পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণ

পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণ প্রসঙ্গে পোল্যান্ডে রাশিয়া আধিপত্য, রুমানিয়ায় রাশিয়ার আধিপত্য, বুলগেরিয়ায় রাশিয়ার প্রাধান্য, হাঙ্গেরিতে রাশিয়ার আধিপত্য, চেকোশ্লোভকিয়ায় রুশ আধিপত্য, যুগোশ্লাভিয়ায় রুশ আধিপত্য বিস্তার, আলবেনিয়ায় আধিপত্য ও পূর্ব জার্মানিতে রাশিয়ার প্রাধান্য সম্পর্কে জানবো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুধোত্তর পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণ প্রসঙ্গে রুমানিয়ায় রাশিয়ার আধিপত্য, পোল্যান্ডে রাশিয়া আধিপত্য, বুলগেরিয়ায় রাশিয়ার প্রাধান্য, চেকোশ্লোভকিয়ায় রুশ আধিপত্য, পূর্ব জার্মানিতে রাশিয়ার প্রাধান্য, হাঙ্গেরিতে রাশিয়ার আধিপত্য ও যুগোশ্লাভিয়ায় রুশ আধিপত্য সম্পর্কে জানব।

পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণ

ঐতিহাসিক ঘটনাপূর্ব ইউরোপে সোডিয়েতিকরণ
বালেসলাভ বেরাটপোল্যান্ড
রাজা মাইকেলরুমানিয়া
নিকোলা পেটকভবুলগেরিয়া
এডওয়ার্ড বেনেসচেকোশ্লোভাকিয়া
মার্শাল টিটোযুগোশ্লাভিয়া
এনভার হোক্সাআলবেনিয়া
পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণ

ভূমিকা :- পূর্ব ইউরোপ-এর পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, আলবেনিয়া, পূর্ব জার্মানি প্রভৃতি দেশে রাশিয়ার উদ্যোগে সোভিয়েতিকরণ বা রুশীকরণ ঘটে।

পোল্যান্ড

পূর্ব ইউরোপের পোল্যাণ্ডে রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) সোভিয়েতপন্থী সরকারের প্রতিষ্ঠা

রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর সময় পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট নেতা বলেসলাভ বেরাট- এর নেতৃত্বে পূর্ব পোল্যান্ডে সোভিয়েতপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা করে। রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, এই সরকারে অকমিউনিস্ট মন্ত্রী গ্রহণ করা হবে এবং মুক্ত নির্বাচন নীতি অনুসরণ করা হবে। এই সরকার ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে পোল্যান্ডের একটি বিরাট অংশ রাশিয়াকে প্রদান করে।

(২) কমিউনিস্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ডে একটি নিরঙ্কুশ কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়। এতে কয়েকজন অকমিউনিস্ট মন্ত্রী গ্রহণ করা হলেও তাদের কোনো ক্ষমতা ছিল না। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পরিচালনায় পোল্যান্ডে যে সাধারণ নির্বাচন হয়, তাতে কমিউনিস্ট পার্টি ও তার সহযোগী দলগুলি জয়লাভ করে। নতুন সরকারের প্রধান নিযুক্ত হন বলেসলাভ বেরাট।

(৩) অকমিউনিস্টদের দমন

বিভিন্ন পদক্ষেপের দ্বারা পোলিশ পেজেন্ট পার্টি, সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি প্রভৃতি অকমিউনিস্ট দলগুলিকে মুছে দেওয়া হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে অকমিউনিস্টদের কঠোরভাবে দমন করা হয়, রাজনীতিতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্যাথোলিক গির্জাকে সতর্ক করা হয় এবং গির্জার যাজকদের গ্রেপ্তার করা হয়।

(৪) রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ

জনৈক রুশ জেনারেলকে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। এভাবে পোল্যান্ড সবদিক থেকে রাশিয়ার তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

রুমানিয়ায় রাশিয়ার আধিপত্য

পূর্ব ইউরোপের রুমানিয়ায় রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে রুমানিয়া জার্মানির আধিপত্য থেকে মুক্ত হলেও যুদ্ধে ব্যস্ততার কারণে রাশিয়া তখনই সেখানে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায় নি। এই সুযোগে রাজা মাইকেল সেখানে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

(২) জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট

স্ট্যালিন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রাজা মাইকেলকে কমিউনিস্টদের নিয়ে একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের নির্দেশ দেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রুমানিয়ার সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট সমর্থিত জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ক্ষমতা লাভ করে নতুন সরকার কমিউনিস্ট-বিরোধীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার শুরু করে।

(৩) রাজা মাইকেলের পদত্যাগ

নতুন সরকারের তীব্র অত্যাচারে রাজা মাইকেল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন। কিছুদিনের মধ্যে সকল বিরোধীদের নিধন করে, একমাত্র অনুগতদের নিয়ে ‘রুমানিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি’ গঠিত হয়।

বুলগেরিয়ায় রাশিয়ার প্রাধান্য

পূর্ব ইউরোপের বুলগেরিয়ায় রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) স্বদেশভূমি ফ্রন্ট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বুলগেরিয়ায় কমিউনিস্ট, অকমিউনিস্ট সকলকে নিয়ে সোভিয়েত-অনুগত একটি ‘স্বদেশভূমি ফ্রন্ট’ গঠন করা হয়।

(২) অকমিউনিস্ট নিধন

এরপর ক্রমে অকমিউনিস্টদের নিধন শুরু হয়। জাতীয়তাবাদী নেতা নিকোলা পেটকভ এর নেতৃত্বে ‘পেজেন্টস্ ইউনিয়ন’ দল কমিউনিস্টদের প্রবল বিরোধিতা করে। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তাকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

(৩) তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা

অবশেষে জর্জ ডিমিট্রভ-এর নেতৃত্বে রুশ সেনাবাহিনী রাজা দ্বিতীয় সাইমনকে সিংহাসনচ্যুত করে এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন করে বুলগেরিয়ায় একটি রুশ তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।

হাঙ্গেরিতে রাশিয়ার আধিপত্য

পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরিতে রোজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা

রাশিয়ার উদ্যোগে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে হাঙ্গেরিতে কমিউনিস্ট এবং অকমিউনিস্ট উভয় দলের সদস্যদের নিয়ে একটি অস্থায়ী জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

(২) উদারনৈতিক সরকারের প্রতিষ্ঠা

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় সভার নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি ১৭ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ভূস্বামীদের দল ৬০ শতাংশ আসন দখল করে। ফলে হাঙ্গেরিতে একটি উদারনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষুদ্র ভূস্বামীদের দল থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। অবশ্য কমিউনিস্টরা এই সরকারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করতে সক্ষম হয়। রাকোসি সহকারী প্রধানমন্ত্রীর পদ এবং ইমরে নেগি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। ওষ

(৩) ক্ষুদ্র ভূস্বামীদের দলের নেতাদের দমন

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ক্ষুদ্র ভূস্বামীদের দলের অনেক নেতার বিচার শুরু হয়।

(৪) কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখল

হাঙ্গেরির স্থানীয় কমিউনিস্টরা ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার সহায়তায় উদারনৈতিক সরকারের পতন ঘটিয়ে হাঙ্গেরির শাসনক্ষমতা দখল করে। অকমিউনিস্টদের ওপর নিষ্ঠুর দমননীতি চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। হাঙ্গেরিতে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট রুশ ধাঁচে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

চেকোশ্লোভাকিয়ায় রুশ আধিপত্য

পূর্ব ইউরোপের চেকোশ্লোভাকিয়ায় রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) প্রেসিডেন্ট বেনেস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর চোকোশ্লোভাকিয়ার ভূতপূর্ব অকমিউনিস্ট প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড বেনেস রাশিয়া থেকে ফিরে এসে চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন। তিনি রাশিয়ার চাপে রুথেনিয়া প্রদেশটি রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বেনেস কমিউনিস্ট নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট গোটওয়ার্ল্ড-এর নেতৃত্বে ছয়টি দলের এক সংযুক্ত সরকার গঠন করেন। কমিউনিস্ট নেতা ভ্যাকলাভ নোসেক ছিল এই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

(২) মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত

বেনেসের সরকার ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে আমেরিকার ঘোষিত মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে রাশিয়া শঙ্কিত হয় যে, চেকোশ্লোভাকিয়ায় সাম্যবাদ-বিরোধী সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেখানে রুশ আধিপত্য বিনষ্ট হবে। ফলে স্ট্যালিনের নির্দেশে চেকোশ্লোভাকিয়ায় অকমিউনিস্ট নিধন শুরু হয়।

(৩) কমিউনিস্ট অফিসার নিয়োগ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নোসেক ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানী প্রাগের আটজন পুলিশ অফিসারকে পদচ্যুত করে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন নতুন আটজন অফিসার নিয়োগ করেন। সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এই ঘটনার প্রতিবাদ করে পদচ্যুত অফিসারদের পুনর্নিয়োগের দাবি জানান।

(৪) অকমিউনিস্ট মন্ত্রীদের পদত্যাগ

কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী গোটওয়াল্ড এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থন করলে বেশ কয়েকজন অকমিউনিস্ট মন্ত্রী পদত্যাগপত্র পেশ করেন। দেশে কমিউনিস্ট ও অকমিউনিস্টদের মধ্যে প্রবল বিরোধ শুরু হয়। কমিউনিস্ট পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মঘট চলতে থাকে। শেষপর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বেনেস মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণে বাধ্য হন এবং দেশে কমিউনিস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।

(৫) বেনেসের পদত্যাগ

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বিদেশমন্ত্রী জ্যাঁ মাসারিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠলে প্রেসিডেন্ট বেনেস পদত্যাগে বাধ্য হন (জুন, ১৯৪৮ খ্রি.)। প্রধানমন্ত্রী গোটাওয়াল্ড প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হন। এভাবে চেকোশ্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট প্রভাব প্রচন্ড বৃদ্ধি পায়। অকমিউনিস্ট দলগুলি ভেঙে দেওয়া হয়।

যুগোশ্লাভিয়ায় রুশ আধিপত্য বিস্তার

পূর্ব ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়ায় রুশ আধিপত্য বিস্তারের বিভিন্ন দিকগুলি হল –

(১) টিটোর প্রধানমন্ত্রী পদলাভ

রাশিয়ার লালফৌজ পূর্ব ইউরোপের বহু দেশ থেকে জার্মান বাহিনীকে বিতাড়িত করলেও যুগোশ্লাভিয়ার মানুষ নিজেরাই কমিউনিস্ট আদর্শে দীক্ষিত মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে সংগ্রাম করে জার্মান বাহিনীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে। যুগোশ্লাভিয়ার রাজা দ্বিতীয় পিটার ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে মার্শাল টিটোকে তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন।

(২) রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ

টিটো সেনাবাহিনীর সহায়তায় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করে দেশ থেকে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটান এবং প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।

(৩) কমিউনিস্টদের সঙ্গে সুসম্পর্ক

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ‘আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংস্থা’ বা ‘কনিফর্ম’ (Communist Information Bureau বা Cominform) গঠিত হলে যুগোশ্লাভিয়া তাতে যোগ দেয়, গ্রিস-এর গৃহযুদ্ধে গোপনে কমিউনিস্ট গেরিলাদের সাহায্য পাঠায় এবং প্রতিবেশী কমিউনিস্ট দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে।

(৪) রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি

রাশিয়ার সঙ্গে টিটোর প্রথমদিকে আন্তরিকতা থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই এই সম্পর্কে ফাটল ধরে। লালফৌজের সহায়তা ছাড়াই যুগোশ্লাভিয়া নিজেকে জার্মানির হাত থেকে মুক্ত করেছিল বলে টিটো রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চান নি। যুগোশ্লাভিয়ায় ঘনঘন সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ ও সামরিক কর্মচারীদের প্রবেশের বিরুদ্ধে টিটো প্রতিবাদ জানান। এতে সারা কমিউনিস্ট দুনিয়া টিটোর ওপর অসন্তুষ্ট হয়।

(৫) কমিনফর্ম থেকে বিতাড়ন

যুগোশ্লাভিয়ার জনগণ ও সেনাবাহিনী টিটোকে সমর্থন করে। এই অবস্থায় পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গ যুগোশ্লাভিয়াকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা পাঠাতে থাকে। এইসব কারণে রাশিয়ার সঙ্গে টিটোর সম্পর্ক খুবই তিক্ত হয়ে উঠলে যুগোশ্লাভিয়াকে ‘কমিনফর্ম’ থেকে বিতাড়িত করা হয় (১৯৪৮ খ্রি.)। বলা বাহুল্য, এতে যুগোশ্লাভিয়ার কোনো ক্ষতি হয় নি।

আলবেনিয়ায় রুশ আধিপত্য

জার্মান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আলবেনিয়ার এনভার হোক্সা যে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। হোক্সা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রবল জনসমর্থনের দ্বারা আলবেনিয়ার শাসন ক্ষমতা দখল করেন। তাঁর ক্ষমতালাভের ক্ষেত্রে রাশিয়ার কোনো ভূমিকা ছিল না। কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে হোক্সার মতবিরোধ শুরু হয়।

পূর্ব জার্মানিতে রুশ আধিপত্য

পূর্ব জার্মানিতে রাশিয়ার অনুগত কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে রাশিয়া সেখানে নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

উপসংহার :- সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট আধিপত্যের প্রসারের বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদ ও সমালোচনা দেখা গিয়েছিল। পাশ্চাত্য প্রতিক্রিয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে, এর সঙ্গে যুক্ত হয় পূর্ব ইউরোপের ক্ষোভ। সোভিয়েত আধিপত্যের ফলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির সার্বভৌমিকতা নষ্ট হলে সেসব দেশের অধিবাসী এবং কমিউনিস্ট পার্টি রাশিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এজন্য স্ট্যালিনের মৃত্যুর (১৯৫৩ খ্রি.) পর সোভিয়েত আধিপত্যের বিরুদ্ধে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও অন্যান্য দেশে বিদ্রোহ শুরু হয়। এর ফলে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত রাশিয়ার একাধিপত্য নষ্ট হতে শুরু করে।

(FAQ) পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় কখন?

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।

২. রোমানিয়ার রাজা মাইকেল পদত্যাগ করেন কখন?

ডিসেম্বর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে।

৩. স্বদেশ ভূমি ফ্রন্ট কখন কোন দেশে গঠিত হয়?

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বুলগেরিয়ায়।

৪. হাঙ্গেরিতে রুশ ধাঁচে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় কখন?

২০ আগস্ট ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে।

৫. যুগোস্লাভিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

মার্শাল টিটো।

৬. জার্মান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আলবেনিয়ায় প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেন কে?

এনভার হোক্সা।

Leave a Comment