দক্ষিণ এশিয় সহযোগী সংস্থা বা সার্ক (SAARC) প্রসঙ্গে এর প্রতিষ্ঠা, সদস্য, সদস্য গ্রহণের শর্ত, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সম্মেলন ও কর্মসূচি, সাফল্য ও সমস্যা সম্পর্কে জানবো।
সার্ক প্রসঙ্গে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা, সার্কের প্রতিষ্ঠা, সার্কের সদস্য রাষ্ট্র, সার্কের লক্ষ্য, সার্কের উদ্দেশ্য, সার্কের কর্মসূচি, সার্কের সম্মেলন, সার্কের সাফল্য ও সার্কের সমস্যা সম্পর্কে জানব।
সার্ক (SAARC)
ঐতিহাসিক ঘটনা | সার্ক (SAARC) |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৮৫ খ্রি |
উদ্যোগ | জিয়াউর রহমান |
উদ্দেশ্য | আঞ্চলিক সহযোগিতা |
সদর দপ্তর | কাঠমান্ডু |
সদস্য | ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল |
প্রথম সম্মেলন | ঢাকা |
ভূমিকা :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর পরবর্তীকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলে একদিকে যেমন ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটতে থাকে অন্যদিকে তেমনি বিভিন্ন দেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করা।
আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার আগ্ৰহ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এরূপ সহযোগিতা-সংস্থা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখা যায়।
সার্ক (SAARC)
আঞ্চলিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এইসব সংস্থার মধ্যে অন্যতম হল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক (South Asian Association for Regional Cooperation বা SAARC)।
সার্কের প্রতিষ্ঠা
আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ –
(১) জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ
১৯৭০ দশকের শেষদিক পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে কোনো অঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ দেখা যায় নি। এই বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১ খ্রি.)। তিনি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি অঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।
(২) একাধিক সম্মেলন
জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীগণ পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বো (১৯৮১ খ্রি.), কাঠমাণ্ডু (১৯৮১ খ্রি.), ইসলামাবাদ (১৯৮২ খ্রি.), ঢাকা (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন।
(৩) সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত
অবশেষে এসব দেশের বিদেশমন্ত্রীরা ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের দিল্লি সম্মেলনে সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
(৪) ঢাকায় সার্কের প্রতিষ্ঠা
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে (৭-৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
সার্কের সদস্য
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সার্ক প্রতিষ্ঠায় মোট ৭টি দেশ অংশ নেয়। এই দেশগুলি হল – ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ। সার্কের সদস্যসংখ্যা মাত্র সাত হলেও বিশ্বের ১/৫ অংশ জনসংখ্যাই এর অন্তর্ভুক্ত।
সার্কের সদস্য পদ গ্রহণের শর্ত
নির্দিষ্ট শর্ত মেনে সার্কে নতুন সদস্য গ্রহণের ব্যবস্থাও রয়েছে। এই শর্তগুলির মধ্যে অন্যতম হল – সার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যগুলিকে নতুন সদস্য গ্রহণে সর্বসম্মত সম্মতি দিতে হবে, সদস্যপদ গ্রহণে ইচ্ছুক রাষ্ট্রটি দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত হতে হবে, সদস্যপদ গ্রহণে ইচ্ছুক রাষ্ট্রটিকে সার্ক-এর সনদ মেনে চলার অঙ্গীকার করতে হবে ইত্যাদি।
সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি হল –
(১) উন্নয়ন
সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো।
(২) জনকল্যাণ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জনগণের কল্যাণসাধন এবং তাদের জীবনযাত্রার মনোন্নয়ন ঘটানো।
(৩) বোঝাপড়া
সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।
(৪) আত্মনির্ভরতা
সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীনতা রক্ষা এবং যৌথ আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা।
(৫) অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা
সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা এবং কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
(৬) নিরাপত্তা
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিরোধ করা।
(৭) আর্থ-সামাজিক আদানপ্রদান
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদানপ্রদান ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
(৮) সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান
সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটানো।
(৯) শান্তিপূর্ণ সহবস্থান
সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান বজায় রাখা।
সার্কের সম্মেলন
সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির রাষ্ট্রপ্রধানরা সার্কের বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। এরপর থেকে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সার্কের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বছরে অনুষ্ঠিত সার্কের শীর্ষ সম্মেলন এবং সম্মেলনের কর্মসূচি সম্পর্কে নীচে উল্লেখ করা হল –
সার্কের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সার্কের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) সার্কের কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি সচিবালয় গঠন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ,
- (২) সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি ঘোষণা।
সার্কের দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে সার্কের দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) সার্কের টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ,
- (২) উন্নয়ন কর্মসূচিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ,
- (৩) সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মাদক চালান রোধ-সহ কয়েকটি বিষয়ে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ।
- (৪) সদস্য রাষ্ট্রগুলির অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদ রোধে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
সার্কের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরে সার্কের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) পূর্বোক্ত সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলির বাস্তবায়ন,
- (২) সার্কের সদস্যদের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ,
- (৩) শান্তি, সুস্থিতি, জনগণের সহযোগিতা, বাণিজ্যিক আদানপ্রদান প্রভৃতি প্রসারের উদ্যোগ।
- (৪) কাঠমাণ্ডুতে সার্কের স্থায়ী সচিবালয় (SAARCNET) প্রতিষ্ঠা।
সার্কের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ শহরে সার্কের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) মাদক পাচার ও মাদক ব্যাবসা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ,
- (২) সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের আহ্বান,
- (৩) প্রাথমিক স্বাস্থ্য, খাদ্যের সংস্থান, আবাসন, শিশুকল্যাণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ।
সার্কের পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে মালদ্বীপের মালে শহরে সার্কের পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) মাদক দ্রব্যের প্রসার রোধের উদ্যোগ,
- (২) ১৯৯১ সালকে আবাসন বর্ষ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত,
- (৩) ইরাক ও কুয়েত থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত।
সার্কের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে সার্কের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কারিগরি ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণে উদ্যোগ,
- (২) বাণিজ্য শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ,
- (৩) মাদক ব্যাবসা বন্ধ এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণ,
- (৪) আঞ্চলিক বিরোধের মীমাংসার বিষয়ে আলোচনা।
সার্কের সপ্তম শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের সপ্তম শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সার্কের সপ্তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক চুক্তি (SAPTA = South Asian Preferential Trade Arrangement) সম্পাদিত হয়,
- (২) বাণিজ্যিক উদারীকরণের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়,
- (৩) দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়,
- (৪) সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ১৭৫টি বিষয়ে বাণিজ্যিক শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়।
সার্কের অষ্টম শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের অষ্টম শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে সার্কের অষ্টম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) পারস্পরিক বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ,
- (২) ১৯৯৫ সালকে দারিদ্র্য দূরীকরণ বর্ষরূপে পালন,
- (৩) সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, নিরস্ত্রীকরণ, মাদক দ্রব্যের ব্যাবসা বন্ধ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গঠন প্রভৃতিকে উৎসাহ প্রদান ।
সার্কের নবম শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের নবম শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মালদ্বীপের মালে শহরে সার্কের নবম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) শুল্ক ব্যবস্থায় জটিলতা দূর করার কথা বলা হয়,
- (২) আঞ্চলিক বিনিয়োগ চুক্তি, যৌথ অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সার্কের দশম শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের দশম শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে সার্কের দশম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) সার্কের কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্ব আরোপ করা হয়,
- (২) সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসার প্রভৃতি বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলা হয়।
সার্কের একাদশ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের একাদশ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
২০০২ সালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরে সার্কের একাদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়গুলি পরিহারের কথা বলা হয়,
- (২) সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির প্রতি নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়,
- (৩) সন্ত্রাসবাদের প্রসারে উদবেগ প্রকাশ করা হয়,
- (৪) দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়।
সার্কের দ্বাদশ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের দ্বাদশ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
২০০৪ সালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ শহরে সার্কের দ্বাদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) ইউরোপীয় সংঘের (EU) অনুকরণে দক্ষিণ এশীয় সংঘ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়,
- (২) সন্ত্রাসবাদ নিরোধক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়,
- (৩) সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে দারিদ্র্য দূরীকরণে ভারত দক্ষিণ এশীয় উন্নয়ন তহবিলে ১০ কোটি ডলার অনুদান প্রদানের ঘোষণা করে,
- (৪) ২০১৫ সালের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল নির্মাণের বিষয়ে আশা প্রকাশ করা হয়।
সার্কের ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
২০০৫ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সার্কের ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) আফগানিস্তানকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়,
- (২) ‘সাপটা’ (SAPTA) দ্রুত চালু করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়,
- (৩) সার্কে চিন ও জাপান-এর সদস্যপদ গ্রহণের আগ্রহকে স্বাগত জানানো হয়।
সার্কের চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
২০০৭ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লি শহরে সার্কের চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) আফগানিস্তান সদস্যপদ গ্রহণ করে,
- (২) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়,
- (৩) উচ্চশিক্ষার জন্য একটি দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কথা বলা হয়।
সার্কের পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে সার্কের পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক আইনগত কাঠামো গঠনের সিদ্ধান্ত হয়,
- (২) উপকূল অঞ্চলের সুরক্ষা, তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি মোকাবিলার কথা বলা হয়,
- (৩) দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে সার্কের দেশগুলির জাতীয় গ্রিডগুলি সংযুক্তিকরণের কথা বলা হয়,
- (৪) সদস্য দেশগুলির মধ্যে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কথা বলা হয় ।
সার্কের ষোড়শ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ষোড়শ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
২০১০ সালে ভুটানের রাজধানী থিম্পু শহরে সার্কের ষোড়শ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) সার্ক প্রতিষ্ঠার হীরকজয়ন্তী বর্ষ পালিত হয়,
- (২) ‘সবুজ ও সুখী দক্ষিণ এশিয়া’ গঠনের শপথ নেওয়া হয়,
- (৩) পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে সদস্য দেশগুলি চুক্তি করে,
- (৪) প্রতি ৫ বছরে অন্তত ১০ মিলিয়ন বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সার্কের সপ্তদশ শীর্ষ সম্মেলন
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের সপ্তদশ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) স্থান
২০১১ সালে মালদ্বীপের আদ্দু সিটি শহরে সার্কের সপ্তদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
(খ) কর্মসূচি
- (১) প্রাকৃতিক দুর্যোগের দ্রুত মোকাবিলা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়,
- (২) বীজ ব্যাংক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সার্কের সাফল্য
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সার্কের প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। সদস্য রাষ্ট্রগুলির নানাবিধ সমস্যার সমাধান এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্যের ক্ষেত্রে সার্ক যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এখনো পর্যন্ত সার্কের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দিকগুলি হল –
(১) সহযোগিতা বৃদ্ধি
সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক আদানপ্রদান ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
(২) সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সাফল্য
সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও মোটামুটি সন্তোষজনক সাফল্য এসেছে।
(৩) বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উদ্যোগ
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য সার্ক ভুক্ত দেশগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
(৪) স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা
নেপালের কাঠমান্ডুতে সার্কের স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে সার্কের কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
(৫) খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
(৬) শিশুকন্যাদের কল্যাণ
শিশুকন্যাদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে সার্ক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সার্কের সমস্যা
বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সার্কের প্রতিষ্ঠা হলেও বহু ক্ষেত্রেই সার্ক তার লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতার এই ক্ষেত্রগুলি হল –
(১) রাজনৈতিক অস্থিরতা
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা সার্কের সাফল্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। ভারত-পাক বিরোধ এ বিষয়ে একটি বড়ো বাধা। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কার্গিলে পাক সেনাদলের অনুপ্রবেশের ঘটনা দু-দেশের মধ্যে সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি ঘটিয়েছে। পারস্পরিক অবিশ্বাস, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, সামরিক প্রতিযোগিতা, সীমান্ত সংঘর্ষ প্রভৃতি ঘটনার প্রভাব সার্কের অভ্যন্তরে যথেষ্ট বাধার সৃষ্টি করেছে।
(২) তামিল জঙ্গি সমস্যা
শ্রীলঙ্কার তামিল জঙ্গিদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ঘটনায় শ্রীলঙ্কা সন্দেহ করে যে, জঙ্গি কার্যকলাপের প্রতি ভারতের মদত রয়েছে। এই ঘটনায় ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
(৩) ভারসাম্যহীনতা
ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শক্তি ও আর্থিক ব্যবধান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অসম বণ্টন সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করেছে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলি ভারতের তুলনায় খুবই অনগ্রসর হওয়ায় নানাভাবে সার্কের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
(৪) মতভেদ
সার্কের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ সার্কের সমস্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি করছে।
(৫) সহযোগিতার অভাব
সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অনেক সময় সহযোগিতার অভাবের ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং দেশগুলির উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
উপসংহার :- ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধি বলেছিলেন যে, সার্ক দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির আত্মনির্ভরতার সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সাক্ষরতার প্রসার, অপুষ্টি ও রোগ দূরীকরণের সঙ্গে যুক্ত।
(FAQ) দক্ষিণ এশিয় সহযোগী সংস্থা বা সার্ক (SAARC) সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
South Asian Association for Regional Cooperation
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরে।
বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।