ঔরঙ্গজেবের পর মারাঠা সাম্রাজ্য

ঔরঙ্গজেবের পর মারাঠা সাম্রাজ্য প্রসঙ্গে ঔরঙ্গজেবের জীবিত অবস্থায় মারাঠা, আপস মীমাংসার চেষ্টা, শাহুর মুক্তি, মারাঠাদের মধ্যে আত্মকলহ, গৃহযুদ্ধের সূচনা, শাহুর অভিষেক, তারাবাঈয়ের ক্ষমতাচ্যুতি ও নতুন মারাঠা সরকার সম্পর্কে জানবো।

ঔরঙ্গজেবের পর মারাঠা সাম্রাজ্য

বিষয়ঔরঙ্গজেবের পর মারাঠা সাম্রাজ্য
মুঘল বাদশাঔরঙ্গজেব
মৃত্যু১৭০৭ খ্রি
পেশোয়াপেমারাঠা প্রধানমন্ত্রী
প্রথম পেশোয়াবালাজী বিশ্বনাথ
ঔরঙ্গজেবের পর মারাঠা সাম্রাজ্য

ভূমিকা :- ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্য-এর অবক্ষয়ের সুযোগে যে সকল রাজ্য শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল তার মধ্যে মারাঠা রাজ্যই শ্রেষ্ঠ।

ঔরঙ্গজেবের জীবিত অবস্থায় মারাঠা

মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের জীবিত অবস্থায় মারাঠারা মুঘলশক্তিকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। সম্রাটের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, মারাঠা অভ্যুত্থান পূর্ণভাবে প্রতিহত করা সম্ভবপর হয় নি।

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর আপস মীমাংসার চেষ্টা

মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠারা কিছুদিন গৃহবিবাদে লিপ্ত থাকে। ঔরঙ্গজেব শম্ভুজির পুত্র শাহুজিকে বন্দি করে রেখেছিলেন। ঔরঙ্গজেবের আশা ছিল যে, শাহুর সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার করে তাঁর হৃদয় জয় করা এবং তাঁর সঙ্গে একটা রাজনৈতিক আপস মীমাংসার চেষ্টা করা।

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠা নেতা শাহুর মুক্তি

কিন্তু শাহু মায়ের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন ছিলেন। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর, ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের মুঘল শাসক জুলফিকার খানের পরামর্শে আজম শাহ শাহুকে মুক্ত করে দেন। এই মুক্তিদানের মধ্যে হয়তো মহানুভবতা ছিল। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, রাষ্ট্রনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্যই শাহকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠাদের মধ্যে আত্মকলহ

প্রকৃতপক্ষে শাহুকে মুক্তি দিলে, মারাঠাদের মধ্যে গৃহবিবাদ উপস্থিত হবে – এটাই ছিল জুলফিকার খানের প্রত্যাশা। তাঁর প্রত্যাশা অনুযায়ী মারাঠাদের মধ্যে এক আত্মকলহের সৃষ্টি হয়।

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠা গৃহযুদ্ধের সূচনা

এই সময় শিবাজির অন্য পুত্র রাজারামের বীর-পত্নী তৃতীয় শিবাজির নামে মারাঠা রাজ্য শাসন করছিলেন। শাহু মারাঠা রাজ্যে উপস্থিত হলে, তিনি তাকে অস্বীকার করেন এবং এর ফলে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়।

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠা নেতা শাহুর অভিষেক

শাহু সাতারার দুর্গে উপস্থিত হন এবং ১৭০৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তাঁর অভিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তারাবাঈয়ের ক্ষমতাচ্যুতি

তারাবাঈ কোলাপুর থেকে পানহালার দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে শাহুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে থাকেন। শাহু শীঘ্রই পানহালা দুর্গ আক্রমণ করে তা অধিকার করেন। ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে তারাবাঈ-এর পুত্রের মৃত্যু হয় এবং এক প্রাসাদ বিদ্রোহের দ্বারা তারাবাঈ ক্ষমতাচ্যুত হন।

ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর নতুন মারাঠা সরকার

  • (১) শাহু ও কোলাপুর প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এক সংগ্রামের ফলে এক নতুন ধরনের মারাঠা সরকারের সৃষ্টি হয় এবং এই সরকারের উদ্ভাবক ছিলেন শাহুর প্রধানমন্ত্রী বা ‘পেশোয়া’ বালাজি বিশ্বনাথ নামে এক কূটনীতিক ব্রাহ্মণ।
  • (২) বালাজি বিশ্বনাথের কূটনীতির ফলে তারাবাঈ ও তাঁর পুত্র তৃতীয় শিবাজিকে বন্দি করে রাজারামের অপর পত্নী রাজসবাঈ-এর পুত্র দ্বিতীয় শম্ভুজিকে কোলাপুরের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এতেও কিন্তু গৃহবিবাদের অবসান হয় না।

উপসংহার :- অবশেষে, ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্নার সন্ধির দ্বারা শম্ভুজি ও শাহুর মধ্যে মারাঠা সাম্রাজ্য বণ্টিত হয় এবং এর ফলে মহারাষ্ট্রে শাহুর সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয়।

(FAQ) ঔরঙ্গজেবের পর মারাঠা সাম্রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় কখন?

১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে।

২. মারাঠাদের প্রথম পেশোয়া কে ছিলেন?

বালাজী বিশ্বনাথ।

৩. পেশোয়া কাকে বলা হয়?

মারাঠা প্রধানমন্ত্রীকে।

Leave a Comment