দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুদ্ধের পটভূমি হিসেবে পৈত্রিক ভূখণ্ডের দাবি, সীমানা নিয়ে বিরোধ, আরব শরণার্থীদের সমস্যা, ইজরায়েলের আরবদের সমস্যা, যুদ্ধের সূচনা, আমেরিকার উদ্যোগ, যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি বা কারণ, দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধের সূচনা, দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধে আমেরিকার উদ্দ্যোগ, দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধের বিরতি ও দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।
দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ |
সময়কাল | ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ |
বিবাদমান পক্ষ | ইজরায়েল ও আরব রাষ্ট্র |
সুয়েজ খাল জাতীয়করণ | মিশর |
মিশর আক্রমণ | ইজরায়েল |
হস্তক্ষেপ | সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ |
ভূমিকা :- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ-এ আরবরা পরাজিত হয়। এরপর আরবদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ইজরায়েল নিজেদের রাষ্ট্রকে সুসংহত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এর ফলে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলি আবার আক্রমণ চালায়।
দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইজরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলির বিবাদের প্রধান কারণগুলি ছিল নিম্নলিখিত –
(১) পৈতৃক ভূখণ্ডের দাবি
আরব দেশগুলি তাদের ভূখণ্ডে ইজরায়েলের অস্তিত্ব কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে নি। তারা যে-কোনো মূল্যে নিজেদের পিতৃভূমির মাটি উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর ছিল।
(২) সীমানা নিয়ে বিরোধ
রাষ্ট্রীয় সীমানা নিয়ে ইজরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলির বিরোধ ছিল।
(৩) আরব শরণার্থীদের সমস্যা
ইজরায়েল থেকে বিতাড়িত আরব শরণার্থীদের সমস্যার সমাধান করা আরব দেশগুলির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
(৪) ইজরায়েলের আরবদের সমস্যা
ইজরায়েলে বসবাসকারী আরবদের সমস্যাও ক্রমে জটিল হয়ে উঠেছিল।
দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করে সেখানে ইজরায়েলের জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলে এর বিরুদ্ধে ইজরায়েল জাতিপুঞ্জে আবেদন করে। এতে কোনো কাজ না হলে। মিশরের বিরুদ্ধে ইজরায়েল ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর যুদ্ধ ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে আরব দেশগুলির সঙ্গে ইজরায়েলের শান্তি স্থাপিত হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলতেই থাকে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) আক্রমণ
সুয়েজ খাল জাতীয়করণের প্রতিবাদে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইজরায়েল মিশর আক্রমণের গোপন পরিকল্পনা করে। সেই অনুসারে ইজরায়েল ২৯ অক্টোবর মিশর আক্রমণ করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয়।
(২) আমেরিকার উদ্যোগ
আমেরিকা জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ইজরায়েল ও মিশরের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ‘ভেটো’ প্রয়োগ করে প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয়। ৩০ অক্টোবর মিশরের রাজধানী কায়রোর ওপর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বিমানবাহিনী বোমা বর্ষণ করে।
(৩) রাশিয়ার হুমকি
ইতিমধ্যে মিশরে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের অনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে রাশিয়া তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে, এমনকি এই দুই দেশের বিরুদ্ধে রকেট আক্রমণের হুমকি দেয়।
(৪) জাতিপুপ্তের উদ্যোগ
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিপুঞ্জের প্রস্তাব অনুসারে দশটি দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে খুব শীঘ্রই জাতিপুঞ্জের সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। জাতিপুঞ্জের সেনাবাহিনী ১৫ নভেম্বর মিশরে হাজির হয়। মিশর থেকে ক্রমে ইজরায়েল, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সেনা অপসারিত হয় এবং শান্তি স্থাপিত হয়।
দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল যুদ্ধের গুরুত্ব
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে আরব ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলি হল নিম্নরূপ –
(১) সীমান্তে শান্তি
আরব ও ইজরায়েলের সীমান্তে আপাতত শান্তি স্থাপিত হয় এবং ইজরায়েলে আরবদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়।
(২) ইজরায়েলের বাণিজ্য বৃদ্ধি
ইজরায়েলের দখলে এসে এইলাট বন্দর সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এই বন্দরের মাধ্যমে ইজরায়েলের বৈদেশিক বাণিজ্য যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
(৩) যোগাযোগ বৃদ্ধি
এই যুদ্ধের ফলে আকাবা উপসাগর ও তিরান প্রণালীর মাধ্যমে ইজরায়েলের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার :- আরব-ইজরায়েল সীমান্তে আপাতত শান্তি স্থাপিত হলেও জাতিপুঞ্জের মহাসচিব দাগ হ্যামারশিল্ড উপলব্ধি করেছিলেন যে, জাতিপুঞ্জের বাহিনী সরে গেলেই সেখানে আবার সংঘর্ষ শুরু হবে।
(FAQ) দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে।
মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের।
২৯ অক্টোবর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে।