আজ সাতবাহন রাজা প্রথম সাতকর্ণি -র পরিচিতি, রাজত্বকাল, রাজধানী, কলিঙ্গ রাজা খারবেলের সাথে সম্পর্ক, রাজ্য জয়, সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে জানবো।
প্রথম সাতকর্ণি
রাজত্বকাল | ৭০-৬০ খ্রিস্টপূর্ব |
পূর্বসূরি | কৃষ্ণ |
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় সাতকর্ণি |
রাজধানী | প্রতিষ্ঠান বা পৈথান |
ভূমিকা :- কণহ বা কৃষ্ণের পরে প্রথম সাতকর্ণি সাতবাহন বংশের রাজা হন। তিনি ছিলেন সাতবাহন সাম্রাজ্যের তৃতীয় রাজা।
পরিচিতি
পুরাণ অনুসারে তিনি ছিলেন কৃষ্ণের পুত্র। নীলকন্ঠ শাস্ত্রী মনে করেন যে, প্রথম সাতকর্ণি সিমুকের পুত্র ছিলেন। নানাঘাট গিরিপথের গায়ে সাতবাহন রাজপরিবারের অনেক সদস্যেরই মূর্তি খােদিত আছে। কৃষ্ণ প্রথম সাতকর্ণির পিতা হলে তার মূর্তি অবশ্যই সিমুক ও প্রথম সাতকর্ণির মূর্তির মাঝখানে খােদিত থাকত। তা না থাকায় অনেকে মনে করেন, কৃষ্ণ নন, সিমুকই সাতকর্ণির পিতা।
রাজত্বকাল
আনুমানিক ৭০-৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত প্রথম সাতকর্ণি রাজত্ব করেছিলেন।
রাজধানী
তাঁর রাজধানী ছিল প্রতিষ্ঠান বা পৈথান।
উৎস উপাদান
প্রথম সাতকর্ণির জন্য ঐতিহাসিক উপাদান কম নয়। পুরাণ, হাথিগুম্ফা শিলালিপি, নানাঘাট লেখ, সাঁচি লেখ,পেরিপ্লাস গ্ৰন্থ প্রভৃতি উপাদান থেকে তাঁর রাজত্বের বর্ণনা পাওয়া যায়।
বৃহদায়তন রাজ্য প্রদান
প্রথম সাতকর্ণি ক্ষুদ্র সাতবাহন রাজ্যকে বৃহৎ আয়তন দান করেন।
দক্ষিণাপথপতি
নানাঘাট-লেখ থেকে জানা যায় যে, তিনি শক্তিশালী অম্ভিয় পরিবারের সঙ্গে বিবাহসম্পর্ক স্থাপন করেন এবং দক্ষিণাপথপতি রূপে পরিচিত হন। অনেকে মনে করেন যে, গোদাবরী উপত্যকা জয় করে তিনি ‘দক্ষিণাপথপতি অভিধা লাভ করেন।
অপ্রতিহত চক্র
নানাঘাট লেখতে তাঁর সম্পর্কে ‘অপ্রতিহত চক্র’ বিশেষণটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর রাজ্যজয় প্রতিহত হয়নি এমন দাবি করা হয়েছে।
কলিঙ্গ রাজা খারবেলের সাথে সম্পর্ক
হাথিগুফা-লেখ থেকে ‘পশ্চিমের অধিপতি’ প্রথম সাতকর্ণির সঙ্গে কলিঙ্গরাজ খারবেল -এর সম্পর্কের কথা জানা যায়।
- (১) শাস্ত্রী এই লেখতে উল্লেখিত সাতকর্ণি যে প্রথম সাতকর্ণি হতে পারেন সেই সম্ভাবনা অস্বীকার করেন নি, তবে তাঁর মতে এই সাতকর্ণি দ্বিতীয় সাতকর্ণি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
- (২) হাথিগুফা-লেখর যে অংশে সাতকর্ণির উল্লেখ আছে, সেই অংশের পাঠান্তর থাকায় তাঁর সঙ্গে খারবেলের প্রকৃত সম্পর্ক কী ছিল, নিশ্চিত বলা যায় না।
- (৩) একটি পাঠ অনুসারে খারবেল তাঁকে দ্বন্দ্বে আহ্বান করেছিলেন, অন্য পাঠ অনুসারে খারবেল তাঁকে উদ্ধার করেছিলেন।
- (৪) তবে এই লেখ থেকে এটা স্পষ্ট যে, প্রথম সাতকর্ণির রাজ্যের পূর্বসীমা কলিঙ্গ রাজ্যের পশ্চিমসীমা স্পর্শ করেছিল।
মালবে আগমন
প্রথম সাতকর্ণির রাজ্যজয় তাকে নর্মদা নদীর উত্তরে পূর্ব মালবে নিয়ে এসেছিল। এই অঞ্চলে তখন শক এবং যবন আক্রমণের আশঙ্কা ছিল।
সাঁচি লেখ
পূর্ব মালবে সাঁচি-লেখর উপর নির্ভর করে ডঃ রায়চৌধুরী মনে করেন যে, সাঁচি অঞ্চল প্রথম সাতকর্ণির রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
- (১) ব্রত উদযাপন উপলক্ষে উৎসর্গীকৃত এই সাঁচি-লেখতে প্রথম সাতকর্ণির কারিগরদের মধ্যে প্রধান, আনন্দ কর্তৃক একটি দানের উল্লেখ আছে।
- (২) ডঃ সরকার মনে করেন যে, এই তথ্যের উপর নির্ভর করে এই সিদ্ধান্ত করা যায় না। কেননা, আনন্দ ব্যক্তিগতভাবে এবং তীর্থযাত্রীরূপে সাঁচি মঠে গিয়েছিলেন, এমন সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।
- (৩) তবুও ডঃ সরকার মনে করেন যে, মধ্য ও পশ্চিম ভারতের অংশবিশেষ সহ উত্তর দাক্ষিণাত্য প্রথম সাতকর্ণির রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাছাড়া উত্তর কঙ্কন এবং কাথিয়াবাড় তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের অধীন ছিল, মনে হয়।
অশ্বমেধ যজ্ঞ
প্রথম সাতকর্ণি অশ্বমেধ যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন।
- (১) শাস্ত্রী মনে করেন যে, উত্তর ভারতে শুঙ্গ সাম্রাজ্যশক্তিকে পরাজিত করে বিজয়োৎসব হিসাবে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
- (২) পুরাণে শাস্ত্রীর এই মতের সমর্থন মেলে। সেখানে আছে যে, সাতকর্ণি শুঙ্গ কণ্বদের অবশিষ্ট শক্তি চূর্ণ করেন।
- (৩) একাধিক কারণে এই যজ্ঞের অনুষ্ঠান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে এ যেমন সার্বভৌমত্ব এবং যুদ্ধং দেহি মনোভাব সূচিত করে, তেমনই অন্য দিকে তিনি যে গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তাও প্রমাণিত করে।
সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা
ডঃ রায়চৌধুরী বলেছেন যে, প্রথম সাতকর্ণি সাতবাহন বংশের প্রথম শাসক, যিনি বিন্ধ্যপরবর্তী অঞ্চলে এই শক্তিকে সার্বভৌম অধিকারে প্রতিষ্ঠিত করেন।
শুঙ্গ ও গ্রীক সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী
তাঁর সময়ে গোদাবরী উপত্যকায় প্রথম সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটে, যা আয়তনে এবং শক্তিতে, গাঙ্গেয় উপত্যকার শুঙ্গ সাম্রাজ্যের এবং পাঞ্জাবে গ্রীক সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিল।
উপসংহার :- প্রথম সাতকর্ণির মৃত্যুর পর তাঁর পত্নী অম্ভিয় বংশীয়া নাগনিকা (অথবা নায়নিকা) দুই নাবালক পুত্র বেদশ্রী এবং শক্তিশ্রীর (সাহিত্যের শক্তিকুমার) হয়ে রাজকার্য পরিচালনা করেন। তাঁর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
(FAQ) প্রথম সাতকর্ণি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
গৌতমী পুত্র সাতকর্ণি।
সিমুক।
যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণি।