সাতবাহনদের সময়কাল প্রসঙ্গে সূচনা কাল, ডঃ সরকারের অভিমত, ডঃ চন্দের অভিমত, হাতিগুম্ফা লিপির বর্ণনা ও প্রথম খ্রিস্ট পূর্ব তত্ত্ব সম্পর্কে জানবোো।
সাতবাহনদের সময়কাল
ঐতিহাসিক ঘটনা | সাতবাহনদের সময়কাল |
সাম্রাজ্য | সাতবাহন সাম্রাজ্য |
প্রতিষ্ঠাতা | সিমুক |
শ্রেষ্ঠ রাজা | গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী |
শেষ রাজা | যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী |
ভূমিকা :- সাতবাহন বংশের সময়কাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অধিকাংশ ঐতিহাসিক একমত হয়েছেন যে, খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতকে সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতন হয়। কিন্তু সাতবাহন রাজত্বকাল কবে আরম্ভ হয় তা নিয়ে মতভেদ দেখা যায়।
সাতবাহন বংশের সূচনা কাল
- (১) ডঃ স্মিথ, ডঃ গোপাল আচারিয়া প্রমুখের মতে, সাতবাহন রাজত্বকাল ২৩৫ খ্রি পূর্ব থেকে আরম্ভ হয়। সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা সিমুক বা শ্ৰীমুখ ২৩৫ খ্রি পূর্বে সিংহাসনে বসেন। নীলকণ্ঠ শাস্ত্রীর মতে, ২৩০ খ্রি পূর্বে শ্রীমুখ বা সিমুক সিংহাসনে বসেন।
- (২) খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় শতক মতের সমর্থনে বলা হয় যে, পুরাণে সাতবাহন বংশের মোট রাজত্বকাল ৪৬০ বছর বলা হয়েছে। যদি ২৩৫ বা ২৩০ খ্রিস্ট পূর্বকে সাতবাহন রাজত্বকালের সূচনা ধরা হয় তবে খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতকে সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতন হয়।
- (৩) সাতবাহন রাজত্বকাল যদি প্রথম খ্রিস্ট পূর্ব ধরা হয় তবে পুরাণের মত অনুসারে সাতবাহন রাজত্বকাল ৪৫০ বছর ধরলে খ্রিস্টিয় পঞ্চম শতক পর্যন্ত সাতবাহন রাজত্ব ধরতে হবে। অন্যান্য প্রমাণ থেকে দেখা যায় তা অসম্ভব। সুতরাং ২৩৫ বা ২৩০ খ্রিস্ট পূর্ব সাতবাহন রাজত্বের আরম্ভকাল বলে ঐতিহাসিকরা বলেন।
সাতবাহনদের সময়কাল সম্পর্কে ডঃ সরকারের অভিমত
ডি. সি. সরকার ওপরের মতের বহু ত্রুটি দেখিয়েছেন। যেমন –
- (১) সাতবাহন রাজাদের সংখ্যা ও মোট রাজত্বকাল সম্পর্কে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছে। কোনও পুরাণে সাতবাহন রাজাদের সংখ্যা আছে ১৯; আবার কোনও পুরাণে আছে ৩০। মোট রাজত্বকাল কোনও পুরাণে আছে ৩০০ বছর, আবার কোনও পুরাণে ৪৫০ বছর। সুতরাং পুরাণের তথ্যকে অভ্রান্ত মনে করা চলে না।
- (২) পুরাণে বলা হয়েছে যে, সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা সিমুক বা শ্রীমুখ কাণ্ব বংশের সুশর্মণকে উচ্ছেদ করেন। কাণ্ব বংশের সুশমণ ৩০ খ্রিস্ট পূর্বে রাজত্ব করতেন। তাহলে সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠা প্রথম খ্রিস্ট পূর্বের আগে হতে পারে না।
সাতবাহনদের সময়কাল সম্পর্কে ডঃ চন্দের অভিমত
ডঃ আর পি চন্দের মতে, সাতবাহন বংশের পাটরানী দেবী নায়নিকার নানাঘাট লিপি যা প্রথম সাতকর্ণীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়, তা বেসনগর লিপির পরে খোদিত। এর দ্বারা প্রমাণ হচ্ছে যে, বেসনগর লিপির সমকালীন শুঙ্গ রাজা ভাগভদ্র বা ভাগবতের অনেক পরে প্রথম সাতকর্ণী সিংহাসনে বসেন। নানঘাট শিলালিপির হরফ বেসনগর শিলালিপির তুলনায় অনেক পরিণত।
সাতবাহনদের সময়কাল সম্পর্কে হাতিগুম্ফা লিপির বর্ণনা
কলিঙ্গরাজ খারবেল -এর হাতিগুম্ফা শিলালিপিতে দেখা যায় তিনি প্রথম সাতকর্ণীর সমসাময়িক ছিলেন। খারবেলের তারিখ ২৪ খ্রিস্ট পূর্ব। সুতরাং প্রথম সাতকর্ণীর এই সময় হতে পারে।
সাতবাহনদের সময়কাল সম্পর্কে প্রথম খ্রিস্ট পূর্ব তত্ত্ব
এই সকল প্রমাণের ভিত্তিতে ডঃ ডি সি সরকার তৃতীয় শতকে সাতবাহন রাজ্যের পত্তন হয় এই তত্ত্বকে অগ্রাহ্য করেছেন। তার মতে, প্রথম খ্রিস্ট পূর্বেই সিমুক বা শ্রীমুখ সাতবাহন সিংহাসনে বসেন।
উপসংহার :- ডঃ বি. এন মুখার্জী সাম্প্রতিক নেভাসায় খননকার্যের ফলে যে সাতবাহন মুদ্রা পাওয়া গেছে তা ভারতে প্রাপ্ত রোমান মুদ্রার সামান্য কিছু আগের বলে মত প্রকাশ করেছেন। ভারত -এ প্রাপ্ত রোমান মুদ্রার সময়কাল হল খ্রিস্ট পূর্ব ২৭। সুতরাং সাতবাহন মুদ্রা যা সিমুকের বলে মনে করা হয় তা প্রথম খ্রিস্ট পূর্বের।
(FAQ) সাতবাহনদের সময়কাল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
প্রথম খ্রিস্ট পূর্ব।
অন্ধ্র।
সিমুকে।
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।
যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী।