ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল -এর নিয়োগ কর্তা, বাসভবন, যোগ্যতা, বেতন ও ভাতা, শাপন সংক্রান্ত ক্ষমতা, আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা, অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা, বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা, স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ও পদমর্যাদা সম্পর্কে জানবো।
ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের নিয়োগকর্তা, রাজ্যপাল পদপ্রার্থীর যোগ্যতা, রাজ্যপালের কার্যকালের মেয়াদ, রাজ্যপালের বেতন ভাতা, রাজ্যপালের আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা, রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা, রাজ্যপালের ক্ষমতা, রাজ্যপালের কার্যাবলি ও পদমর্যাদা।
ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল
সম্বোধনরীতি | মহামান্য |
বাসভবন | রাজভবন |
নিয়োগকর্তা | ভারতের রাষ্ট্রপতি |
মেয়াদকাল | ৫ বছর |
ভূমিকা :- ভারত -এর অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল হল রাজ্যের প্রধান। সংবিধান গত ভাবে তিনি রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রধানের সকল ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। অবশ্য তিনি রাজ্যের নাম সর্বস্ব প্রধান।
রাজ্যপালের নিয়োগকর্তা
রাজ্যপাল এবং উপরাজ্যপালবৃন্দকে ভারতের রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগ দান করেন।
রাজ্যপালকে শপথ বাক্য পাঠ
ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্ট -এর প্রধান বিচারপতি শপথ বাক্য পাঠ করান
রাজ্যপালের বাসভবন
রাজ্যপালের সরকারি বাসভবনের নাম রাজভবন।
নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান রাজ্যপাল
ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মত সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। উপরাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান।
রাজ্যপালের যোগ্যতা
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কোনাে নাগরিককে রাজ্যপাল হতে গেলে তাকে অবশ্যই—
- (১) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
- (২) কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে।
- (৩) কেন্দ্র বা রাজ্য আইনসভার সদস্য থাকতে পারবেন না।
- (৪) কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনাে সরকারি লাভজনক পদে বহাল থাকতে পারবেন না।
রাজ্যপালের নিয়োগ প্রক্রিয়া
ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে নিযুক্ত করেন। এই নিয়ােগ সংক্রান্ত ব্যাপারে রাজ্যের কোনােরকম ভূমিকা বা হস্তক্ষেপ থাকে না। তবুও কোনাে রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়ােগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতামত গ্রহণ করে থাকেন
রাজ্যপালের বেতন ও ভাতা
বর্তমানে (২০১৮ খ্রিস্টাব্দ ১ এপ্রিল) রাজ্যপালের বেতন ৩৫০০০০ টাকা এবং তার সঙ্গে তিনি অন্যান্য সুযােগসুবিধাও ভােগ করে থাকেন।
রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল নিম্নলিখিত ক্ষমতা ও কার্যাবলী পালন করে থাকেন।
(১) রাজ্যপালের শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা
সংবিধানের ১৫৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা তত্ত্বগতভারে রাজ্যপালের হাতে রয়েছে। যেমন –
(ক) রাজ্যপালের নিয়মকানুন প্রণয়ন
রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।
(খ) অচলাবস্থা
রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দিলে রাজ্যপাল ৩ ও ৬ নং ধারা জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।
(গ) রাজ্যপালের নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা
রাজ্যপাল ক্ষমতাবলে রাজ্যের বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা অথবা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে অন্যান্য মন্ত্রীদের, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদেরও তিনি নিয়োগ করে থাকেন।
(২) রাজ্যপালের আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা
অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল বেশ কিছু আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা ভোগ করেন। যেমন –
(ক) রাজ্যপালের দ্বারা রাজ্যের আইনসভার অধিবেশন আহব্বান
রাজ্যের আইনসভার অধিবেশন আহব্বান এবং স্থগিত করার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে। তাছাড়াও তিনি চাইলে, রাজ্যের বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন।
(খ) রাজ্যপালের বিল পাস
রাজ্যের আইনসভায় গৃহীত কোনো বিল রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না। কিছু বিশেষ বিলের ক্ষেত্রে (অর্থবিল ছাড়া) তিনি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন।
(গ) রাজ্যপালের অর্ডিন্যান্স জারি
রাজ্য আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন জরুরী প্রয়োজনে রাজ্যপালের অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা রয়েছে।
(৩) রাজ্যপালের অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা
রাজ্যপালের অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের বিধানসভায় বাজেট বা অর্থবিল প্রেস করার আগে অর্থমন্ত্রীকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হয়। কোনো আকস্মিক দূর্যোগে রাজ্যের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যপালের হাতে আকস্মিক ব্যয় তহবিলের দায়িত্ব থাকে।
(৪) রাজ্যপালের বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা
রাজ্য হাইকোর্টের বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। রাজ্যের দেওয়ানি আদালতের বিচারপতি, অতিরিক্ত জেলা জর্জ প্রমুখ রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত হন। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত কোন অপরাধির দন্ড হ্রাস, স্থগিত এমনকি ক্ষমা প্রদানের ক্ষমতাও রাজ্যপালের রয়েছে।
(৫) রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা
ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩ (১) নং ধারায় অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার উল্লেখ আছে। রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার পরিধি ব্যাপক। যেমন –
(ক) রাজ্যপালের দ্বারা মুখ্যমন্ত্রী নিয়ােগ
রাজ্যপাল নিজের বিবেচনা অনুযায়ী তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ােগ করতে পারেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সি রাজাগোপালাচারী নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যপাল ধরমবীর কর্তৃক পশ্চিমবঙ্গ -এ ড. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী রূপে নিয়ােগ হল রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগের নিদর্শন।
(খ) রাজ্যপালের মুখ্যমন্ত্রীদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা
রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করে মুখ্যমন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে পারেন। যেমন অতীতে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল রামলাল মুখ্যমন্ত্রী এন টি রামা রাও কে এবং সিকিমের রাজ্যপাল তলােয়ার খান মুখ্যমন্ত্রী নরবাহাদুরকে বরখাস্ত করেছিলেন।
(গ) রাষ্ট্রপতির কাছে রাজ্যপালের পাক্ষিক প্রতিবেদন পেশ
রাজ্য প্রশাসন সম্পর্কে রাজ্যপাল যে পাক্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন তা তিনি নিজের বিবেচনা অনুসারে প্রেরণ করে থাকেন।
(ঘ) রাষ্ট্রপতির কাছে রাজ্যপালের বিল প্রেরণ
রাজ্য আইনসভায় গৃহীত কোনাে বিলকে রাষ্ট্রপতির অনুমােদনের জন্য রাজ্যপাল সংরক্ষণ করতে পারেন।
(ঙ) রাজ্যপালের দ্বারা রাজ্যে জরুরি অবস্থার সুপারিশ
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভিন্ন মতাদর্শের কারণে রাজ্যপাল রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারির সুপারিশ করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে কেরলে এই জরুরি অবস্থা জারির সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীকালে বহু রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘােষণার সুপারিশ করা হয়েছে।
(চ) রাজ্যপালের বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা
রাজ্যপাল নিজের বিবেচনা অনুসারে তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করে রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত সরকারের আইনসভা তৎকালীন রাজ্যপাল ভেঙে দিয়েছিলেন।
(ছ) রাজ্য বিলে রাজ্যপালের ভেটো ক্ষমতা প্রয়ােগ
রাজ্যপাল নিজে ইচ্ছা করলে যে-কোনাে রাজ্য বিলে ভেটো ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারেন বা পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্য বিলকে ফেরত পাঠাতে পারেন।
(জ) রাজ্যপালের দ্বারা উপাচার্য নিয়ােগ
অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তিনি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ােগ করে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল এ পি শর্মা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় -এর উপাচার্য নিয়ােগে তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করেছিলেন।
(ঝ) বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণ দান
রাজ্যপাল স্বেচ্ছায় বিধানসভায় ভাষণ দেন। তিনি ইচ্ছা করলে পূর্ণাঙ্গ ভাষণ নাও দিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধরমবীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ পাঠ করেননি।
উপসংহার :- রাজ্যপালের একটি দ্বৈত্য ভূমিকা রয়েছে। একদিকে তিনি রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান আবার, অন্যদিকে তিনি কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অধিকারী।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “রাজ্যপাল” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) রাজ্যপাল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভারতের রাষ্ট্রপতি।
ভারতের নাগরিক ও কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স হতে হবে।
সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
রাষ্ট্রপতি।
রাজ্যপাল।
রাজ্যপাল।
রাজ্যপাল।
ভারতের রাষ্ট্রপতি।