অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ, রাষ্ট্রের আয়তন, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা, রাজার ক্ষমতা, রাজার গুণাবলী, রাজার কার্যাবলী, প্রজাকল্যাণ, ভূমির ব্যবহার, কৃষি, দুর্গ ও নগর নির্মাণ, উপনিবেশের বিস্তার ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি সম্পর্কে জানবো।
কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা, কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতিতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ, কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতিতে রাষ্ট্রের আয়তন, কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতিতে রাজার ক্ষমতা, কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতিতে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি ও উপনিবেশের বিস্তার সম্পর্কে জানব।
অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতি |
সাম্রাজ্য | মৌর্য সাম্রাজ্য |
সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব | কৌটিল্য |
স্বামী | রাজা |
অমাত্য | আমলা গোষ্ঠী |
পুর | দুর্গ শহর |
জনপদ | রাষ্ট্র |
কোশ | অর্থভাণ্ডার |
দণ্ড | শাস্তি বিধান |
মিত্র | বন্ধু রাজা |
ভূমিকা :- কৌটিল্য রাষ্ট্রশাসন সম্পর্কিত বাস্তব বিধিব্যবস্থার নীতিগুলি লিপিবদ্ধ করতেই তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থটি রচনা করেন। আজ থেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগে মৌর্য যুগে কৌটিল্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্রে’ যে রাষ্ট্রনীতির উল্লেখ করেছেন তা এককথায় বিস্ময়কর। সকল যুগের এবং সকল রাষ্ট্রের জন্যই অর্থশাস্ত্র একটি প্রাসঙ্গিক রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গ্রন্থ। তিনি বলেছেন যে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনের ভিত্তিতে তার রাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হবে। কৌটিল্য এমন এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন যার ক্ষমতা হবে অসীম এবং সমাজ, অর্থনীতি ও আদর্শ হবে সুউন্নত।
অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতি
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে উল্লিখিত রাষ্ট্রনীতির প্রধান দিকগুলি হল –
(ক) রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ
অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। জীবদেহের সঙ্গে যেমন তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জৈব সম্পর্ক থাকে তেমনি রাষ্ট্রের সঙ্গেও তার বিভিন্ন অঙ্গের সম্পর্ক রয়েছে। কৌটিল্য রাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গের কথা বলেছেন। এগুলি হল স্বামী (রাজা), অমাত্য (আমলাগোষ্ঠী), পুর (দুর্গ শহর), জনপদ (রাষ্ট্র), কোশ (অর্থভাণ্ডার), দণ্ড (শাস্তিবিধান) এবং মিত্র (বন্ধু রাজা)। রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কিত কৌটিল্যের এই তত্ত্ব ‘সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। অর্থশাস্ত্র মতে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এই সাতটি অঙ্গের প্রতিটিরই পৃথক পৃথক কাজ রয়েছে।
(খ) রাষ্ট্রের আয়তন
এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) বৃহদায়তন
একটি আদর্শ রাষ্ট্রের আয়তন কীরূপ হওয়া উচিত সে বিষয়ে অর্থশাস্ত্রে সুস্পষ্টভাবে কিছু না উল্লেখ থাকলেও অনেকে মনে করেন যে, কৌটিল্য বৃহদায়তন রাষ্ট্রের পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ, তিনি রাজ্যজয় ও রাজ্যের সম্প্রসারণের বিষয়ে রাজাকে পরামর্শ দিতেন। তা ছাড়া বৃহদায়তন রাষ্ট্রে বেশি রাজস্ব আদায়ের ফলে রাজকোশের আয় বাড়ে।
(২) বিরুদ্ধ যুক্তি
অবশ্য কেউ কেউ যুক্তি দেখান যে কৌটিল্য বৃহদায়তন রাষ্ট্রের সমর্থক ছিলেন না। কারণ, কৌটিল্য যে সুশাসিত ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কথা বলেছেন তা বৃহদায়তন রাষ্ট্রে কার্যকরী করা সম্ভব নয়। সাম্রাজ্যবাদ এবং প্রজাকল্যাণ উভয়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের আয়তন নিয়ে কৌটিল্য চিন্তাভাবনা করেছেন।
(গ) রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা
কৌটিল্য রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) শাসনকার্যে পুরোহিতদের গুরুত্বহীনতা
আধ্যাত্মিক বিষয়ে পুরোহিতের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষিত হলেও রাষ্ট্রের বাস্তবের মাটিতে রাজার ক্ষমতাকে পুরোহিত কোনোভাবেই প্রভাবিত করার অধিকারী নন। পুরোহিত কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলে কৌটিল নির্দ্বিধায় তার চরম শাস্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন।
(২) রাজার প্রতি রাজকর্মচারীদের আনুগত্য
ড. রামশরণ শর্মা কৌটিল্যের রাষ্ট্রচিন্তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের উদাহরণ দিয়েছেন যে, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিবর্তে রাজার প্রতি অনুগত থাকবেন বলে কৌটিল্যের নির্দেশ ছিল।
(৩) বিচারক নিয়োগ পদ্ধতি
বিচারক পদে নিয়োগের পূর্বে কৌটিল প্রার্থীর ধর্মীয় বিচারবিবেচনা উপেক্ষা করার মানসিকতা যাচাই করে নিতেন।
(ঘ) রাজার ক্ষমতা
কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাজার ক্ষমতার বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) রাজার চূড়ান্ত ক্ষমতা
অর্থশাস্ত্র অনুসারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজা তিনি রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গ এবং পার্থিব জগতে চূড়ান্ত সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী। তাঁর কর্তৃত্বকে উপেক্ষা বা অমান্য করার ক্ষমতা কারও নেই। রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুই হলেন রাজা। সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা সর্বত্রই রাজার একাধিপত্য।
(২) ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ
অবশ্য রাজার ক্ষমতার ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথাও অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে। কারণ, রাজাই রাষ্ট্র নয়, তিনি রাষ্ট্রের অংশ মাত্র। রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেকের সাহায্য তার প্রয়োজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাজার মন্ত্রীমণ্ডলী। অবশ্য রাজা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করলেও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নন ।
(ঙ) রাজার গুণাবলি
অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, রাজকীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য রাজার চারটি বিশেষ গুণ থাকা দরকার। যথা–
(১) উত্থান গুণ
উৎসাহ ও উদ্যম সহকারে সর্বদা সব কাজে নিযুক্ত হওয়ার গুণ হল উত্থান গুণ।
(২) অভিগামিক গুণ
ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মপরায়ণতা, নম্রতা, বিচক্ষণতা, শত্রু দমনে দক্ষতা প্রভৃতি হল অভিগামিক গুণ।
(৩) ব্যক্তিগত গুণ
তীক্ষ্ণ মেধা, বাক্পটুতা, সংকটে সংযম ও স্থিরতা প্রভৃতি হল ব্যক্তিগত গুণ।
(৪) প্রজ্ঞা গুণ
প্রখর স্মৃতিশক্তি, দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, যে-কোনো সমস্যার সঠিক বিশ্লেষণ করা প্রভৃতি হল প্রজ্ঞা গুণ। এ ছাড়াও অর্থশাস্ত্রে রাজাকে ইন্দ্রিয় সংযমী, সত্যবাদী প্রভৃতি গুণের অধিকারী হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
(চ) রাজার কার্যাবলি
কৌটিল্য রাজার অবশ্যপালনীয় বিভিন্ন কার্যাবলির উল্লেখ করেছেন। অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে –
(১) প্রজাকল্যাণ
রাজা দেশে সুশাসন ও প্রজাকল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করবেন।
(২) রাজকর্মচারী নিয়োগ
রাজকার্য সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে রাজা বিভিন্ন মন্ত্রী, অমাত্য ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ করবেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে মন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।
(৩) রাজস্ব আদায়
রাজকোশ সর্বদা পূর্ণ রাখতে রাজা রাজস্ব সংগ্রহ ও রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়ে নজর দেবেন।
(৪) বৌদ্ধিক বিকাশ
প্রজাদের শিক্ষা, যোগ্যতা ও বুদ্ধির বিকাশে রাজা যত্নবান হবেন।
(৫) সামরিক অভিযান
শত্রু-রাষ্ট্রের আক্রমণ প্রতিহত করতে শত্রুর বিরুদ্ধে রাজাকে সামরিক অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে।
(৬) রাজার নিরাপত্তা
রাজা নিজের জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়েও সচেতন হবেন।
(৭) বিচার বিভাগের প্রধান
দেশের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে রাজা দায়িত্ব পালন করবেন।
(৮) পুরোহিত নিয়োগ
যোগ্যতা বিচার করে রাজা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরোহিতকে নিয়োগ করবেন।
(৯) গুপ্তচর নিয়োগ
দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে যাবতীয় ঘটনার খবর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাজাকে বহু গুপ্তচর নিয়োগ করতে হবে।
(ছ) প্রজাকল্যাণ
কৌটিল্য পুলিশি রাষ্ট্রের বিপক্ষে এবং প্রজাকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজা কখনোই স্বেচ্ছাচারী হবেন না। “তাঁর মতে, প্রজার সুখেই রাজার সুখ, প্রজার হিতেই রাজার হিত।”। রাষ্ট্রই হল তার প্রজাদের একমাত্র রক্ষাকর্তা। তাই প্রজা-সাধারণের মঙ্গলসাধন করা রাজার গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য ও দায়িত্ব। কৌটিল্যের প্রজাকল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণাকে কেউ কেউ ‘যোগক্ষেম’ নামে অভিহিত করেছেন। কৌটিল্যের মতে, রাষ্ট্র দুটি উপায়ে প্রজাকল্যাগের দায়িত্ব পালন করতে পারে। যথা –
(১) দুর্গতদের কল্যাণ
রাষ্ট্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের সময় প্রজাদের ত্রাণ দেবে, কৃষকদের বীজ সরবরাহ করবে, মহামারি প্রতিরোধের উদ্যোগ নেবে, অসহায়, বৃদ্ধ ও বিধবাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেবে ইত্যাদি।
(২) সর্বসাধারণের কল্যাণ
সর্বসাধারণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়িত করবে, অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিয়ে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবে, সমাজকল্যাণে মানুষকে উৎসাহিত করবে ইত্যাদি।
(জ) ভূমির ব্যবহার
রাষ্ট্রীয় সম্পদের পর্যাপ্ত বিকাশের প্রয়োজনে কৌটিল্য রাষ্ট্রীয় ভূমির সঠিক ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আদর্শগতভাবে রাষ্ট্রের কর্তব্য হল, সম্পদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস জমির উপর সর্বদা রাষ্ট্রীয় তদারকি বজায় রাখা। ভূস্বামীদের অতিরিক্ত জমির ব্যবহার এবং জমির অবৈধ ব্যবহারের উপর রাষ্ট্রের বিশেষ নজর রাখা উচিত।
(ঝ) কৃষি
কৃষিকাজের প্রতি রাষ্ট্রের সর্বদা যত্নশীল থাকা উচিত। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত চাষবাসের সমগ্র প্রক্রিয়ায় কৃষককে সহায়তা করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে রাষ্ট্রের নির্দেশ দেওয়া উচিত।
(ঞ) দুর্গ ও নগর নির্মাণ
রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে এবং চারিদিকে বিভিন্ন দুর্গ ও নগর নির্মাণের পরিকল্পনা করা রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে কৌটিল্য উল্লেখ করেছেন। দুর্গ ও নগরগুলি একদিকে রাষ্ট্রকে বৈদেশিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেবে। –
(১) দুর্গ
কৌটিল্য চার ধরনের দুর্গের কথা বলেছেন- পার্বত্যদুর্গ, অরণ্যদুর্গ, জলদুর্গ ও মরুদুর্গ। দুর্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থসম্পদ, খাদ্যশস্য, ঔষধপত্র, সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র, হাতি-ঘোড়া প্রভৃতি থাকবে।
(২) নগর
নগরগুলি বিশালাকার বাজার হিসেবে কাজ করবে এবং এখান থেকে রাষ্ট্র প্রভূত রাজস্ব অর্জন করতে পারবে।
(ট) উপনিবেশের বিস্তার
কৌটিল্য রাষ্ট্রের অধীনস্থ বর্তমান উপনিবেশগুলিকে সমর্থনের পাশাপাশি রাষ্ট্রের নতুন উপনিবেশ স্থাপনের কথা বলেছেন। এর উদ্দেশ্য হল উপনিবেশের সংখ্যা বাড়লে রাষ্ট্রের আয়তন বাড়বে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব আদায় বাড়বে। বেশি রাজস্ব আদায়ের ফলে রাজকোশ সর্বদা সমৃদ্ধ থাকবে এবং রাজকোশের অর্থশক্তির সহায়তায় রাজা তাঁর সাম্রাজ্যবাদী নীতি বাস্তবায়িত করতে পারবেন। উপনিবেশ থেকে সকল ধরনের সম্পদ আহরণের ফলে রাষ্ট্রের শক্তিবৃদ্ধি হবে। এই সম্পদ প্রাকৃতিক এবং মনুষ্য সৃষ্ট উভয়ই হতে পারে।
(ঠ) আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি
কৌটিল্য বলেছেন, রাষ্ট্রের অর্থনীতি হবে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(১) বাণিজ্য
কৌটিল্যের মতে রাষ্ট্রের অর্থনীতি কখনোই বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল হবে না। তিনি বরং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অগ্রগতির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
(২) শুল্ক
তাঁর মতে পণ্যসামগ্রীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে শুল্ক আদায় করতে হবে। তবে বাণিজ্যের সুবিধার্থে এবং শুল্ক ফাঁকি রোধ করার উদ্দেশ্যে আদায়িকৃত শুল্কের পরিমাণ হবে একেবারে ন্যূনতম।
(ড) সমাজ
রাষ্ট্রের সমাজ হবে উদার ও উন্মুক্ত। সমাজে সকলের জন্য সমান সুযোগসুবিধা থাকতে হবে। সমাজের সকল মানুষের জন্য রাষ্ট্র একই আইন প্রণয়ন করবে। দাসদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক শোষণ এবং পুরুষের নিষ্ঠুর ব্যবহারের কারণে যে সকল নারী অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে সমাজকে তাদের রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।
কৌটিল্যের বিস্ময়কর আলোচনা
প্রাচীন ভারত-এর রাষ্ট্রনীতি চর্চায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হল কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র। অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য সুদূর প্রাচীন কালে রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক আলোচনায় যে উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন তা বিস্ময়কর।
ম্যাকিয়াভেলি ও কৌটিল্য
আধুনিক রাষ্ট্রনীতির চর্চায় ইতালির ম্যাকিয়াভেলির যে স্থান, প্রাচীন যুগের রাষ্ট্রনীতির চর্চায় কৌটিল্যের স্থান অনুরূপ। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র এবং ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স-এর মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় দু- হাজার বছর। অর্থাৎ ম্যাকিয়াভেলি আধুনিক যুগের রাষ্ট্রনীতি চর্চায় যে উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন, কৌটিল্য সেই উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন তারও দু-হাজার বছর আগে।
উপসংহার :- কৌটিল্যের কৃতিত্বের প্রশংসা করে অধ্যাপক আলতেকার বলেছেন যে, “কৌটিল্য শুধু একজন বিখ্যাত রাষ্ট্রনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি রাষ্ট্রনীতির একটি নতুন ধারারও প্রবর্তন করেছিলেন।”
(FAQ) অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য-এর প্রধানমন্ত্রী।
অর্থশাস্ত্র।
কৌটিল্য বা চাণক্য।
রাজা।