সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে পরিচালিত বারদৌলি সত্যাগ্রহ -এর কারণ, দুর্ভিক্ষ, অসহযোগের আদর্শ, প্যাটেল ও অন্যান্যদের নেতৃত্ব, খাজনা বন্ধ, আন্দোলনের বাইরে সমর্থন, পত্রিকায় প্রচার, সত্যাগ্রহের প্রভাব ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
গুজরাটে বারদৌলি সত্যাগ্রহ প্রসঙ্গে বারদৌলি সত্যাগ্রহ কি, বারদৌলি সত্যাগ্রহের সময়কাল, বারদৌলি সত্যাগ্রহের স্থান, বারদৌলি সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব, বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন, বারদৌলি সত্যাগ্রহের কারণ, বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব, বারদৌলি সত্যাগ্রহে অসহযোগের আদর্শ, বারদৌলি সত্যাগ্রহে বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্ব, বারদৌলি সত্যাগ্রহে গান্ধীজির ভূমিকা, বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রভাব ও গুরুত্ব।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে বারদৌলি সত্যাগ্রহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | বারদৌলি সত্যাগ্রহ |
সময়কাল | ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | গুজরাট রাজ্যের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুক |
প্রধান নেতা | বল্লভভাই প্যাটেল |
ফলাফল | বল্লভভাই প্যাটেলের সাফল্য |
ভূমিকা :- গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক শক্তিশালী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
বারদৌলি তালুকের কৃষকদের অবস্থা
গুজরাটে বারদৌলি তালুকের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক ছিল নিম্নবর্ণের কালিপরাজ সম্প্রদায়ভুক্ত। সীমাহীন দারিদ্র্য, সামাজিক অবজ্ঞা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
বারদৌলি সত্যাগ্রহের কারণ
এই সত্যাগ্রহের পিছনে কারন গুলি ছিল নিম্নরূপ –
- (১) ১৯২৬ সালে ভূমি কর ৩০% বৃদ্ধি করা হয়।
- (২) পরবর্তীকালে ভূমি কর আরও ২২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলে কৃষকদের পক্ষে তা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
- (৩) এই সময় তুলোর দাম যথেষ্ট কমে যায় যা কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় করে তোলে।
- (৪) কৃষকদের ওপর নানা নির্যাতন ও শোষন চালানো হতে থাকে।
- (৫) ১৯২৫ সালে ভয়ংকর বন্যার ফলে এই অঞ্চলের কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
বারদৌলি তালুকে দুর্ভিক্ষ
1925 খ্রিস্টাব্দে বারদৌলিতে ভয়ানক বন্যা হয়। ফলে কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়ায় সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।
বারদৌলি সত্যাগ্রহে অসহযোগের আদর্শ
কল্যাণজি মেহতা ও কুনবেরজি মেহতা নামে দুই ভাই ও দয়ালজি দেশাই নামে একজন স্থানীয় নেতা কৃষকদের মধ্যে অসহযোগের (অসহযোগ আন্দোলন) আদর্শ ছড়িয়ে দেন ও স্থানীয় স্কুলছাত্রদের দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে তোলেন ।
বারদৌলি সত্যাগ্রহে প্যাটেলের নেতৃত্ব
গুজরাটে বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কৃষকরা গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি এখানে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। বারদৌলির কৃষক-রমণীরা তাঁকে ‘সর্দার’ উপাধি দেন।
বারদৌলি সত্যাগ্রহে অন্যান্য নেতৃগণ
আন্দোলনে নরহরি পারিখ, রবিশংকর ব্যাস, মোহনলাল পান্ডে প্রমুখ সর্দার প্যাটেলকে সহযোগিতা করেন। মিঠুবেন প্যাটেল, মণিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা, ভক্তি বাই প্রমুখ নারী এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
বারদৌলি সত্যাগ্রহে মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকা
গান্ধিজিও বারদৌলিতে এসে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
বারদৌলি তালুকের খাজনা বন্ধ
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলিতে এসে কৃষকদের খাজনা বন্ধ করার শপথ গ্রহণের নির্দেশ দেন। হিন্দু কৃষকরা ‘গীতা’ এবং মুসলিম কৃষকরা ‘কোরান’ ছুঁয়ে শপথ নেয় যে, সরকার প্রচলিত হারে খাজনা নিতে রাজি না হলে খাজনা দেওয়া বন্ধ করা হবে।
বারদৌলি তালুকের ১৩টি অঞ্চল
বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলি তালুকের ১৩টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চলে অভিজ্ঞ নেতার হাতে আন্দোলন পরিচালনার ভার দেন।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে বাইরের সমর্থন
বারদৌলির কৃষকদের সমর্থনে বােম্বাই প্রদেশের বিভিন্ন অঞলে কৃষক আন্দোলনের হুমিক দেওয়া হয় এবং সর্বস্তরের মানুষ এই সত্যাগ্রহে শামিল হয়।
বারদৌলি সত্যাগ্রহ সম্পর্কে পত্রিকায় প্রচার
আঞ্চলিক ও সর্বভারতীয় পত্র-পত্রিকা গুলিতে বারদৌলি সত্যাগ্রহ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি শুরু হয়। গান্ধীজী নিজে ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ ও ‘নবজীবন’ পত্রিকায় এই আন্দোলন নিয়ে প্রচার চালান।
বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রভাব
আন্দোলনের সমর্থনে বোম্বাই বিধানসভার সদস্য কে এম মুনশি ও লালজি নারাণজি পদত্যাগ করেন। গান্ধিজিও বারদৌলিতে এসে আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কথা ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত সরকার নিযুক্ত এক কমিটি ৬.০৩ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি অনুমোদন করলে কৃষকরা তা দিতে রাজি হয়।
বারদৌলি সত্যাগ্রহের গুরুত্ব
বারদৌলি সত্যাগ্রহ ভারত -এর ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
(১) আঞ্চলিক আন্দোলন থেকে সর্বভারতীয় পরিচিতি লাভ
বারদৌলি সত্যাগ্রহ নিয়ে আঞ্চলিক এবং সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে ব্যাপক প্রচারের ফলে এই আন্দোলন সর্বভারতীয় পরিচিতি এবং মর্যাদা লাভ করেছিল।
(২) বারদৌলি সত্যাগ্রহের মাধ্যমে কংগ্রেসের পুনরুত্থান
অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর এই আন্দোলন কে ভর করে জাতীয় কংগ্রেস পুনরায় স্বমহিমায় নিজের শক্তি এবং মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠা করেছিল। আইন অমান্য আন্দোলনের ভিত্তিভূমিও তৈরি করেছিল বারদৌলি সত্যাগ্রহ।
(৩) বারদৌলি সত্যাগ্রহের মাধ্যমে সর্দার প্যাটেলের উত্থান
বারদৌলি সত্যাগ্রহের মাধ্যমে বল্লভভাই প্যাটেল শুধুমাত্র ‘সর্দার’ উপাধি পাননি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একজন অতীব গুরুত্বপূর্ণ নেতার মর্যাদা লাভ করেন।
(৪) বারদৌলি সত্যাগ্রহের মাধ্যমে গান্ধীজীর পুনরুত্থান
গান্ধীজীর কাছে বারদৌলি সত্যাগ্রহ কোন স্থানীয় সত্যাগ্রহ’ ছিল না বরং জুডিথ ব্রাউনের ভাষায় “a crucial demonstration of the road to Swaraj”। অসহযোগ সত্যাগ্রহের ব্যর্থতা স্মৃতিকে ভুলিয়ে গান্ধীজীকে পুনরায় স্বমহিমায় আন্দোলনের মূল স্রোতে এনেছিল এই বারদৌলি সত্যাগ্রহ।
উপসংহার :- বারদৌলির কৃষকদের শক্তিশালী আন্দোলনে শেষপর্যন্ত ইংরেজ সরকার হার মানতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার শেষপর্যন্ত ব্লুমফিল্ড-ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি’ গঠন করে বর্ধিত রাজস্বের হার কমাতে বাধ্য হয়।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “বারদৌলি সত্যাগ্রহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) বারদৌলি সত্যাগ্রহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক শক্তিশালী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
বারদৌলির কৃষক রমণীরা।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে।
গুজরাট রাজ্যের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি
- কেন্দ্রীয় চোল শাসন
- সাম্রাজ্য ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
- অর্থনীতিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব
- রোমের দাসদের মুক্তির উপায়
- রোমান সাম্রাজ্য ও উপমহাদেশীয় সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের প্রভাব
- জাস্টিনিয়ান পরবর্তী রাজবংশ
- রোমান সমাজে নারীর অবস্থান
- বাইজানটাইন সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা দিক
- রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতীয় উপমহাদেশ