রানিগঞ্জে (১৮৮১ খ্রি.) কাগজের কল স্থাপিত হয়।
- (২) সামরিক ও রেল কর্মচারীদের শীতের পোশাক সরবরাহের জন্য সরকারি উদ্যোগে কানপুর ও ব্যাঙ্গালোরে আধুনিক পশম কারখানা গড়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর বুট সরবরাহের জন্য কানপুরে হারনেস অ্যান্ড স্যাডলরি ফ্যাক্টরি (১৮৬০ খ্রি.) স্থাপিত হয়।
- (৩) এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে ৯১টি রেলওয়ে কারখানা, ১৩টি অস্ত্রাগার এবং কোলার স্বর্ণ খনিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (১৮৮০খ্রি.) গড়ে ওঠে। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কাচ কারখানা স্থাপিত হয়। এ ছাড়া চাল, ময়দা, অভ্র, কাঠ, সোরা, চামড়া, তুলোবীজ নিষ্কাশন প্রভৃতি বিষয়ে ইউরোপীয়দের উদ্যোগে বেশ কিছু যন্ত্র উৎপাদন শিল্প গড়ে ওঠে।
উপসংহার :- উনিশ শতকের শেষদিকে ভারতে শিল্পের যথেষ্ট অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে কলকারখানার মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬৮৮টি। এই শিল্পোন্নয়নের মূলে যে ব্রিটিশ পুঁজির আধিপত্য ছিল, সে সম্পর্কে সন্দেহ নেই। ভারতে ইউরোপীয় পুঁজি বিনিয়োগের মূল ঘাঁটি ছিল কলকাতাকে কেন্দ্র করে। অপরপক্ষে বোম্বাই ছিল ভারতীয় বিনিয়োগের প্রাণকেন্দ্র।
(FAQ) ভারতে ইউরোপীয় শিল্প উদ্যোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের পর।
রবার্ট ব্রুস নামে জনৈক ইংরেজ ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে আসামের জঙ্গলে।
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক
জর্জ অকল্যাণ্ড ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে রিষড়ায়।