হর্ষবর্ধনের ধর্মমত প্রসঙ্গে মহাযান বৌদ্ধধর্মে অনুরক্তি, সকল ধর্মের প্রতি ন্যাহ্য ব্যবহার, জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গঠন, বৌদ্ধ সম্মেলন, প্রয়াগের দান মেলা ও ডঃ মজুমদারের অভিমত সম্পর্কে জানবো।
হর্ষবর্ধনের ধর্মমত
ঐতিহাসিক ঘটনা | হর্ষবর্ধনের ধর্মমত |
রাজা | হর্ষবর্ধন |
রাজধানী | থানেশ্বর, কনৌজ |
বংশ | পুষ্যভূতি বংশ |
ধর্ম | বৌদ্ধ ধর্ম |
উপাধি | শিলাদিত্য |
ভূমিকা :- হর্ষবর্ধনের পূর্ব-পুরুষরা সূর্যের উপাসক ছিলেন বলে জানা যায়। হর্ষবর্ধন নিজে শৈব ছিলেন বলে তাঁর শিলালিপিতে উল্লেখ আছে। অন্তত ৬৩১ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ তার রাজত্বের প্রথম ২৫ বছর তিনি শিবের উপাসক ছিলেন।
মহাযান বৌদ্ধ ধর্মে হর্ষবর্ধনের অনুরক্তি
হিউয়েন সাঙ -এর বিবরণ থেকে মনে হয়, পরে হর্ষবর্ধন মহাযান বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী হন। এমন কি তিনি অন্যান্য ধর্মকে কিছুটা অবহেলা করতে আরম্ভ করেন, এমন ইঙ্গিত হিউয়েন সাঙ দিয়েছেন।
সকল ধর্মের প্রতি হর্ষবর্ধনের ন্যাহ্য ব্যবহার
ডঃ মজুমদার প্রমুখের মতে, হিউয়েন সাঙের এই বিবরণে অতিশয়োক্তি আছে। সম্ভবত হর্ষবর্ধন শেষের দিকে বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরাগ দেখান। কিন্তু এজন্য তিনি সূর্য বা শিবের প্রতি তাঁর অবহেলা দেখাননি। তিনি সকল ধর্মের প্রতি নায্য ব্যবহার করে সকল সম্প্রদায়ের প্রিয়ভাজন হওয়ার নীতি নেন। তিনি অশোক -এর মত একমাত্র বৌদ্ধধর্মকেই সার করেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হর্ষবর্ধন কর্তৃক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গঠন
চীন-এর পর্যটক হিউয়েন সাঙের প্রভাবে হর্ষবর্ধন মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রতি কিছুটা বেশী অনুরাগ দেখান। তিনি জীবহত্যা নিষিদ্ধ করেন। অশোকের মত জনহিতকর প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। যাত্রীদের বিশ্রামাগার, রোগীদের চিকিৎসাগার, বৌদ্ধ স্তূপ প্রভৃতি নির্মাণ করেন। গঙ্গাতীরে তিনি বৌদ্ধ শ্রমণদের জন্য বহু স্তূপ ও বিহার তৈরি করেন।
হর্ষবর্ধন কর্তৃক বৌদ্ধ সম্মেলন আহ্বান
- (১) হিউয়েন সাঙের সম্মানে তিনি কনৌজে একটি বৌদ্ধ সম্মেলন আহ্বান করেন। প্রায় ২০ জন মিত্র রাজা ও কয়েক হাজার বৌদ্ধ পণ্ডিত এই সম্মেলনে যোগ দেন। জৈন ও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরাও এই সভায় আহুত হন। একটি ১০০ ফুট উঁচু বিহার তৈরি করে তাতে একটি বিরাট বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হয়।
- (২) প্রত্যহ একটি তিন ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা বের হত। এই শোভাযাত্রার পুরোভাগে থাকতেন হর্ষবর্ধন এবং ২০ জন সামন্ত ও মিত্ররাজা ভাস্করবর্মা। এই সম্মেলনে বৌদ্ধ দর্শন নিয়ে আলোচনা হত। হিউয়েন সাঙকে এই আলোচনা সভার সভাপতি করা হয়।
প্রয়াগের দান মেলায় হর্ষবর্ধন
- (১) কনৌজের ধর্মসভার পর হর্ষবর্ধন প্রয়াগের দান মেলায় যোগ দেন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রয়াগে গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমের কাছে এই মেলা বসত। এই মেলার নাম ছিল মহামোক্ষ পরিষদ। পঞ্চ ভারত-এর প্রায় ৫০ হাজার লোক এই মেলায় আসত।
- (২) নাবালক, অসহায়, দরিদ্র ব্যক্তিরা এখানে হর্ষবর্ধনের হাত থেকে দান নিত। এছাড়া ব্রাহ্মণ, শ্রমণ ও সন্ন্যাসীরাও এই মেলায় এসে দান গ্রহণ করত। প্রথম দিন বুদ্ধের উপাসনা করা হত এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মুক্তহস্তে দান করা হত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে যথাক্রমে সূর্য ও শিবের উপাসনা করা হত। এই সঙ্গে দান চলত।
- (৩) চতুর্থ দিনে পুনরায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান দেওয়া হত। রাজকোষের পাঁচ বছরের জমা অর্থ এই দানের ফলে নিঃশেষ হয়ে গেলে, হর্ষবর্ধন নিজের গায়ের অলঙ্কার ও পোষাক দান করে দিতেন এবং ভগিনী রাজ্যশ্রীর দেওয়া একটি পোষাক পরে গৃহে ফিরতেন।
হর্ষবর্ধন সম্পর্কে ডঃ মজুমদারের অভিমত
চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙের বিবরণে বৌদ্ধধর্মের প্রতি হর্ষবর্ধনের পক্ষপাত দেখান হয়েছে। ডঃ মজুমদার প্রমুখ ঐতিহাসিক বলেন যে, এই বিবরণে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হিউয়েন সাঙ বৌদ্ধধর্মের পক্ষে অতিশয়োক্তি করেছেন।
উপসংহার :- অশোকের মত বৌদ্ধধর্মের জন্য একনিষ্ঠভাবে হর্ষবর্ধন কাজ করেন নি। তিনি ধর্মসহিষ্ণুতায় বিশ্বাস করতেন। শিব ও সূর্যকেও তার ভক্তি প্রদর্শন করতেন।
(FAQ) হর্ষবর্ধনের ধর্মমত সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।
থানেশ্বর ও কনৌজ।
হর্ষবর্ধন।
বৌদ্ধ ধর্ম।