হর্ষবর্ধনের যুগে সমাজ ও অর্থনীতি প্রসঙ্গে হিউয়েন সাঙের বিবরণ, খাদ্য, জাতিভেদ, সামাজিক অবস্থা, ধর্মমত, বাণিজ্য, নিগম, কৃষি ও জমির মালিকানা সম্পর্কে জানবো।
হর্ষবর্ধনের যুগে সমাজ ও অর্থনীতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | হর্ষবর্ধনের যুগে সমাজ ও অর্থনীতি |
রাজা | হর্ষবর্ধন |
রাজধানী | থানেশ্বর, কনৌজ |
বংশ | পুষ্যভূতি বংশ |
উপাধি | শিলাদিত্য |
ভূমিকা :- হর্ষবর্ধনের যুগে বা সপ্তম শতকে উত্তর ভারত -এর সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে সচ্ছল অবস্থা ছিল। এই সময় বাণিজ্যের উন্নতি হয়। সেই সময়ে সাধারণ মানুষ সচ্ছল জীবন যাপন করত।
হিউয়েন সাঙের বিবরণ
- (১) হিউয়েন সাঙ তার সি-ইউ-কি গ্রন্থে হর্ষবর্ধনের যুগের ভারতের সমাজ ও অর্থনীতি সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য দিয়েছেন। হিউয়েন সাঙ ৬৩০-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ছিলেন এবং এই সময় তিনি দক্ষিণ ভারত সহ ভারতের নানাস্থানে ভ্রমণ করেন।
- (২) তিনি দেখেছেন যে, গ্রাম ও শহরগুলি বেশ পরিচ্ছন্ন ছিল। বাসগৃহ ও বাজার অঞ্চল আলাদাভাবে স্থাপিত হত। জনসাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে খুব বেশী গুরুত্ব দিত।
- (৩) লোকে দিনের মধ্যে কয়েকবার স্নান করতে অভ্যস্ত ছিল। কোনো কাজ শেষ হলে বা আহারাদির পর তারা মুখ হাত ধুয়ে ফেলত। পরিস্কার কাপড়-চোপড় ও অলঙ্কার পরতে তারা ভালবাসত।
হর্ষবর্ধনের যুগে খাদ্য
লোকে গম ও চাউল, তরিতরকারী, দুধ, মাখন ও চিনি খেত। মাঝে মাঝে মাংস ও পেঁয়াজ তারা খেত। তারা খুবই কঠোর পরিশ্রমী ও সৎ প্রকৃতির ছিল। লোকে অহিংসা ধর্মকে বড় করে দেখত।
হর্ষবর্ধনের যুগে জাতিভেদ
কসাই, ধীবর প্রভৃতিদের সাধারণ লোকের সঙ্গে একত্র থাকতে দেওয়া হত না। তাদের চণ্ডাল প্রভৃতির সঙ্গে গ্রামের বাইরে বাস করতে হত। জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা ছিল। মৌখরী শিলালিপিগুলিতে বর্ণাশ্রম ধর্মের প্রশংসা করা হয়েছে।
হর্ষবর্ধনের যুগে সামাজিক অবস্থা
সমাজে উচ্চশ্রেণীর প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশী ছিল। দান প্রথার চলন অব্যাহত ছিল। সামন্ত প্রধার ফলে যুদ্ধকেই শ্রেষ্ঠ এবং বীর ধর্ম মনে করা হত। কায়িক পরিশ্রমের কাজকে ছোট মনে করা হত। যদিও কৃষক, শ্রমিক সম্পদ ও খাদ্য উৎপাদন করত তবু তাদের সম্মান ও মর্যাদা ছিল না।
হর্ষবর্ধনের যুগে ধর্মমত
- (১) হর্ষবর্ধনের যুগে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচলিত থাকলেও, অন্যান্য ধর্মের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ছিল। হিউয়েন সাঙ বৌদ্ধধর্মের প্রতি পক্ষপাত নিয়ে লিখলেও, অন্য ধর্মের গুরুত্ব অস্বীকার করেননি। শৈবধর্ম ও সূর্য উপাসনা বেশ জনপ্রিয় ছিল বলে জানা যায়।
- (২) হর্ষবর্ধনের পরম শত্রু শশাঙ্ক ছিলেন শৈব। হর্ষবর্ধন নিজে বুদ্ধ ছাড়া সূর্য ও শিবের পুজো করতেন। সাধারণত বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সহিষ্ণুতা ছিল। যদিও হিউয়েন সাঙ বলেছেন যে, শৈব শশাঙ্ক বোধগয়ায় বোধি বৃক্ষ ছেদন করেন, তা প্রধানত রাজনৈতিক কারণে ঘটেছিল বলা যায়।
হর্ষবর্ধনের যুগে বাণিজ্য
- (১) সপ্তম খ্রিস্টাব্দে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। এই যুগে যদিও রোমান বাণিজ্যের অবনতি ঘটে, তার স্থলে দূর প্রাচ্যের বাণিজ্য গড়ে ওঠে। সপ্তম খ্রিস্টাব্দে তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল উত্তর ভারতের এক প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র।
- (২) হিউয়েন সাঙ তাম্রলিপ্তে অশোক -এর তৈরি এক স্তূপ দেখেন। স্থলপথে উত্তর ভারত ও উড়িষ্যা থেকে মাল এই বন্দরে আসত। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বন্দর ছিল মহাবলীপুরম ও কাবেরীপত্তনম।
হর্ষবর্ধনের যুগে নিগম
সম্রাট হর্ষবর্ধনের যুগেও নিগম বা সঙ্ঘ (Guild) প্রথার চলন ছিল। নিগমগুলি ছিল স্বয়ং-শাসিত।
হর্ষবর্ধনের যুগে প্রধান জীবিকা
কৃষি ছিল লোকের প্রধান জীবিকা। গম, ধান, আখ, ফল, বাঁশ প্রভৃতির চাষ ব্যাপক হত। ফসলের ১/৬ ভাগ রাজস্ব দিতে হত। বাড়তি রাজস্বও আদায় করা হত। কৃষকরা সাধারণত শূদ্রশ্রেণীর লোক ছিল। সামন্ত পিরামিডের তলায় ছিল শূদ্র কৃষকরা, ওপরে ছিল ক্ষত্রিয় ও রাজপুতরা।
হর্ষবর্ধনের যুগে সামন্ত প্রথার ব্যাপকতা
সম্রাট হর্ষবর্ধনের যুগে সামন্ত প্রথায় ব্যাপকতা দেখা দেয়। রাজা কর্মচারীদের বেতনের পরিবর্তে জমি দিতেন। অনেক সময় কর্মচারীরা বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভোগ করত। সামন্তরা কৃষকদের কাছ থেকে বেগার ও ফসলের ভাগ আদায় করত। বড় সামন্তরা জমি অধস্তন সামন্তদের কাছে বন্দোবস্ত করত। এভাবে মধ্যস্বত্বভোগীর উদ্ভব হয়।
হর্ষবর্ধনের যুগে জমির মালিকানা
সামন্ত প্রথার প্রভাবে জমির মালিকানাই একমাত্র সম্মানজনক কাজ বলে বিবেচিত হত। জমির মালিকানার সঙ্গে জীবিকার নিরাপত্তাও জড়িত ছিল। ক্ষত্রিয় ও রাজপুতরাই ছিল ভূম্যাধিকারী সামন্তশ্রেণী। এরা ছিল যোদ্ধা শ্রেণীর লোক। সমাজে বণিকদের প্রভাব কমে যায়। ফলে সম্পদের উৎপাদন কনে।
উপসংহার :- হর্ষবর্ধন এবং তার পরবর্তী যুগে সামন্তপ্রথার প্রভাবে নগরগুলির সংখ্যা হ্রাস পায় এবং শ্রেষ্ঠী শ্রেণীর প্রভাবও কমে যায়। গ্রাম ও জনপদগুলি কৃষিভিত্তিক বদ্ধ অর্থনীতির কবলে পড়ে।
(FAQ) হর্ষবর্ধনের যুগে সমাজ ও অর্থনীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
থানেশ্বর ও কনৌজ।
হর্ষবর্ধন।