আজ সমাচার দর্পণ পত্রিকা -র সম্পাদক, প্রকাশকাল, মূল্য, উদ্দেশ্য, পক্ষপাত, পত্রিকার সদর দপ্তর, বিষয়বস্তু, প্রকাশনার বিভিন্ন দিক, পত্রিকার লেখক গোষ্ঠী, সমাচার দর্পণ পত্রিকার গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশকাল, সমাচার দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক, সমাচার দর্পণ পত্রিকার মূল্য, সমাচার দর্পণ পত্রিকার উদ্দেশ্য, সমাচার দর্পণ পত্রিকার বিষয়বস্তু, সমাচার দর্পণ পত্রিকার গুরুত্ব ও সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হল।
সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ পত্রিকা
ধরণ | সাপ্তাহিক পত্রিকা |
প্রকাশকাল | ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ |
প্রকাশক | Baptist Missionary Society |
সম্পাদক | জন ক্লার্ক মার্শম্যান |
প্রকাশনা স্থান | শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন |
ভূমিকা :- প্রথম বাংলা সংবাদপত্র হল সমাচার দর্পণ। এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশকাল
এই সমাচার দর্পণ পত্রিকাটি ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয়।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক
এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। তিনি ছিলেন নামেমাত্র সম্পাদক। বাঙালি পণ্ডিতরাই আসলে সমাচারদর্পণ সম্পাদনা করতেন।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার মূল্য বা দাম
এই পত্রিকাটির মূল্য ছিল মাসিক দেড় টাকা।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার উদ্দেশ্য
সমাচার দর্পণ পত্রিকা প্রকাশের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু সমাজের নিন্দা প্রচার এবং হিন্দু ধর্মকে নস্যাৎ করে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠা।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার পক্ষপাত
সমাচার দর্পণ পত্রিকাটি ধর্মীয় বির্তকে না জড়িয়ে খ্রিস্টান মতবাদের প্রতি পক্ষপাত দেখাত।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার সদর দপ্তর
এই পত্রিকাটি শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন সোসাইটি ছাপাখানা থেকে প্রকাশ করা হত।
সপ্তাহে দুবার প্রকাশ
পরবর্তীকালে সমাচার দর্পণ পত্রিকাটি সপ্তাহে দুবার করে প্রকাশিত হতে থাকে।
উন্নত মানের পত্রিকা সমাচার দর্পণ পত্রিকা
জয়গোপাল তর্কালঙ্কার বাংলা সংবাদ রচনা ও সঙ্কলনে সম্পাদকের সহায়ক ছিলেন বলে তা উন্নতমানের সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার বিষয়বস্তু
এই সমাচার দর্পণ পত্রিকায় যে সব সংবাদ ছাপান হত সেগুলি হল –
- (১) জজ, কালেক্টর ও অন্য রাজকর্মচারীদের নিয়োগ
- (২) ইংল্যান্ড ও ইউরোপ থেকে আগত সংবাদ এবং দেশের নানা সমাচার
- (৩) বাণিজ্যবিষয়ক নতুন সংবাদ
- (৪) জন্ম, বিবাহ ও মৃত্যুবিষয়ক সংবাদ
- (৫) ভারতবর্ষ -এর প্রাচীন ইতিহাস, পন্ডিতলোক এবং বইয়ের বিবরণ
- (৬) গভর্ণর কর্তৃক জারিকৃত আইন ও হুকুম প্রভৃতির বিবরণ
- (৭) ইউরোপীয়দের রচিত বই থেকে এবং ইংল্যান্ড হতে আসা বইয়ের শিল্প ও কলকারখানার বিবরণ।
সমাচার দর্পণ পত্রিকায় ভাষার দৃষ্টান্ত
“এইক্ষণে সাহেব লোকের মত হইব এবং ধারা ব্যবহার, পুরুষার্থ, ধার্মিকতা, সৌজন্য, বিচারবাক্য সেই প্রকার প্রকাশ করিব।” -এই ভাষার সহজবোধ্যতা ও প্রবহমানতা পরবর্তীকালের ‘জ্ঞানান্বেষণ’ ও ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার গুরুত্ব
সংবাদ, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বিষয়াদির বিবরণ এই পত্রিকায় স্থান পেত। সে আমলে প্রগতিশীল পত্রিকা হিসেবে এর বিশেষ গুরুত্ব ছিল।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার স্বীকৃতি
‘সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকা’, ‘বঙ্গদূত পত্রিকা’, ‘সমাচার চন্দ্ৰিকা পত্রিকা’, ‘সম্বাদ প্রভাকর পত্রিকা’, ‘জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকা’, ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর পত্রিকা’ ও ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা‘ -র সঙ্গে ‘সমাচার দর্পণ পত্রিকা’-র স্থানও স্বীকৃতির যোগ্য।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার অস্তিত্ব
১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পত্রিকাটি অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল। তবে এর পরেও কয়েকবার সমাচার দর্পণ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার মাধ্যমে গদ্য রচনার রস গ্ৰহণ
সমাচার দর্পণের মত সাময়িকপত্রের মধ্যে দিয়ে শিক্ষিত বাঙালি প্রথম গদ্য রচনার রস গ্রহণ করতে শেখে। এর ফলে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভবিষ্যৎ উন্নতির পথও খুলে গেল।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার লেখক গোষ্ঠী
রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ লেখক এই পত্রিকায় লেখেন।
সমাচার দর্পণ পত্রিকা প্রকাশের ফলে সাময়িক পত্রিকার চাহিদা বৃদ্ধি
সমাচার দর্পন পত্রিকা প্রকাশ হবার ফলে পাঠকের সংখ্যা বাড়তে লাগল এবং আরও সাময়িকপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেল।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকা
সমাচার দর্পণের জনপ্রিয়তার ফলে আরও কয়েকটি সাময়িক ও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে প্রধান ছিল সংবাদকৌমুদী (১৮২১) এবং সমাচারচন্দ্রিকা (১৮২২)।
সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশনার বিভিন্ন দিক
এই পত্রিকাটি তিনটি পর্যায়ে প্রকাশিত হয়।
(১) সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশনার প্রথম পর্যায় (১৮১৮-১৮৪১)
১৮১৮ সালের ২৩ মে (১০ জ্যৈষ্ঠ, ১২২৫) শনিবার সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
(২) সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশনার দ্বিতীয় পর্যায় (১৮৪২-১৮৪৩)
এই পর্যায়ে পত্রিকাটি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় ১৮৪২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতার দেশিয় সম্পাদক ভগবতীচরণ চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে সমাচার দর্পণ পত্রিকাটি অল্পদিন চলেছিল।
(৩) সমাচার দর্পণ পত্রিকার প্রকাশনার তৃতীয় পর্যায় (১৮৫১-১৮৫২)
এই পর্যায়ে পত্রিকাটি দেড় বছর চলে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
উপসংহার :- নারীশিক্ষা, সতীদাহ নিবারণ চেষ্টা প্রভৃতি নানা রকমের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরিচয় এই পত্রিকায় পাওয়া যায়। উনবিংশ শতকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নবজাগরণ -এ সমাচার দর্পণ পত্রিকার যথেষ্ট অবদান ছিল।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “সমাচার দর্পণ পত্রিকা” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) সমাচার দর্পণ পত্রিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জন ক্লার্ক মার্শম্যান।
১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে শনিবার।
শ্রীরামপুর মিশন থেকে।