ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ

ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক, আবু বকর, নাসির উদ্দিন মহম্মদ, আলাউদ্দিন সিকান্দার শাহ, নাসিরউদ্দিন মাহমুদ, একই সময়ে দুই নরপতির শাসন, বদায়ুনির মন্তব্য, যোগ্যতা ও ক্ষমতাহীন সুলতান সম্পর্কে জানবো।

ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ

বিষয়ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ
সময়কাল১৩৮৮-১৪১৪ খ্রি:
বংশতুঘলক বংশ
প্রতিষ্ঠাতাগিয়াসউদ্দিন তুঘলক
শেষ সুলতাননাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ
ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ

ভূমিকা :- ফিরোজ শাহ তুঘলক-এর মৃত্যুর পর তুঘলক বংশের শাসন শিথিল হয়ে পড়ে। এই সময় দিল্লি সুলতানি তার পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে একটি দুর্বল সাম্রাজ্য-এ পরিণত হয়।

ফিরোজ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক

১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ফিরোজ তুঘলকের মৃত্যুর পর তাঁরই মনোনীত প্রার্থী পৌত্র দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ফতেখানের পুত্র। তিনি ছিলেন অনভিজ্ঞ ও আমোদ-প্রমোদপ্রিয় এক উদভ্রান্ত যুবক।

ফিরোজ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারী আবু বকর

তাঁর ব্যবহারে রুষ্ট হয়ে অভিজাতগণ তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করে জাফর খানের পুত্র আবু বকরকে ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির সিংহাসনে বসান।

মহম্মদের নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা

ফিরোজের এক পুত্র মহম্মদ যিনি ইতিপূর্বে সুলতানের ‘ডেপুটি’ হিসাবে কাজ করেছিলেন, তিনি কিছু শক্তিশালী সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের সহযোগিতায় ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল সামানায় নিজেকে সুলতান বলে ঘোষণা করেন।

ফিরোজ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারী নাসিরউদ্দিন মহম্মদ

  • (১) এর ফলে শুরু হয়ে যায় দুই নরপতির মধ্যে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং শেষপর্যন্ত ১৩৯০ খ্রিস্টাব্দে আবু বকরকে জোর করে সিংহাসনচ্যুত করা হয়। কিন্তু নাসিরউদ্দিন মহম্মদও বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেন নি।
  • (২) এই গৃহবিবাদ ও রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে এবং ১৩৯৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছরের অগৌরবময় শাসনের অবসান ঘটে।

ফিরোজ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারী আলাউদ্দিন সিকান্দার শাহ

এরপর তাঁর পুত্র হুমায়ুন আলাউদ্দিন সিকান্দার শাহ উপাধি নিয়ে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু তিনিও ১৩৯৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে দেহত্যাগ করায় তাঁর মাস তিনেকের রাজত্বকালের অবসান ঘটে।

ফিরোজ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ

হুমায়ুনের পর মহম্মদের কনিষ্ঠ পুত্র নাসিরউদ্দিন মাহমুদ সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই সুলতানই তুঘলক বংশের শেষ সুলতান। তাঁর সময়েই তুঘলক বংশের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল।

তুঘলক বংশে একই সময়ে দুই নরপতির শাসন

তার সার্বভৌমত্বকে ফিরোজের জ্যেষ্ঠ পুত্র ফতে খান-এর পুত্র নুসরত শাহ ‘চ্যালেঞ্জ’ করেন। প্রকৃতপক্ষে এই সময় দুজন নরপতি একই সময়ে দেশ শাসন করেছিলেন – একজন দিল্লিতে এবং অপরজন ফিরোজাবাদে। তাঁরা এই সময় এমন গৃহযুদ্ধ শুরু করেন যে, তাঁদের অস্তিত্ব ছিল না বললেই হয়।

তুঘলক বংশের অবস্থা সম্পর্কে বদাউনির মন্তব্য

তাই ঐতিহাসিক বদাউনি তাঁদের এই সময়ের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “like the Kings of the game of chess.”

ফিরোজ তুঘলকএর পরবর্তী যোগ্যতা ও ক্ষমতাহীন সুলতান

সুলতান ফিরোজ তুঘলকের পরবর্তী সুলতানগণের না ছিল যোগ্যতা ও না ছিল ক্ষমতা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকজন সুলতান আসেন আর প্রস্থান করেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা ছিলেন অপদার্থ।

ফিরোজ তুঘলকের উত্তরাধিকারীরা অভিজাতদের ক্রীড়নক

উত্তরাধিকাররা অভিজাতদের হাতের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁদের দমন করে রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার কোনো ক্ষমতা তাঁদের ছিল না।

তুঘলক বংশে গৃহযুদ্ধ

দিল্লির তুঘলক বংশীয় সুলতানদের রাজত্বকালে প্রকৃতপক্ষে এক গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের মান-মর্যাদা চরমভাবে বিনষ্ট হয়।

শতধা বিচ্ছিন্ন সুলতানি সাম্রাজ্য

কুতুবউদ্দিন আইবক থেকে মহম্মদ বিন তুঘলক পর্যন্ত যে বিরাট সুগঠিত সুলতানি সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল, তা তুঘলক বংশের শেষের দিকের উত্তরাধিকারীদের হাতে শতধা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দুর্বল তুঘলক আমলে স্বাধীন রাজ্যের উত্থান

  • (১) মালিক সারভার জৌনপুরে নিজেকে পূর্বাঞ্চলের স্বাধীন সুলতান বলে ঘোষণা করেন। জাফর খান-এর অধীন গুজরাট স্বাধীনতা ঘোষণা করে। মালব ও খান্দেশও স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
  • (২) উত্তর-পূর্ব পাঞ্জাবে খোক্কররা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। যদিও এই অঞ্চল কখনই দিল্লির আধিপত্য স্বীকার করে নি। রাজস্থানও দিল্লির অধীনতা অস্বীকার করে। গোয়ালিয়র স্বাধীন হয়ে যায়।
  • (৩) দোয়াব অঞ্চলের জনগণ এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায়। বিয়ানা একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কাল্পীতেও স্বাধীনভাবে শাসন শুরু হয়।

ফিরোজ তুঘলকের পরবর্তীতে সাম্রাজ্যের গৌরব হানি

তুঘলক বংশের পরবর্তী সুলতানদের রাজত্বকালে দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এঁদের শাসনকালেই দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের গৌরব রবি অস্তাচলের দিকে ঢলে পড়ে।

উপসংহার :- দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের যেটুকু অস্তিত্ব ছিল তা ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙ্গের ভারত আক্রমণ-এর মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটে।

(FAQ) ফিরোজ শাহ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ফিরোজ শাহ তুঘলকের মৃত্যু কখন হয়?

১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দে।

২. ফিরোজ শাহ তুঘলকের পর কে সিংহাসনে বসেন?

দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।

৩. অভিজাতদের সমর্থনে তুঘলক বংশের সিংহাসনে বসেন কে?

আবুবকর।

৪. তুঘলক বংশের শেষ সুলতান কে ছিলেন?

নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ।

Leave a Comment