বিজয়নগর রাজ্যের গুরুত্ব

বিজয়নগর রাজ্যের গুরুত্ব প্রসঙ্গে কৃষির অগ্ৰগতি, বাণিজ্যিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধির প্রমাণ সাহিত্য, চর্চার সমৃদ্ধি, আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ, স্থাপত্য ভাস্কর্যের অগ্রগতি, চিত্রশিল্প ও সঙ্গীত চর্চা, সংস্কৃতির সমন্বয়ে ও উন্নত শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জানবো।

বিজয়নগর রাজ্যের গুরুত্ব

ঐতিহাসিক ঘটনা বিজয়নগর রাজ্যের গুরুত্ব
সভ্যতা হিন্দু সভ্যতা
শ্রেষ্ঠ রাজা কৃষ্ণদেব রায়
তেলুগু কবি পোদ্দন
আঞ্চলিক ভাষা তেলুগু, তামিল, কন্নড়
বিজয়নগর রাজ্যের গুরুত্ব

ভূমিকা :- বিজয়নগর রাজ্য পঞ্চদশ শতকের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। দক্ষিণ ভারতে ইসলামীয় ক্ষমতা বিস্তারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিজয়নগরের উদ্ভব হয়। প্রায় তিনশত বছর ধরে বিজয়নগর দক্ষিণের হিন্দু সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়।

কৃষি অর্থনীতি

বিজয়নগর রাজ্যে সামন্ত প্রথার বিকাশ বিশেষভাবে দেখা যায়। উত্তর ভারতে যে সামন্তপ্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল, বিজয়নগরেও তার অস্তিত্ব বিশেষভাবে দেখা যায়।

বাণিজ্যিক অগ্ৰগতি

বিজয়নগর রাজ্যে কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে বাণিজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি লক্ষ করা যায়। কেবলমাত্র অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য নয়, বহির্বাণিজ্যে বিজয়নগরের প্রভূত অগ্রগতি ঘটেছিল। দক্ষিণের বন্দরগুলি থেকে বিজয়নগর সমৃদ্ধিশালী রপ্তানি বাণিজ্য চালাত। এর ফলে বিজয়নগরের অসাধারণ সমৃদ্ধি দেখা দেয়।

সমৃদ্ধির প্রমান

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য লুণ্ঠনের পরেও দক্ষিণের ধন-ভাণ্ডার অবসিত হয় নি তা বিজয়নগরের সমৃদ্ধি প্রমাণ করে। যদিও বিজয়নগর নিরন্তর যুদ্ধে ব্যাপৃত ছিল তথাপি তার সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহিরাগত পর্যটকরা দিয়েছেন।

সাহিত্য চর্চা

বিজয়নগরে সংস্কৃত ও তেলেগু সাহিত্যের চর্চা বিশেষভাবে হয়। সায়ন বেদের ভাষ্য রচনা করেন। তেলেগু কবি পোদ্দন তাঁর অপূর্ব কাব্য রচনা করেন।

আঞ্চলিক ভাষার বিকাশ

এই সময় রাজকীয় পৃষ্ঠপােষকতায় দক্ষিণ ভারতে সংস্কৃত ভাষা নবজীবন লাভ করেছিল। পাশাপাশি তামিল, তেলেগু, কন্নড় প্রভৃতি আঞ্চলিক ভাষাও বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করে।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের অগ্ৰগতি

বিজয়নগর সাম্রাজ্যে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যে নগরজীবনের বিকাশ ঘটেছিল। নগরীর নির্মাণশৈলী ছিল অপরূপ। নগরীর চারদিক প্রাচীর, উদ্যান ও মন্দিরে সুসজ্জিত ছিল। কৃষ্ণদেব রায়ের আমলে নির্মিত ‘হাজারা মন্দির’ হিন্দু স্থাপত্যশিল্পের একটি উল্লেখযােগ্য নিদর্শন। এছাড়া, বিঠস্বামী মন্দির, কৃষ্ণস্বামী মন্দির এই সময়ের উল্লেখযােগ্য শিল্প নিদর্শন।

চিত্রশিল্প ও সঙ্গীত চর্চা

চিত্রশিল্প ও সঙ্গীত চর্চায় বিজয়নগরে যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। রাজা কৃষ্ণদেব রায় এবং রাম রায় খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ ছিলেন। বিজয়নগরে নাট্যশালা গড়ে উঠেছিল। জনগণকে আনন্দদানের জন্য অভিনয়ের ব্যবস্থাও ছিল।

সংস্কৃতি সমন্বয়

বিজয়নগর রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সম্বয় ঘটেছিল। সাম্রাজ্যে হিন্দু সংস্কৃতির প্রাধান্য থাকলেও রাজা গণ ধর্মীয় ক্ষেত্রে খুবই উদার ছিলেন।

উন্নত শাসন ব্যবস্থা

বিজয়নগরের শাসনব্যবস্থাও বিশেষ উন্নত ছিল। শাসনব্যবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করা হত।

উপসংহার :- ঐতিহাসিক ড. কালীকিঙ্কর দত্ত বলেছেন যে, কৃষ্ণদেব রায়ের রাজত্বকাল শুধু বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের জন্যই বিখ্যাত নয়, শিল্প ও সাহিত্যের বিকাশ এবং পৃষ্ঠপােষকতার জন্যও উল্লেখযােগ্য।

(FAQ) বিজয়নগর রাজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কারা কখন বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন?

হরিহর ও বুক্ক, ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে।

২. দিল্লির কোন সুলতানের সময়কালে বিজয়নগর রাজ্য গড়ে ওঠে?

মহম্মদ বিন তুঘলক।

৩. বিজয়নগর রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

কৃষ্ণদেব রায়।

৪. বিজয়নগর রাজ্যের বিখ্যাত তেলুগু কবি কে ছিলেন?

পোদ্দন।

Leave a Reply

Translate »