চন্দ্রযান ৩ প্রসঙ্গে অভিযানের উদ্দেশ্য, অর্থায়ন, ইসরো সভাপতির বক্তব্য, কৃত্রিম উপগ্ৰহের অনুপস্থিত, অবতরণ স্থল নির্বাচন, অভিযান পরিচালনা, উৎক্ষেপন যান, মহাকাশযান, উৎক্ষেপণের দিন, বহির্মুখী যাত্রা, চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ ও চন্দ্রপৃষ্ঠে চন্দ্রযান ৩ এর অবতরণ সম্পর্কে জানব
চন্দ্রযান ৩
ঐতিহাসিক বিষয় | চন্দ্রযান-৩ |
অভিযানকারী দেশ | ভারত |
অভিযানের ধরণ | লুনার ল্যাণ্ডার, রোভার |
পরিচালক | ইসরো |
অর্থ ব্যয় | ৬১৫ কোটি টাকা |
উৎক্ষেপণ তারিখ | ১৪ জুলাই ২০২৩ খ্রি |
উৎক্ষেপণ স্থান | শ্রীহরিকোটা |
চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ | ২৩ আগস্ট ২০২৩ খ্রি |
অবতরণস্থল | চাঁদের দক্ষিণ মেরু |
ভূমিকা :- ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ভারতের চন্দ্রাভিযান কর্মসূচির অন্তর্গত তৃতীয় চন্দ্র অন্বেষণ অভিযান হল চন্দ্রযান ৩।
চন্দ্রযান-৩ অভিযানের উদ্দেশ্য
এই চন্দ্রাভিযানের উদ্দেশ্য হল চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদ ও সুরক্ষিত অবতরণ, রোভারের নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানোর সক্ষমতা যাচাই এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পাদনা করা।
ভারতের চন্দ্রযান ৩ এর অর্থায়ন
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ খবর পাওয়া যায় যে ইসরো এই প্রকল্পটির প্রাথমিক অর্থায়নের জন্য ৭৫ কোটি ডলার (মার্কিন ডলার ১১ মিলিয়ন) টাকার অনুরোধ করেছে। এর মধ্যে ৬০ কোটি ডলার (৮.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য এবং অবশিষ্ট ১৫ কোটি ডলার (২.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) রাজস্ব ব্যয়ের জন্য চাওয়া হয়।.
চন্দ্রযান ৩ এর অর্থায়নে ইসরো সভাপতির বক্তব্য
প্রকল্পের অস্তিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরো সভাপতি কে. সিভান জানিয়েছেন এই অভিযানে ব্যয় হবে প্রায় ৬১৫ কোটি (মার্কিন ৮৬ মিলিয়ন ডলার)
ভারতের চন্দ্রযান ৩ এ কৃত্রিম উপগ্ৰহের অনুপস্থিত
এই অভিযানে প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার ও রোভার ব্যবহৃত হয়েছে, তবে কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ পেরিত হয় নি।
চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণ স্থল নির্বাচন
- (১) এই চন্দ্রযান-৩-এর সম্ভাব্য অবতরণ স্থান গুলির জন্য কঠোর মানদণ্ড ছিল। তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ একটি প্রধান কারণ ছিল। স্থানগুলিকে চন্দ্র দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের মধ্যে স্থির করতে হয়েছিল, যা পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান চন্দ্র পৃষ্ঠের অংশের পরিধিগুলিতে নয়।
- (২) তুলনামূলকভাবে সমতল স্থান গুলিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল এবং ল্যান্ডার অবতরণ স্থানের কাছে পৌঁছালে যাতে সেখান থেকে উড়ে আসতে পারে এমন কোনো প্রকার বস্তু না থাকে তা ল্যাংমুয়ার প্রোব (এলপি) দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণস্থল
এই চন্দ্রযানের অবতরণস্থল হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর কারণ, ইসরোর বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন যে দক্ষিণ মেরু থেকে চাঁদ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্ভবপর হবে।
চন্দ্রযান-২ অভিযান পরিচালনা
পৃথিবীর উপগ্রহ চন্দ্র পৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য চন্দ্রযান কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসরো জিএসএলভি এমকে তৃতীয় রকেটের দ্বারা একটি অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভারের সমন্বয়ে চন্দ্রযান-২ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। রোভার প্রজ্ঞানকে চন্দ্র পৃষ্ঠে স্থাপন করার জন্য সেপ্টেম্বর মাসে ল্যান্ডারটির চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করার কথা ছিল।
পরবর্তী চন্দ্রাভিযানে ভারত-জাপান পরিকল্পনা
আগের প্রতিবেদনে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি অভিযানের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয় ভারত ল্যান্ডার সরবরাহ করবে এবং জাপান লঞ্চার ও রোভার সরবরাহ করবে।
চন্দ্রযান-৩ এর উৎক্ষেপণ যান
এই চন্দ্রাভিযানে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণকারী এলভিএম ৩ রকেটটিকে এম ৪ অভিধায় অভিহিত করা হয়েছিল।
ভারতে চন্দ্রযান-৩ এর মহাকাশ যান
এই চন্দ্রাভিযানে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানটি প্রপালশান মডিউল, ল্যান্ডার (বিক্রম) ও রোভার নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
চন্দ্রযান-৩ এর উৎক্ষেপণ
২০২৩ সালের ১৪ই জুলাই ভারতীয় সময় ২ টা ৩৫ মিনিটে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটা (সতীশ ধবন বা ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র) থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
কক্ষপথে কার্যকরভাবে চন্দ্রযান ৩ স্থাপন
ইতিমধ্যে মহাকাশযানটিকে চাঁদে পৌঁছাতে যে ট্র্যাজেক্টোরির প্রয়োজন, সেই পথে কার্যকরভাবে স্থাপন করা হয়েছে।
চন্দ্রযান-৩ এর বহির্মুখী যাত্রা
২০২৩ সালের ৩১ জুলাই প্রপালশান মডিউল দ্বারা ট্রান্স-লুনার ইনজেকশন বার্নটি শুরু হয়েছিল। এর ফলে মহাকাশ যানটিকে চাঁদের দিকে সফল ভাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
উপগ্রহ চন্দ্র কক্ষপথে চন্দ্রযান-৩ এর প্রবেশ
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ১,৮৩৫ সেকেন্ডের প্রচেষ্টায় চাঁদের ১৬৪ কিমি X ১৮০৭৪ কিমি কক্ষপথে চন্দ্রযান-৩ প্রবেশ করে।
চন্দ্রযান ৩ সম্পর্কে মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসের বার্তা
চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য কামনা করে বিশেষ বার্তা পাঠালেন বিখ্যাত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। তিনি বলেছেন, ‘চন্দ্রযান ৩ কে নিয়ে আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত। এই প্রকল্পের সাফল্য কামনা করি।’
ভারতে চন্দ্রযান ৩ এর সাফল্য কামনায় পূজা
সারা বিশ্বজুড়েই চলছে পুজো অর্চনা। এবার যাতে আর কোনও বিপত্তি না হয়, তার জন্য যাত্রা শুরুর আগেই ইসরোর বিজ্ঞানীরা পুজো দিয়েছিলেন তিরুপতি মন্দিরে। অবতরণের দিন পুজো হল দক্ষিণ ভারতের রামেশ্বর মন্দিরে। পুজো হয়েছে উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরে।
চন্দ্রাভিযান দর্শনে ভারতের কাছে পাকিস্তানের আবেদন
ভারতের চন্দ্রাভিযান যাতে পাকিস্তান-এও দেখা যায় তার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ইমরানের মন্ত্রিসভার প্রাক্তন মন্ত্রী ফওয়াদ চৌধুরি।
চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে অবতরণ
২০২৩ সালের ২৩ই আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩।
বিশ্বে চতুর্থ মহাকাশ সংস্থা ইসরো
এই অভিযানের মাধ্যমে পূর্বসূরী ইউএসএসআর, নাসা ও সিএনএসএ-এর পরে ইসরো চাঁদে সুরক্ষিত অবতরণে সক্ষম চতুর্থ মহাকাশ সংস্থায় পরিণত হয়।
পরবর্তী মিশন সূর্য
চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের পর উজ্জীবিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র বিজ্ঞানী-আধিকারিকরা। পরবর্তী মিশনে সূর্যের দিকে ‘চোখ রাখতে’ চাইছেন তাঁরা। বুধের সন্ধেতেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে সফলভাবে ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণের সাফল্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছে গোটা দেশ।
ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে হল নতুন সূর্যোদয়
বুধ-সন্ধ্যার মাহেন্দ্রক্ষণে চাঁদ হাতে পেল ভারত। চাঁদে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে হল নতুন ‘সূর্যোদয়’। উৎক্ষেপণের ৪১ তম দিনে অন্ধকার দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি জায়গায় সফলভাবে অবতরণ করল ল্যান্ডার। বিশ্বে ভারতই একমাত্র দেশ, যে চাঁদের ওই জায়গায় সফল অভিযান চালানোর কৃতিত্ব অর্জন করল
চাঁদের অগম্য স্থানে বিশ্বের প্রথম দেশ ভারত
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের অগম্য স্থানে ভারত। ভারতের হাতের মুঠোয় চাঁদ। সূর্য থেকে শক্তি সঞ্চয় করে চাঁদের মাটিতে নামল রোভার ‘প্রজ্ঞান’। অবতরণের পরে চাঁদের মাটিতে শক্তি সঞ্চয় করেছে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।
‘বিক্রম’ থেকে নামল রোভার ‘প্রজ্ঞান’
বুধবার সন্ধে ৬টা বেজে ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে নেমেছে চন্দ্রযান ৩। তার প্রায় সাড়ে ঘণ্টাতিনেক পরে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ থেকে নামল রোভার ‘প্রজ্ঞান’।
রাশিয়ার ব্যর্থতা ভারতের জয়
মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন ইতিহাস ভারতের। রাশিয়ার লুনা ২৫ কার্যত ধ্বংস হয়ে যায়। আর তা-ই করে দেখাল ভারতের চন্দ্রযান ৩
ইসরো-র প্রধানকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র প্রধানকে ফোন করে অভিনন্দন জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ফোন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোমনাথজি, আপনার নাম সোমনাথ, যা চাঁদের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। এই জন্য আপনার পরিবারজনেরাও অনেক আনন্দিত হবেন, আমার তরফ থেকে আপনাকে, আপনার পুরো টিমকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আর সবাইকে আমার তরফ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে দিন। অনেক অনেক শুভকামনা, নমস্কার।’
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
চন্দ্রযান ৩ এর চাঁদে অবতরণের দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রিয় পরিবার, যখন আমাদের চোখের সামনে এইরকম ইতিহাস গড়তে দেখলাম, তখন জীবন ধন্য হয়ে যায়। এরকম ঐতিহাসিক ঘটনা রাষ্ট্রজীবনের চিরঞ্জীব চেতনায় রূপ পায়। এটি একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। এই সফলতাই মূলত যাবতীয় মুশকিলের মহাসাগরকে পার করে নিয়ে যাবে। আমাদের বৈজ্ঞানিক সাথীরাও বলেছেন, চাঁদের দেশে ভারত। আজকে আমরা মহাকাশে নতুন ভারতের নয়া উড়ানের সাক্ষী হলাম।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
চন্দ্রযান ৩ এর চাঁদে অবতরণের দিন ইসরোর মিশন চন্দ্রযান ৩-কে শুভেচ্ছা জানালেন পশ্চিমবঙ্গ-এর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু অধিকারীর অভিনন্দন
চন্দ্রযান ৩ এর এই সাফল্যের পর অভিনন্দন জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরাই প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গিয়ে সফল ল্যান্ডিং করেছি। আপনারা দেখেছেন, নিজেদের উন্নত দেশ বলে দাবি করা, অন্য দেশগুলি পারেনি। নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যতে তাঁরা পারবেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। ভারতের বিজ্ঞানীদের মেধা, ভারত সরকারের কর্মতৎপরতা এবং উদ্যোগ দুটোই মৌলিক।’
উপসংহার :- ২০১৯ সালের চন্দ্রযান ২ শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হয়েছিল। মাত্র চার বছর পরেই পাল্টে গেল ছবি। চন্দ্রযান ৩ সফলভাবে নামল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। তৈরি করল ইতিহাস। উচ্ছ্বাসে ভাসল গোটা দেশ।
(FAQ) চন্দ্রযান ৩ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৬১৫ কোটি টাকা
১৪ জুলাই ২০২৩ সালে
অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন বা ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে
২৩ আগস্ট ২০২৩ সালে
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)
শ্রীধর পানিকর সোমনাথ