সুলতানি যুগের সঙ্গীতচর্চা প্রসঙ্গে বাদ্য যন্ত্র, সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ, বলবনের সঙ্গীত প্রিয়তা, আলাউদ্দিন খলজির সঙ্গীত প্রিয়তা, মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গীত প্রেম, ফিরোজ শাহ তুঘলকের সঙ্গীত প্রেম, জয়নাল আবেদিনের সঙ্গীত প্রেম, উত্তর ভারতের সঙ্গীত ও দক্ষিণী সঙ্গীত সম্পর্কে জানবো।
সুলতানি যুগের সঙ্গীতচর্চা
ঐতিহাসিক ঘটনা | সুলতানি যুগে সঙ্গীতচর্চা |
বাদ্য যন্ত্র | রবাব, সারেঙ্গী, তবলা |
তবলা আবিষ্কার | আমীর খসরু |
তান সেনের গুরু | বৈজু বাওয়ার |
বিহারী বুলবুল | সঙ্গীতজ্ঞ চিন্তামণি |
ভূমিকা :- সুলতানি যুগে হিন্দু-মুসলিম সংহতির সুর শুধু ধর্ম আন্দোলন ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে শোনা যায় নি, সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত হয়।
সুলতানি যুগের বাদ্যযন্ত্র
তুর্কীরা বিভিন্ন প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও বাদন রীতি ভারত -এ নিয়ে আসে। রবাব, সারেঙ্গী, এমনকি তবলা বাদ্যযন্ত্র তুর্কীদের অবদান।
সঙ্গীতের প্রতি সুলতানদের অনুরাগ
যদিও গোঁড়া ইসলামীরা সঙ্গীতকে অশাস্ত্রীয় বলে মনে করেন, কিন্তু বলবন, আলাউদ্দিন খলজি, মহম্মদ বিন তুঘলক প্রমুখ সুলতান সঙ্গীতের অনুরাগী ছিলেন।
দিল্লির সুলতান বলবনের সঙ্গীত প্রিয়তা
বলবন ভারতীয় সঙ্গীতকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে মনে করতেন। বলবনের পুত্র বুখরা খাঁ একটি সঙ্গীত সমাজ স্থাপন করেন এবং বাংলায় তাঁর দরবারে বহু গুণী সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন।
সুলতান আলাউদ্দিনের সঙ্গীত প্রেম
দক্ষিণী তানরা সঙ্গীতের বিখ্যাত গায়ক ও নায়ককে তাঁর দরবারে আনেন। কবি আমীর খসরু ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। আলাউদ্দিন খলজির প্রেরণায় তিনি নূতন ধরনের ‘কাওলাসী’ এবং ইমন, সাজাগরী ও জিলফ রাগের সৃষ্টি করেন।
সুলতান মহম্মদ তুঘলকের সঙ্গীত প্রেম
মহম্মদ বিন তুঘলকের দরবারে হিন্দু ও মুসলিম গায়করা সমাদর পেতেন। অনেকের মতে আমীর খসরুই ছিলেন তবলার আবিষ্কারক। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।
দিল্লির সুলতান ফিরোজ তুঘলকের আমলে সঙ্গীত
ফিরোজ শাহ তুঘলক-এর আমলেও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সংহতির কাজ চলছিল। হিন্দু সঙ্গীত গ্রন্থ রাগদর্পণের তিনি ফার্সী অনুবাদ করান। সুফী সন্তরা ও প্রাদেশিক শাসকরাও সঙ্গীতের উন্নতি ঘটান।
সুলতানি যুগে হুসেন শাহ শার্কির আমলে সঙ্গীত
জৌনপুরের সুলতান হুসেন শাহ শার্কি খেয়াল গানের বহুপদ রচনা করেন। তাঁর উৎসাহে ‘খুলয়াল-উল-মনায়াস’ নামে এক ফার্সী সঙ্গীতের গ্রন্থ রচিত হয়। হুসেনশাহ বহু সঙ্গীত সম্মেলনের অনুষ্ঠান করেন। তার আমলে সুফী সন্ত পীর বোধন সঙ্গীতে বিশেষ নাম করেন।
সুলতানি যুগে বাজবাহাদুরের আমলে সঙ্গীত
মালবের সুলতান বাজবাহাদুর ও তার প্রেয়সী রূপমতী ছিলেন সঙ্গীতের ক্ষেত্রে প্রবাদ প্রতিম।
সুলতানি যুগের জয়নাল আবেদিনের সঙ্গীত প্রেম
কাশ্মীরের সুলতান জয়নাল আবেদিন বুদ্ধিদত্তকে তার সভায় স্থান দেন। বুদ্ধিদত্ত সঙ্গীতের উপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন। বিহারে সঙ্গীতজ্ঞ চিন্তামণির জনপ্রিয় নাম ছিল ‘বিহারী বুল বুল।’
সুলতানি যুগে রাজা মানসিংহের সঙ্গীত প্রেম
গোয়ালিয়রের রাজা মানসিংহ গোয়ালিয়ার ঘরানার সঙ্গীত প্রবর্তন করেন। তিনি ‘মান-কৌতুহল’ নামে হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের উপর এক বিখ্যাত গ্রন্থ রচনায় উৎসাহ দেন। সম্ভবত তিনি তানসেনের গুরু বৈজু বাওয়ার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
সুলতানি যুগে উত্তর ভারতের সঙ্গীত
উত্তর ভারতের সঙ্গীতে আরবী ও ফার্সী সঙ্গীতের আদব-কায়দা, রাগ ওতপ্রোতভাবে মিশে যাওয়ার ফলে দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত রীতি থেকে তা পৃথক হয়ে যায়।
সুলতানি যুগে দক্ষিণী সঙ্গীত
দক্ষিণী সঙ্গীতে ভক্তি গুরুদের সঙ্গীত ধারার প্রভাব অক্ষুণ্ণ থাকে। আলভারগণ যে ধারার প্রবর্তন করেন ত্যাগ রাজার সঙ্গীতে তা প্রকাশ পায়। বাহমনী সুলতান ফিরোজশাহ বাহমন ও মামুদ শাহ বাহমনও সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। রানি চাঁদ সুলতানও দক্ষিণী সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এর রাজারাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেন নি।
সুলতানি যুগে শঙ্করদেবের সঙ্গীত প্রেম
আসামে শঙ্করদেব ‘বার’ ভক্তি সঙ্গীত রচনা করেন। সঙ্গীত শুরু লোচনদেব রাগতরঙ্গিনী গ্রন্থে ভারতীয় রাগগুলি যথা ভৈরবী, তোড়ি, কেদারা, যমুনা, মেঘ, পূরবী প্রভৃতির বিশুদ্ধ মূর্তি তুলে ধরেন।
উপসংহার :- সুলতানি যুগে সঙ্গীতের একটি বিশেষ শাখা ছিল ভক্তিসঙ্গীত। সুফী-সন্তদের পাশাপাশি হিন্দু ভক্তিবাদী গুরুরাও বহু ভক্তি সঙ্গীত রচনা করেন। কবীরের দোহা বা গীতিকবিতাগুলি ছাড়া বাংলার চণ্ডীদাস, জ্ঞান দাস প্রমুখের পদাবলী কীর্তন বিখ্যাত।
(FAQ) সুলতানি যুগের সঙ্গীতচর্চা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
রবাব, সারেঙ্গী, তবলা।
আমীর খসরু।
বিহারের সঙ্গীতজ্ঞ চিন্তামণি।
গিয়াসউদ্দিন বলবন।