পাল রাজা ধর্মপাল প্রসঙ্গে ত্রিশক্তি দ্বন্দ্ব, ধর্মপাল-বৎসরাজ-ধ্রুব সম্পর্ক, রাজ্য বিস্তার, ধর্মপাল-নাগভট্ট-গোবিন্দ সম্পর্ক, ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ধর্মপালের কৃতিত্ব, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ও অর্থনৈতিক উন্নতি সম্পর্কে জানবো।
বাংলার পাল রাজা ধর্মপাল প্রসঙ্গে ধর্মপালের সিংহাসনে আরোহণ, ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বে ধর্মপালের ভূমিকা, ধর্মপাল -বৎসরাজ-ধ্রুব, ধর্মপালের রাজ্য বিস্তার, ধর্মপাল-নাগভট্ট-তৃতীয় গোবিন্দ, ধর্মপালের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ধর্মপাল, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ধর্মপাল, ধর্মপালের আমলে আর্থিক উন্নতি ও ধর্মপালের কৃতিত্ব।
রাজা ধর্মপাল
ঐতিহাসিক চরিত্র | ধর্মপাল |
রাজত্ব | ৭৭৫-৮১২ খ্রি: |
সাম্রাজ্য | পাল সাম্রাজ্য |
রাজধানী | মগধ |
প্রতিষ্ঠাতা | গোপাল |
শ্রেষ্ঠ রাজা | দেবপাল |
ভূমিকা :- গোপালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ধর্মপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন। পাল বংশের আঞ্চলিক রাজ্যকে এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যে তিনি পরিণত করেন। প্রাচীন যুগের বাংলায় যে সকল রাজার নাম পাওয়া যায় তাঁদের মধ্যে ধর্মপাল শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করতে পারেন।
ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বে ধর্মপালের ভূমিকা
ধর্মপালের সিংহাসনে বসার সময় উত্তর ভারতে রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে ত্রিশক্তি সংগ্রাম আরম্ভ হয়। এই ত্রিশক্তির মধ্যে বাংলার পাল শক্তি ছিল অন্যতম। মালব বা রাজপুতানা থেকে প্রতিহার শক্তি পূর্ব দিকে রাজ্য বিস্তার করে কনৌজ অধিকার করার চেষ্টা করে। পূর্ব ভারত বা মগধ থেকে ধর্মপাল প্রতিহার শক্তিকে দমিয়ে কনৌজ নিজ অধিকারে রাখার চেষ্টা করেন।
ধর্মপাল-বৎসরাজ-ধ্রুব
- (১) ধর্মপাল মগধ জয় করে, দোয়াবের এলাহাবাদ বা প্রয়াগ পর্যন্ত গঙ্গার উপকূল ধরে অধিকার বিস্তার করলে, বৎসরাজ প্রতিহার তাকে বাধা দিতে দোয়াবে এগিয়ে আসেন। দোয়াবের যুদ্ধে ধর্মপাল পরাস্ত হন। কিন্তু বৎসরাজ তার বিজয় স্থায়ী করার আগেই দক্ষিণের রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুব, বৎসরাজকে পরাস্ত করে রাজপুতানার মরু অঞ্চলে বিতাড়িত করেন।
- (২) ধ্রুব এর পর ধর্মপালকে পরাস্ত করার জন্য এগিয়ে এলে, ধর্মপাল তাকে বাধা দেন। রাষ্ট্রকূট বল্লমধারী পদাতিক ধর্মপালকে পরাস্ত করলেও, এই জয় স্থায়ী হয়নি। ধ্রুব দক্ষিণে নিজ রাজ্য হতে বেশীদিন দূরে থাকতে না পেরে দক্ষিণে ফিরে যান। এই শক্তিশূন্যতার সুযোগে ধর্মপাল তাঁর হৃতশক্তি পুনঃ-প্রতিষ্ঠা করেন।
ধর্মপালের রাজ্য বিস্তার
- (১) খলিমপুর তাম্রলিপি, মুঙ্গের লিপি প্রভৃতি থেকে জানা যায় যে, রাষ্ট্রকূট ও প্রতিহার উভয় শক্তির সামরিক দুর্বলতার সুযোগে ধর্মপাল উত্তর ভারতের বহু স্থান অধিকার করেন। নারায়ণ পালের ভাগলপুর তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে, ধর্মপাল কনৌজের সিংহাসন থেকে ইন্দ্রায়ুধকে বিতাড়িত করে চক্রায়ুধকে নিজের হাতের পুতুল হিসেবে বসান। ধর্মপালের সামন্ত রাজা হিসেবে চক্রায়ুধ রাজত্ব করতে থাকেন।
- (২) ধর্মপাল দূরবর্তী অঞ্চলে অধীনস্থ সামন্তের দ্বারা শাসনের নীতি গ্রহণ করেন। বাংলা ও বিহার ছিল তাঁর প্রত্যক্ষ শাসনে। বাংলা-বিহার ছিল তাঁর সাম্রাজ্যের হৃৎপিণ্ড। কনৌজ তাঁর প্রত্যক্ষ শাসনে না হলেও তাঁর বিশেষ এক্তিয়ারে ছিল। তার বাইরে পাঞ্জাব পর্যন্ত ও মালব-রাজপুতানা পর্যন্ত তাঁর সামন্ত রাজ্য ছিল। এই সামন্ত রাজারা তাঁর প্রতি আনুগত্য জানাতেন।
ধর্মপাল-নাগভট্ট-গোবিন্দ
- (১) ধর্মপালের রাজত্বের শেষ দিকে তাকে পুনরায় ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বে ভাগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। বৎসরাজের পুত্র নাগভট্ট প্রতিহার সিন্ধু, বিদর্ভ, অন্ধ্র প্রভৃতি রাজ্যের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে ধর্মপালকে মিত্রহীন করেন। তারপর তিনি কনৌজ আক্রমণ করে ধর্মপালের সামন্ত ও প্রতিনিধি চক্রায়ুধকে বিতাড়িত করেন।
- (২) এই অবস্থায় সম্ভবত ধর্মপাল রাষ্ট্রকুট রাজ তৃতীয় গোবিন্দ -এর সাহায্য চান। গোবিন্দ ‘রাষ্ট্রকূটাত্মজা’ অর্থাৎ রাষ্ট্রকূট রাজকন্যা রন্নাদেবী ছিলেন ধর্মপালের পত্নী। কিন্তু রাষ্ট্রকুট হস্তক্ষেপের আগেই কনৌজ পুনরুদ্ধারের জন্য ধর্মপাল এগিয়ে যান। প্রতিহার রাজাদের গোয়ালিয়র লিপি থেকে জানা যায় যে, এই যুদ্ধে ধর্মপাল পরাস্ত হন।
- (৩) রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দ, নাগভট্ট প্রতিহারকে পরাস্ত করেন। বাঁশ গাছ যেমন ঝড়ের সময় নুয়ে পড়ে, পরে সোজা হয়ে যায়, ধর্মপাল রাষ্ট্রকুট তৃতীয় গোবিন্দের কাছে সেইরূপ “বেতসীবৃত্তি” দেখান। তিনি স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রকূট তৃতীয় গোবিন্দের কাছে বশ্যতা জানান।
ধর্মপালের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
ডঃ মজুমদারের মতে, রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দ দক্ষিণে ফিরে গেলে, উত্তরে যে শক্তিশূন্যতা দেখা দেয় তার সুযোগে ধর্মপাল তাঁর লুপ্ত ক্ষমতা পুনঃ-প্রতিষ্ঠা করেন। সম্ভবত তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে আর কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে হয়নি।
ধর্মপালের কৃতিত্ব
ধর্মপাল বাংলার একটি প্রাদেশিক রাজ্যকে এক উত্তর ভারতীয় সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেন। ডঃ মজুমদারের মতে, “ধর্মপালের রাজত্বকে বাঙালী জীবনের সুপ্রভাত” বলা চলে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ধর্মপাল
ধর্মপালের রাজত্বকালে শিক্ষা, সংস্কৃতির বিশেষ উন্নতি হয়। ধর্মপাল মগধে নিজ নামে বিক্রমশীলা বিহার স্থাপন করেন। ধর্মপালের অন্য নাম ছিল বিক্রমশীলদের। তিনি সম্ভবত ওদন্তপুরী বিহার স্থাপন করেন। তিনি সোমপুরী বিহার আংশিক স্থাপন করেন। এই সকল বিহারে বিদ্যাচর্চা, অধ্যাপনা ও ধর্মচর্চা হত।
বৌদ্ধ ধর্মের অনুরাগী ধর্মপাল
পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম -এর অনুরাগী। ধর্মপালের বৌদ্ধধর্মের প্রতি তাঁর অনুরক্তির জন্য “পরম সৌগত” বলে কোনো কোনো লিপিতে আখ্যাত হয়েছেন। তার লিপিতে ধর্মচক্রের চিহ্ন খোদিত দেখা যায়। বৌদ্ধ পণ্ডিত হরিভদ্র ছিলেন তাঁর গুরু। তবে ধর্মপাল ভারতীয় সংস্কৃতির রীতি অনুসারে ধর্মসহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করতেন।
ধর্মপালের আর্থিক উন্নতি
ধর্মপালদেবের আমলে বাংলার আর্থিক উন্নতি বিশেষভাবে ঘটেছিল। উন্নত কৃষি ও বাণিজ্য বাংলাকে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত করে। পাল যুগে বাঙলা সাহিত্য, চর্যাপদ, চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের বিকাশ ঘটে।
উপসংহার :- ডঃ মজুমদার অবশ্য ধর্মপালের পুত্র দেবপালের সাফল্যের কথা মনে রেখেই বলেছেন যে, ধর্মপাল রাষ্ট্রকূট শক্তির অপসারণের পর নষ্ট ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন। পিতার সাম্রাজ্য না পেলে দেবপালের পক্ষে এত সাফল্য লাভ করা সম্ভব হতো না।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ধর্মপাল” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) পাল রাজা ধর্মপাল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গোপাল।
ধর্মপাল।
ধর্মপাল।
গুজরাটি কবি সোঢঢল, রামপালকে।
বৌদ্ধ ধর্ম।