আলাউদ্দিন খলজির কৃতিত্ব

আলাউদ্দিন খলজির কৃতিত্ব প্রসঙ্গে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা, নানা গুণের সমাবেশ, শাসনতান্ত্রিক দক্ষতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, রাজ্য জয়ের ক্ষমতা, নেতৃত্বের ক্ষমতা, সাংস্কৃতিক চেতনা, গোঁড়া সুন্নি মুসলমান ও মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে জানবো।

আলাউদ্দিন খলজির কৃতিত্ব

ঐতিহাসিক ঘটনাআলাউদ্দিন খলজির কৃতিত্ব
সুলতানআলাউদ্দিন খলজি
বংশখলজি বংশ
চরিত্রনিষ্ঠুরতা
উপাধিসিকান্দার-ই-সানি
মৃত্যু১৩১৬ খ্রি
আলাউদ্দিন খলজির কৃতিত্ব

ভূমিকা :- মধ্যযুগের দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে আলাউদ্দিন খলজি নানাদিক থেকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করতে পারেন। তিনি সিকান্দার-ই-সানি উপাধি গ্ৰহণ করেছিলেন।

আলাউদ্দিন খলজির নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা

  • (১) আলাউদ্দিনের ব্যক্তিগত চরিত্রে বহু ত্রুটি ছিল। তিনি ছিলেন নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন, অত্যাচারী, বিবেকহীন ব্যক্তি। স্নেহশীল পিতৃব্য এবং তাঁর পুত্রদের তিনি নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। নিজ পরিবারের লোকজনদের প্রতি তাঁর মায়া মমতার প্রকাশ তেমন ছিল না।
  • (২) তিনি বিদ্রোহী অভিজাতদের ও তাদের স্ত্রী-পুত্রদের হত্যা করতে দ্বিধা করেন নি। জালালী অভিজাতদের তিনি প্রথমে সম্মানজনক ব্যবহারের দ্বারা নিজ পক্ষে আনেন, কার্যসিদ্ধ হওয়ার পর তাদের ধ্বংস করেন। এই কারণে ভিনসেন্ট স্মিথ, আলাউদ্দিনকে “বর্বর স্বৈরাচারী” আখ্যা দিয়েছেন।
  • (৩) আলাউদ্দিন শত্রুকে ক্ষমা করতেন না। গুজরাটের রাজা কর্ণ রাজ্য ছেড়ে দেবগিরিতে পালিয়ে রক্ষা পান। আলাউদ্দিন তাঁর পত্নী কমলাদেবীকে বন্দীনী করার পর বিবাহ করেন। দেবগিরিতে কর্ণের কন্যা দেবলাদেবীকে বন্দিনী করে পুত্র খিজির খানের সঙ্গে বিবাহ দেন।
  • (৪) আলাউদ্দিনকে এজন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক নিষ্ঠুর চরিত্রের লোক বলেছেন। কিন্তু মধ্যযুগের ইতিহাসে এই ধরনের নিষ্ঠুরতা বিরল ছিল না। সমকালীন লেখক বরণী বা ইসামী বা আমীর খসরু এজন্য সুলতান আলাউদ্দিনকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেন নি।
  • (৫) রাষ্ট্রের ব্যাপারে আলাউদ্দিন ছিলেন নির্মম ও ক্ষমাহীন। নব মুসলমান বা ইসলামে দীক্ষিত মোঙ্গলদের বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ পেয়ে তিনি কয়েক হাজার নব মুসলমানকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার আদেশ দেন।
  • (৬) বরণীর মতে, “রাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য দরকার হলে আলাউদ্দিন কোনো ধর্মীয় বা পারিবারিক সম্পর্কের ধার ধারতেন না, অপরের কোনো অধিকার স্বীকার করতেন না।” অবশ্য এই রাষ্ট্র বলতে আলাউদ্দিন সর্বদাই নিজের স্বৈরতন্ত্রকেই গণ্য করতেন।

আলাউদ্দিনের চরিত্রে বহু গুণের সমাবেশ

  • (১) আলাউদ্দিনের চরিত্রে বহু গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। আলাউদ্দিন ছিলেন ভয়ানক তেজী, সাহসী, উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন, পরিকল্পনা প্রবণ, ধৈর্যশীল লোক। যখনই তিনি কোনো ঘোরতর সঙ্কটে পড়তেন, এই সঙ্কট থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় তিনি উদ্ভাবন করতে পারতেন।
  • (২) তিনি অশিক্ষিত বা সামান্য শিক্ষিত হলেও শাসনকার্যে তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখান। তিনি মহাকবি টেনিসনের এই বাণীর সত্যতা প্রমাণ করেন যে “যারা শিক্ষাহীন তারাও রাজ্য শাসন করতে সক্ষম” (Those who are unread can rule)।
  • (৩) তাঁর সামরিক প্রতিভা ছিল উচ্চস্তরের। তার উচ্চাকাঙ্খা ছিল সীমাহীন। কিন্তু সভাসদদের যুক্তিপূর্ণ মত শুনে তিনি অযৌক্তিক উচ্চাকাঙ্খা ত্যাগ করতে জানতেন।

আলাউদ্দিন খলজির শাসনতান্ত্রিক দক্ষতা

  • (১) আলাউদ্দিনের শাসনতান্ত্রিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। সুলতানি যুগে তার তুল্য দক্ষ প্রশাসক দেখা যায় নি। তিনি শুধুমাত্র বিদ্রোহ দমন করে ক্ষান্ত থাকেন নি, বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে চিন্তা করেন এবং তা দূর করার ব্যবস্থা করেন।
  • (২) আলাউদ্দিন তাঁর শাসন ব্যবস্থায় বহু উদ্ভাবনী নীতি প্রয়োগ করেন। আলাউদ্দিন খলজির বাজার দর নিয়ন্ত্রণ নীতি ছিল এরূপ একটি বিস্ময়কর ব্যবস্থা। বরণীর মত সমালোচকও স্বীকার করেছেন যে, এর ফলে দিল্লীর দরিদ্র লোক ও সাধারণ লোকেরা উপকৃত হয়েছিল।
  • (৩) পি. শরণ আলাউদ্দিনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির সমালোচনা করে বলেছেন যে “এই নীতি ছিল পুরোপুরি যুক্তিহীন, ভ্রান্ত পরিকল্পনা যুক্ত এবং কৃত্রিম। এই নীতি ছিল সকল প্রকার অর্থনৈতিক নিয়ম বহির্ভূত এবং এর ফলে জনসাধারণের সীমাহীন দুঃখদুর্দশা, দারিদ্র ও অসম্মান ঘটেছিল।”
  • (৪) কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিক অধ্যাপক শরণের এই অভিমত স্বীকার করেন না। আলাউদ্দিনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির ফলে অন্তত দিল্লীর ধনী-দরিদ্র সকল শ্রেণীর লোক উপকৃত হন। দুর্ভিক্ষ ও খরার সময় খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত ছিল।
  • (৫) আলাউদ্দিন কঠোর হাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করেন। ফেরিস্তার মতে, তার শাসনে দস্যু তস্করের উপদ্রব দূর হয়। পথিক ও বণিকরা নিরাপদে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারে।
  • (৬) বাংলা থেকে কাবুল পর্যন্ত লোকে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারত। আলাউদ্দিন ভারত -এর এক বৃহত্তর অঞ্চলকে তার সিংহাসনের অধীনে আনার পর, সেই অঞ্চলকে এক প্রশাসনিক ঐক্য দান করেন।

আলাউদ্দিন খলজির শাসন সংস্কার

  • (১) আলাউদ্দিনের শাসনব্যবস্থা ছিল ঘোরতর স্বৈরতান্ত্রিক। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। উপযুক্ত কর্মচারী নির্বাচনে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। আলাপ খান, নসরৎ খান, জাফর খান ও মালিক কাফুর প্রমুখ সেনাপতিকে তিনিই নির্বাচন করেন।
  • (২) যদিও তিনি স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন, মন্ত্রীদের সৎ পরামর্শ তিনি গ্রহণ করতেন। তার স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকে তিনি সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক-এর মত নিজ খামখেয়াল চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করেন নি। সুলতানি শাসনকে মজবুত করার জন্যই তিনি তার স্বৈরতন্ত্র গড়ে তুলেন।
  • (৩) আলাউদ্দিন নিজেই নিজের মন্ত্রণাদাতা ছিলেন। আলাউদ্দিন রাজস্ব ও সামরিক দপ্তরে সংস্কার করেন। খুৎ, মুকাদ্দমরা যে উদ্বৃত্ত অর্থ আদায় করত তা তিনি রদ করেন। তিনিই ছিলেন দিল্লীর প্রথম সুলতান যিনি একটি সুদক্ষ স্থায়ী সামরিক বাহিনী গড়েন, যা দিল্লী সুলতানির মেরুদণ্ডে পরিণত হয়।

আলাউদ্দিন খলজির রাজনৈতিক দুরদর্শিতা

  • (১) রাষ্ট্রনীতিবিদ হিসেবে আলাউদ্দিন তাঁর মৌলিকতা দেখান। তিনি তার স্বৈরতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। “রাজাই হলেন রাষ্ট্র” এই মতবাদকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। পার্থিব সকল নিয়ন্ত্রণের ঊর্দ্ধে তিনি রাজ ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
  • (২) অভিজাত ও উলেমা কোনো শক্তিকেই তিনি সিংহাসনের সমকক্ষতা দেন নি। যদিও তিনি একজন সুন্নী মুসলমান ছিলেন, ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে তিনি কোনো আতিশয্য দেখান নি।
  • (৩) তিনি উলেমা ও মোল্লাদের কথামত রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজী ছিলেন না। তিনি তাঁর সামরিক ক্ষমতাকেই রাষ্ট্রের প্রধান শক্তি হিসেবে গণ্য করতেন। উলেমা বা ধর্মগুরুদের ওপর অথবা অভিজাতদের ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন না।

আলাউদ্দিন খলজির রাজ্যজয়ের ক্ষমতা

  • (১) আলাউদ্দিন বিজেতা হিসেবে অসাধারণ সফলতা লাভ করেন। ক্ষুদ্র দিল্লী রাজ্যকে তিনি এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য-এ পরিণত করেন। হিন্দুস্থান ও দাক্ষিণাত্যে সর্বত্রই সুলতানি পতাকা তিনি উড়িয়ে দেন। দক্ষিণের কুমারী মাটিতে ইসলামীয় পতাকা উড়াবার প্রথম গৌরব তিনি পান।
  • (২) রাজপুতানার মরু পর্বত অধ্যুষিত দুর্গম অঞ্চলের স্বাধিকার প্রমত্ত রাজপুত নৃপতিদের তিনি তাঁর সাম্রাজ্যের খাঁচায় পোরা সিংহে পরিণত করেন। গুজরাটের বাঘেলা রাজপুতদের তিনি দিল্লীর পদানত করেন।

আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদ

রাজ্য জয়ের সঙ্গে তিনি বাস্তব নীতির মিলন ঘটিয়ে অধীনস্থ রাজ্যগুলিকে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন, কিন্তু অধীনস্থ রাজাদের স্বায়ত্বশাসন দেন। আলাউদ্দিন তাঁর সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্যকে দৃঢ় করেন।

আলাউদ্দিন খলজির নেতৃত্বদানের ক্ষমতা

সুলতান আলাউদ্দিনের নেতৃত্ব ক্ষমতা অসাধারণ ছিল। মালিক কাফুর, আলাপ খান, নসরৎ খান, জাফর খান, উলুগ খানের মত সেনাপতিদের তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তাদের আনুগত্য পান।

আলাউদ্দিন খলজির সংস্কৃতি চেতনা

সুলতান আলাউদ্দিন বর্বর, নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক হলেও, বর্বর ছিলেন না। ইরফান হাবিবের মতে দরিদ্র শ্রেণী, হিন্দু কৃষকদের স্বাধীনতায় তিনি হাত দেন নি। যদিও তিনি নিরক্ষর ছিলেন, তবুও আমীর খসরু, হাসান প্রমুখ পণ্ডিতদের তিনি সমাদর করতেন।

গোঁড়া সুন্নি মুসলমান আলাউদ্দিন খলজি

তিনি ধর্মোম্মাদ ছিলেন না। নিজে সুন্নী মুসলমান হলেও, বিখ্যাত সুফী সন্ত শেখ নিজামুদ্দিন আওলিয়ার তিনি অনুরাগী ছিলেন। অপর সন্ত মহম্মদ শামসুদ্দিন তুর্কীকেও তিনি শ্রদ্ধা জানান।

আলাউদ্দিন খলজির মসজিদ নির্মাণ

তিনি ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে বহু হর্ম, প্রাসাদ তৈরি করেন। দিল্লীর উপকণ্ঠে সিরিতে তিনি “হাজার সেতুন” বা এক হাজার থামের প্রাসাদ তৈরি করেন। তিনি বিখ্যাত আলাইদরওয়াজা, বহু মসজিদ নির্মাণ করেন।

  • (১) আলাউদ্দিনের বহু কৃতিত্ব থাকলেও কয়েকটি মৌলিক ত্রুটির জন্য তাঁর কীর্তি স্থায়ী হতে পারেনি। ডাঃ কে. এস লাল এজন্য মন্তব্য করেছেন যে, “আলাউদ্দিন স্থায়ীভাবে কিছু রেখে যেতে পারেননি” (He left almost nothing)। তার শাসনব্যবস্থা ও সংস্কারগুলি ভেঙে পড়ে।
  • (২) এর প্রধান কারণ হল এই যে, আলাউদ্দিনের শাসনব্যবস্থা তার ব্যক্তিগত স্বৈর ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাঁর ব্যক্তিগত যোগ্যতাই এই শাসন ব্যবস্থাকে কার্যকরী করে। কিন্তু তাঁর তিরোধানের পর তার কাজ চালাবার মত উপযুক্ত উত্তরাধিকারী ছিল না।
  • (৩) আলাউদ্দিন এমন কোনো আমলাতন্ত্র গড়েন নি যা, তার অবর্তমানে তার নীতিকে কার্যকরী রাখতে পারে। ফলে তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সেনাদল সবই নষ্ট হয়ে যায়।
  • (৪) তিনি প্রজাদের ভালবাসা ও আনুগত্যের ওপর তার শাসন ব্যবস্থাকে দাঁড় করান নি। তিনি প্রজাদের মতামতকে গ্রাহ্য করতেন না। ফলে লোকে তাকে ভক্তি করত না।
  • (৫) ড: কে কে দত্তের মতে, “চোরাবালির ওপর তৈরি ইমারত যেমন ভেঙে যায়, তেমনি আলাউদ্দিন চোরা বালির ওপর তার শাসন স্থাপন করেন।” ডঃ কে. এস. লালের মতে, আলাউদ্দিন বণিক ও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় উদাসীন ছিলেন। প্রজাদের ওপর তিনি অত্যধিক করের বোঝা চাপান।
  • (৬) ডঃ আর. পি. ত্রিপাঠীর মতে, মুসলিম আইন অনুসারে যতটা পরিমাণ সর্বোচ্চ ভূমিকর আদায় করা সম্ভব ছিল আলাউদ্দিন ততটা কর প্রজাদের ওপর চাপান।

উপসংহার :- আলাউদ্দিনই ছিলেন ভারতের প্রথম মুসলিম শাসক যিনি জমি জরিপ করে কর ধার্য করার প্রথা চালু করেন। এই দিক থেকে তিনি ছিলেন শের শাহ -এর পথ-প্রদর্শক। এই সকল দিক বিচার করে বলা যায় যে আলাউদ্দিন ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ সুলতান তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

(FAQ) আলাউদ্দিন খলজির কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আলাইদরওয়াজা কে নির্মাণ করান?

আলাউদ্দিন খলজি।

২. হাজার সেতুন বা এক হাজার থামের প্রাসাদ তৈরি করান কে?

আলাউদ্দিন খলজি।

৩. আলাউদ্দিনের দুজন দক্ষ সেনাপতির নাম লেখ।

জাফর খাঁ, আলপ খান, মালিক কাফুর, নসরৎ খান।

৪. সিরি সেনাশিবির নির্মাণ করান কে?

আলাউদ্দিন খলজি।

Leave a Comment