আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব কি ও তার বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদ, যুক্তিবাদ, প্রগতির ধারণা, দৃষ্টিবাদ, অবয়ববাদ, আধুনিকতা, উত্তর আধুনিকতা, আপেক্ষিকতাবাদ, বিজ্ঞানধর্মীতা ও নৈতিকতা সম্পর্কে জানবো।
ইতিহাস তত্ত্ব প্রসঙ্গে ইতিহাস তত্ত্ব, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য জাতীয়তাবাদ, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য যুক্তিবাদ, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য প্রগতির ধারণা, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য দৃষ্টবাদ, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য অবয়ববাদ, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য উত্তর অবয়ববাদ, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের আধুনিকতা, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য উত্তর আধুনিকতা, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের আপেক্ষিকতাবাদ, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানধর্মীতা, আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য নৈতিকতাবাদ।
আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব ও তার বৈশিষ্ট্য
বিষয় | আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব |
উদ্দেশ্য | ইতিহাস রচনা |
বৈশিষ্ট্য | জাতীয়তাবাদ, যুক্তিবাদ |
ফরাসি বিপ্লব | ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ |
রুশ বিপ্লব | ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- যে সমস্ত নিয়মনীতি আদর্শ ও পদ্ধতি অবলম্বন করে একজন ঐতিহাসিক তার ইতিহাস রচনা করে থাকেন, তাই হল ইতিহাস তত্ত্ব।
আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য
আধুনিক ইতিহাস রচনায় বৈচিত্র্য এসেছে। এই বৈচিত্র্য লক্ষ্য করেই ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল।
(১) জাতীয়তাবাদ
পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই ঐতিহাসিকদের লেখায় জাতীয়তাবাদের ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব বিভিন্ন ঘটনা ইউরােপীয় রাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটায়। জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকেই ভারত -এর ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত রচনা করেন ‘প্রাচীন ভারতের ইতিহাস’, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
(২) যুক্তিবাদ
যুক্তিবাদ। আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। আধুনিকতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বুঝতে শেখে কোনাে কিছু বিশ্বাস করার আগে তাকে যুক্তিবাদের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেওয়া উচিত। মানুষের এই যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগিয়েই ঐতিহাসিকগণ যুক্তিভিত্তিক ইতিহাস রচনায় প্রয়াসী হন।
(৩) প্রগতির ধারণা
ইতিহাসের ক্ষেত্রে প্রগতির আসল অর্থ হল মানুষের ক্ষমতা ও সম্ভাবনার বিপুল বিস্তার। উনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড -এর ধনসম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসে প্রগতির ধারণা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইতিহাসে প্রগতির ধারণা ব্যাখ্যায় ঐতিহাসিক গিবন বলেন যে, প্রতিটি যুগেই মানুষের সম্পদ, শক্তি, জ্ঞান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিহাসে প্রগতির ধারণায় অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একই সূত্রে আবদ্ধ।
(৪) দৃষ্টবাদ
রােমান্টিক ভাবধারার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দৃষ্টবাদী ইতিহাস দর্শনের উদ্ভব ঘটে। এই দর্শনের প্রবক্তা অগাস্ট কোৎ সমাজের বিশ্লেষণে বৈজ্ঞানিক নিয়মরীতি প্রয়ােগের কথা বলেন। দৃষ্টবাদী পদ্ধতি মেনে ঐতিহাসিকরা দুটি কাজ করে থাকে – ঐতিহাসিক তথ্য আবিষ্কার ও ঐতিহাসিক তথ্যসূত্রের দ্বারা ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান।
(৫) অবয়ববাদ
সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি, ধর্মনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ভাবনাচিন্তা গুলিই ধীরে ধীরে অবয়বের রূপ নিয়েছে। অবয়ববাদ আসলে প্রথাগত ও আচরণগত ঐতিহ্যের ওপর নির্ভরশীল মানব ইতিহাস। ঐতিহাসিক ধারণায় যদি অবয়বের পরিবর্তন ঘটে তাহলে বিষয়বস্তুরও পরিবর্তন ঘটে।
(৬) উত্তর অবয়ববাদ
অবয়ববাদের পরই আসে উত্তর অবয়ববাদ। বিশ্বজনীনতা, ঐক্য, মুক্তি প্রভৃতির ভিত্তিতে উত্তর-অবয়বাদীরা নিজেদের তত্ত্ব গড়ে তােলেন।
(৭) আধুনিকতা
আসলে আধুনিকতা শব্দটি আপেক্ষিক। কারণ, প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই নিজের যুগটি আধুনিক বলে মনে হয়। নবজাগরণ বা রেনেসাঁস কালের মানুষেরা নিজ যুগকে আধুনিক আখ্যা দিয়েছিল। আমরা আবার আজকের যুগকে আধুনিক যুগ আখ্যা দিয়ে থাকি। স্বাভাঐ সব দেশে সব যুগে আধুনিকতার চরিত্র ও মানদণ্ড আলাদা আলাদা হয়। আর সেই দিক থেকেই ঐতিহাসিককে তার আধুনিকতার স্বরূপ বর্ণনা করতে হয়।
(৮) উত্তর আধুনিকতা
আধুনিকতার বিচারে ঐতিহাসিকরা যাকে সত্য বলে ধরে থাকেন উত্তর আধুনিকতায় তা আংশিক সত্য বা অতিকথা হিসেবে বিবেচিত হয়।
(৯) আপেক্ষিকতাবাদ
আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী ইতিহাসে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব, সময়ের গুরুত্ব, ঘটনার পরিণতির গুরুত্ব সবই আপেক্ষিক। এই মতবাদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হল ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনুসন্ধান এবং দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল বর্তমানের প্রয়ােজনীয়তা অনুযায়ী ইতিহাস রচনা।
(১০) আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য রূপে বিজ্ঞানধর্মিতা
আধুনিক ইতিহাস চর্চায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তথ্যসূত্র সংগ্রহ করে ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানের মতই পরীক্ষা, অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা ইতিহাসেও বিষয়বস্তু বা ঘটনার সত্যতার কাছাকাছি পৌঁছােনাের চেষ্টা করা হয়।
(১১) আধুনিক ইতিহাস তত্ত্বে নৈতিকতাবাদ
ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে নৈতিকতারও। ইতিহাসে নৈতিক মূল্যবােধের কষ্টিপাথরে যাচাই করে ঐতিহাসিক চরিত্র ও ঘটনাবলির বিচার করা হয়।
উপসংহার :- অষ্টাদশ শতক থেকে শুরু করে বিংশ শতকের শেষ দশক সময়কাল পর্যন্ত ইতিহাস চর্চাকে আমরা আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব হিসেবে বুঝে থাকি।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) আধুনিক ইতিহাস তত্ত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
যে সমস্ত নিয়মনীতি আদর্শ ও পদ্ধতি অবলম্বন করে একজন ঐতিহাসিক তার ইতিহাস রচনা করে থাকেন, তাই হল ইতিহাস তত্ত্ব।
রমেশচন্দ্র দত্তের লেখা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস।
রুশ বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব।