নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ প্রসঙ্গে সিংহাসনে আরোহন, শান্তি-সমৃদ্ধি বজায়, বঙ্গদেশ আক্রমণ, উড়িষ্যার রাজার কাছে পরাজয়, খুলনা, বাগেরহাটে মুসলিম রাজত্ব, রাজধানী, প্রজাদের সুখী জীবন, চীনের সাথে যোগাযোগ ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ
সুলতান | নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ |
বংশ | ইলিয়াস শাহী বংশ |
পূর্বসূরি | শামসউদ্দিন আহম্মদ শাহ |
উত্তরসূরি | রুকনউদ্দিন বারবক শাহ |
ভূমিকা :- ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দে শামসউদ্দিন আহম্মদ শাহ শাদী খান ও নাসির খান কর্তৃক নিহত হলে এঁরা দুজনেই সিংহাসন দখলের লড়াইয়ে প্রাণ দেন। তখন অভিজাতগণ শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহের পৌত্র নাসিরউদ্দিনকে সিংহাসনে বসান।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর সিংহাসনে আরোহণ
১৪৩৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দে নাসিরউদ্দিন সিংহাসনে আরোহণ করে মাহমুদ শাহ উপাধি গ্রহণ করেন। রিয়াজ’ থেকে এই তথ্য জানা যায়।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর আমলে শান্তি, সমৃদ্ধি বজায়
সুলতান নাসিরউদ্দিনের রাজত্বকালের বহুসংখ্যক পাওয়া লিপিগুলির তথ্য থেকে জানা যায় যে, তাঁর রাজত্বকালে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল জৌনপুরের শার্কি শাসকগণ তখন লোদিদের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সংগ্রামে লিপ্ত থাকায়। বঙ্গদেশ নাসিরউদ্দিনের রাজত্বকালে শার্কিদের আক্রমণ থেকে মুক্ত ছিল। নাসিরউদ্দিনের রাজত্বকাল মোটামুটি শান্তিতেই কেটেছিল।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর সময় বঙ্গদেশ আক্রমণ
উড়িষ্যার রাজা কপিলেন্দ্রদেবের এক তাম্রশাসনের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, তিনি বঙ্গদেশ আক্রমণ করেছিলেন। মিথিলার রাজার সঙ্গেও তাঁর সংঘর্ষ হয়েছিল, তাও ভাগলপুর ও মুঙ্গের শিলালিপি থেকে জানা যায়।
উড়িষ্যার রাজার কাছে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর পরাজয়
উড়িষ্যার একটি লিপি থেকে জানা যায় যে, নাসিরউদ্দিন একবার উড়িষ্যার রাজার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর আমলে খুলনা, বাগেরহাটে মুসলিম রাজত্ব
খুলনা ও বাগেরহাটের শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, খান জাহান নামে নাসিরউদ্দিনের এক সেনাপতি এই অঞ্চলে প্রথম মুসলমান রাজত্বের সূচনা করেন।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর রাজধানী
তাঁর রাজত্বকালেই সম্ভবত পাণ্ডুয়া থেকে গৌড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়েছিল। গৌড় নগরীই ছিল তাঁর রাজধানী।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর রাজত্বে প্রজাদের সুখী জীবন
‘রিয়াজ’-এর মতে, নাসিরউদ্দিন উদার ও ন্যায়-পরায়ণ ছিলেন। ফিরিস্তার বিবরণ থেকেও জানা যায়, তাঁর রাজত্বকালে প্রজাগণ সুখে শান্তিতে বসবাস করত। তাঁর সময়ে বঙ্গদেশে শিল্পকলারও যথেষ্ট উন্নতি ঘটে।
চীনের সাথে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর যোগাযোগ
পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম থেকে চীনদেশের সঙ্গে বঙ্গদেশের যে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল, তা নাসিরউদ্দিনের রাজত্বকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। নাসিরউদ্দিনও ১৪৩৮ ও ১৪৩৯ খ্রিস্টাব্দে চীন সম্রাটের কাছে উপহার সমেত দুবার দ্রুত পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকেই দেখা যায়, এই সম্পর্ক স্তিমিত হয়ে আসে।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর আমলে আবিসিনীয় ক্রীতদাস
সুলতান নাসিরউদ্দিনের রাজত্বকালেই প্রাসাদরক্ষী আবিসিনীয় ক্রীতদাসের প্রবর্তন হয় এবং এই নবাগত ক্রীতদাসগণ প্রবল হয়ে পরবর্তী দীর্ঘকাল বঙ্গদেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহর মৃত্যু
বাগেরহাটে তাঁর সমাধিলিপি থেকে জানা যায় যে, ১৪৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
উপসংহার :- রুকনউদ্দিন বারবক শাহ পিতা নাসিরউদ্দিনের মৃত্যুর পর শান্তিপূর্ণভাবেই ১৪৫৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। বারবক শাহ ছিলেন বঙ্গদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুলতান।
(FAQ) সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৪৩৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দে।
শামসউদ্দিন আহম্মদ শাহ।
রুকনউদ্দিন বারবক শাহ।