মহাবতৎ খাঁর বিদ্রোহ প্রসঙ্গে নূরজাহানের পরিকল্পনা, পারভেজ ও মহাবৎ খাঁর খ্যাতি বৃদ্ধি, নুরজাহানের আশংকা, শাহজাহানের বিদ্রোহের অবসান, মহাবৎ খাঁকে দরবারে তলব, মহাবৎ খাঁর বিরুদ্ধে অভিযান, বিদ্রোহের পথে মহাবত খাঁ, মহাভারত খাঁর বিদ্রোহ, জাহাঙ্গীরকে বন্দী, পরিকল্পনার অভাব ও মহব্বত খাঁর দক্ষিণে পলায়ন সম্পর্কে জানবো।
মহাবৎ খাঁর বিদ্রোহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | মহাবৎ খাঁর বিদ্রোহ |
সময়কাল | ১৬২৬ খ্রি |
পরিচিতি | মুঘল সেনাপতি |
সম্রাট | জাহাঙ্গীর |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শাহজাহানের বিদ্রোহ-এর ফলে নূরজাহান তাঁর জামাতা যুবরাজ শাহরিয়ারের সিংহাসনে উত্তরাধিকার লাভ সম্পর্কে আশান্বিত হন।
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শাহাজাহানের বিদ্রোহের ফল
শাহজাহানের চক্রান্তে খুসরুকে আগেই হত্যা করা হয়। শাহজাহান তাঁর পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় সিংহাসন লাভে তাঁর নায্যতা অনেক পরিমাণে নষ্ট হয়।
নূরজাহানের পরিকল্পনা
শাহরিয়ারের সিংহাসন লাভের পক্ষে নূরজাহান নতুন করে ক্ষেত্র তৈরি করতে চেষ্টা করেন। এই পরিকল্পনার পথে একমাত্র কাঁটা ছিলেন যুবরাজ পারভেজ।
পারভেজ ও মহাবৎ খাঁর খ্যাতি বৃদ্ধি
শাহজাহান বিদ্রোহ করার পর পারভেজ মহাবৎ খাঁর সঙ্গে মিলে শাহজাহানকে উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তাড়া করেন। এজন্য মহাবৎ খাঁ ও পারভেজের খুবই খ্যাতি বাড়ে।
নূরজাহানের আশঙ্কা
নূরজাহান আশঙ্কা করেন যে, মহাবৎ খাঁ হয়ত পারভেজকে সিংহাসনে বসাবার জন্য তার প্রভাব ও ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
শাহজাহানের বিদ্রোহের অবসান
আশঙ্কা নিরসনের জন্য নূরজাহান যত শীঘ্র সম্ভব মহাবৎ খাঁকে পারভেজের কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত করেন। এজন্য তিনি তাড়াতাড়ি শাহজাহানের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। শাহজাহানকে ক্ষমা প্রদর্শন ও তার সঙ্গে সন্ধি স্থাপিত হলে শাহজাহানের বিদ্রোহের অবসান হয়।
বাংলার শাসনকর্তা মহাবৎ খাঁ
এর পরেই নুরজাহানের প্রভাবে মহাবৎ খাঁকে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁকে বাংলার শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয়। পারভেজ দাক্ষিণের দায়িত্বে থাকেন।
মহাবৎ খাঁকে দরবারে তলব
পারভেজ এই ব্যবস্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করলে নূরজাহান তিরস্কার মূলক পত্র পাঠিয়ে আদেশ কার্যকর করেন এবং মহাবৎ খাঁকে বাংলা থেকে আগ্রায় দরবারে এসে জবাবদিহি করার আদেশ দেন।
মহাবৎ খাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ
এরপর মহাবৎ খাঁকে অপদস্থ করার জন্য নূরজাহান তহবিল তছরূপ করারও অভিযোগ করেন ও বাংলায় দখল করা হাতিগুলি কেড়ে নেন এবং তাকে জায়গীরের হিসেবপত্র দিতে নির্দেশ দেন। মহাবৎ খাঁ বাদশাহের বিনা অনুমতিতে তার কন্যাকে আমীর উমরের পুত্র বরঘুরদারের সঙ্গে বিবাহ দেওয়ায় অবাধ্যতার অভিযোগ আনেন।
বিদ্রোহের পথে মহাবৎ খাঁ
নূরজাহানের এই আচরণে মহাবৎ স্তম্ভিত হন এবং তিনি বুঝতে পারেন যে, তাঁর নিরাপত্তা ও সম্মান সম্রাজ্ঞীর হাতে বিপন্ন। সুতরাং তিনি বিদ্রোহের পথ নেন।
ডঃ ত্রিপাঠীর অভিমত
ঐতিহাসিক ডঃ আর. পি. ত্রিপাঠি অভিমত দিয়েছেন যে, আসফ খাঁর পরামর্শে নূরজাহান এই প্রতিহিংসামূলক কাজ করেন। আসফ খাঁ তার জামাতা শাহজাহানের সিংহাসন লাভের পথ নিষ্কন্টক করার জন্য মহাবৎ খাঁর ক্ষমতা ধ্বংস করতে চান। কারণ মহাবৎ ছিলেন সম্রাটের আজ্ঞাবহ। যাই হোক, নূরজাহানের নির্দেশেই মহাবৎ খাঁকে অপদস্ত ও ক্ষমতাহীন করার চেষ্টা হয়।
মহাবৎ খাঁর বিদ্রোহ
আসলে মহাবৎ খাঁ কুশলী যোদ্ধা হলেও কূটনীতিতে পটু ছিলেন না। সুতরাং তিনি তাঁর প্রতিবাদ বিদ্রোহের মাধ্যমে জানাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কূটনীতির দ্বারা সম্রাজ্ঞীর ক্ষমতা বিনষ্ট করার কোনো চেষ্টা করেন নি।
মহাবৎ খাঁ কর্তৃক বন্দী জাহাঙ্গীর
জাহাঙ্গীর কাশ্মীর থেকে কাবুল যাত্রার পথে পাঞ্জাবে এলে মহাবৎ খাঁ সম্রাটকে বন্দী করে ফেলেন। আসফ খাঁ ও নূরজাহান প্রাণপণ যুদ্ধ করেও সম্রাটকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হন। আসফ খাঁ আটক দুর্গে আশ্রয় নেন। সম্রাজ্ঞী স্বেচ্ছায় বন্দিনী হয়ে সম্রাটের সঙ্গে যোগ দেন। মহাবৎ খাঁ তাদের যথোচিত মর্যাদায় রাখেন এবং নামে মাত্র বন্দী করেন।
পরিকল্পনার অভাব
আসলে মহাবৎ খাঁর অন্য কোনো পরিকল্পনা ছিল না। সুতরাং তিনি সম্রাট-সম্রাজ্ঞীকে বন্দী করলেও, অন্য কাউকেও সিংহাসনে বসাবার চেষ্টা করেন নি।
মহাবৎ খাঁর দক্ষিণে পলায়ন
ইতিমধ্যে নূরজাহানের চাতুরীতে সম্রাট-সম্রাজ্ঞী মুক্ত হন। নূরজাহান এরপর মহাবৎকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেন। মহাবৎ খাঁ উত্তর ভারত নিরাপদ নয় দেখে দক্ষিণে শাহজাহানের সঙ্গে মিলিত হন।
উপসংহার :- ইতিমধ্যে ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে ৭ই নভেম্বর লাহোরে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। জাহাঙ্গীরের স্মরণে বেগম নূরজাহান লাহোরে একটি সুন্দর স্মৃতিসৌধ তৈরি করেন।
(FAQ) মহাবতৎ খাঁর বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মহাবৎ খাঁ।
খুররম অর্থাৎ শাহজাহান।
বাংলা।
নূরজাহান।