শক জাতির অনুপ্রবেশ

শক জাতির অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে তাদের আসার পথ, প্রধান দুই শাখা, শকদ্বীপ, বোনোনেস, ময়েস বা মোগ, পরবর্তী শক রাজাগণ ও শক শক্তির পতন সম্পর্কে জানবো।

শক জাতির অনুপ্রবেশ

ঐতিহাসিক ঘটনাশক জাতির অনুপ্রবেশ
ভারত -এ আগমনব্যাকট্রিয়া থেকে
রাজামোয়েস বা মোগ
পতনপার্থিয় আক্রমণ
শক জাতির অনুপ্রবেশ

ভূমিকা :- শক জাতি আদিতে মধ্য এশিয়ার এক যাযাবর জাতি ছিল। ইউ-চি জাতির আক্রমণে শিরদরিয়া অঞ্চলের বাসভূমি ছেড়ে শকরা ব্যাকট্রিয়ায় চলে আসে। সম্ভবত তারা ব্যাকট্রিয়ার গ্রীক রাজা হেলিওক্লেসকে বিতাড়িত করে ব্যাকট্রিয়া দখল করে। ব্যাকট্রিয়া থেকে শক জাতি ভারতে অনুপ্রবেশ করে।

শক জাতির আসার পথ

কোন পথ ধরে শক জাতি ভারতে ঢুকেছিল সে সম্পর্কে তিন রকম মত দেখা যায়। যেমন –

  • (১) শকরা ব্যাকট্রিয়া থেকে হিন্দুকুশ পার হয়ে ভারতে ঢুকে। কিন্তু কাবুল উপত্যকায় শকদের মুদ্রা প্রভৃতি পাওয়া যায়নি। এজন্য এই মত অনেকে স্বীকার করেনি।
  • (২) শকরা কারাকোরাম গিরিপথ দিয়ে কাশ্মীরে ঢুকেছিল এবং কাশ্মীর থেকে পাঞ্জাবে আসে। কিন্তু পথের দুর্গমতার জন্য এই মতকে অনেকে অস্বীকার করেন।
  • (৩) বেশীর ভাগ পণ্ডিতের মতে, শক জাতি ব্যাকট্রিয়া থেকে পশ্চিম দিকে হিরাট ও সিস্থানে চলে যায়। এই স্থানে আসার পর পার্থিয়দের চাপে তারা পূর্বদিকে মুখ ফিরিয়ে বোলান গিরিপথ দিয়ে দক্ষিণ আফগানিস্থান -এ ঢুকে পড়ে।

শকদ্বীপ

এই পথে তারা সিন্ধু অঞ্চলে চলে আসে এবং ক্রমে ভারতের অন্যান্য অংশে বিস্তার লাভ করে। সিন্ধু মোহনায় শকরা বসবাস করে বলে এই অঞ্চলের নাম হয় শকদ্বীপ।

শকদের প্রধান দুটি শাখা

ডঃ এস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ভারতে শক জাতিকে প্রধান দুটি শাখায় ভাগ করা যায়। যথা –

  • (১) শক মুরণ্ড অর্থাৎ যে সকল শক কাশ্মীরের পথে ভারতে আসে।
  • (২) শক বা সিথীয় যারা বোলান গিরিবর্ত্মের পথে আসে। দ্বিতীয় গোষ্ঠীর ওপর পারসীক ও পার্থিয় প্রভাব ছিল।

শক রাজা বোনোনেস

ভারতে যে সকল শক রাজা রাজত্ব করেন তাদের মধ্যে বোনোনেসের নাম জানা যায়। তিনি তক্ষশীলা অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। তিনি ৪০ খ্রিস্ট পূর্বে রাজত্ব করতেন। বোনোনেসের গ্রীক ও খরোষ্ঠী ভাষায় দ্বিভাষিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। বোনোনেসের আত্মীয়দের নামেও মুদ্রা পাওয়া গেছে।

শক রাজা ময়েস বা মোগ

এর পর যে বিখ্যাত শক রাজার নাম উল্লেখ্য তিনি হলেন ময়েস বা মোগ (২০ খ্রিস্ট পূর্ব)। তিনি ‘রাজাধিরাজ’ উপাধি নেন। গান্ধার, তক্ষশিলা, পুষ্কলাবতী বা পেশোয়ার ছিল তাঁর রাজ্যভুক্ত। অনেকের মতে, তিনি শক-দ্বীপ বা সিন্ধু নদের মোহনা পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। টার্ন ময়েস বা মোগের কয়েকটি মুদ্রা আবিস্কার করেছেন যা থেকে সিন্ধু নদের ওপর তাঁর আধিপত্যের কথা জানা যায়।

পরবর্তী শক রাজাগণ

ময়েসের পর এ্যাজেস, এ্যাজিসিলেস, দ্বিতীয় এ্যাজেস প্রমুখ শক রাজারা রাজত্ব করেন। দ্বিতীয় এ্যাজেসের রাজত্বকাল ৩৫-৭৯ খ্রিস্ট পূর্ব ধরা হয়।

ভারতে শক শাসনের পতন

শক রাজাদের রাজত্ব ভারতে বেশী দিন স্থায়ী হতে পারেনি। পার্থিয় আক্রমণে শক শক্তির পতন ঘটে। পূর্ব ইরাণের অধিপতি পার্থিয় গোল্ডোফার্নিস প্রথম খ্রিস্টাব্দে শক রাজা দ্বিতীয় এ্যাজেসকে আক্রমণ করেন। এর ফলে দ্বিতীয় এ্যাজেসের পতন ঘটে।

উপসংহার :- রোমিলা থাপারের মতে, কুষাণ শক্তির আক্রমণে শক শক্তির পতন হয়, পার্থিয় আক্রমণে পতন হয়নি। তবে ডঃ ডি. সি. সরকার পার্থিয় আক্রমণকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। শক রাজত্ব ধ্বংস হলেও শক-ক্ষত্রপগণ দীর্ঘকাল পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে রাজত্ব করেন।

(FAQ) শক জাতির অনুপ্রবেশ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শক জাতি কোথা থেকে ভারতে এসেছিল?

ব্যাকট্রিয়া।

২. কোন শক রাজা ‘রাজাধিরাজ’ উপাধি গ্ৰহণ করেন?

মোয়েস বা মোগ।

৩. কাদের আক্রমণে শক শক্তির পতন ঘটে?

পার্থিয় আক্রমণে।

Leave a Comment